পিএসসির উপ-পরিচালক আবু জাফর বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তার চক্রের সদস্যদের হাতে তুলে দিতেন। অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম তার কাছ থেকে প্রশ্নপত্র কিনে সহযোগী শাখাওয়াত হোসেন ও তার ছোট ভাই সাইম হোসেনকে দিতেন। তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতেন বলে জানিয়েছেন সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন সাজেদুল পিএসসির একজন সদস্যের কক্ষের ট্রাংক থেকেও প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। শাখাওয়াত ও সাইম নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হওয়ার দু-এক দিন আগে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বাসা ও হোটেল ভাড়া করে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রশ্নপত্র ও উত্তর বিতরণ করতেন।
সাজেদুল চাকরিপ্রত্যাশী সংগ্রহের পাশাপাশি ফাঁস করা প্রশ্ন পিএসসির সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীর কাছে বিক্রি করতেন। আবেদ আলী চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ভাড়া ঘরে রেখে প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করাতেন। আবু সোলায়মান ওরফে সোহেল চাকরিপ্রার্থী সরবরাহ ও বুথ পরিচালনা করতেন। ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান সাজেদুলের কাছ থেকে ফাঁস করা প্রশ্নপত্র কিনতেন এবং পিএসএসির সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবিরের দেয়া প্রশ্ন চাকরিপ্রার্থীদের কাছে বিক্রি করতেন। জাহিদুল ইসলাম ফাঁস করা প্রশ্ন সংগ্রহ করে চক্রের সদস্য লিটন সরকার ও প্রিয়নাথের কাছে বিক্রি করতেন।
পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করতেন দুইভাই, চলতেন দামি গাড়িতে
ঢাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার মেশিন বিক্রির আড়ালে পিএসসির বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন এবং তার ছোট ভাই সাইম হোসেন। একসময় পরিবারের অবস্থা খুব খারাপ থাকলেও এখন দুই ভাই গ্রামের বাড়ি আসেন প্রাইভেটকারে। সাখাওয়াত নানা সময়ে বিদেশে যাতায়াত করেন বলেও জানান সিআইডি। প্রশ্নফাঁসে ঢাকায় গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে দুই সহোদর সাখাওয়াত (৩৪) ও সাইমের (২০) বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ইচাইল গ্রামে।
ওই মামলার ‘মূলহোতা’ ৪ নম্বর আসামি সাজেদুল ইসলাম পিএসসির উপ-পরিচালক আবু জাফরের মাধ্যমে প্রশ্ন পেতেন। পরে তার সহযোগী সাখাওয়াত ও সাইমের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতেন। সেসব চাকরি প্রার্থীদের ঢাকায় ভাড়া বাসায় বা হোটেলে জড়ো করতেন। অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র বিতরণ করা হত। রেলের সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (নন-ক্যাডার) পরীক্ষার নিয়োগের সময় আবেদ আলীকে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র দিয়েছিলেন বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
জানা যায়, প্রায় ৭-৮ বছর ধরে সাখাওয়াত ঢাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার মেশিনের ব্যবসা করে আসছেন। তার ছোট ভাই সাইম পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসায় তাকে সহযোগিতা করতেন। তাদের বাবা সাহেদ আলী ময়মনসিংহ নগরীর দিঘারকান্দা এলাকায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির কাজ করেন। এ পেশা তিনি ৪০ বছরের অধিক সময় ধরে করছেন। সাহেদ আলীর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। সবার বড় সাখাওয়াত হোসেন। চার ভাইবোনের মধ্যে এক বোন ঢাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। ছোট বোন ময়মনসিংহ শহরে নার্সিংয়ে লেখাপড়া করেন।
রেলে নিয়োগ পরীক্ষা, তালিকা হচ্ছে চাকরিপ্রার্থীদের
সিআইডি জানান, রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদের নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদ আলী চক্রের ফাঁস করা প্রশ্নে শতাধিক চাকরিপ্রার্থী অংশ নিয়েছেন। তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। চক্রটি শুধু রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নয়, গত দেড় যুগের বেশি সময় বিসিএস ক্যাডারসহ নন-ক্যাডারের অন্তত ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত। সিআইডির একাধিক কর্মকর্তা জানান, রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। যারা ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন, তাদের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এছাড়া অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের যে তথ্য পাওয়া গেছে, সে বিষয়েও তদন্ত করা হবে।
সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ জুলাই সোমবার পিএসসির দুইজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। চক্রটি গত ৫ জুলাই পিএসসি আয়োজিত রেলওয়ের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের (নন-ক্যাডার) নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন হুবহু ফাঁস করে। পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগে অর্থের বিনিময়ে চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্ন এবং উত্তর সরবরাহও করে। শুধু রেলওয়ের চাকরিই নয়- পিএসসি, বেসরকারি ব্যাংক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে আসছিল তারা। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় জড়িত ৫ কর্মকর্তা কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পিএসসি। আর গ্রেপ্তার ১৭ জনেরই ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রোববার, ১৪ জুলাই ২০২৪
