সম্পদের অসঙ্গতি ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে পৃথক আবেদনে আদালতের আদেশ
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামলের ছেলে শাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতি এবং সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১ জানুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন পৃথক তিনটি আবেদনের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম শুনানি করেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক আল আমিনের আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলক যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩), এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, পলক সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপ্রকাশিত উৎস থেকে সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া তার নামের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায়িক লেনদেন এবং সন্দেহজনকভাবে সম্পদ রূপান্তরের তথ্য পাওয়া গেছে। তার সম্পদের উৎসের ব্যাখ্যা তিনি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে শাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং মানিলন্ডারিংয়ের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদের আবেদনে বলা হয়েছে, জ্যোতি এবং তার বাবা পরস্পর যোগসাজশে ১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জন করেছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, জ্যোতি নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে ৮৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। এসব অর্থ মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে রূপান্তর এবং স্থানান্তরের তথ্য পাওয়া গেছে। এই মামলায়ও দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অর্থপাচারের অভিযোগে সবচেয়ে গুরুতর মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক আসিফ আল মাহমুদের আবেদনে বলা হয়, হেনরী জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫৭ কোটি ১৩ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।
এছাড়া তার নামে থাকা ৩৫টি ব্যাংক হিসাবে ২০০২ কোটি টাকার লেনদেন এবং ১৩ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশে পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, এসব লেনদেনের পেছনে দুর্নীতি এবং মানিলন্ডারিংয়ের যোগসূত্র রয়েছে। হেনরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দুদকের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত তিনজনকেই সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তের প্রতিবেদন জমা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের কোর্ট পরিদর্শক আমির হোসেন জানিয়েছেন, “পলক, জ্যোতি এবং হেনরী তিনজনের বিরুদ্ধেই পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে। এই মামলাগুলোতে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে তদন্তের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।”
জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে তার মন্ত্রিত্বের শেষ সময়ে। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে অপ্রকাশিত সম্পদ অর্জনের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
অন্যদিকে, শাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতি এবং তার বাবা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সম্পদ গোপন এবং অবৈধ উপায়ে অর্জনের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত। হেনরীর বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার এবং জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আগেও বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে।
সম্পদের অসঙ্গতি ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে পৃথক আবেদনে আদালতের আদেশ
বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামলের ছেলে শাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতি এবং সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১ জানুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন পৃথক তিনটি আবেদনের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম শুনানি করেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক আল আমিনের আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলক যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩), এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, পলক সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপ্রকাশিত উৎস থেকে সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া তার নামের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায়িক লেনদেন এবং সন্দেহজনকভাবে সম্পদ রূপান্তরের তথ্য পাওয়া গেছে। তার সম্পদের উৎসের ব্যাখ্যা তিনি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে শাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং মানিলন্ডারিংয়ের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদের আবেদনে বলা হয়েছে, জ্যোতি এবং তার বাবা পরস্পর যোগসাজশে ১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জন করেছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, জ্যোতি নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে ৮৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। এসব অর্থ মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে রূপান্তর এবং স্থানান্তরের তথ্য পাওয়া গেছে। এই মামলায়ও দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অর্থপাচারের অভিযোগে সবচেয়ে গুরুতর মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক আসিফ আল মাহমুদের আবেদনে বলা হয়, হেনরী জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫৭ কোটি ১৩ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।
এছাড়া তার নামে থাকা ৩৫টি ব্যাংক হিসাবে ২০০২ কোটি টাকার লেনদেন এবং ১৩ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশে পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, এসব লেনদেনের পেছনে দুর্নীতি এবং মানিলন্ডারিংয়ের যোগসূত্র রয়েছে। হেনরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দুদকের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত তিনজনকেই সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তের প্রতিবেদন জমা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের কোর্ট পরিদর্শক আমির হোসেন জানিয়েছেন, “পলক, জ্যোতি এবং হেনরী তিনজনের বিরুদ্ধেই পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে। এই মামলাগুলোতে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে তদন্তের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।”
জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে তার মন্ত্রিত্বের শেষ সময়ে। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে অপ্রকাশিত সম্পদ অর্জনের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
অন্যদিকে, শাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতি এবং তার বাবা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সম্পদ গোপন এবং অবৈধ উপায়ে অর্জনের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত। হেনরীর বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার এবং জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আগেও বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে।