alt

news » crime-corruption

২১ আগস্ট: তারেকসহ সব আসামির খালাসের রায় সুপ্রিম কোর্টে বহাল

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ ও তাদের পায়ের জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে -ফাইলছবি

ঢাকার সাবেক বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২১ বছর আগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার বহুল আলোচিত মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির খালাসের রায় বহাল রেখেছে সর্বোচ্চ আদালত। আসামিদের খালাস দিয়ে হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারকের আপিল বেঞ্চ গতকাল এ রায় দেয়।

খালাসের রায় বহাল রাখলেও হাইকোর্টের রায়ের একটি অংশ সংশোধন করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। ওই অংশটি বাদ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ওই ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন তুলেছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলীয় নেতা।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে ২০১২ সালে এ মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ওই হামলা চালানো হয়। হামলায় অংশ নেয় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) জঙ্গিরা। তারা সহযোগিতা নেয় বিদেশি জঙ্গিদের। আর এ ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল তখনকার চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষপর্যায়ের ‘ইন্ধন’। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড আনা হয় পাকিস্তান থেকে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জজ আদালত এ মামলায় বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিল। ২০১৮ সালে ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায়’ ওই হামলা ছিল আওয়ামী লীগকে ‘নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা’।

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে শত বিরোধ থাকবে। তাই বলে বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস চালানো হবে? এটা কাম্য নয়।’ দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে কারাগারে যারা ছিলেন, তারা সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছিলেন। পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আবেদন ‘ডেথ রেফারেন্স’ আকারে হাইকোর্টের বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছিল।

এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায় আসে ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর, ততদিনে চব্বিশের অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে দিয়েছে। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আসামিদের করা আপিল মঞ্জুর করার পাশাপাশি মৃত্যদণ্ড কার্যকরের আবেদন খারিজ করে দেয়। যারা আপিল করেছেন, তাদের পাশাপাশি যারা করেননি, সবাইকে এ মামলা থেকে খালাস দেয়া হয় হাইকোর্টের রায়ে।

আসামিদের খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, যেভাবে এ মামলায় পুনঃতদন্তের আদেশ দেয়া হয়েছিল, তা ছিল ‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’। যে সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে এ মামলার বিচার শুরু হয়েছিল, সেই অভিযোগপত্রই ছিল ‘অবৈধ’। হাইকোর্ট বলে, ‘সামগ্রিক বিবেচনায় আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, এ মামলায় যেভাবে আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়া হয়েছে, তা অবৈধ এবং আইনের বিচারে তা টেকে না।’

আসামিদের সবাই খালাস পাওয়ায় গত ১ ডিসেম্বর রায়ের দিন অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। তাদের প্রশ্ন ছিল, গ্রেনেড হামলায় নিহত ২৪ জনের পরিবার কি তাহলে সুবিচার পাবে না? সেই প্রশ্নের উত্তর আসে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত ৭৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে। সেখানে বলা হয়, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল দেশের ইতিহাসে ‘একটি জঘন্য ও মর্মান্তিক’ ঘটনা, যেখানে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আইভী রহমানও ছিলেন।

‘নিহতদের আত্মার প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতে এ হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, যা এ পর্যন্ত এ মামলায় সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত রয়েছে। ‘এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এ মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত, যাতে সঠিক এবং দক্ষ তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে পুনরায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যায়।’

আদালতের রায়ের এ পর্যবেক্ষণের আলোকে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এ আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়। হাইকোর্টের রায়ের এ অংশটি গতকাল চূড়ান্ত বিচারে বাদ দিয়েছে আপিল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষ জজ আদালতের দেয়া সাজার রায় বহাল রাখার এবং আসামিপক্ষ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ ও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছিল। তা নাকচ হয়ে গেছে। রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন- আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান, জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, কায়সার কামাল, মোহাম্মদ শিশির মনিরসহ আরও কয়েকজন।

খালাসের রায় কেন বহাল

এদিন সকাল ১০টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৬ বিচারক এজলাসে ওঠেন। এ বেঞ্চের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এ মামলায় হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে সব আসামিকে খালাস দিয়ে যে রায় দিয়েছে, তা অবজারভেশন, এক্সপানশন ও মোডিফিকেশনসহ বহাল রাখা হলো। ‘যারা আপিল করতে পারেননি তাদেরও খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে এ মামলায় যদি কেউ কারাগারে থাকেন, তার অন্য কোনো মামলা না থাকলে এখনই যেন তাকে মুক্তি দেয়া হয়।’

