ক্ষমতার অপব্যবহার ও তথ্য গোপনের অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে দুদকের ছয়টি মামলা
ক্ষমতার অপব্যবহার ও তথ্য গোপনের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দের অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগ :
দুদকের মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কূটনৈতিক জোনের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর সড়কে একটি ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। একই প্রকল্পে তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে আরেকটি প্লট বরাদ্দের অভিযোগ রয়েছে। এই বরাদ্দপ্রক্রিয়ায় প্লট বরাদ্দ নীতিমালা ও আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়ার পর মামলাগুলো করা হয়েছে।
দুদকের এজাহারে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে ঢাকা শহরে আবাসন সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সেই তথ্য গোপন করা হয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে এই বরাদ্দপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলে জয়ের বিরুদ্ধে করা পৃথক মামলায় যথাক্রমে ৮ জন এবং ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে ছয় মামলা :
শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী এবং রেহানার মেয়ে যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের নামেও পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এই ছয়জনের নামে মোট ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২২ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই বরাদ্দপত্রগুলো দেওয়া হয়।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা পূর্বাচল প্রকল্পে তাঁর নামে প্লট বরাদ্দ নেন। প্লটটি ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত।
এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য শফি উল হক, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, এবং উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে করা মামলার আসামিদের মধ্যে তাঁর মা শেখ হাসিনাও রয়েছেন। এ ছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও রাজউকের কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
জয়ের নামে বরাদ্দ করা প্লটের বরাদ্দপত্র ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর ইস্যু করা হয় এবং ১০ নভেম্বর মালিকানা রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। এরপর তাঁর পরিবারের সদস্যরা দেশত্যাগ করেন। ক্ষমতাচ্যুতির পর দুদক ও হাইকোর্ট শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে একাধিক তদন্ত শুরু করে।
অক্টোবর মাসে শেখ হাসিনার পরিবারের ছয় সদস্যের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে হাইকোর্ট তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিকে আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে রাজউকের প্লট বরাদ্দে সব ধরনের অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বরাদ্দের ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই বরাদ্দ নিশ্চিত করেন। এছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করার তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, “আমাদের অনুসন্ধানে প্লট বরাদ্দের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পরই মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার বিচার দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী হবে।”
শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ছাড়াও গণহত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে কয়েকশ’ মামলা হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় এবং পরবর্তী সময়ে সহিংসতার ঘটনায় এসব মামলা দায়ের করা হয়।
শেখ হাসিনার ছেলে জয়, মেয়ে পুতুল, বোন শেখ রেহানা, এবং রেহানার ছেলে-মেয়েদের বিরুদ্ধে করা মামলা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও তথ্য গোপনের অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে দুদকের ছয়টি মামলা
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
ক্ষমতার অপব্যবহার ও তথ্য গোপনের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দের অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগ :
দুদকের মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কূটনৈতিক জোনের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর সড়কে একটি ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। একই প্রকল্পে তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে আরেকটি প্লট বরাদ্দের অভিযোগ রয়েছে। এই বরাদ্দপ্রক্রিয়ায় প্লট বরাদ্দ নীতিমালা ও আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়ার পর মামলাগুলো করা হয়েছে।
দুদকের এজাহারে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে ঢাকা শহরে আবাসন সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সেই তথ্য গোপন করা হয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে এই বরাদ্দপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলে জয়ের বিরুদ্ধে করা পৃথক মামলায় যথাক্রমে ৮ জন এবং ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে ছয় মামলা :
শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী এবং রেহানার মেয়ে যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের নামেও পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এই ছয়জনের নামে মোট ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২২ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই বরাদ্দপত্রগুলো দেওয়া হয়।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা পূর্বাচল প্রকল্পে তাঁর নামে প্লট বরাদ্দ নেন। প্লটটি ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত।
এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য শফি উল হক, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, এবং উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে করা মামলার আসামিদের মধ্যে তাঁর মা শেখ হাসিনাও রয়েছেন। এ ছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও রাজউকের কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
জয়ের নামে বরাদ্দ করা প্লটের বরাদ্দপত্র ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর ইস্যু করা হয় এবং ১০ নভেম্বর মালিকানা রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। এরপর তাঁর পরিবারের সদস্যরা দেশত্যাগ করেন। ক্ষমতাচ্যুতির পর দুদক ও হাইকোর্ট শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে একাধিক তদন্ত শুরু করে।
অক্টোবর মাসে শেখ হাসিনার পরিবারের ছয় সদস্যের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে হাইকোর্ট তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিকে আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে রাজউকের প্লট বরাদ্দে সব ধরনের অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বরাদ্দের ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই বরাদ্দ নিশ্চিত করেন। এছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করার তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, “আমাদের অনুসন্ধানে প্লট বরাদ্দের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পরই মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার বিচার দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী হবে।”
শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ছাড়াও গণহত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে কয়েকশ’ মামলা হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় এবং পরবর্তী সময়ে সহিংসতার ঘটনায় এসব মামলা দায়ের করা হয়।
শেখ হাসিনার ছেলে জয়, মেয়ে পুতুল, বোন শেখ রেহানা, এবং রেহানার ছেলে-মেয়েদের বিরুদ্ধে করা মামলা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।