alt

# দেড় বছরে আড়াইশ মানুষকে অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে চক্রটি, জড়িত ঊর্ধ্বতনরাও

সেনজেন ভিসায় লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা, বিমান কর্মচারীসহ গ্রেপ্তার ৫

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

সেনজেন ভিসাভুক্ত ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে লোক পাঠানোর নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। বাংলাদেশ বিমানের সিকিউরিটি ম্যান, কুয়েত এয়ারওয়েজের বুকিং সহকারী, কিছু জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান ও ট্রাভেল এজেন্সিসহ কম্পিউটার অপারেটর মিলে শক্তিশালী একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রতারণা করে আসছিল।

চক্রটি টুরিস্ট ভিসার কথা বলে সেনজেন ভিসাভুক্ত দেশে কোনো রকম পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এরপর পৌঁছে গেলে আর ফেরত আসতে হবে না এই বলে কারো কারো কাছ থেকে ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রটি দেড় বছরে আড়াই শতাধিক মানুষকে মধ্যপ্রাচ্য এবং সেনজেনভুক্ত বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে পাঠিয়েছে। তবে এমন প্রতারণার সঙ্গে কিছু জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান, ট্রাভেলস এজেন্সি, এয়ারলাইন্স ও কম্পিউটার অপারেটরের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বুধবার চক্রের ৫ জনকে গ্রেপ্তাররের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এমনটি জানান গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছে বিমানকর্মীও। এপিপিএনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে ডিবি পুলিশ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-২ সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- চক্রের দুই হোতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও মোহাম্মদ কবির হোসেন, বিদেশ যেতে ইচ্ছুক যাত্রী জানে আলম, সাব্বির মিয়া ও সম্রাট সওদাগর। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় তিনটি পাসপোর্ট, ৩টি জাল ভিসা, ৪টি এনআইডি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশের স্পেশাল কার্ড, ৪টি মাস্টার/ ভিসা কার্ড, ৫টি মোবাইল, ৩টি ই-টিকেট, ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা সংশ্লিষ্ট ৫/৬ পাতা জাল ডকুমেন্ট, ১টি ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং নগদ ১৬ হাজার টাকা।

ডিবি পুলিশ বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৩ যাত্রী স্বীকার করেছেন ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা দালালদের দিয়ে অবৈধ পথে ফ্রান্স, ইতালি এবং গ্রিসে যাচ্ছিলেন তারা। আর দুই হোতার বক্তব্যে উঠে এসেছে, বাংলাদেশ বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কয়েকজন এ চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি জানান, মানবপাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে লাখ লাখ টাকা খোয়াচ্ছে সাধারণ মানুষ। আমরা অনেকবারই বলেছি। বিভিন্ন পন্থায় তারা সেনজেন ভিসাভুক্ত ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এজন্য সক্রিয় রয়েছে দালাল চক্র। এক সময় দেখা যেত নৌপথে লিবিয়া বা ইউরোপিয়ান দেশ ইতালিতে যাওয়ার পথে অনেকে মারা যেতেন। অনেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতেন। এরপর জেল খাটতেন। কেউ কেউ কাজও পেয়ে যেতেন। এখন এ পন্থায় ইউরোপ যাওয়ার পথ কঠিন হচ্ছে। এখন নতুন পন্থা অবলম্বন করছে দালাল চক্রের সদস্যরা।

চক্রটির কাজ হচ্ছে- বিমানবন্দরে কোনো রকমে ঢুকিয়ে দেওয়া। ট্রাভেল এজেন্সি টিকিট করে দেয়। ইউরোপিয়ান কোনো দেশে যাওয়ার জন্য সে টিকিট পেয়ে বিমানবন্দরে ঢোকে। বোর্ডিং আনতে গেলে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশ বিমানের সিকিউরিটি ম্যান ও কুয়েত এয়ারওয়েজের বুকিং সহকারী তাদের কাগজপত্র দেখে বলে সব ঠিক আছে। ইমিগ্রেশনেও চেক করা হয় না। বিদেশগামী ভুক্তভোগীরা কিছু না বুঝে ভুয়া বোর্ডিং কার্ড নিয়ে বিমানে উঠে চলে যায়।