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি (হুজি নেতা) মুফতি হান্নানের কাছ থেকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দুইবার স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে। আনোয়ার চৌধুরী হত্যাচেষ্টা মামলায় টিএফআই সেল থেকে এনে দ্বিতীয়বার তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়। আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জবানবন্দি দেয়ার আগে মুফতি হান্নানকে (অন্য মামলায়) ফাঁসি দেয়া হয়। এছাড়া এ মামলায় এক ম্যাজিস্ট্রেট তিনজনের স্বীকারোক্তি নেন একদিনে, ‘অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে’।

হাইকোর্টের রায়ে মামলা পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়ে যে পর্যবেক্ষণ ছিল, সে বিষয়ে আপিল বিভাগ বলেছে, ‘এটি রাষ্ট্রের প্রশাসনের বিষয়। মাজদার হোসেন মামলার রায় অনুযায়ী এখানে বিচার বিভাগ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তাই হাইকোর্টের রায়ের এ পর্যবেক্ষণ বাতিল করা হল।’ পরে অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘২১ আগস্টের গ্রেনেড মামলায় সব আসামিকে খালাস দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সরকার কর্তৃক আনীত সব আপিল এবং পিটিশন খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া যে রায় তা বহাল আছে।

‘হাইকোর্ট বিভাগ যে অভজারভেশন দিয়েছিলেন, যে এ মামলার তদন্ত ঠিকমতো হয়নি, এটি পুনঃতদন্ত করতে হবে, সে ব্যাপারে আপিল বিভাগ বলেছে, যেটা আমরা শর্ট অর্ডারে বুঝেছি তা হলো এটা রাষ্ট্রের কাজ, বিচার বিভাগের কাজ নয়। কাজেই এটা এক্সপাঞ্জ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নন আপিল্যান্ট, অর্থাৎ তারেক রহমানসহ যারা আপিল করতে পারেন নাই, তাদের খালাসে হাইহোর্টের রায়ও বহাল রাখা হয়ছে।’

শিশির মনির বলেন, ‘আজকের অবজারভেশনগুলো হলো- যে কনফেশনগুলো দেয়া হয়েছিল ১২টা স্বীকারোক্তি এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলোকে সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করেননি। এ স্বীকারোক্তিগুলো আদায় করা হয়েছে নির্যাতন এবং নিপীড়ন করে। এ স্বীকারোক্তি আদায় করার আগে কেনো ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে তাদের পুলিশ কাস্টডিতে নেয়া হয়নি। নেয়া হয়েছিল টিএফআই (টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্স) সেলে বিচারিক আদেশ ছাড়াই। একই দিনে একজন ম্যাজিস্ট্রেট তিনটি কনফেশন নিয়েছিলেন, প্রতিটি কনফেশন ৩৬ পৃষ্ঠার, আদালত সেটিও বলেছেন যে এটি আইন দ্বারা কখনো সিদ্ধ নয়।’

এ আইনজীবী বলেন, ‘আরও একটি কনফেশনের কথা বলেছেন, মুফতি হান্নানের কনফেশনের ব্যাপারে। তখন মুফতি হান্নান ছিলেন কনডেম সেলে। কনডেম সেল থেকে এনে তার কনফেশন রেকর্ড করা হয়েছিল। যখন ৩৪২ এ সব আসামির স্টেটমেন্ট নেয়া হয়েছিল, তার আগে মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। কাজেই মুফতি হান্নানের ৩৪২ করা হয়নি।’ বিএনপি নেতা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, তারেক রহমানের নামে এখন আর কোনো মামলা নেই।

