এমপি আজীম খুন
এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মোটিভ রাজনৈতিক ক্ষমতা বদলের দিকে মোড় নেয়ার পর প্রতিদিনই নিত্যনতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। এর মধ্যে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে আক্তারুজ্জামান শাহিনের পর অর্থ দাতা হিসেবে আলোচনায় আসা ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর সংশ্লিষ্টতাও পেয়েছে গোয়েন্দারা।
তদন্তকারী সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমপি আজীম পৃথিবীতে না থাকলে কি হবে? তার স্বর্ণ পাচার সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিবেন কে আর এমপির গদিতে কে বসবেন? সেই হিসেবই বলে দিচ্ছে নেপথ্য কাহিনী। আর এই হিসেব কষে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়েছেন আক্তারুজ্জামান শাহিন ও আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু। কেননা আজীম না থাকলে মনোনয়ন পাবেন মিন্টু আর শাহিন হবেন চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের প্রধান।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মিন্টু যখন আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে হত্যার বিষয়ে আলোচনা করেন-তখন থেকেই নিজেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ক্রমেই যাতে তার সংশ্লিষ্টতা বুঝতে না পারে সেজন্য শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন রিমান্ডে থাকা তার ঘনিষ্ঠ আরেক আওয়ামী লীগ নেতা গ্যাস বাবুর মাধ্যমে। শাহিন কিলিং মিশনের নেতৃত্ব দেয়া আমানউল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়াকে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজে নামান।
কিলিং মিশন শেষ করে আসার পর ২৩ মে শিমুল ভূঁইয়াকে ২ কোটি টাকা দেয়ার কথা ছিল মিন্টুর। কিন্তু তার আগেই ভাতিজা তানভিরসহ গ্রেপ্তার হয়ে যান শিমুল ভূঁইয়া। আক্তারুজ্জামান শাহিনও কয়েক ধাপে ৫ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন শিমুল ভূঁইয়াকে। কিন্তু গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়ায় সেই টাকাও আর হাতে পাননি কিলিং মিশনে অংশ নেয়া সদস্যরা।
পুলিশের তদন্তকারীদের তথ্যমতে, কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনসের অভিজাত একটি ফ্ল্যাটে গত ১৩ মে খুন করা হয় এমপি আজীম। এর আগে এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহিন ওই ফ্ল্যাট থেকে ফোন করেন মিন্টুকে। সেই ফোনালাপেই আজীম হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত প্রস্তুতির কথা জানানো হয় তাকে। অন্যদিকে শাহিনের সঙ্গে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাসবাবুর কথা হয় যে তিনটি মোবাইল ফোনে, সেই ফোনগুলো নিজ হেফাজতে নিয়ে নেন মিন্টু। এর পর ফোনগুলো হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় জিডিও করেন গ্যাসবাবু। সূত্র জানায়, কিলিং মিশন শেষে দেশে আসার পর শিমুলের সঙ্গে গ্যাস বাবুকে বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মিন্টু।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অর্থদাতা ও নির্দেশদাতা ছিলেন কিনা তা তদন্তে বের করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কিলার শিমুল ভূঁইয়া ও গ্যাস বাবুর জবানবন্দিতে কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। এ কারণে মিন্টুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তাকে ব্যাপক আকারে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সেই কারণে আমরা তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করি। পরে মিন্টুর ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
ডিবিপ্রধান বলেন, সাইদুল করিম মিন্টুকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে তিনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কতটুকু জানেন। গ্যাস বাবুর মোবাইল কেন নেয়া হলো সেটিও জিজ্ঞেস করা হবে। কিলার শিমুল ভূঁইয়া ঢাকায় আসার পর কেন মিন্টুর প্রতিনিধি গ্যাস বাবু তার সঙ্গে দেখা করলেন, জানতে চাওয়া হবে মিন্টুর কাছে। টাকা-পয়সার লেনদেন সঠিক কিনা? গ্যাস বাবুর মোবাইল নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন কিনা? এছাড়া আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে কথা বলেছেন কিনা? সবকিছু মিন্টুর কাছে জানতে চাওয়া হবে বলে জানান হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু রিমান্ডে রয়েছেন। গ্যাস বাবু স্বীকার করেছেন, আজীম হত্যাকাণ্ডের মূল ঘাতকের সঙ্গে মিটিং এবং একাধিকবার দেখা করেছেন তিনি। আক্তারুজ্জামান শাহীনের পক্ষে কাজ করেছেন শিমুল ভূঁইয়া, অন্যদিকে সাইদুল করিম মিন্টুর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন গ্যাস বাবু। গ্যাস বাবুর যে মোবাইল হারানোর কথা বলা হচ্ছে।