এভাবে প্রথম গন্তব্য বাংলাদেশ থেকে তারা উড়াল দিলেও অনেক সময় তারা মধ্যবর্তী স্থান ট্রানজিট পয়েন্টে আটকে যায়। কখনো সর্বশেষ ফ্রান্স, জার্মান অথবা ইউরোপে গিয়ে আটক হয়। কারণ এসব জায়গায় চেক করতে গিয়ে দেখে ভুয়া। তখন কাউকে দেশে পাঠায়। কাউকে জেলে পাঠায়। যারা জেলে যায় তারা পরবর্তীতে কেউ কেউ কাজও পেয়ে যায়। চক্রের সদস্যরা এই সুযোগটি নেয়। বলে, মামলা করে জেল থেকে ছুটে বের হতে পারবেন।

বুধবার একই কায়দায় লোক পাঠানোর বিষয়টি টের পান এপিবিএন সদস্যরা। পরে এপিবিএন ডিবি পুলিশকে খবর দিলে এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি প্রধান বলেন, ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়ে অসাধু চক্রের খপ্পরে পড়ে যারা বিদেশে যাচ্ছে, তারা তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমরা বার বার বলছি, সাবধান করছি। জালিয়াতি বা প্রতারণার খপ্পরে পড়ছি কি-না তা চেক করার জায়গা তো আছে। আমরা চেক করলে, ভেরিফিকেশন করলেই তো বোঝা যায়।

গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, এয়ারলাইন্সের সিনিয়র কর্মকর্তা, সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার, সুপারভাইজাররা জড়িত থাকতে পারে। যদি জড়িতই না থাকবে, তাহলে এয়ারলাইন্সের সিনিয়র কর্মকর্তারা কীভাবে অনায়াসে বোর্ডিং পাস দিয়ে দেয়। তাদের সম্পর্কে আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। অবৈধ লোকদের ব্যাপারে তারা কেন কঠোর হয় না, টিকিট বোর্ডিং পেয়ে যাচ্ছে, বিদেশেও চলে যাচ্ছে। এটা তো হতে পারে না।

গ্রেপ্তার পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে আমরা জেনেছি, পুরো চক্র মিলে আড়াইশ মানুষকে টুরিস্ট ভিসায় বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। যাদের অনেকে মানবেতর জীবন যাপনের পর দেশে ফিরে এসেছে। কেউ এখনো জেল খাটছে। এই চক্রটির সঙ্গে বিমানের সিনিয়র কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারেন বলে আমাদের ধারণা। কারণ আড়াইশ লোক বিদেশ যেতে পেরেছে অবৈধ পন্থায়! আমরা অবশ্যই রিমান্ডে নিয়ে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। কারণ এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের কিছু দালাল চক্রের সদস্যরাও রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, বিমান বাংলাদেশের নিয়োগের প্রশ্নফাঁস থেকে শুরু করে অনেক কিছুর ব্যাপারে আমরা তদন্ত করেছি। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের বাইরে পিছপা হইনি আমরা। তদন্ত শেষ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব।

ছবি

হাটহাজারীতে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ২

ছবি

স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত ঠিকাদার মিঠুর ৫ দিনের রিমান্ড

ছবি

‘সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি’: সেই মার্কিন নাগরিক ফের ৫ দিনের রিমান্ডে

ছবি

যশোরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী সোহেলের ১০ বছরের কারাদণ্ড

ছবি

অপরাধ বেড়েছে জামালপুর শহরে

ছবি

মহেশখালীতে পুলিশের উপর হামলার প্রধান আসামি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

ছবি

চট্টগ্রাম কাস্টমসে ঘুষের টাকাসহ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

ছবি

ডিএসসিসির বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করবে দুদক

ছবি

গৃহবধূ হত্যার প্রধান আসামী গ্রেপ্তার

দর্শনায় জুয়েলার্সে হামলা ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

ছবি

চাকরির প্রলোভনে ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

ছবি

পাসপোর্ট অফিসে দালালবিরোধী অভিযানে চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড

ছবি

পৃথক হত্যাচেষ্টা মামলা: আনিসুলকে দেখানো হলো গ্রেপ্তার, পাভেল রিমান্ডে

ছবি

দুর্নীতির মামলায় মোরশেদ আলমের জামিন নাকচ

ছবি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘যথেষ্ট’ প্রমাণ পাওয়া গেছে: চিফ প্রসিকিউটর

ছবি

সংসদের আসন পুনর্বিন্যাস, ফরিদপুরের ভাঙ্গা রণক্ষেত্র

ছবি

চকরিয়ায় থানা হাজতে দুজর্য়ের মৃত্যুর ঘটনায় ওসিসহ নয় জনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ

ছবি

বরিশালে তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড

ছবি

ডিবি পরিচয়ে ডাকাতচক্রের তিনসদস্য গ্রেপ্তার

ছবি

সাদা পাথর লুট: সাহাব উদ্দিন গ্রেপ্তার, ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন

ছবি

সাগর-রুনি হত্যা: তদন্ত নিয়ে অসন্তুষ্ট আদালত বললো ‘আপ্রাণ চেষ্টা’ চালাতে

ছবি

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে ৫ গুণ বেশি টাকা নেয়ার অভিযোগ, ১৩ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

ভোলায় মুভি দেখে বাবা খুন করল ছেলে

ছবি

বুড়িমারী স্থলবন্দর ইয়ার্ডে বাংলাদেশী দুই টাকার নতুন নোট জব্দ

ছবি

বনানীতে চুরি হওয়া ২৪ লাখ টাকা উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১

ছবি

প্রতারণার নতুন ফাঁদ: ফেইসবুকে ‘টু-লেট’ বিজ্ঞাপন, বাসা নিতে গিয়ে কলেজ ছাত্রকে হেনস্থা

ছবি

স্কুলছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের মামলায় গ্রেপ্তার ১

ছবি

নারায়ণগঞ্জে ‘ব্লগারকে’ কুপিয়ে বাইক ও ফোন ছিনতাই

ছবি

টঙ্গীতে দুপুরে ‘চোর সন্দেহে’ যুবক আটক, রাতে মৃত্যু

ছবি

উত্তরায় ‘সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি’, তিনজন কারাগারে

ছবি

একদিনে সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৮০৯

সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, তিনজন কারাগারে

ছবি

‘সন্দেহজনক’ লেনদেন, সাবেক এমপি দিদার দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

ফরিদপুরে শিশু ধর্ষণ: ২ যুবকের যাবজ্জীবন, শিশুর ১০ বছরের কারাদণ্ড

ছবি

চানখাঁরপুলে ৬ হত্যা: ২ জনের সাক্ষ্যে ৩ জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার বর্ণনা

ছবি

ফ্ল্যাট বরাদ্দে ‘অনিয়ম’: সচিব পদমর্যাদার সাবেক ১২ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব

tab

# দেড় বছরে আড়াইশ মানুষকে অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে চক্রটি, জড়িত ঊর্ধ্বতনরাও

সেনজেন ভিসায় লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা, বিমান কর্মচারীসহ গ্রেপ্তার ৫

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

সেনজেন ভিসাভুক্ত ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে লোক পাঠানোর নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। বাংলাদেশ বিমানের সিকিউরিটি ম্যান, কুয়েত এয়ারওয়েজের বুকিং সহকারী, কিছু জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান ও ট্রাভেল এজেন্সিসহ কম্পিউটার অপারেটর মিলে শক্তিশালী একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রতারণা করে আসছিল।

চক্রটি টুরিস্ট ভিসার কথা বলে সেনজেন ভিসাভুক্ত দেশে কোনো রকম পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এরপর পৌঁছে গেলে আর ফেরত আসতে হবে না এই বলে কারো কারো কাছ থেকে ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রটি দেড় বছরে আড়াই শতাধিক মানুষকে মধ্যপ্রাচ্য এবং সেনজেনভুক্ত বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে পাঠিয়েছে। তবে এমন প্রতারণার সঙ্গে কিছু জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান, ট্রাভেলস এজেন্সি, এয়ারলাইন্স ও কম্পিউটার অপারেটরের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বুধবার চক্রের ৫ জনকে গ্রেপ্তাররের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এমনটি জানান গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছে বিমানকর্মীও। এপিপিএনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে ডিবি পুলিশ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-২ সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- চক্রের দুই হোতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও মোহাম্মদ কবির হোসেন, বিদেশ যেতে ইচ্ছুক যাত্রী জানে আলম, সাব্বির মিয়া ও সম্রাট সওদাগর। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় তিনটি পাসপোর্ট, ৩টি জাল ভিসা, ৪টি এনআইডি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশের স্পেশাল কার্ড, ৪টি মাস্টার/ ভিসা কার্ড, ৫টি মোবাইল, ৩টি ই-টিকেট, ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা সংশ্লিষ্ট ৫/৬ পাতা জাল ডকুমেন্ট, ১টি ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং নগদ ১৬ হাজার টাকা।

