alt

ভোটের রাতে সুবর্ণচরে ধর্ষণ : ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনের যাবজ্জীবন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় একাদশ নির্বাচনের রাতে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ১০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে দুই বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।

সোমবার (৫ ফেব্রয়ারি) আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করে ওই ট্রাইবুনালের বিচারক ফাতেমা ফেরদাউস। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘মামলার আসামি, এজাহারকারী ও ভিকটিম পূর্বপরিচিত। তারা নারীকে ধর্ষণসহ মারধর করে অত্যন্ত অমানবিক ও জঘন্য অপরাধ করেছেন। তারা শুধু ভিকটিমেরই ক্ষতিই করেনি, তারা রাষ্ট্রেরও ক্ষতি করেছেন। তাই আসামিরা বিচারকের কোনো ক্ষমা বা করুণা পেতে পারেন না।’

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে এক নারীকে (৪০) মারধর ও দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। নির্যাতনের শিকার নারী চার সন্তানের জননি। তার অভিযোগ ছিল, ভোটকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেয়ার জেরে ওই হামলা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি তখন দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়।

ওই ঘটনার পরদিন (৩১ ডিসেম্বর) নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী বাদী হয়ে চর জব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পরে মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

সোমবার বেলা ১১টায় এজলাসে বসেই রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টায় ৪৬ পৃষ্ঠার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপিত ২৩ জন সাক্ষীর বক্তব্য, ৮ জন আসামির আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, আসামি পক্ষের পাঁচজন সাক্ষীর বক্তব্য পড়ে শোনানোর পাশাপাশি ইতোপূর্বের বিভিন্ন মামলার রেফারেন্স উপস্থাপন করেন বিচারক।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধের প্রবণতা বেড়ে গেলে এবং বিচারে আসামিরা খালাস পেলে বিচারক ও বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়। তাই আসামিরা বিচারকের কোনো ক্ষমা বা করুণা পেতে পারেন না। বরং তারা তাদের প্রকৃত অপরাধের সাজা পেলেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধ কিংবা এ ধরনের অপরাধে সহযোগিতা করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকবেন।’

আলোচিত এ মামলাটির রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে জানানো প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী হারুনুর রশিদ হাওলাদার বলেন, মামলার বিচারকালে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক উপস্থাপিত ২৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮ জন ছিলেন সরকারি সাক্ষী। বাকি ১৫ জনের মধ্যে ছয়জন ছিলেন বাদীর পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়। আর নয়জন সাক্ষী ছিলেন নিরপেক্ষ, যাদের সবাইকে আদালত বৈরি ঘোষণা করেছে। এতে মামলাটি নিরপেক্ষ সাক্ষী দ্বারা সমর্থিত হয়নি। তাই রায়ের কপি পাওয়া সাপেক্ষে আসামিদের পক্ষে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী কৌঁসুলি ছালে আহমদ সোহেল খান বলেন, দেশ-বিদেশে আলোচিত ছিল সুবর্ণচরের ওই দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাটি। রায় উপলক্ষে সকলের চোখ ছিল এই আদালতের দিকে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ ২৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। প্রত্যেক সাক্ষী ঘটনার বিষয়ে যথাযথ সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন আদালতে। যার প্রতিফলন ঘটেছে আদালতের আজকের রায়ে। আদালত ১০ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের যে রায় দিয়েছেন, তাতে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট। আলোচিত ঘটনার বিচারকাজে যারা সহযোগিতা করেছেন, তিনি তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্যাতনের শিকার সেই নারী। তিনি রায় ঘোষণার পুরোটা সময় ধরে আদালত কক্ষের ভেতরে একটি চেয়ারে কিছুক্ষণ পরপরই নীরবে চোখের পানি ফেলছিলেন। পরে রায় শোনার পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের সেই দিনের নির্যাতনের কথা তিনি এখনও ভুলতে পারছেন না। আদালত যে রায় দিয়েছেন, তিনি তাতে সন্তুষ্ট। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে রায় বাস্তবায়নের দাবি জানান।

রায় ঘোষণাকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী নারী অধিকার জোটের সভাপতি লায়লা পারভীনসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা। রায় ঘোষণার পর নারী নেত্রী লায়লা পারভীন বলেন, সুবর্ণচরে চার সন্তানের এই মায়ের ওপর সেদিন যে নির্যাতন নেমে এসেছিল, সেটি ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। তাই ঘটনাটি শোনার পর থেকেই নারী অধিকার জোট ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার ছিল। আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। এই রায়ের মধ্য দিয়ে সমাজে একটি বার্তা যাবে, অপরাধী যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন, অপরাধ করলে তাকে সাজা পেতে হবে। নারী অধিকার জোট আশা করে, উচ্চ আদালতেও এই রায় বহাল থাকবে।

রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের স্বজনেরা। তারা ‘এ রায় মানি না, মানব না বলে’ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এর আগে আদালতে বিচারক রায় ঘোষণা পর কাঠগড়ায় থাকা আসামিদের বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায়, ‘জজ সাহেব, এটা কী রায় দিলেন? এই রায়ের মাধ্যমে আমাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে, জুলুম করা হয়েছ। ঘটনাটি মিথ্যা ছিল।’

ছবি

‘অর্থ পাচার’: রন ও রিকের বিরুদ্ধে দুই অভিযোগপত্র দুদকের

ছবি

এস আলমের আরও ৪৬৯ একর জমি জব্দের আদেশ

ছবি

খুলনায় জোড়া খুন: ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড

সোনারগাঁয়ে ডাকাতির মালামাল ভাগ নিয়ে দুই ডাকাত গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ৩

ছবি

অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেপ্তার

ছবি

পার্বতীপুরে লগি-বৈঠার নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

ছবি

সিরাজদিখানে র‌্যাব পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় আমামি গ্রেপ্তার

ছবি

বাঘায় চর দখলের সংঘর্ষে গুলিতে ২ জন নিহত

ছবি

সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদক মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে

ছবি

জেনেভা ক্যাম্পে বোমা বিস্ফোরণে যুবক নিহতের মামলায় ৪ জন রিমান্ডে

ছবি

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি: ৮ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিআইডির মানিলন্ডারিং আইনে মামলা

ছবি

সোনাইমুড়ীতে মাদারাসায় ঘুমন্ত ছাত্রকে জবাই করে হত্যা, হত্যাকারী আটক

ছবি

শেওড়াপাড়ায় কিশোরী নির্যাতন: গৃহকর্ত্রী পারভীন চৌধুরীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড

বালিশ চাপা দিয়ে স্ত্রীকে হত্যা, ফরিদপুরের সৌরভকে গোপালগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করলো র‍্যাব

ছবি

নির্বাচন কমিশনের সামনে ‘ককটেল বিস্ফোরণ’, আটক ১

ছবি

পাঁচ মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের জামিন নিয়ে হাইকোর্টের রুল

ছবি

হাসিনার বাণিজ্য উপদেষ্টা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ

ছবি

৬ ভরি স্বর্ণ লুট করতে শরীয়তপুরের ওই নারীকে হত্যা করা হয়: র‌্যাব

ছবি

রাউজানে ১৮ দিনের মাথায় আরও এক যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা

ছবি

বদলগাছীতে প্রবাসীর বাড়িতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলা; আহত ২

ছবি

জামালপুরে ২২ হাজার পিস ইয়াবাসহ স্বামী-স্ত্রী গ্রেপ্তার

ছবি

সালিশ বৈঠকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা

ছবি

মোহাম্মদপুরে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার ৩১, সারাদেশে ১৭২৬

কদমতলীতে ছুরিকাঘাতে আহত পোশাককর্মীর মৃত্যু

ছবি

কুমিল্লায় বিচারের নামে নারী নির্যাতন ইউপি মেম্বারের, ভিডিও ভাইরা

ছবি

যশোরে গুলি ছুড়ে পালানোর সময় দুই সন্ত্রাসীকে আটক করল জনতা

ছবি

মেয়েকে হত্যার দায়ে পিতার কারাদণ্ড

ছবি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতের কন্যাকে দলবেঁধে ধর্ষণ: তিন আসামির কারাদণ্ড

ছবি

শিশুকে ঢাকা থেকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণ, কনস্টেবল কারাগারে

ছবি

রাজধানীর ১৫টির বেশি স্থানে ঝটিকা মিছিল, ১৩১ জন গ্রেপ্তার

ছবি

কবিরাজের কাছে জিন ছাড়াতে গিয়ে গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার

ছবি

চোলাই মদ বিক্রেতা গ্রেপ্তার

ছবি

৯০ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের কর্মকর্তাসহ ৬ জনের কারাদণ্ড

ছবি

রাজধানীতে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৪

ছবি

বিইউপি ছাত্রীকে ধর্ষণ: প্রধান আসামি সোহেল তিনদিনের রিমান্ডে

ছবি

পর্নো ভিডিও তৈরির অভিযোগে যুগল গ্রেপ্তার

tab

ভোটের রাতে সুবর্ণচরে ধর্ষণ : ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনের যাবজ্জীবন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় একাদশ নির্বাচনের রাতে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ১০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে দুই বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।

সোমবার (৫ ফেব্রয়ারি) আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করে ওই ট্রাইবুনালের বিচারক ফাতেমা ফেরদাউস। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘মামলার আসামি, এজাহারকারী ও ভিকটিম পূর্বপরিচিত। তারা নারীকে ধর্ষণসহ মারধর করে অত্যন্ত অমানবিক ও জঘন্য অপরাধ করেছেন। তারা শুধু ভিকটিমেরই ক্ষতিই করেনি, তারা রাষ্ট্রেরও ক্ষতি করেছেন। তাই আসামিরা বিচারকের কোনো ক্ষমা বা করুণা পেতে পারেন না।’

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে এক নারীকে (৪০) মারধর ও দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। নির্যাতনের শিকার নারী চার সন্তানের জননি। তার অভিযোগ ছিল, ভোটকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেয়ার জেরে ওই হামলা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি তখন দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়।

ওই ঘটনার পরদিন (৩১ ডিসেম্বর) নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী বাদী হয়ে চর জব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পরে মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

সোমবার বেলা ১১টায় এজলাসে বসেই রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টায় ৪৬ পৃষ্ঠার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপিত ২৩ জন সাক্ষীর বক্তব্য, ৮ জন আসামির আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, আসামি পক্ষের পাঁচজন সাক্ষীর বক্তব্য পড়ে শোনানোর পাশাপাশি ইতোপূর্বের বিভিন্ন মামলার রেফারেন্স উপস্থাপন করেন বিচারক।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধের প্রবণতা বেড়ে গেলে এবং বিচারে আসামিরা খালাস পেলে বিচারক ও বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়। তাই আসামিরা বিচারকের কোনো ক্ষমা বা করুণা পেতে পারেন না। বরং তারা তাদের প্রকৃত অপরাধের সাজা পেলেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধ কিংবা এ ধরনের অপরাধে সহযোগিতা করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকবেন।’

আলোচিত এ মামলাটির রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে জানানো প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী হারুনুর রশিদ হাওলাদার বলেন, মামলার বিচারকালে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক উপস্থাপিত ২৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮ জন ছিলেন সরকারি সাক্ষী। বাকি ১৫ জনের মধ্যে ছয়জন ছিলেন বাদীর পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়। আর নয়জন সাক্ষী ছিলেন নিরপেক্ষ, যাদের সবাইকে আদালত বৈরি ঘোষণা করেছে। এতে মামলাটি নিরপেক্ষ সাক্ষী দ্বারা সমর্থিত হয়নি। তাই রায়ের কপি পাওয়া সাপেক্ষে আসামিদের পক্ষে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী কৌঁসুলি ছালে আহমদ সোহেল খান বলেন, দেশ-বিদেশে আলোচিত ছিল সুবর্ণচরের ওই দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাটি। রায় উপলক্ষে সকলের চোখ ছিল এই আদালতের দিকে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ ২৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। প্রত্যেক সাক্ষী ঘটনার বিষয়ে যথাযথ সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন আদালতে। যার প্রতিফলন ঘটেছে আদালতের আজকের রায়ে। আদালত ১০ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের যে রায় দিয়েছেন, তাতে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট। আলোচিত ঘটনার বিচারকাজে যারা সহযোগিতা করেছেন, তিনি তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্যাতনের শিকার সেই নারী। তিনি রায় ঘোষণার পুরোটা সময় ধরে আদালত কক্ষের ভেতরে একটি চেয়ারে কিছুক্ষণ পরপরই নীরবে চোখের পানি ফেলছিলেন। পরে রায় শোনার পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের সেই দিনের নির্যাতনের কথা তিনি এখনও ভুলতে পারছেন না। আদালত যে রায় দিয়েছেন, তিনি তাতে সন্তুষ্ট। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে রায় বাস্তবায়নের দাবি জানান।

রায় ঘোষণাকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী নারী অধিকার জোটের সভাপতি লায়লা পারভীনসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা। রায় ঘোষণার পর নারী নেত্রী লায়লা পারভীন বলেন, সুবর্ণচরে চার সন্তানের এই মায়ের ওপর সেদিন যে নির্যাতন নেমে এসেছিল, সেটি ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। তাই ঘটনাটি শোনার পর থেকেই নারী অধিকার জোট ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার ছিল। আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। এই রায়ের মধ্য দিয়ে সমাজে একটি বার্তা যাবে, অপরাধী যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন, অপরাধ করলে তাকে সাজা পেতে হবে। নারী অধিকার জোট আশা করে, উচ্চ আদালতেও এই রায় বহাল থাকবে।

রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের স্বজনেরা। তারা ‘এ রায় মানি না, মানব না বলে’ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এর আগে আদালতে বিচারক রায় ঘোষণা পর কাঠগড়ায় থাকা আসামিদের বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায়, ‘জজ সাহেব, এটা কী রায় দিলেন? এই রায়ের মাধ্যমে আমাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে, জুলুম করা হয়েছ। ঘটনাটি মিথ্যা ছিল।’

back to top