alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

উড়োজাহাজ লিজে অনিয়ম: বিমানের সাবেক এমডিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

মিশর থেকে দুটি উড়োজাহাজ ভাড়া নিয়ে রাষ্ট্রের ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা ‘গচ্চা’ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিময় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক); যাতে বিমানের সাবেক এমডি ও সিইও কেভিন জন স্টিলসহ নতুন নাম এসেছে সাতজনের।

বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে এজাহারভুক্ত ২৩ জনের মধ্যে ১৪ জনের সঙ্গে অভিযোগের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এতে করে আগের এজাহারে থাকা নয় আসামি ও নতুন করে নাম আসা সাতজনসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান এ মামলার তদন্ত কমকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক আনোয়ারুল হক।

নতুন যুক্ত হওয়া সাত আসামির মধ্যে রয়েছেন ২০১৩ সালের মার্চ থেকে ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশের সাবেক এমডি ও সিইও কেভিন জন স্টিল (৭২), বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাবেক সহকারী পরিচালক ও বর্তমান উপ-পরিচালক আব্দুল কাদির (৫৩), সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সফিউল আজম (৪৫), দেওয়ান রাশেদ উদ্দিন (৪০), বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল কর্মকর্তা হীরালাল চক্রবর্তী (৫৫), প্রিন্সিপাল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার অশোক কুমার সর্দার (৫২) ও প্রকৌশলী কর্মকর্তা লুৎফর রহমান (৫৫)।

এজাহারে নাম থাকা নয়জন হলেন- ফ্লাইট অপারেশন্স বিভাগের সাবেক পরিচালক ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ (৬৩), বিমান বাংলাদেশের সাবেক ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার (অব.) শফিকুল আলম সিদ্দিক (এসএ সিদ্দিক), সাবেক প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ হানিফ (৬৪), দেবেশ চৌধুরী (৬৪), বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাবেক ইন্সপেক্টর অব এয়ারক্রাফট গোলাম সারওয়ার (৭৪), বিমান বাংলাদেশের সাবেক এয়ারক্রাফট মেকনিক বর্তমানে প্রকৌশলী কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম ভূইয়া (৫২), প্রিন্সিপাল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার শরীফ রুহুল কুদ্দুস (৪৯), সাবেক উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান (৬৩) ও অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার অফিসার জাহিদ হোসেন (৫৮)।

এর আগে ৯ এপ্রিল দুদকের কমিশন বৈঠকে অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিলের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।

ইজিপ্ট এয়ার থেকে পাঁচ বছরের জন্য বিমান বাংলাদেশের দুটি বোয়িং উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার পর তা ২০১৯ সালে ফেরত দেওয়া হয়। এজন্য দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১৩ সালে। এ দুটো উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিমানের ২৩ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে সাবেক এমডি কেভিন জন স্টিলের বিরুদ্ধে ‘নিজে লাভবান হয়ে অপরকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে’ বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইজিপ্ট (মিশর) এয়ারের সঙ্গে অসম ইজারা চুক্তি করার কথা বলা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পুরোনো ও ত্রুটিপূর্ণ দুটি ৭৭৭-২০০ ইআর মিশরীয় বিমান ভাড়া নেওয়ার পক্ষে অবাস্তব, ভুল যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে বোর্ডকে প্রভাবিত করে কেভিন জন স্টিল বোর্ডের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন আদায় করেছেন।

বিমানের সাবেক এই এমডির বিরুদ্ধে নিজের অনুগত অসাধু কর্মকর্তাদের লিজগ্রহণ-সংক্রান্ত বিভিন্ন টিমের দলনেতাসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসিয়ে ফরমায়েশি প্রতিবেদন আদায় করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের ১ হাজার ১৬৪ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরাধ আইনের ৫(২) ধারা অনুযায়ী জন স্টিলসহ অন্য আসামিরা ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ করেছেন বলে অভিযোগপত্রে যুক্তি দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ২০২৩ সালে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, ব্যক্তিগত লাভের জন্য কর্মকর্তারা আরও ভালো উড়োজাহাজ রেখে নষ্ট ও বসে থাকা দুটি উড়োজাহাজ পাঁচ বছরের জন্য ভাড়ায় এনে এক বছরও চালাতে পারেনি। উল্টো বসিয়ে বসিয়ে সেগুলোর মেরামত খরচ ও ভাড়া গুনতে হয়েছে। উড়োজাহাজ দুটি ফেরত দেওয়া পর্যন্ত তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মোট এক হাজার ১৬১ টাকার ‘ক্ষতিসাধন পূর্বক আত্মসাৎ’ করেছেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।

