alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

মাথাচাড়া দিচ্ছে নিত্য-নতুন সাইবার অপরাধ: সিক্যাফ’র গবেষণা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ৩০ জুন ২০২৪

দেশে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধের নতুন মাত্রা। ব্যক্তিগত ক্ষতির পাশাপশি আর্থিক ক্ষতি এবং প্রলোভনে প্রকট সাইবার অপরাধ। তবে সামাজিক লোক-লজ্জার ট্যাবুতে তা থকাছে অন্তরালেই। তাই গণ-সাইবার স্বাক্ষরতার পাশাপাশি দেশের সাইবার সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজস্ব সাইবার সল্যুশন তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৯ জুন রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৪’ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উদীয়মান প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে (সিক্যাফ) অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিক্যাফ উপদেষ্টা প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান। গবেষণা প্রতিবেদন পেশ করেন সিক্যাফ গবেষণা দলের প্রধান ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক।

প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি’র মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন) ব্রিগে. জে. কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স (জি.এস.জি) বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ এ. হুসেইন, বিশ্বব্যাংক এর পরামর্শক ও আইডিয়া ফাউন্ডেশনের প্রধান গবেষক হুসেইন সামাদ, বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি’র কোষাধ্যক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার নাজমুস সালিহিন এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ।

সিক্যাফ সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপত্বিতে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নুরুন আশরাফী। অন্যান্যের মধ্যে সিক্যাফ সহ-সভাপতি এস এম ইমদাদুল হক এবং প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুল মুনয়েম সৈকত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিটিআরসি মহাপরিচালক কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যক্তিগতভাবে যত সচেতনতা বাড়ানো যাবে ততই কমানোর সম্ভব এই সাইবার অপরাধ। সচেতনতার দায়িত্ব সবাইকে সম্মিলিতভাবে পালন করতে হবে।

বিশ্বব্যাংক এর পরামর্শক হুসেইন সামাদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হয়েছে। এখন এর দক্ষ ব্যবহার দরকার। কিন্তু দেশে ৭০ শতাংশই সাইবার আক্রমণ হচ্ছে ব্যক্তিসচেতনতার অভাবে। তাই সবার সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।

মূল প্রবন্ধে মুশফিকুর রহমান বলেন, বিভিন্ন খাতে উদীয়মান প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ও সুবিধা এনেছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতার স্পষ্ট উন্নতি, যোগাযোগ ও সংযোগের উন্নতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় অবদান। কৃষি ক্ষেত্রে উদীয়মান প্রযুক্তির ব্যবহার মানব সভ্যতাকে আরো অনেক মানবিক করে তুলবে । যাইহোক, এই উন্নতির পাশাপাশি কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা সাবধানে বিবেচনা করার দাবি করে। এই উদ্বেগগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্ভাব্য গোপনীয়তা ও সুরক্ষা ঝুঁকি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি, প্রযুক্তির উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি। উদীয়মান প্রযুক্তির সামাজিক সুবিধাগুলো সর্বাধিক করতে, একটি বহুমুখী পদ্ধতি প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে নাগরিকদের অধিকার ও গোপনীয়তা রক্ষা করে এমন নীতি ও বিধিমালা তৈরি করা। মুশফিক বলেন, পুনঃপ্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বিকাশকে উৎসাহিত করা জরুরী। উদীয়মান প্রযুক্তির যুগে জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনা সর্বোপরি হওয়া উচিত। এই লক্ষ্যে, দেশীয় শিক্ষাগত গবেষণা, শিল্প ক্ষেত্রে উদ্ভাবন এবং স্থানীয় সফ্টওয়্যার ও সমাধানের উন্নয়নকে উৎসাহিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতি কেবল প্রযুক্তি অর্জনে বিদেশী মুদ্রার ব্যয়ের উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেবে না, বরং দেশীয়ভাবে তৈরি প্রযুক্তিগত সফ্টওয়্যার ও বিভিন্ন সলিউশনস রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন পথ খুলে দিয়ে জাতীয় উন্নতিতে অবদান রাখবে ।

নাজমুস সালেহিন বলেন, অনলাইন গ্যাম্বিলিংয়ের আড়ালে আছে মানিলন্ডারিং। তবে একে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোর ব্যাংকিং খাতে সহসাই একটি বিপদ আসছে।

ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ৪টি ধারা ছাড়া সাইবার অপরাধ আইন ২০১৩ এর সবগুলো ধারাই হ্যাকিংয়ের আওতায় থাকলেও তা জামিনযোগ্য। এতে আমরা অনেক অপরাধীকেই শস্তির অধীনে আনতে সমস্যা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা দেরিতে নালিশ করায় আইনের সুরক্ষা দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ছে। দেশে শিশু পর্ণো বাড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তা হচ্ছে। এটা শঙ্কাজনক।

অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত সিক্যাফ সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২৪ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে সাইবার অপরাধে যুক্ত হচ্ছে নতুন অপরাধ। এক বছরের ব্যবধানে এই হারটা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে মোট অপরাধের ১১.৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পর পর দুই বছরের জরিপফল থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী সাইবার আক্রান্ত শিশুদের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৩.৬৫ শতাংশ। ভুক্তভোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৮.৭৮ শতাংশের বয়সই ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এছাড়াও আক্রান্তদের প্রায় ৫৯ শতাংশই নারী। অপরাধের ধরনের মধ্যে ২১.৬৫ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে অ্যাকাউন্ট বেদখলের (হ্যাকিং) শিকার হয়ে শীর্ষে রয়েছে। আর বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে দেশে সাইবারজগতে ‘পর্ণোগ্রাফি’ অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা বেড়েছে। ভুক্তভোগীদের ১১.৩৫ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন পর্ণোগ্রাফি।

এছাড়াও ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৪৭.৭২ শতাংশ সামাজিক মর্যাদাহানী, ৪০.১৫ শতাংশ আর্থিক ক্ষতির শিকার, এবং প্রায় সবাই মানসিক যন্ত্রণায় কাতর ছিলেন। এদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮১.২৫ শতাংশ সাধারণ ডায়রি এবং ১৮.৭৫ শতাংশ লিখিত অভিযোগ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগকারীদের মধ্যে ১২.৫০ শতাংশ মন্তব্য করেননি। ৮৭.৫০ শতাংশ সুফল পাননি। এসব প্রতারণায় আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিক্ষিত। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৪০.৯০ শতাংশ ভুক্তভোগী উচ্চ মাধ্যমিক পাস, ২১.২১ শতাংশ স্নাতক/সম্মান পাস, ১৬.৬৬ শতাংশ মাধ্যমিক পাস এবং ১২.৮৭ শতাংশ মাধ্যমিকের নিচে।

১৩২ জন ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা থেকে এই ফলাফল পেয়েছে সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারেনস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ)

ছবি

সাবেক ডিসি ও জজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগপত্র দাখিল

ছবি

নকল কসমেটিকস উৎপাদন : ৭ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা সাড়ে ১৪ লাখ টাকা

চাঁদপুরে কোহিনুর হত্যা মামলায় ২ আসামীর মৃত্যুদণ্ড

ছবি

কেন্দ্রে প্রভাষকসহ ১০ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

ছাগলকাণ্ডে বেরিয়ে আসছে আরও দুর্নীতি

সোনারগাঁয়ে বিচার শালিসে সন্ত্রাসী হামলায় দলিল লেখক গুলিবিদ্ধ

ছবি

নরসিংদীতে ভূয়া পুলিশ আটক

সোনারগাঁয়ে সাবেক নারী সদস্যকে শ্লীলতাহানি করে পেটালেন ইউপি সদস্য

সিলেটে কাউন্সিলর আজাদের বাসভবনে হামলা, সিসিক মেয়র ও কাউন্সিলরদের নিন্দা

ছবি

জুড়ীতে জুয়াড়িদের অভ্যন্তরীণ লেনদেনের বলি আরমান

পীরগাছায় স্কুল ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগ

ছবি

মতিউর আসলে কোথায়?

ছবি

সৎ মেয়েকে ধর্ষণ, ফরিদপুরে সাবেক বিডিআর কর্মকর্তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড

ছবি

এমপি আনার হত্যা: মোস্তাফিজ ও ফয়সাল ৬ দিনের রিমান্ডে

ছবি

রাবিতে পুলিশ ফাঁড়ির নিকটে ছিনতাই, গ্রেফতার ১

ছবি

মেডিকেল শিক্ষার্থীসহ চক্রের ৮ সদস্য গ্রেপ্তার

ছবি

বালতির হাতল দিয়ে কারাগারের ছাদ ফুটো করে পালালেন ৪ আসামি, ১৪ মিনিটেই আটক

ছবি

তরুণীদের দিয়ে অনলাইনে দেহ ব্যবসা, শত কোটি টাকা হাতিয়েছে চক্রটি

ছাগলকাণ্ড : এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের ৫শ’ কোটি টাকার বেশি স্থাবর সম্পদের তথ্য

ছবি

ব্যবসায়ী নাসিরের মামলায় পরীমনির জামিন

ছবি

মতিউর ও স্ত্রী-পুত্রের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, দুদকের তদন্ত শুরু

যশোরে অনিবন্ধিত ক্লিনিকে সিজার, প্রসূতি-নবজাতকের মৃত্যু

বেনজীরের স্ত্রী-সন্তানও হাজির হয়নি দুদকে

ছবি

ম্যাজিস্ট্রেটসহ আ.লীগ নেতা বাবুকে নিয়ে ফোন উদ্ধারে অভিযানের নির্দেশ

ছবি

দুদকের বরখাস্ত হওয়া সেই মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন

ছবি

এনবিআরের কর্মকতা মতিউর ও স্ত্রী-পুত্রের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ছবি

দুদকের ডাকে সাড়া দেননি বেনজীরের স্ত্রী-দুই মেয়ে

ছবি

মতিউর, তার স্ত্রী ও ছেলের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

বেনজীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দুদক, আছাদুজ্জামানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি

‘দুর্নীতি’ অনুসন্ধানে দুদকের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন

ছবি

এনবিআর থেকে সরানো হলো মতিউরকে, সরতে হচ্ছে সোনালী ব্যাংক থেকেও

এটিইউ কর্তৃক ১২ মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেফতার

ছবি

হাসপাতাল ভবনে ব্যাংক ভাড়া, সেবা ব্যাহত

তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে ‘জমির বিরোধও’

ব্যবসায়ীর ৫২ লাখ টাকা লুট

সিলেটে মুক্তিপণ না পেয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

মাথাচাড়া দিচ্ছে নিত্য-নতুন সাইবার অপরাধ: সিক্যাফ’র গবেষণা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার, ৩০ জুন ২০২৪

দেশে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধের নতুন মাত্রা। ব্যক্তিগত ক্ষতির পাশাপশি আর্থিক ক্ষতি এবং প্রলোভনে প্রকট সাইবার অপরাধ। তবে সামাজিক লোক-লজ্জার ট্যাবুতে তা থকাছে অন্তরালেই। তাই গণ-সাইবার স্বাক্ষরতার পাশাপাশি দেশের সাইবার সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজস্ব সাইবার সল্যুশন তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৯ জুন রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৪’ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উদীয়মান প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে (সিক্যাফ) অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিক্যাফ উপদেষ্টা প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান। গবেষণা প্রতিবেদন পেশ করেন সিক্যাফ গবেষণা দলের প্রধান ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক।

প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি’র মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন) ব্রিগে. জে. কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স (জি.এস.জি) বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ এ. হুসেইন, বিশ্বব্যাংক এর পরামর্শক ও আইডিয়া ফাউন্ডেশনের প্রধান গবেষক হুসেইন সামাদ, বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি’র কোষাধ্যক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার নাজমুস সালিহিন এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ।

সিক্যাফ সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপত্বিতে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নুরুন আশরাফী। অন্যান্যের মধ্যে সিক্যাফ সহ-সভাপতি এস এম ইমদাদুল হক এবং প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুল মুনয়েম সৈকত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিটিআরসি মহাপরিচালক কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যক্তিগতভাবে যত সচেতনতা বাড়ানো যাবে ততই কমানোর সম্ভব এই সাইবার অপরাধ। সচেতনতার দায়িত্ব সবাইকে সম্মিলিতভাবে পালন করতে হবে।

বিশ্বব্যাংক এর পরামর্শক হুসেইন সামাদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হয়েছে। এখন এর দক্ষ ব্যবহার দরকার। কিন্তু দেশে ৭০ শতাংশই সাইবার আক্রমণ হচ্ছে ব্যক্তিসচেতনতার অভাবে। তাই সবার সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।