মোবাইলগুলো মিন্টু নিয়েছেন কিনা? জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, গ্যাস বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি প্রথমে জানিয়েছিলেন মোবাইল হারিয়ে যাওয়ায় তিনি জিডি করেছেন। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, মিন্টুর বুদ্ধিতে মোবাইল মিন্টুর কাছে দিয়ে তিনি থানায় হারানোর জিডি করেন। হারুন বলেন, গ্যাস বাবু ও সাইদুল করিম মিন্টুকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে আমরা বিস্তারিত পরে জানাবো। প্রয়োজনবোধে আবারো শিমুল ভূঁইয়াকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এর আগে আজীমকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত। এদিন তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান।
গত ১১ জুন বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ডিবি। এর দুই দিন পর তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেয়া হলো। রিমান্ড শুনাতিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে রিমান্ড শুনানির সময় বিচারক জিজ্ঞাসা করলে সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, আমি নির্দোষ, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ৪৬ বছরের রাজনীতিতে আমার খুন-খারাবির কোনো রেকর্ড নেই। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। এখন মনোনয়ন চাওয়ায় আমার অপরাধ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি ওয়ান ইলেভেনে গ্রেপ্তার হয়েছি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ১৩ বার গ্রেপ্তার হয়েছি। মানুষের জন্য রাজনীতি করেছি। কিন্তু আমাকে রাজনৈতিক কারণে ফাঁসানো হচ্ছে।
গত ৬ জুন রাতে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে আসে ডিবির একটি দল। এরপর গত ৯ জুন তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ মামলায় গত ৩ জুন আসামি সেলেস্টি রহমান, ৪ জুন তানভীর ভূঁইয়া এবং ৫ জুন সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন।
গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আজীম। তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করার পর দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়। এরপর ২২ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমপি আজীমকে কলকাতার এক বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ভারতীয় পুলিশের দেয়া তথ্যে বাংলাদেশের পুলিশ শিমুল ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
এমপি আজীম খুন
বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০২৪
এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মোটিভ রাজনৈতিক ক্ষমতা বদলের দিকে মোড় নেয়ার পর প্রতিদিনই নিত্যনতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। এর মধ্যে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে আক্তারুজ্জামান শাহিনের পর অর্থ দাতা হিসেবে আলোচনায় আসা ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর সংশ্লিষ্টতাও পেয়েছে গোয়েন্দারা।
তদন্তকারী সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমপি আজীম পৃথিবীতে না থাকলে কি হবে? তার স্বর্ণ পাচার সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিবেন কে আর এমপির গদিতে কে বসবেন? সেই হিসেবই বলে দিচ্ছে নেপথ্য কাহিনী। আর এই হিসেব কষে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়েছেন আক্তারুজ্জামান শাহিন ও আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু। কেননা আজীম না থাকলে মনোনয়ন পাবেন মিন্টু আর শাহিন হবেন চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের প্রধান।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মিন্টু যখন আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে হত্যার বিষয়ে আলোচনা করেন-তখন থেকেই নিজেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ক্রমেই যাতে তার সংশ্লিষ্টতা বুঝতে না পারে সেজন্য শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন রিমান্ডে থাকা তার ঘনিষ্ঠ আরেক আওয়ামী লীগ নেতা গ্যাস বাবুর মাধ্যমে। শাহিন কিলিং মিশনের নেতৃত্ব দেয়া আমানউল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়াকে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজে নামান।
কিলিং মিশন শেষ করে আসার পর ২৩ মে শিমুল ভূঁইয়াকে ২ কোটি টাকা দেয়ার কথা ছিল মিন্টুর। কিন্তু তার আগেই ভাতিজা তানভিরসহ গ্রেপ্তার হয়ে যান শিমুল ভূঁইয়া। আক্তারুজ্জামান শাহিনও কয়েক ধাপে ৫ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন শিমুল ভূঁইয়াকে। কিন্তু গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়ায় সেই টাকাও আর হাতে পাননি কিলিং মিশনে অংশ নেয়া সদস্যরা।