ভাড়া নেওয়া উড়োজাহাজ দুটি সচল রাখার জন্য ইজিপ্ট এয়ার থেকে আরও চারটি ইঞ্জিন ইজারা নেওয়া হয় এবং সেগুলোও নষ্ট হয়ে যায়। অসৎ উদ্দেশ্য ও দুর্বল চুক্তির কারণে ফেরত দিতে না পারায় ইজারার পুরো সময় সম্পন্ন করে ২০১৯ সালের শেষে উড়োজাহাজগুলো ফেরত দেওয়া হয় বলে এজাহারে বলা হয়েছে।

মামলার দায়েরের পর ২০২৩ সালের ৭ ফ্রেব্রুয়ারি দুদকের ওই সময়ের সচিব মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, “আমাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে টেন্ডার প্রক্রিয়াতে অনিয়ম দেখা গেছে। যদি কর্মাশিয়াল সেটেলমেন্টের মাধ্যমে উড়োজাহাজগুলো ফেরত দেয়া যেত তাহলে ক্ষয়-ক্ষতি এড়ানো যেত।”

রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতির এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকায় এজাহারে থাকা ১৪ জনকে আসামি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিচালক আনোয়ারুল হক।

তারা হলেন-বিমান বাংলাদেশের প্রধান প্রকৌশলী এ আর এম কায়সার জামান, মহাব্যবস্থাপক আবদুর রহমান ফারুকী, ডিজিএম কামাল উদ্দিন আহমেদ, সাবেক ক্যাপ্টেন মো. নজরুল ইসলাম শামিম, উপ-মহাব্যবস্থাপক জিয়া আহমেদ, সাবেক চিফ পার্সার কাজী মোসাদ্দেক আলী, ফ্লাইট পার্সার শহিদুল্লাহ কায়সার ডিউক, ডিজিএম আজাদ রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল কাদির, সহকারী ব্যবস্থাপক মো. ফজলুল হক বসুনিয়া, ব্যবস্থাপক মো. আতাউর রহমান, চিফ পার্সার মোহাম্মদ সাজ্জাদ উল হক (শাহিন), ফ্লাইট পার্সার শাহনাজ বেগম ঝর্ণা ও সাবেক চিফ ইঞ্জিনিয়ার গাজী মাহমুদ ইকবাল।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির গঠন করে দেওয়া একটি উপ-কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মিশরীয় উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ায় অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে।

অনুসন্ধান শেষে ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিমান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

এজাহারে বলা হয়, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বিমান দরপত্র আহ্বানের পর চারটি কোম্পানি অংশ নেয়। এরপর টেকনিক্যাল ফিনান্সিয়াল উপ-কমিটি ইজিপ্ট এয়ারকে উড়োজাহাজ সরবরাহের জন্য ঠিক করে। উড়োজাহাজের কনফিগারেশনে দেখা যায়, ইজিপ্ট এয়ারের বোয়িং দুটির ইঞ্জিন ছিল প্যাট অ্যান্ড হুইটনি কোম্পানির, যা অনেক পুরোনো এবং দুর্বল এবং তার মেয়াদোত্তীর্ণ যন্ত্রাংশ পাওয়া খুব কঠিন। এগুলো চালু ছিল না, সাত মাস ধরে গুদামে বসিয়ে রাখা ছিল।

অন্যদিকে তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড কোম্পানির বোয়িং দুটির ইঞ্জিন ছিল রোলস রয়েসের তৈরি। এগুলো তখন সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে চলছিল। এখানে দরদাম করার সুযোগ ছিল।

ইজিপ্ট এয়ারের উড়োজাহাজ দুটি দেখতে কর্মকর্তারা দল বেঁধে দফায় দফায় মিশরে যান। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, উড়োজাহাজ দুটির মেরামত কাজ বাকি আছে। নিয়ম অনুযায়ী, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ বাকি থাকলে এয়ারক্রাফট তার উড্ডয়ন যোগ্যতা হারায়। এর কী কী কাজ বাকি আছে, তা পরিদর্শন টিম অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতিবেদনে বলেনি।

আরেকটি দলের প্রতিবেদনে ইঞ্জিনে তেল ক্ষরণের কথা বলা হয়।

দরপত্র অনুযায়ী, ইঞ্জিনের কমপক্ষে চার হাজার সাইকেল অবশিষ্ট থাকতে হবে। অথচ একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিনের ৩ হাজার ৬১৫ সাইকেল অবশিষ্ট ছিল, আরেকটির ছিল ২১০০ সাইকেল। এমনকি সেখানে ইজিপ্ট এয়ার কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজ দুটির রক্ষণাবেক্ষণের নথি বাংলাদেশ বিমান কর্মকর্তাদের দেখাতে পারেননি।

এত বেশি সীমাবদ্ধতা থাকার পরও মিশর থেকে উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার পক্ষে বিমান কর্মকর্তারা মত দেন। অসৎ উদ্দেশ্যে বেশিরভাগ জরুরি কম্পোনেন্টগুলো বুঝে নেওয়ার সময় যাচাই করা হবে বলে কর্মকর্তারা প্রতিবেদনে বলেছিলেন।

কোনো উড়োজাহাজকে উড্ডয়নযোগ্য রাখতে সি-চেক অত্যন্ত জরুরি হলেও ইজিপ্ট এয়ারের বোয়িংগুলোর সি-চেক মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল।

বিমান কর্মকর্তাদের যে টিম উড়োজাহাজ দুটি বুঝে নেন, তারা অসৎ উদ্দেশ্যে ত্রুটিপূর্ণ ও মেরামত অযোগ্য উড়োজাহাজকে বহরে যুক্ত করার পক্ষে মত দেন। উড়োজাহাজ দুটি পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া নেওয়া হলেও মাত্র ১১ মাসের মাথায় উড়োজাহাজ দুটির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়।

উড়োজাহাজ দুটি সচল রাখার জন্য ইজিপ্ট এয়ার থেকে আরও চারটি ইঞ্জিন ভাড়া নেওয়া হয় এবং সেগুলোও নষ্ট হয়ে যায়। অসৎ উদ্দেশ্য ও দুর্বল চুক্তির কারণে ফেরত দিতে না পারলেও ভাড়ার পুরো মেয়াদ পার করেই ২০১৯ সালের শেষে উড়োজাহাজ দুটি ফেরত দেওয়া হয়।

ছবি

চুনারুঘাটে হামলা করে জমি দখলের চেষ্টায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার -৩

নোয়াখালীর শীর্ষ সন্ত্রাসী খালাসি সুমন গ্রেপ্তার.

যশোরে চাঞ্চল্যকর মিঠু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি গ্রেফতার

ছবি

সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি বিমানবন্দরে আটক

ছবি

শাহজালাল বিমানবন্দরে ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার সোনাসহ দুই নারী আটক

ছবি

কারাগার থেকে পালানো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ‘গন্ডার’কে গ্রেফতার করল র‌্যাব

ছবি

চিকিৎসকদের ওপর হামলা, গাইবান্ধা থেকে সঞ্জয় পাল গ্রেপ্তার

প্রভাবশালীদের দখলে বটতলী খাল : বানের পানি নামছে না, ভোগান্তিতে হাজার হাজার পরিবার

নোয়াখালীতে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

যমুনা সার কারখানায় চাঁদাবাজি নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মারামারি, আহত -৭

শ্রীনগরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ আহত-৩

ফরিদপুরে হত্যার দায়ে একজনের মৃত্যুদন্ড

ছবি

গণহত্যায় উস্কানি : ৩০ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ

যাত্রাবাড়ীতে অন্তঃসত্ত্বার পেটে ছুরিকাঘাত গর্ভের সন্তানসহ মৃত্যু

ওসমানীতে ১৬ কেজি স্বর্ণসহ দুবাই ফেরত যাত্রী আটক

মোংলায় ছাত্রকে বলাৎকারের ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

ছবি

র‍্যাবের ‘হেলিকপ্টার থেকে গুলি’ : সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকও হত্যা মামলার আসামি

ছবি

শেখ হাসিনার প্রশ্রয় না পেলে আনভীররা বেপরোয়া হতো না : মুনিয়ার বোন

ছবি

শেখ হাসিনার সঙ্গে এবার রেহানা, জয় এবং পুতুলও আসামি

নরসিংদীতে ডিম ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

সাবেক আইজিপি মামুনসহ ১৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ‘হত্যাচেষ্টা’ মামলা

যশোরে ইটভাটা শ্রমিক রওশনারা হত্যা মামলায় প্রেমিক আলাউদ্দিনের যাবজ্জীবন

ছবি

সাভারে সাবেক দুই এমপিসহ ১১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

ছবি

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ঘুষবাণিজ্যের তদন্তে দুদক

ছবি

র‍্যানসমওয়্যার হামলাকারীদের চুরি করা তথ্য ব্যবহার নিয়ে সফোসের প্রতিবেদন প্রকাশ

ছবি

কর্মীদের ওপর হামলা ও স্থাপনার ক্ষতিসাধনের বিচার দাবি সাইনোভিয়া ফার্মার

ছবি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রীরা ও আওয়ামী লীগসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

‘গুলি করি, মরে একটা, আহত হয় একটা...’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা

ছবি

মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংক দখলের চেষ্টা, গুলিতে আহত ৬

ছবি

ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা, গুলিবিদ্ধ ৬

ছবি

মোরেলগঞ্জে পুলিশসহ ১০ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হামলা-ভাঙচুর

হবিগঞ্জে সেনা সদস্য পরিচয়ে পুলিশ ফাঁড়ির মোটর সাইকেল চুরি, আটক ৩

সাতক্ষীরায় আ’লীগ নেতা ও হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন

ছবি

স্বেচ্ছায় অবসরে যাচ্ছেন ছাগলকাণ্ডের সেই মতিউর

প্রশ্নফাঁস : পিএসসির ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

ছবি

সেতু ভবনে হামলা : আসিফ মাহতাব ও সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ৬ দিনের রিমান্ডে

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

উড়োজাহাজ লিজে অনিয়ম: বিমানের সাবেক এমডিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

মিশর থেকে দুটি উড়োজাহাজ ভাড়া নিয়ে রাষ্ট্রের ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা ‘গচ্চা’ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিময় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক); যাতে বিমানের সাবেক এমডি ও সিইও কেভিন জন স্টিলসহ নতুন নাম এসেছে সাতজনের।

বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে এজাহারভুক্ত ২৩ জনের মধ্যে ১৪ জনের সঙ্গে অভিযোগের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এতে করে আগের এজাহারে থাকা নয় আসামি ও নতুন করে নাম আসা সাতজনসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান এ মামলার তদন্ত কমকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক আনোয়ারুল হক।

নতুন যুক্ত হওয়া সাত আসামির মধ্যে রয়েছেন ২০১৩ সালের মার্চ থেকে ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশের সাবেক এমডি ও সিইও কেভিন জন স্টিল (৭২), বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাবেক সহকারী পরিচালক ও বর্তমান উপ-পরিচালক আব্দুল কাদির (৫৩), সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সফিউল আজম (৪৫), দেওয়ান রাশেদ উদ্দিন (৪০), বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল কর্মকর্তা হীরালাল চক্রবর্তী (৫৫), প্রিন্সিপাল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার অশোক কুমার সর্দার (৫২) ও প্রকৌশলী কর্মকর্তা লুৎফর রহমান (৫৫)।

এজাহারে নাম থাকা নয়জন হলেন- ফ্লাইট অপারেশন্স বিভাগের সাবেক পরিচালক ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ (৬৩), বিমান বাংলাদেশের সাবেক ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার (অব.) শফিকুল আলম সিদ্দিক (এসএ সিদ্দিক), সাবেক প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ হানিফ (৬৪), দেবেশ চৌধুরী (৬৪), বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাবেক ইন্সপেক্টর অব এয়ারক্রাফট গোলাম সারওয়ার (৭৪), বিমান বাংলাদেশের সাবেক এয়ারক্রাফট মেকনিক বর্তমানে প্রকৌশলী কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম ভূইয়া (৫২), প্রিন্সিপাল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার শরীফ রুহুল কুদ্দুস (৪৯), সাবেক উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান (৬৩) ও অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার অফিসার জাহিদ হোসেন (৫৮)।

এর আগে ৯ এপ্রিল দুদকের কমিশন বৈঠকে অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিলের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।

