ঢাকা: বিতর্কিত ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম এবং তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার রায় আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে। ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম আজ (বৃহস্পতিবার) এই রায় ঘোষণার কথা থাকলেও, রায় প্রস্তুত না হওয়ায় নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন।
২০১৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলার তদন্তের পরে, দুদক শামীমের বিরুদ্ধে তার অবৈধ সম্পদের উৎস এবং বৈধতার বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জি কে শামীম ২০১৮-২০১৯ করবর্ষে ৫০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। তবে, তার আয়কর নথিতে ৪০ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৪ টাকার তথ্য উল্লিখিত থাকলেও, এই টাকার বৈধ উৎসের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পায়নি দুদক। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল শামীমের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, সাত লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রা এবং তার ও তার মায়ের নামে থাকা ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর, ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ব্যবসার অংশীদারি এবং ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎসের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এদিন, শামীমকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়, তবে তার মা আয়েশা আক্তার এখনও পলাতক রয়েছেন। গত ২২ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায়ের তারিখ ৩০ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছিল, কিন্তু রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত নতুন দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি ঠিক করেন।
২০১9 সালের সেপ্টেম্বরে, র্যাব ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে শামীমকে গ্রেপ্তার করে। নিকেতনের বাসা থেকে নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই এবং ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। শামীমের প্রতিষ্ঠান "জিকে বিল্ডার্স" তখন বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ করছিল, যার মধ্যে অন্তত ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ছিল। এসব প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা।
গ্রেপ্তারের পর, শামীমের প্রতিষ্ঠান "জিকে বিল্ডার্স"-এর কার্যাদেশ বাতিল করা হয় এবং তার ১৯৪টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে ছিল র্যাব সদরদপ্তর, সচিবালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ এবং বিভিন্ন হাসপাতালের নতুন ভবনসহ বেশ কিছু নির্মাণ কাজ।
জি কে শামীমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে মাদক, অর্থ পাচার এবং অস্ত্র আইনের মামলা রয়েছে। ২০২২ সালে অস্ত্র আইনে তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি অনুযায়ী শামীম এবং তার সাত দেহরক্ষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরের বছর অর্থপাচার মামলায় শামীমকে ১০ বছর এবং তার সাত দেহরক্ষীকে ৪ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এদিকে, বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে তার অবৈধ কার্যকলাপের কারণে শামীমের বিরুদ্ধে আরও কিছু মামলা চলমান রয়েছে। এসব মামলার মাধ্যমে তার ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির চিত্র আরো স্পষ্ট হয়েছে।
জি কে শামীমের উত্থান আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে শুরু হয়। শামীম নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন, তবে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ তার এই দাবির প্রতি কোনো সমর্থন জানায়নি। এর পর শামীম নিজেকে একটি শক্তিশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে অংশ নেন। তার প্রতিষ্ঠান "জিকে বিল্ডার্স" বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ পেয়ে যায়, যা তার প্রভাব এবং অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
তবে, তার কর্মকাণ্ডে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসার পর, ২০১৯ সালে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে তার নামে একাধিক মামলা হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে শামীমের বিরুদ্ধে একের পর এক আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচার, অস্ত্র আইনে মামলা এবং আরও অনেক বিষয়।
বর্তমানে, শামীম এবং তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে এবং মামলার ফলাফল দেশটির রাজনৈতিক এবং আইনগত পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই মামলার রায় এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য একটি বড় পরীক্ষা হতে চলেছে, কারণ এটি দেশে দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে আইন প্রণেতাদের জন্য একটি বড় মাইলফলক হতে পারে।
জি কে শামীম এবং তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার রায় এখনও অপেক্ষমাণ। তবে, এই মামলার ফলে দেশের রাজনৈতিক এবং আইনগত পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে। দেশে দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে এসব মামলা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, এবং এগুলোর রায় আগামী দিনগুলিতে আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে সহায়তা করবে।
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
ঢাকা: বিতর্কিত ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম এবং তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার রায় আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে। ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম আজ (বৃহস্পতিবার) এই রায় ঘোষণার কথা থাকলেও, রায় প্রস্তুত না হওয়ায় নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন।
২০১৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলার তদন্তের পরে, দুদক শামীমের বিরুদ্ধে তার অবৈধ সম্পদের উৎস এবং বৈধতার বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জি কে শামীম ২০১৮-২০১৯ করবর্ষে ৫০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। তবে, তার আয়কর নথিতে ৪০ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৪ টাকার তথ্য উল্লিখিত থাকলেও, এই টাকার বৈধ উৎসের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পায়নি দুদক। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল শামীমের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, সাত লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রা এবং তার ও তার মায়ের নামে থাকা ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর, ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ব্যবসার অংশীদারি এবং ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎসের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এদিন, শামীমকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়, তবে তার মা আয়েশা আক্তার এখনও পলাতক রয়েছেন। গত ২২ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায়ের তারিখ ৩০ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছিল, কিন্তু রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত নতুন দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি ঠিক করেন।
২০১9 সালের সেপ্টেম্বরে, র্যাব ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে শামীমকে গ্রেপ্তার করে। নিকেতনের বাসা থেকে নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই এবং ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। শামীমের প্রতিষ্ঠান "জিকে বিল্ডার্স" তখন বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ করছিল, যার মধ্যে অন্তত ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ছিল। এসব প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা।
গ্রেপ্তারের পর, শামীমের প্রতিষ্ঠান "জিকে বিল্ডার্স"-এর কার্যাদেশ বাতিল করা হয় এবং তার ১৯৪টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে ছিল র্যাব সদরদপ্তর, সচিবালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ এবং বিভিন্ন হাসপাতালের নতুন ভবনসহ বেশ কিছু নির্মাণ কাজ।
জি কে শামীমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে মাদক, অর্থ পাচার এবং অস্ত্র আইনের মামলা রয়েছে। ২০২২ সালে অস্ত্র আইনে তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি অনুযায়ী শামীম এবং তার সাত দেহরক্ষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরের বছর অর্থপাচার মামলায় শামীমকে ১০ বছর এবং তার সাত দেহরক্ষীকে ৪ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এদিকে, বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে তার অবৈধ কার্যকলাপের কারণে শামীমের বিরুদ্ধে আরও কিছু মামলা চলমান রয়েছে। এসব মামলার মাধ্যমে তার ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির চিত্র আরো স্পষ্ট হয়েছে।
জি কে শামীমের উত্থান আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে শুরু হয়। শামীম নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন, তবে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ তার এই দাবির প্রতি কোনো সমর্থন জানায়নি। এর পর শামীম নিজেকে একটি শক্তিশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে অংশ নেন। তার প্রতিষ্ঠান "জিকে বিল্ডার্স" বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ পেয়ে যায়, যা তার প্রভাব এবং অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
তবে, তার কর্মকাণ্ডে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসার পর, ২০১৯ সালে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে তার নামে একাধিক মামলা হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে শামীমের বিরুদ্ধে একের পর এক আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচার, অস্ত্র আইনে মামলা এবং আরও অনেক বিষয়।
বর্তমানে, শামীম এবং তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে এবং মামলার ফলাফল দেশটির রাজনৈতিক এবং আইনগত পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই মামলার রায় এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য একটি বড় পরীক্ষা হতে চলেছে, কারণ এটি দেশে দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে আইন প্রণেতাদের জন্য একটি বড় মাইলফলক হতে পারে।
জি কে শামীম এবং তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার রায় এখনও অপেক্ষমাণ। তবে, এই মামলার ফলে দেশের রাজনৈতিক এবং আইনগত পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে। দেশে দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে এসব মামলা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, এবং এগুলোর রায় আগামী দিনগুলিতে আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে সহায়তা করবে।