মূল প্রবন্ধে মুশফিকুর রহমান বলেন, বিভিন্ন খাতে উদীয়মান প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ও সুবিধা এনেছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতার স্পষ্ট উন্নতি, যোগাযোগ ও সংযোগের উন্নতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় অবদান। কৃষি ক্ষেত্রে উদীয়মান প্রযুক্তির ব্যবহার মানব সভ্যতাকে আরো অনেক মানবিক করে তুলবে । যাইহোক, এই উন্নতির পাশাপাশি কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা সাবধানে বিবেচনা করার দাবি করে। এই উদ্বেগগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্ভাব্য গোপনীয়তা ও সুরক্ষা ঝুঁকি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি, প্রযুক্তির উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি। উদীয়মান প্রযুক্তির সামাজিক সুবিধাগুলো সর্বাধিক করতে, একটি বহুমুখী পদ্ধতি প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে নাগরিকদের অধিকার ও গোপনীয়তা রক্ষা করে এমন নীতি ও বিধিমালা তৈরি করা। মুশফিক বলেন, পুনঃপ্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বিকাশকে উৎসাহিত করা জরুরী। উদীয়মান প্রযুক্তির যুগে জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনা সর্বোপরি হওয়া উচিত। এই লক্ষ্যে, দেশীয় শিক্ষাগত গবেষণা, শিল্প ক্ষেত্রে উদ্ভাবন এবং স্থানীয় সফ্টওয়্যার ও সমাধানের উন্নয়নকে উৎসাহিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতি কেবল প্রযুক্তি অর্জনে বিদেশী মুদ্রার ব্যয়ের উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেবে না, বরং দেশীয়ভাবে তৈরি প্রযুক্তিগত সফ্টওয়্যার ও বিভিন্ন সলিউশনস রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন পথ খুলে দিয়ে জাতীয় উন্নতিতে অবদান রাখবে ।

নাজমুস সালেহিন বলেন, অনলাইন গ্যাম্বিলিংয়ের আড়ালে আছে মানিলন্ডারিং। তবে একে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোর ব্যাংকিং খাতে সহসাই একটি বিপদ আসছে।

ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ৪টি ধারা ছাড়া সাইবার অপরাধ আইন ২০১৩ এর সবগুলো ধারাই হ্যাকিংয়ের আওতায় থাকলেও তা জামিনযোগ্য। এতে আমরা অনেক অপরাধীকেই শস্তির অধীনে আনতে সমস্যা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা দেরিতে নালিশ করায় আইনের সুরক্ষা দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ছে। দেশে শিশু পর্ণো বাড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তা হচ্ছে। এটা শঙ্কাজনক।

অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত সিক্যাফ সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২৪ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে সাইবার অপরাধে যুক্ত হচ্ছে নতুন অপরাধ। এক বছরের ব্যবধানে এই হারটা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে মোট অপরাধের ১১.৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পর পর দুই বছরের জরিপফল থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী সাইবার আক্রান্ত শিশুদের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৩.৬৫ শতাংশ। ভুক্তভোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৮.৭৮ শতাংশের বয়সই ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এছাড়াও আক্রান্তদের প্রায় ৫৯ শতাংশই নারী। অপরাধের ধরনের মধ্যে ২১.৬৫ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে অ্যাকাউন্ট বেদখলের (হ্যাকিং) শিকার হয়ে শীর্ষে রয়েছে। আর বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে দেশে সাইবারজগতে ‘পর্ণোগ্রাফি’ অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা বেড়েছে। ভুক্তভোগীদের ১১.৩৫ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন পর্ণোগ্রাফি।

এছাড়াও ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৪৭.৭২ শতাংশ সামাজিক মর্যাদাহানী, ৪০.১৫ শতাংশ আর্থিক ক্ষতির শিকার, এবং প্রায় সবাই মানসিক যন্ত্রণায় কাতর ছিলেন। এদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮১.২৫ শতাংশ সাধারণ ডায়রি এবং ১৮.৭৫ শতাংশ লিখিত অভিযোগ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগকারীদের মধ্যে ১২.৫০ শতাংশ মন্তব্য করেননি। ৮৭.৫০ শতাংশ সুফল পাননি। এসব প্রতারণায় আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিক্ষিত। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৪০.৯০ শতাংশ ভুক্তভোগী উচ্চ মাধ্যমিক পাস, ২১.২১ শতাংশ স্নাতক/সম্মান পাস, ১৬.৬৬ শতাংশ মাধ্যমিক পাস এবং ১২.৮৭ শতাংশ মাধ্যমিকের নিচে।

১৩২ জন ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা থেকে এই ফলাফল পেয়েছে সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারেনস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ)

back to top