ইজিপ্ট এয়ার থেকে পাঁচ বছরের জন্য বিমান বাংলাদেশের দুটি বোয়িং উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার পর তা ২০১৯ সালে ফেরত দেওয়া হয়। এজন্য দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১৩ সালে। এ দুটো উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিমানের ২৩ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে সাবেক এমডি কেভিন জন স্টিলের বিরুদ্ধে ‘নিজে লাভবান হয়ে অপরকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে’ বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইজিপ্ট (মিশর) এয়ারের সঙ্গে অসম ইজারা চুক্তি করার কথা বলা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পুরোনো ও ত্রুটিপূর্ণ দুটি ৭৭৭-২০০ ইআর মিশরীয় বিমান ভাড়া নেওয়ার পক্ষে অবাস্তব, ভুল যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে বোর্ডকে প্রভাবিত করে কেভিন জন স্টিল বোর্ডের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন আদায় করেছেন।

বিমানের সাবেক এই এমডির বিরুদ্ধে নিজের অনুগত অসাধু কর্মকর্তাদের লিজগ্রহণ-সংক্রান্ত বিভিন্ন টিমের দলনেতাসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসিয়ে ফরমায়েশি প্রতিবেদন আদায় করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের ১ হাজার ১৬৪ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরাধ আইনের ৫(২) ধারা অনুযায়ী জন স্টিলসহ অন্য আসামিরা ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ করেছেন বলে অভিযোগপত্রে যুক্তি দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ২০২৩ সালে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, ব্যক্তিগত লাভের জন্য কর্মকর্তারা আরও ভালো উড়োজাহাজ রেখে নষ্ট ও বসে থাকা দুটি উড়োজাহাজ পাঁচ বছরের জন্য ভাড়ায় এনে এক বছরও চালাতে পারেনি। উল্টো বসিয়ে বসিয়ে সেগুলোর মেরামত খরচ ও ভাড়া গুনতে হয়েছে। উড়োজাহাজ দুটি ফেরত দেওয়া পর্যন্ত তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মোট এক হাজার ১৬১ টাকার ‘ক্ষতিসাধন পূর্বক আত্মসাৎ’ করেছেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।

ভাড়া নেওয়া উড়োজাহাজ দুটি সচল রাখার জন্য ইজিপ্ট এয়ার থেকে আরও চারটি ইঞ্জিন ইজারা নেওয়া হয় এবং সেগুলোও নষ্ট হয়ে যায়। অসৎ উদ্দেশ্য ও দুর্বল চুক্তির কারণে ফেরত দিতে না পারায় ইজারার পুরো সময় সম্পন্ন করে ২০১৯ সালের শেষে উড়োজাহাজগুলো ফেরত দেওয়া হয় বলে এজাহারে বলা হয়েছে।

মামলার দায়েরের পর ২০২৩ সালের ৭ ফ্রেব্রুয়ারি দুদকের ওই সময়ের সচিব মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, “আমাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে টেন্ডার প্রক্রিয়াতে অনিয়ম দেখা গেছে। যদি কর্মাশিয়াল সেটেলমেন্টের মাধ্যমে উড়োজাহাজগুলো ফেরত দেয়া যেত তাহলে ক্ষয়-ক্ষতি এড়ানো যেত।”

রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতির এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকায় এজাহারে থাকা ১৪ জনকে আসামি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিচালক আনোয়ারুল হক।

তারা হলেন-বিমান বাংলাদেশের প্রধান প্রকৌশলী এ আর এম কায়সার জামান, মহাব্যবস্থাপক আবদুর রহমান ফারুকী, ডিজিএম কামাল উদ্দিন আহমেদ, সাবেক ক্যাপ্টেন মো. নজরুল ইসলাম শামিম, উপ-মহাব্যবস্থাপক জিয়া আহমেদ, সাবেক চিফ পার্সার কাজী মোসাদ্দেক আলী, ফ্লাইট পার্সার শহিদুল্লাহ কায়সার ডিউক, ডিজিএম আজাদ রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল কাদির, সহকারী ব্যবস্থাপক মো. ফজলুল হক বসুনিয়া, ব্যবস্থাপক মো. আতাউর রহমান, চিফ পার্সার মোহাম্মদ সাজ্জাদ উল হক (শাহিন), ফ্লাইট পার্সার শাহনাজ বেগম ঝর্ণা ও সাবেক চিফ ইঞ্জিনিয়ার গাজী মাহমুদ ইকবাল।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির গঠন করে দেওয়া একটি উপ-কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মিশরীয় উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ায় অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে।