পুলিশের তদন্তকারীদের তথ্যমতে, কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনসের অভিজাত একটি ফ্ল্যাটে গত ১৩ মে খুন করা হয় এমপি আজীম। এর আগে এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহিন ওই ফ্ল্যাট থেকে ফোন করেন মিন্টুকে। সেই ফোনালাপেই আজীম হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত প্রস্তুতির কথা জানানো হয় তাকে। অন্যদিকে শাহিনের সঙ্গে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাসবাবুর কথা হয় যে তিনটি মোবাইল ফোনে, সেই ফোনগুলো নিজ হেফাজতে নিয়ে নেন মিন্টু। এর পর ফোনগুলো হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় জিডিও করেন গ্যাসবাবু। সূত্র জানায়, কিলিং মিশন শেষে দেশে আসার পর শিমুলের সঙ্গে গ্যাস বাবুকে বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মিন্টু।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অর্থদাতা ও নির্দেশদাতা ছিলেন কিনা তা তদন্তে বের করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কিলার শিমুল ভূঁইয়া ও গ্যাস বাবুর জবানবন্দিতে কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। এ কারণে মিন্টুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তাকে ব্যাপক আকারে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সেই কারণে আমরা তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করি। পরে মিন্টুর ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
ডিবিপ্রধান বলেন, সাইদুল করিম মিন্টুকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে তিনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কতটুকু জানেন। গ্যাস বাবুর মোবাইল কেন নেয়া হলো সেটিও জিজ্ঞেস করা হবে। কিলার শিমুল ভূঁইয়া ঢাকায় আসার পর কেন মিন্টুর প্রতিনিধি গ্যাস বাবু তার সঙ্গে দেখা করলেন, জানতে চাওয়া হবে মিন্টুর কাছে। টাকা-পয়সার লেনদেন সঠিক কিনা? গ্যাস বাবুর মোবাইল নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন কিনা? এছাড়া আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে কথা বলেছেন কিনা? সবকিছু মিন্টুর কাছে জানতে চাওয়া হবে বলে জানান হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু রিমান্ডে রয়েছেন। গ্যাস বাবু স্বীকার করেছেন, আজীম হত্যাকাণ্ডের মূল ঘাতকের সঙ্গে মিটিং এবং একাধিকবার দেখা করেছেন তিনি। আক্তারুজ্জামান শাহীনের পক্ষে কাজ করেছেন শিমুল ভূঁইয়া, অন্যদিকে সাইদুল করিম মিন্টুর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন গ্যাস বাবু। গ্যাস বাবুর যে মোবাইল হারানোর কথা বলা হচ্ছে।
মোবাইলগুলো মিন্টু নিয়েছেন কিনা? জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, গ্যাস বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি প্রথমে জানিয়েছিলেন মোবাইল হারিয়ে যাওয়ায় তিনি জিডি করেছেন। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, মিন্টুর বুদ্ধিতে মোবাইল মিন্টুর কাছে দিয়ে তিনি থানায় হারানোর জিডি করেন। হারুন বলেন, গ্যাস বাবু ও সাইদুল করিম মিন্টুকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে আমরা বিস্তারিত পরে জানাবো। প্রয়োজনবোধে আবারো শিমুল ভূঁইয়াকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এর আগে আজীমকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত। এদিন তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান।
গত ১১ জুন বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ডিবি। এর দুই দিন পর তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেয়া হলো। রিমান্ড শুনাতিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে রিমান্ড শুনানির সময় বিচারক জিজ্ঞাসা করলে সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, আমি নির্দোষ, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ৪৬ বছরের রাজনীতিতে আমার খুন-খারাবির কোনো রেকর্ড নেই। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। এখন মনোনয়ন চাওয়ায় আমার অপরাধ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি ওয়ান ইলেভেনে গ্রেপ্তার হয়েছি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ১৩ বার গ্রেপ্তার হয়েছি। মানুষের জন্য রাজনীতি করেছি। কিন্তু আমাকে রাজনৈতিক কারণে ফাঁসানো হচ্ছে।
গত ৬ জুন রাতে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে আসে ডিবির একটি দল। এরপর গত ৯ জুন তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ মামলায় গত ৩ জুন আসামি সেলেস্টি রহমান, ৪ জুন তানভীর ভূঁইয়া এবং ৫ জুন সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন।
গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আজীম। তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করার পর দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়। এরপর ২২ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমপি আজীমকে কলকাতার এক বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ভারতীয় পুলিশের দেয়া তথ্যে বাংলাদেশের পুলিশ শিমুল ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমানকে গ্রেপ্তার করে।