কোনো কাজই হয়নি। অথচ শতাধিক শিক্ষা ভবন নির্মাণ ও পুরোনো ভবন সংস্কারের নামে বিল ভাগিয়ে নিয়েছেন ঠিকাদাররা। বিল নিয়ে কেউ মারা গেছেন, কেউ কেউ যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। বাকিরা কাজ বন্ধ রেখেছেন। এ কাজে প্রকৌশলীদেরও যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ে। এই অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সব (পাঁচজন) সহকারী প্রকৌশলীকে ঢাকায় ঢেকে পাঠিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান।
সচিবের সভাপতিত্বে এই বিষয়ে সোমবার ২৫ মার্চ ২টায় রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক সভা হবার কথা রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছে। সেখানে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের পরিকল্পনা শাখার অতিরিক্ত সচিব (আবদুল মতিন), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক নেহাল আহমেদকেও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব আবদুল মতিন রোববার (২৪ মার্চ) সংবাদকে বলেন, ‘সিলেট জোনের বিষয়ে একটি মিটিং ডাকা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বিভাগ থেকে।’
মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, সিলেটে গত পাঁচ বছরের সব কাজের হিসেব চাওয়া হবে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। সভার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়েছে, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন সিলেট বিভাগের আওতায় ১ম পর্যায়ে সিলেট জেলায় বিগত পাঁচ বছরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত/বাস্তবায়নাধীন এডিপিভুক্ত, পরিচালন বাজেটভুক্ত কর্মসূচি ও মেরামত সংরক্ষণ কাজের প্রকল্পের অগ্রগতি/বর্তমান অবস্থা নিয়ে একটি পর্যালোচনা সভা ২৫ মার্চ দুপুর ২টায় এ বিভাগের সভাপতিত্বে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।’
ইইডির একাধিক জেষ্ঠ্য প্রকৌশলী সংবাদকে জানিয়েছেন, সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ে অন্তত ১২০টির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারের নামে অগ্রিম বিল ‘ভাগ-ভাটোয়ারা’ করা হয়েছে।
জানা গেছে, সিলেট সদরেরর শাহজালাল বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি অবকাঠামো নির্মাণ কাজের জন্য গত অর্থবছরে প্রায় ৬০ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছে।
একই জেলায় দক্ষিণ সুরমার আবদুল আহাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও রেঙ্গা হাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে কাজের জন্য প্রায় ৮০ লাখ টাকা, ইয়াহিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কাজের জন্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা ও জমিরন নেছা একাডেমিতে প্রায় ২০ লাখ টাকা অগ্রিম দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিলেটের গোয়াইনঘাটের বীর মংগল উচ্চ বিদ্যালয় ও কানাইঘাটের সুরইঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ে কাজের জন্যও অগ্রিম বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া সিলেটের গোলাপগঞ্জের আতাহারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে একটি অবকাঠামো নির্মাণ কাজের জন্য গত অর্থবছরে প্রায় ৪০ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ এবং জেলার রমিজা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কাজের জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকা অগ্রিম বিল দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ ও সংস্কার কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
সিলেট আঞ্চলিক কর্যালয়ের একজন সহকারী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়ছেন, অগ্রিম বিল নেয়ার পর অন্তত দু’জন ঠিকাদার মারা গেছেন। দু’তিনটি করে কাজের জন্য অগ্রিম বিল নিয়ে দু’তিনজন ঠিকাদার যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। এ কারণে ওইসব কাজ শুরু হয়নি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সিলেট জোন অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার নাজমুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি তা ধরেননি। নাজমুল ইসলাম গত বছরের ২২ আগস্ট সিলেট জোন অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন।
তবে অগ্রিম বিল পরিশোধের সময় ইইডির সিলেট জোন অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন নজরুল হাকিম। ওই ঘটনার পর তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। পদোন্নতি পেয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হয়েছেন। বর্তমানে নজরুল হাকিম সংস্থার ময়মনসিংহ সার্কেল অফিসের দায়িত্বে আছেন।
অগ্রিম বিল পরিশোধের বিষয়ে নজরুল হাকিম সম্প্রতি সংবাদকে বলেন, জুনের শেষ সময়ে বিল ছাড় করা হয়। তখন সবকিছু যাচাই-বাছাই করার সময় থাকে না। ওই সময় কিছু কাজের বিল ‘এদিক-সেদিক’ হলে সেটি পরে ‘রিকভার’ করা হয়।
একজন ঠিকাদার জানিয়েছেন, দু’একটি কাজের জন্য অগ্রিম বিল নেয়ার পরও তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ ওইসব কাজ ২০১৮ সালের সরকার নির্ধারিত ‘দর’ অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এরপর থেকে রড, সিমেন্ট, ইট, শুরকিসহ সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দাম ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে।