অনুসন্ধান শেষে ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিমান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

এজাহারে বলা হয়, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বিমান দরপত্র আহ্বানের পর চারটি কোম্পানি অংশ নেয়। এরপর টেকনিক্যাল ফিনান্সিয়াল উপ-কমিটি ইজিপ্ট এয়ারকে উড়োজাহাজ সরবরাহের জন্য ঠিক করে। উড়োজাহাজের কনফিগারেশনে দেখা যায়, ইজিপ্ট এয়ারের বোয়িং দুটির ইঞ্জিন ছিল প্যাট অ্যান্ড হুইটনি কোম্পানির, যা অনেক পুরোনো এবং দুর্বল এবং তার মেয়াদোত্তীর্ণ যন্ত্রাংশ পাওয়া খুব কঠিন। এগুলো চালু ছিল না, সাত মাস ধরে গুদামে বসিয়ে রাখা ছিল।

অন্যদিকে তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড কোম্পানির বোয়িং দুটির ইঞ্জিন ছিল রোলস রয়েসের তৈরি। এগুলো তখন সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে চলছিল। এখানে দরদাম করার সুযোগ ছিল।

ইজিপ্ট এয়ারের উড়োজাহাজ দুটি দেখতে কর্মকর্তারা দল বেঁধে দফায় দফায় মিশরে যান। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, উড়োজাহাজ দুটির মেরামত কাজ বাকি আছে। নিয়ম অনুযায়ী, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ বাকি থাকলে এয়ারক্রাফট তার উড্ডয়ন যোগ্যতা হারায়। এর কী কী কাজ বাকি আছে, তা পরিদর্শন টিম অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতিবেদনে বলেনি।

আরেকটি দলের প্রতিবেদনে ইঞ্জিনে তেল ক্ষরণের কথা বলা হয়।

দরপত্র অনুযায়ী, ইঞ্জিনের কমপক্ষে চার হাজার সাইকেল অবশিষ্ট থাকতে হবে। অথচ একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিনের ৩ হাজার ৬১৫ সাইকেল অবশিষ্ট ছিল, আরেকটির ছিল ২১০০ সাইকেল। এমনকি সেখানে ইজিপ্ট এয়ার কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজ দুটির রক্ষণাবেক্ষণের নথি বাংলাদেশ বিমান কর্মকর্তাদের দেখাতে পারেননি।

এত বেশি সীমাবদ্ধতা থাকার পরও মিশর থেকে উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার পক্ষে বিমান কর্মকর্তারা মত দেন। অসৎ উদ্দেশ্যে বেশিরভাগ জরুরি কম্পোনেন্টগুলো বুঝে নেওয়ার সময় যাচাই করা হবে বলে কর্মকর্তারা প্রতিবেদনে বলেছিলেন।

কোনো উড়োজাহাজকে উড্ডয়নযোগ্য রাখতে সি-চেক অত্যন্ত জরুরি হলেও ইজিপ্ট এয়ারের বোয়িংগুলোর সি-চেক মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল।

বিমান কর্মকর্তাদের যে টিম উড়োজাহাজ দুটি বুঝে নেন, তারা অসৎ উদ্দেশ্যে ত্রুটিপূর্ণ ও মেরামত অযোগ্য উড়োজাহাজকে বহরে যুক্ত করার পক্ষে মত দেন। উড়োজাহাজ দুটি পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া নেওয়া হলেও মাত্র ১১ মাসের মাথায় উড়োজাহাজ দুটির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়।

উড়োজাহাজ দুটি সচল রাখার জন্য ইজিপ্ট এয়ার থেকে আরও চারটি ইঞ্জিন ভাড়া নেওয়া হয় এবং সেগুলোও নষ্ট হয়ে যায়। অসৎ উদ্দেশ্য ও দুর্বল চুক্তির কারণে ফেরত দিতে না পারলেও ভাড়ার পুরো মেয়াদ পার করেই ২০১৯ সালের শেষে উড়োজাহাজ দুটি ফেরত দেওয়া হয়।

back to top