ডিবি পুলিশ বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৩ যাত্রী স্বীকার করেছেন ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা দালালদের দিয়ে অবৈধ পথে ফ্রান্স, ইতালি এবং গ্রিসে যাচ্ছিলেন তারা। আর দুই হোতার বক্তব্যে উঠে এসেছে, বাংলাদেশ বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কয়েকজন এ চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি জানান, মানবপাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে লাখ লাখ টাকা খোয়াচ্ছে সাধারণ মানুষ। আমরা অনেকবারই বলেছি। বিভিন্ন পন্থায় তারা সেনজেন ভিসাভুক্ত ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এজন্য সক্রিয় রয়েছে দালাল চক্র। এক সময় দেখা যেত নৌপথে লিবিয়া বা ইউরোপিয়ান দেশ ইতালিতে যাওয়ার পথে অনেকে মারা যেতেন। অনেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতেন। এরপর জেল খাটতেন। কেউ কেউ কাজও পেয়ে যেতেন। এখন এ পন্থায় ইউরোপ যাওয়ার পথ কঠিন হচ্ছে। এখন নতুন পন্থা অবলম্বন করছে দালাল চক্রের সদস্যরা।

চক্রটির কাজ হচ্ছে- বিমানবন্দরে কোনো রকমে ঢুকিয়ে দেওয়া। ট্রাভেল এজেন্সি টিকিট করে দেয়। ইউরোপিয়ান কোনো দেশে যাওয়ার জন্য সে টিকিট পেয়ে বিমানবন্দরে ঢোকে। বোর্ডিং আনতে গেলে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশ বিমানের সিকিউরিটি ম্যান ও কুয়েত এয়ারওয়েজের বুকিং সহকারী তাদের কাগজপত্র দেখে বলে সব ঠিক আছে। ইমিগ্রেশনেও চেক করা হয় না। বিদেশগামী ভুক্তভোগীরা কিছু না বুঝে ভুয়া বোর্ডিং কার্ড নিয়ে বিমানে উঠে চলে যায়।

এভাবে প্রথম গন্তব্য বাংলাদেশ থেকে তারা উড়াল দিলেও অনেক সময় তারা মধ্যবর্তী স্থান ট্রানজিট পয়েন্টে আটকে যায়। কখনো সর্বশেষ ফ্রান্স, জার্মান অথবা ইউরোপে গিয়ে আটক হয়। কারণ এসব জায়গায় চেক করতে গিয়ে দেখে ভুয়া। তখন কাউকে দেশে পাঠায়। কাউকে জেলে পাঠায়। যারা জেলে যায় তারা পরবর্তীতে কেউ কেউ কাজও পেয়ে যায়। চক্রের সদস্যরা এই সুযোগটি নেয়। বলে, মামলা করে জেল থেকে ছুটে বের হতে পারবেন।

বুধবার একই কায়দায় লোক পাঠানোর বিষয়টি টের পান এপিবিএন সদস্যরা। পরে এপিবিএন ডিবি পুলিশকে খবর দিলে এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি প্রধান বলেন, ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়ে অসাধু চক্রের খপ্পরে পড়ে যারা বিদেশে যাচ্ছে, তারা তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমরা বার বার বলছি, সাবধান করছি। জালিয়াতি বা প্রতারণার খপ্পরে পড়ছি কি-না তা চেক করার জায়গা তো আছে। আমরা চেক করলে, ভেরিফিকেশন করলেই তো বোঝা যায়।

গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, এয়ারলাইন্সের সিনিয়র কর্মকর্তা, সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার, সুপারভাইজাররা জড়িত থাকতে পারে। যদি জড়িতই না থাকবে, তাহলে এয়ারলাইন্সের সিনিয়র কর্মকর্তারা কীভাবে অনায়াসে বোর্ডিং পাস দিয়ে দেয়। তাদের সম্পর্কে আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। অবৈধ লোকদের ব্যাপারে তারা কেন কঠোর হয় না, টিকিট বোর্ডিং পেয়ে যাচ্ছে, বিদেশেও চলে যাচ্ছে। এটা তো হতে পারে না।

গ্রেপ্তার পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে আমরা জেনেছি, পুরো চক্র মিলে আড়াইশ মানুষকে টুরিস্ট ভিসায় বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। যাদের অনেকে মানবেতর জীবন যাপনের পর দেশে ফিরে এসেছে। কেউ এখনো জেল খাটছে। এই চক্রটির সঙ্গে বিমানের সিনিয়র কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারেন বলে আমাদের ধারণা। কারণ আড়াইশ লোক বিদেশ যেতে পেরেছে অবৈধ পন্থায়! আমরা অবশ্যই রিমান্ডে নিয়ে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। কারণ এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের কিছু দালাল চক্রের সদস্যরাও রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, বিমান বাংলাদেশের নিয়োগের প্রশ্নফাঁস থেকে শুরু করে অনেক কিছুর ব্যাপারে আমরা তদন্ত করেছি। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের বাইরে পিছপা হইনি আমরা। তদন্ত শেষ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব।

back to top