পিএসসির উপ-পরিচালক আবু জাফর বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তার চক্রের সদস্যদের হাতে তুলে দিতেন। অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম তার কাছ থেকে প্রশ্নপত্র কিনে সহযোগী শাখাওয়াত হোসেন ও তার ছোট ভাই সাইম হোসেনকে দিতেন। তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতেন বলে জানিয়েছেন সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন সাজেদুল পিএসসির একজন সদস্যের কক্ষের ট্রাংক থেকেও প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। শাখাওয়াত ও সাইম নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হওয়ার দু-এক দিন আগে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বাসা ও হোটেল ভাড়া করে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রশ্নপত্র ও উত্তর বিতরণ করতেন।
সাজেদুল চাকরিপ্রত্যাশী সংগ্রহের পাশাপাশি ফাঁস করা প্রশ্ন পিএসসির সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীর কাছে বিক্রি করতেন। আবেদ আলী চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ভাড়া ঘরে রেখে প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করাতেন। আবু সোলায়মান ওরফে সোহেল চাকরিপ্রার্থী সরবরাহ ও বুথ পরিচালনা করতেন। ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান সাজেদুলের কাছ থেকে ফাঁস করা প্রশ্নপত্র কিনতেন এবং পিএসএসির সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবিরের দেয়া প্রশ্ন চাকরিপ্রার্থীদের কাছে বিক্রি করতেন। জাহিদুল ইসলাম ফাঁস করা প্রশ্ন সংগ্রহ করে চক্রের সদস্য লিটন সরকার ও প্রিয়নাথের কাছে বিক্রি করতেন।
পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করতেন দুইভাই, চলতেন দামি গাড়িতে
ঢাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার মেশিন বিক্রির আড়ালে পিএসসির বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন এবং তার ছোট ভাই সাইম হোসেন। একসময় পরিবারের অবস্থা খুব খারাপ থাকলেও এখন দুই ভাই গ্রামের বাড়ি আসেন প্রাইভেটকারে। সাখাওয়াত নানা সময়ে বিদেশে যাতায়াত করেন বলেও জানান সিআইডি। প্রশ্নফাঁসে ঢাকায় গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে দুই সহোদর সাখাওয়াত (৩৪) ও সাইমের (২০) বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ইচাইল গ্রামে।
ওই মামলার ‘মূলহোতা’ ৪ নম্বর আসামি সাজেদুল ইসলাম পিএসসির উপ-পরিচালক আবু জাফরের মাধ্যমে প্রশ্ন পেতেন। পরে তার সহযোগী সাখাওয়াত ও সাইমের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করতেন। সেসব চাকরি প্রার্থীদের ঢাকায় ভাড়া বাসায় বা হোটেলে জড়ো করতেন। অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র বিতরণ করা হত। রেলের সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (নন-ক্যাডার) পরীক্ষার নিয়োগের সময় আবেদ আলীকে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র দিয়েছিলেন বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
জানা যায়, প্রায় ৭-৮ বছর ধরে সাখাওয়াত ঢাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার মেশিনের ব্যবসা করে আসছেন। তার ছোট ভাই সাইম পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসায় তাকে সহযোগিতা করতেন। তাদের বাবা সাহেদ আলী ময়মনসিংহ নগরীর দিঘারকান্দা এলাকায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির কাজ করেন। এ পেশা তিনি ৪০ বছরের অধিক সময় ধরে করছেন। সাহেদ আলীর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। সবার বড় সাখাওয়াত হোসেন। চার ভাইবোনের মধ্যে এক বোন ঢাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। ছোট বোন ময়মনসিংহ শহরে নার্সিংয়ে লেখাপড়া করেন।
রেলে নিয়োগ পরীক্ষা, তালিকা হচ্ছে চাকরিপ্রার্থীদের
সিআইডি জানান, রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদের নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদ আলী চক্রের ফাঁস করা প্রশ্নে শতাধিক চাকরিপ্রার্থী অংশ নিয়েছেন। তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। চক্রটি শুধু রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নয়, গত দেড় যুগের বেশি সময় বিসিএস ক্যাডারসহ নন-ক্যাডারের অন্তত ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত। সিআইডির একাধিক কর্মকর্তা জানান, রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। যারা ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন, তাদের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এছাড়া অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের যে তথ্য পাওয়া গেছে, সে বিষয়েও তদন্ত করা হবে।
সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ জুলাই সোমবার পিএসসির দুইজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। চক্রটি গত ৫ জুলাই পিএসসি আয়োজিত রেলওয়ের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের (নন-ক্যাডার) নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন হুবহু ফাঁস করে। পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগে অর্থের বিনিময়ে চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্ন এবং উত্তর সরবরাহও করে। শুধু রেলওয়ের চাকরিই নয়- পিএসসি, বেসরকারি ব্যাংক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে আসছিল তারা। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় জড়িত ৫ কর্মকর্তা কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পিএসসি। আর গ্রেপ্তার ১৭ জনেরই ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।