রোববার, ২৪ মার্চ ২০২৪
কোনো কাজই হয়নি। অথচ শতাধিক শিক্ষা ভবন নির্মাণ ও পুরোনো ভবন সংস্কারের নামে বিল ভাগিয়ে নিয়েছেন ঠিকাদাররা। বিল নিয়ে কেউ মারা গেছেন, কেউ কেউ যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। বাকিরা কাজ বন্ধ রেখেছেন। এ কাজে প্রকৌশলীদেরও যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ে। এই অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সব (পাঁচজন) সহকারী প্রকৌশলীকে ঢাকায় ঢেকে পাঠিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান।
সচিবের সভাপতিত্বে এই বিষয়ে সোমবার ২৫ মার্চ ২টায় রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক সভা হবার কথা রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছে। সেখানে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের পরিকল্পনা শাখার অতিরিক্ত সচিব (আবদুল মতিন), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক নেহাল আহমেদকেও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব আবদুল মতিন রোববার (২৪ মার্চ) সংবাদকে বলেন, ‘সিলেট জোনের বিষয়ে একটি মিটিং ডাকা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বিভাগ থেকে।’
মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, সিলেটে গত পাঁচ বছরের সব কাজের হিসেব চাওয়া হবে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। সভার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়েছে, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন সিলেট বিভাগের আওতায় ১ম পর্যায়ে সিলেট জেলায় বিগত পাঁচ বছরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত/বাস্তবায়নাধীন এডিপিভুক্ত, পরিচালন বাজেটভুক্ত কর্মসূচি ও মেরামত সংরক্ষণ কাজের প্রকল্পের অগ্রগতি/বর্তমান অবস্থা নিয়ে একটি পর্যালোচনা সভা ২৫ মার্চ দুপুর ২টায় এ বিভাগের সভাপতিত্বে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।’
ইইডির একাধিক জেষ্ঠ্য প্রকৌশলী সংবাদকে জানিয়েছেন, সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ে অন্তত ১২০টির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারের নামে অগ্রিম বিল ‘ভাগ-ভাটোয়ারা’ করা হয়েছে।
জানা গেছে, সিলেট সদরেরর শাহজালাল বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি অবকাঠামো নির্মাণ কাজের জন্য গত অর্থবছরে প্রায় ৬০ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছে।
একই জেলায় দক্ষিণ সুরমার আবদুল আহাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও রেঙ্গা হাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে কাজের জন্য প্রায় ৮০ লাখ টাকা, ইয়াহিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কাজের জন্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা ও জমিরন নেছা একাডেমিতে প্রায় ২০ লাখ টাকা অগ্রিম দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিলেটের গোয়াইনঘাটের বীর মংগল উচ্চ বিদ্যালয় ও কানাইঘাটের সুরইঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ে কাজের জন্যও অগ্রিম বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া সিলেটের গোলাপগঞ্জের আতাহারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে একটি অবকাঠামো নির্মাণ কাজের জন্য গত অর্থবছরে প্রায় ৪০ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ এবং জেলার রমিজা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কাজের জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকা অগ্রিম বিল দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ ও সংস্কার কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
সিলেট আঞ্চলিক কর্যালয়ের একজন সহকারী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়ছেন, অগ্রিম বিল নেয়ার পর অন্তত দু’জন ঠিকাদার মারা গেছেন। দু’তিনটি করে কাজের জন্য অগ্রিম বিল নিয়ে দু’তিনজন ঠিকাদার যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। এ কারণে ওইসব কাজ শুরু হয়নি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সিলেট জোন অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার নাজমুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি তা ধরেননি। নাজমুল ইসলাম গত বছরের ২২ আগস্ট সিলেট জোন অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন।
তবে অগ্রিম বিল পরিশোধের সময় ইইডির সিলেট জোন অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন নজরুল হাকিম। ওই ঘটনার পর তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। পদোন্নতি পেয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হয়েছেন। বর্তমানে নজরুল হাকিম সংস্থার ময়মনসিংহ সার্কেল অফিসের দায়িত্বে আছেন।
অগ্রিম বিল পরিশোধের বিষয়ে নজরুল হাকিম সম্প্রতি সংবাদকে বলেন, জুনের শেষ সময়ে বিল ছাড় করা হয়। তখন সবকিছু যাচাই-বাছাই করার সময় থাকে না। ওই সময় কিছু কাজের বিল ‘এদিক-সেদিক’ হলে সেটি পরে ‘রিকভার’ করা হয়।
একজন ঠিকাদার জানিয়েছেন, দু’একটি কাজের জন্য অগ্রিম বিল নেয়ার পরও তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ ওইসব কাজ ২০১৮ সালের সরকার নির্ধারিত ‘দর’ অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এরপর থেকে রড, সিমেন্ট, ইট, শুরকিসহ সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দাম ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে।