alt

সোনারগাঁয়ে পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে চলে মেঘনা নদীতে চাঁদাবাজি, বিকাশে চাঁদা নেয় রনি হাসান

প্রতিনিধি, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) : মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নৌ পুলিশকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিয়ে মেঘনা নদীতে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি। নদীতে চলাচলরত বিভিন্ন নৌযান থেকে প্রকাশ্যে ও মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে নেয়া হয় চাঁদা। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে সেই নৌযান শ্রমিকদের বেধরক মারধর করা হয়। অস্ত্র দেখিয়ে দেয়া হয় হত্যার হুমকি।

নদীতে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি রোধে নৌ-পুলিশের টহল থাকলেও চাঁদাবাজদের সঙ্গে তাদের সখ্যতা থাকায় কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা।

নিরাপত্তা দেয়ার নামে পুলিশও করছে চাঁদাবাজি। বর্তমানে সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদীর ত্রাস হিসেবে পরিচিত ডাকাতি, মারামারিসহ একাধিক মামলার আসামী এই চাঁদাবাজের নাম রনি হাসান। মেঘনা নদীর আড়াইহাজার উপজেলার খাগকান্দা এলাকা থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া পর্যন্ত চলে রনি হাসানের চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজির টাকা নৌ ফাঁড়ি ইনচার্জ থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পর্যন্ত ভাগ পায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

চাঁদাবাজ রনি হাসান এবং পুলিশের চাঁদা নেয়ার বিষয়টি নৌ শ্রমিকদের অভিযোগের প্রায় ১৭ টি ভিডিও ফুটেজ এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁও পৌরসভাধীন সাহাপুর গ্রামের নুরা মিস্ত্রির ছেলে রনি হাসান এক সময় পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেনের শ্রমিক হিসেবে দৈনিক ৩শ’ টাকার বিনিময়ে মেঘনা নদীতে বিভিন্ন নৌযানে চাঁদা আদায় করতো। পরবর্তীতে সে জাকির হোসেনকে পল্টি দিয়ে নিজের সিন্ডিকেট করে নদীতে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি শুরু করে মেঘনা নদীর ভয়ঙ্কর ত্রাস হিসেবে পরিচিত হয়। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, নরসিংদী ও ভৈরব থেকে সোনারগাঁ হয়ে ঢাকা, চাঁদপুর নৌ রুটে চাঁদাবাজির নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে রনি।

মেঘনা নদীর এই নৌ রুটে শত শত বাল্কহেড, বার্জ, কার্গো, ইঞ্জিন চালিত বালুবাহী নৌকা, চুনা পাথর, ও কয়লাসহ বিভিন্ন পন্য পরিবহন করা হয়। সেসব নৌযানকে টার্গেট করে রনি হাসান ও তার সিন্ডেকেট চাঁদাবাজি করে থাকে। প্রতিদিন এসব নৌযান থেকে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে থাকে রনি। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তাদের করা হয় বেধরক মারধর। এমনকি অস্ত্র দেখিয়ে দেয়া হয় হত্যার হুমকিও। তাই প্রাণভয়ে ও নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য রনিকে প্রতিদিন চাঁদা দিয়ে পন্য পরিবহন করেন নৌযান শ্রমিকরা। তবে কিছু নৌযান থেকে নগদ ও অধিকাংশ নৌযান থেকে বিকাশের মাধ্যমে চাঁদা নেয় রনি হাসান।

চাঁদাবাজি ও ডাকাতি রোধে মেঘনা নদীতে বৈদ্যেরবাজার নৌ ফাঁরি পুলিশ নদীতে টহলরত থাকলেও চাঁদাবাজদের সাথে সখ্যতা থাকায় এবং মোটা অঙ্কের মাসোহারা পাওয়ায় তারা প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে। তাছাড়া নিরাপত্তা দেয়ার আড়ালে পুলিশও করছে চাঁদাবাজি। তারা ২ শ’ টাকা করে প্রতিটি পণ্যবাহী নৌযান থেকে নেন। যদি কোনো নৌযান থেকে পুলিশের কাছে চাঁদাবাজ রনি হাসানের নাম বলা হয় তাহলে পুলিশ ২শ টাকার পরিবর্তে ১শ’ টাকা নেয়। আবার অনেক নৌযান এমনিতেই ছেড়ে দেয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে রনি সন্ত্রাসী দিয়ে শ্রমিকদের মারধর করে টাকা পয়সা লুটে নেয়। সেখানে পুলিশকেও নিরাপত্তা দিতে বাঁধা দেয়। পরবর্তীতে নৌযান মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্বিঘেœ চলাচলের সুযোগ করে দেবে বলে তাদের সঙ্গে চুক্তিবন্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ী টাকা দিলেই কেউ তাদের সমস্যা সৃষ্টি করে না। পুলিশ থাকেন তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে। চুক্তির টাকা থেকে পুলিশও ভাগ পেয়ে থাকেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। বৈদ্যেরবাজার এলাকার নৌ ফাঁড়ি থেকে শুরু করে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পেয়ে থাকেন মাসোহারা। তাই চাঁদাবাজ রনিকে গ্রেপ্তারে কোন ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার সিন্ডিকেটের এক সদস্য জানিয়েছেন, রনি মেঘনা নদীর ভয়ঙ্কর ত্রাস। তার সিন্ডিকেটে মেঘনা উপজেলার আব্দুল বারেকের তিন ছেলে আলী হোসেন, আবুল হাসনাত ও মহসিন জড়িত। কিছুদিন বৈদ্যেরবাজার এলাকার কয়েকজন যুবক নদীতে তাদের সঙ্গে কাজ করলেও এখন আর করেন না বলে তার দাবি। তাদের মাধ্যমেই শ্রমিকদের মারধর করে থাকেন। মারধরের ভয়ে নৌ মালিক ও শ্রমিকরা তার সঙ্গে আঁতাত করে বিকাশে টাকা পৌছে দেন। নৌ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ফাঁড়ি পুলিশদের ম্যানেজ করেই এ চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রন করে এবং রাতের বেলা ডাকাতি করেন। রনি ২০২২ সালে নগদ প্রায় ১৩ লাখ টাকা, ল্যাপটপ ও ১৩ টি মোবাইল সিমসহ গ্রেপ্তার হয়। তার বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় ডাকাতি, মারামারিসহ দেশের বিভিন্ন থায়ায় ১০ টি চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। সরেজমিনে মেঘনা নদীর নলচর এলাকায় গিয়ে নৌ যানকে থামাতে বললেই রনি ভাইয়ের বডি বলে দাবি করেন। রনির বডি বলার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, বিকাশের মাধ্যমে প্রতিটি বডির জন্য তাকে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। এই টাকা দিলেই নির্বিঘেœ হামলা ও মারধর ছাড়াই তারা চলাচল করতে পারেন।

এসময় বৈদ্যেরবাজার নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ২টি ট্রলারকে নদীতে টহল দিতে দেখা যায়।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত রনি হাসান মোবাইলে জানান, তিনি বর্তমানে বন্দর উপজেলার তিনগাঁও এলাকায় থাকেন। চাঁদাবাজির বিষয়টি সত্য নয়। টাকাসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলাম সত্য। তবে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বৈদ্যেরবাজার নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, নৌযান শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে টহল দেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশের চাঁদা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এটি সত্য নয়। শ্রমিকরা পুলিশের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানালে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এছাড়াও বিকাশে চাঁদাবাজির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের নৌ পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বিকাশের মাধ্যমে চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। পুলিশ চাঁদাবাজের পক্ষে অবস্থান নেয়ার বিষয়টি সত্য নয়। তাছাড়া নৌ ফাঁড়ি পুলিশের বিষয়ে চাঁদা আদায়ের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ছবি

কুমিল্লায় বিচারের নামে নারী নির্যাতন ইউপি মেম্বারের, ভিডিও ভাইরা

ছবি

যশোরে গুলি ছুড়ে পালানোর সময় দুই সন্ত্রাসীকে আটক করল জনতা

ছবি

মেয়েকে হত্যার দায়ে পিতার কারাদণ্ড

ছবি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতের কন্যাকে দলবেঁধে ধর্ষণ: তিন আসামির কারাদণ্ড

ছবি

শিশুকে ঢাকা থেকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণ, কনস্টেবল কারাগারে

ছবি

রাজধানীর ১৫টির বেশি স্থানে ঝটিকা মিছিল, ১৩১ জন গ্রেপ্তার

ছবি

কবিরাজের কাছে জিন ছাড়াতে গিয়ে গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার

ছবি

চোলাই মদ বিক্রেতা গ্রেপ্তার

ছবি

৯০ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের কর্মকর্তাসহ ৬ জনের কারাদণ্ড

ছবি

রাজধানীতে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৪

ছবি

বিইউপি ছাত্রীকে ধর্ষণ: প্রধান আসামি সোহেল তিনদিনের রিমান্ডে

ছবি

পর্নো ভিডিও তৈরির অভিযোগে যুগল গ্রেপ্তার

লক্ষ্মীপুরে স্বর্ণালংকার লুটের জন্য মা-মেয়েকে হত্যা

ছবি

চাঁদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের ৫ সদস্য আটক

ছবি

বেগমগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক কারবারী গ্রেপ্তার

পণ্য পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ, বেনাপোলের ৩ কর্মকর্তা বরখাস্ত

ছবি

মালিবাগে বোরকা পরে জুয়েলারি দোকানে চুরির ঘটনায় চারজন গ্রেপ্তার

ছবি

‘দুর্নীতি’: বেনাপোল কাস্টমসের সেই কর্মকর্তা বরখাস্ত

‘অবৈধ’ সম্পদ: সাবের চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের চার মামলা

ছবি

রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ৮ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

ছবি

স্ত্রীকে হত্যা: লাশ ডিপ ফ্রিজে, স্বামী গ্রেপ্তার

ছবি

বাগেরহাটে একদিনের ব্যবধানে যুবদল নেতাসহ দুই খুন, রাজমিস্ত্রির মৃতদেহ উদ্ধার

সখীপুরে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত বিএনপি নেতা পলাতক

ছবি

মেঘনা ও পদ্মায় বিশেষ অভিযানে ৪৫ জেলে আটক

ছবি

জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে প্রকাশ্যে যুবককে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা,পুলিশ বলছে কিছু জানেনা

ছবি

দুর্নীতির মামলায় আসাদুজ্জামান নূরের জামিন নাকচ

ছবি

গোমতী সেতুর টোলের কার্যাদেশে ‘অনিয়ম’: হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক

ছবি

হিরো আলম হত্যাচেষ্টা মামলা: ম্যাক্স অভির জামিন আবেদন নাকচ

ছবি

ছাত্রীনিবাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে আটকে মারধরের ঘটনায় পরিচালক রাজিয়া বেগমের জামিন

ছবি

মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় মদসহ ১১ বাংলাদেশি আটক

ছবি

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে মাছের ঘের ব্যবসায়ীরা অতিষ্ট, প্রতিকার দাবী

সিলেটে ফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

ছবি

পীরগাছায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি,বেড়েছে চুরি

ছবি

যশোরে মাদক সিন্ডিকেটের হামলায় যুবক খুন, আহত ৬

ছবি

সাবেক অতিরিক্ত সচিব হারুনের ফ্ল্যাট ও জমি জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

tab

সোনারগাঁয়ে পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে চলে মেঘনা নদীতে চাঁদাবাজি, বিকাশে চাঁদা নেয় রনি হাসান

প্রতিনিধি, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)

মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নৌ পুলিশকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিয়ে মেঘনা নদীতে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি। নদীতে চলাচলরত বিভিন্ন নৌযান থেকে প্রকাশ্যে ও মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে নেয়া হয় চাঁদা। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে সেই নৌযান শ্রমিকদের বেধরক মারধর করা হয়। অস্ত্র দেখিয়ে দেয়া হয় হত্যার হুমকি।

নদীতে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি রোধে নৌ-পুলিশের টহল থাকলেও চাঁদাবাজদের সঙ্গে তাদের সখ্যতা থাকায় কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা।

নিরাপত্তা দেয়ার নামে পুলিশও করছে চাঁদাবাজি। বর্তমানে সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদীর ত্রাস হিসেবে পরিচিত ডাকাতি, মারামারিসহ একাধিক মামলার আসামী এই চাঁদাবাজের নাম রনি হাসান। মেঘনা নদীর আড়াইহাজার উপজেলার খাগকান্দা এলাকা থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া পর্যন্ত চলে রনি হাসানের চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজির টাকা নৌ ফাঁড়ি ইনচার্জ থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পর্যন্ত ভাগ পায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

চাঁদাবাজ রনি হাসান এবং পুলিশের চাঁদা নেয়ার বিষয়টি নৌ শ্রমিকদের অভিযোগের প্রায় ১৭ টি ভিডিও ফুটেজ এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁও পৌরসভাধীন সাহাপুর গ্রামের নুরা মিস্ত্রির ছেলে রনি হাসান এক সময় পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেনের শ্রমিক হিসেবে দৈনিক ৩শ’ টাকার বিনিময়ে মেঘনা নদীতে বিভিন্ন নৌযানে চাঁদা আদায় করতো। পরবর্তীতে সে জাকির হোসেনকে পল্টি দিয়ে নিজের সিন্ডিকেট করে নদীতে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি শুরু করে মেঘনা নদীর ভয়ঙ্কর ত্রাস হিসেবে পরিচিত হয়। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, নরসিংদী ও ভৈরব থেকে সোনারগাঁ হয়ে ঢাকা, চাঁদপুর নৌ রুটে চাঁদাবাজির নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে রনি।

মেঘনা নদীর এই নৌ রুটে শত শত বাল্কহেড, বার্জ, কার্গো, ইঞ্জিন চালিত বালুবাহী নৌকা, চুনা পাথর, ও কয়লাসহ বিভিন্ন পন্য পরিবহন করা হয়। সেসব নৌযানকে টার্গেট করে রনি হাসান ও তার সিন্ডেকেট চাঁদাবাজি করে থাকে। প্রতিদিন এসব নৌযান থেকে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে থাকে রনি। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তাদের করা হয় বেধরক মারধর। এমনকি অস্ত্র দেখিয়ে দেয়া হয় হত্যার হুমকিও। তাই প্রাণভয়ে ও নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য রনিকে প্রতিদিন চাঁদা দিয়ে পন্য পরিবহন করেন নৌযান শ্রমিকরা। তবে কিছু নৌযান থেকে নগদ ও অধিকাংশ নৌযান থেকে বিকাশের মাধ্যমে চাঁদা নেয় রনি হাসান।

চাঁদাবাজি ও ডাকাতি রোধে মেঘনা নদীতে বৈদ্যেরবাজার নৌ ফাঁরি পুলিশ নদীতে টহলরত থাকলেও চাঁদাবাজদের সাথে সখ্যতা থাকায় এবং মোটা অঙ্কের মাসোহারা পাওয়ায় তারা প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে। তাছাড়া নিরাপত্তা দেয়ার আড়ালে পুলিশও করছে চাঁদাবাজি। তারা ২ শ’ টাকা করে প্রতিটি পণ্যবাহী নৌযান থেকে নেন। যদি কোনো নৌযান থেকে পুলিশের কাছে চাঁদাবাজ রনি হাসানের নাম বলা হয় তাহলে পুলিশ ২শ টাকার পরিবর্তে ১শ’ টাকা নেয়। আবার অনেক নৌযান এমনিতেই ছেড়ে দেয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে রনি সন্ত্রাসী দিয়ে শ্রমিকদের মারধর করে টাকা পয়সা লুটে নেয়। সেখানে পুলিশকেও নিরাপত্তা দিতে বাঁধা দেয়। পরবর্তীতে নৌযান মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্বিঘেœ চলাচলের সুযোগ করে দেবে বলে তাদের সঙ্গে চুক্তিবন্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ী টাকা দিলেই কেউ তাদের সমস্যা সৃষ্টি করে না। পুলিশ থাকেন তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে। চুক্তির টাকা থেকে পুলিশও ভাগ পেয়ে থাকেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। বৈদ্যেরবাজার এলাকার নৌ ফাঁড়ি থেকে শুরু করে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পেয়ে থাকেন মাসোহারা। তাই চাঁদাবাজ রনিকে গ্রেপ্তারে কোন ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার সিন্ডিকেটের এক সদস্য জানিয়েছেন, রনি মেঘনা নদীর ভয়ঙ্কর ত্রাস। তার সিন্ডিকেটে মেঘনা উপজেলার আব্দুল বারেকের তিন ছেলে আলী হোসেন, আবুল হাসনাত ও মহসিন জড়িত। কিছুদিন বৈদ্যেরবাজার এলাকার কয়েকজন যুবক নদীতে তাদের সঙ্গে কাজ করলেও এখন আর করেন না বলে তার দাবি। তাদের মাধ্যমেই শ্রমিকদের মারধর করে থাকেন। মারধরের ভয়ে নৌ মালিক ও শ্রমিকরা তার সঙ্গে আঁতাত করে বিকাশে টাকা পৌছে দেন। নৌ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ফাঁড়ি পুলিশদের ম্যানেজ করেই এ চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রন করে এবং রাতের বেলা ডাকাতি করেন। রনি ২০২২ সালে নগদ প্রায় ১৩ লাখ টাকা, ল্যাপটপ ও ১৩ টি মোবাইল সিমসহ গ্রেপ্তার হয়। তার বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় ডাকাতি, মারামারিসহ দেশের বিভিন্ন থায়ায় ১০ টি চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। সরেজমিনে মেঘনা নদীর নলচর এলাকায় গিয়ে নৌ যানকে থামাতে বললেই রনি ভাইয়ের বডি বলে দাবি করেন। রনির বডি বলার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, বিকাশের মাধ্যমে প্রতিটি বডির জন্য তাকে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। এই টাকা দিলেই নির্বিঘেœ হামলা ও মারধর ছাড়াই তারা চলাচল করতে পারেন।

এসময় বৈদ্যেরবাজার নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ২টি ট্রলারকে নদীতে টহল দিতে দেখা যায়।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত রনি হাসান মোবাইলে জানান, তিনি বর্তমানে বন্দর উপজেলার তিনগাঁও এলাকায় থাকেন। চাঁদাবাজির বিষয়টি সত্য নয়। টাকাসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলাম সত্য। তবে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বৈদ্যেরবাজার নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, নৌযান শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে টহল দেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশের চাঁদা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এটি সত্য নয়। শ্রমিকরা পুলিশের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানালে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এছাড়াও বিকাশে চাঁদাবাজির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের নৌ পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বিকাশের মাধ্যমে চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। পুলিশ চাঁদাবাজের পক্ষে অবস্থান নেয়ার বিষয়টি সত্য নয়। তাছাড়া নৌ ফাঁড়ি পুলিশের বিষয়ে চাঁদা আদায়ের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

back to top