নারায়ণগঞ্জের আদমজীনগর সরকারি এমডব্লিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন স্বপ্না আক্তার। তিনদিন নিখোঁজ থাকার পর ১৪ বছর বয়সী এ কিশোরীর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনার বছর পেরিয়ে গেলেও স্বপ্না হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
এতে হতাশ নিহতের পরিবারের সদস্যরা। সন্তান হত্যার বিচারের অপক্ষোয় এখনও দিন কাটছে স্বপ্নার বাবা দেলোয়ার হোসেন ও মা শাহিনা আক্তার নেহার। অন্তত সন্তানের হত্যাকারী কে তা জানতে চান তারা।
পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০ এপ্রিল সকালে বিদ্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন মিজমিজি কদমতলী পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসা থেকে বের হন কিশোরী স্বপ্না। তারপর আর তিনি বাড়ি ফেরেননি। তিনদিন পর বাড়ির অদূরে একটি ময়লার স্তুপ থেকে তার বস্তাবন্দি হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে বাড়ির গলিতে ঢুকতেও দেখা যায় কিশোরী স্বপ্নাকে। তবে, তিনি বাসায় ফেরেননি বলে জানান নিহতের বাবা-মা।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই সময় নিহতের মা শাহিনা আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি শুরুতে থানা পুলিশ তদন্ত করলেও এটি এখন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে। তবে, থানা পুলিশের মতো তারাও হত্যার কারণ এবং জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেনি।
পুলিশের তথ্যমতে, নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল স্বপ্নাকে। লাশ উদ্ধারের সময় তার হাত-পা বাঁধা ছিল। গলায় একাধিক ছুরির আঘাত ছিল এবং চেহারাও ছিল বিকৃত অবস্থায়। এতটাই বিকৃত ছিল যে, তার বাবা-মাও প্রথমে স্বপ্নাকে শনাক্ত করতে পারেনি। পরে পরনের জামা-কাপড় দেখে এই লাশ স্বপ্নার বলে শনাক্ত করেন তার পরিবারের সদস্যরা। তবে, নিহতের স্কুলব্যাগ ও জুতাও পাওয়া যায়নি।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটির তদন্তের পর তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নিখোঁজের দিনই হত্যার শিকার হন তিনি। পরে হাত-পা বেঁধে লাশ এমনভাবে কাপড়ে মুড়িয়ে বস্তায় ভরা হয় যাতে রক্তের চিহ্নও বাইরে থেকে বোঝা না যায়।
স্বপ্নার লাশ সনাক্ত হওয়ার পরপরই তদন্তে নামে থানা পুলিশ। তারা একাধিকবার স্বপ্নার বাবা দেলোয়ার হোসেন ও মা শাহিনা আক্তার নেহাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেন। দফায় দফায় স্বপ্নার জেঠা, চাচাতো ভাই, সহপাঠী ও বান্ধবীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু হত্যার রহস্য উদঘাটতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরে পুলিশেরই এক আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর হয়।
নিহতের পিতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, “পুলিশ আমাদের দু’জনকে দু’দিন ধরে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের সন্দেহ ছিল, আমরা শাসন করতে গিয়ে স্বপ্নাকে মেরে ফেলেছি। কিন্তু সেদিন স্বপ্না তো বাসায়ই আসেনি। সকালে স্কুলের জন্য বের হয়, এরপর আমরা ওর লাশ পেয়েছি।”
সন্তান হত্যার বিচারের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন মা শাহিনা। তিনি বলেন, “স্বপ্নাকে হারানোর পর আমরা সবকিছুই হারিয়েছি। একদিকে সন্তান হারানোর কষ্ট, অন্যদিকে মানুষের বঞ্চনা। পুলিশের সন্দেহের কারণে এলাকাবাসীও আমাদের সন্দেহ করতে শুরু করে। এই কারণে আমাকে গার্মেন্টসের চাকরি থেকেও বের করে দেওয়া হয়। নানা লোকে আমার মেয়েকে নিয়ে নানা রকম আজে-বাজে কথা বলাবলি করে। এখনো অনেকে অনেক কথা বলে। এসব শুনলে বুক ফেঁটে যায়।”
সন্তান হত্যার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, “এক সন্তানকে হারিয়ে আমাদের পরিবার নিঃশেষ হয়ে গেছে। আমরা আমাদের সন্তান হত্যার বিচার চাই। জানতে চাই, কারা, কেন আমাদের স্বপ্না হত্যা করেছে। কি দোষ ছিল আমাদের, যে এমন শাস্তি আমাদের দিল।”
মামলাটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর সাত্তার মোল্লা বলেন, “এ মামলায় কোনো সাক্ষী-প্রমাণ না থাকায় তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। তবে, আমরা এখনও এটি নিয়ে কাজ করছি।”
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
নারায়ণগঞ্জের আদমজীনগর সরকারি এমডব্লিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন স্বপ্না আক্তার। তিনদিন নিখোঁজ থাকার পর ১৪ বছর বয়সী এ কিশোরীর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনার বছর পেরিয়ে গেলেও স্বপ্না হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
এতে হতাশ নিহতের পরিবারের সদস্যরা। সন্তান হত্যার বিচারের অপক্ষোয় এখনও দিন কাটছে স্বপ্নার বাবা দেলোয়ার হোসেন ও মা শাহিনা আক্তার নেহার। অন্তত সন্তানের হত্যাকারী কে তা জানতে চান তারা।
পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০ এপ্রিল সকালে বিদ্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন মিজমিজি কদমতলী পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসা থেকে বের হন কিশোরী স্বপ্না। তারপর আর তিনি বাড়ি ফেরেননি। তিনদিন পর বাড়ির অদূরে একটি ময়লার স্তুপ থেকে তার বস্তাবন্দি হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে বাড়ির গলিতে ঢুকতেও দেখা যায় কিশোরী স্বপ্নাকে। তবে, তিনি বাসায় ফেরেননি বলে জানান নিহতের বাবা-মা।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই সময় নিহতের মা শাহিনা আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি শুরুতে থানা পুলিশ তদন্ত করলেও এটি এখন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে। তবে, থানা পুলিশের মতো তারাও হত্যার কারণ এবং জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেনি।
পুলিশের তথ্যমতে, নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল স্বপ্নাকে। লাশ উদ্ধারের সময় তার হাত-পা বাঁধা ছিল। গলায় একাধিক ছুরির আঘাত ছিল এবং চেহারাও ছিল বিকৃত অবস্থায়। এতটাই বিকৃত ছিল যে, তার বাবা-মাও প্রথমে স্বপ্নাকে শনাক্ত করতে পারেনি। পরে পরনের জামা-কাপড় দেখে এই লাশ স্বপ্নার বলে শনাক্ত করেন তার পরিবারের সদস্যরা। তবে, নিহতের স্কুলব্যাগ ও জুতাও পাওয়া যায়নি।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটির তদন্তের পর তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নিখোঁজের দিনই হত্যার শিকার হন তিনি। পরে হাত-পা বেঁধে লাশ এমনভাবে কাপড়ে মুড়িয়ে বস্তায় ভরা হয় যাতে রক্তের চিহ্নও বাইরে থেকে বোঝা না যায়।
স্বপ্নার লাশ সনাক্ত হওয়ার পরপরই তদন্তে নামে থানা পুলিশ। তারা একাধিকবার স্বপ্নার বাবা দেলোয়ার হোসেন ও মা শাহিনা আক্তার নেহাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেন। দফায় দফায় স্বপ্নার জেঠা, চাচাতো ভাই, সহপাঠী ও বান্ধবীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু হত্যার রহস্য উদঘাটতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরে পুলিশেরই এক আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর হয়।
নিহতের পিতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, “পুলিশ আমাদের দু’জনকে দু’দিন ধরে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের সন্দেহ ছিল, আমরা শাসন করতে গিয়ে স্বপ্নাকে মেরে ফেলেছি। কিন্তু সেদিন স্বপ্না তো বাসায়ই আসেনি। সকালে স্কুলের জন্য বের হয়, এরপর আমরা ওর লাশ পেয়েছি।”
সন্তান হত্যার বিচারের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন মা শাহিনা। তিনি বলেন, “স্বপ্নাকে হারানোর পর আমরা সবকিছুই হারিয়েছি। একদিকে সন্তান হারানোর কষ্ট, অন্যদিকে মানুষের বঞ্চনা। পুলিশের সন্দেহের কারণে এলাকাবাসীও আমাদের সন্দেহ করতে শুরু করে। এই কারণে আমাকে গার্মেন্টসের চাকরি থেকেও বের করে দেওয়া হয়। নানা লোকে আমার মেয়েকে নিয়ে নানা রকম আজে-বাজে কথা বলাবলি করে। এখনো অনেকে অনেক কথা বলে। এসব শুনলে বুক ফেঁটে যায়।”
সন্তান হত্যার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, “এক সন্তানকে হারিয়ে আমাদের পরিবার নিঃশেষ হয়ে গেছে। আমরা আমাদের সন্তান হত্যার বিচার চাই। জানতে চাই, কারা, কেন আমাদের স্বপ্না হত্যা করেছে। কি দোষ ছিল আমাদের, যে এমন শাস্তি আমাদের দিল।”
মামলাটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর সাত্তার মোল্লা বলেন, “এ মামলায় কোনো সাক্ষী-প্রমাণ না থাকায় তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। তবে, আমরা এখনও এটি নিয়ে কাজ করছি।”