কী ঘটেছিল সেদিন

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রা হওয়ার কথা ছিল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের মাঝখানে একটি ট্রাক এনে তৈরি করা হয়েছিল মঞ্চ। শোভাযাত্রার আগে সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বক্তৃতা শেষ করে তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলার সময় ঘটে পর পর দুটি বিস্ফোরণ। এরপর সামান্য বিরতি দিয়ে একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ শুরু হয়। তারই মধ্যে শোনা যায় গুলির আওয়াজ।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা তখনও ভয়াবহতার মাত্রা বুঝে উঠতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এগোতেই তারা দেখতে পান শত শত জুতো, স্যান্ডেল রাস্তায় ছড়ানো। তারই মধ্যে পড়ে রয়েছে মানুষের রক্তাক্ত নিথর দেহ; আহতদের আর্তনাদে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি। হামলায় আহতদের সাহায্য করতে আওয়ামী লীগের অন্য নেতাকর্মীরা যখন ছুটে গেলেন, তখন পুলিশ তাদের ওপর টিয়ার শেল ছোড়ে। পুলিশ সে সময় হামলার আলামত সংগ্রহ না করে তা নষ্ট করতে উদ্যোগী হয়েছিল বলে পরে অভিযোগ ওঠে। সেদিনের হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ আগস্ট মারা যান। প্রায় দেড় বছর পর মৃত্যু হয় ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের। পরে সবমিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে।

ছবি

হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির পদক্ষেপ নিতে পুলিশকে দুদকের চিঠি

ছবি

উন্নয়ন কাজের অর্থ আত্মসাত মামলায় বেরোবির সাবেক উপাচার্য কলিমউল্লাহ কারাগারে

ছবি

ডিবি পরিচয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের ৭ সদস্য গ্রেপ্তার

ছবি

গায়ানার নাগরিক কোকেন বহনকারী বলে পুলিশ জানিয়েছে

ছবি

সাবেক ১৪ মন্ত্রী, এমপিসহ ২২ জনের ভার্চুয়ালি হাজিরা

সিলেটে অবৈধ বালু উত্তোলনের দায়ে ১৪ জনের কারাদণ্ড

ছবি

সূচনা ফাউন্ডেশনে ‘অনুদান দিয়ে’ এমপি হন প্রাণ গোপাল, বলছে দুদক

ছবি

মাংসের ব্যাগে দুইটি বিদেশি পিস্তল: তদন্তে নেমেছে পুলিশ, থানায় মামলা

ছবি

সাংবাদিক নির্যাতন মামলা: সাবেক ডিসি সুলতানা কারাগারে

ছবি

‘প্লট দুর্নীতি’: হাসিনা, জয় ও পুতুলের বিরুদ্ধে আরও ৬ জনের সাক্ষ্য

ছবি

গাজীপুরে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মেলার নামে লটারি প্রতারণা, এলাকাবাসীর ক্ষোভ

ছবি

জুলাই আন্দোলনে দমন-পীড়ন: মামলা দেড় হাজারের বেশি, অভিযোগপত্র ৩৪টির

ছবি

পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে জখম: এখনও অধরা মূল হোতারা

ছবি

জুলাই হত্যাকাণ্ড: ট্রাইব্যুনালে যা বললেন ‘রাজসাক্ষী’ পুলিশের সাবেক আইজি মামুন

ছবি

আদাবরে পুলিশের ওপর কিশোর গ্যাংয়ের হামলা, গ্রেপ্তার ১০২

ছবি

সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব জিয়াউল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে

ছবি

ধর্ষণে মেয়েকে অন্তঃসত্ত্বা করা বাবার আমৃত্যু কারাদণ্ড

ছবি

ছাগলকাণ্ড: স্ত্রীসহ মতিউরের রিমান্ড শুনানিতে আসেননি তদন্ত কর্মকর্তা

ছবি

অতিরিক্ত ডিআইজি ও তার স্ত্রীর সম্পদ বিবরণী চেয়েছে দুদক

ছবি

শিক্ষক কার্জনকে জামিন দেয়নি আদালত

ছবি

রাতের আঁধারে কেটে দেওয়া হলো কৃষকের স্বপ্নের লাউগাছ

ছবি

সীতাকুণ্ডে যৌথবাহিনীর অভিযানে দেশীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আটক ৪

ছবি

জাহিদ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি

ছবি

সিলেটে হাঁস মারার প্রতিবাদে খুন

ছবি

জামিন নাকচ, কারাগারে তৌহিদ আফ্রিদি

ছবি

যমেক: এসি ও প্রজেক্টর চুরিতে তুমুল হইচই

ছবি

গুমের বিচার হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে: মাইকেল চাকমা

ছবি

আইন অমান্য করায় ১২২ জেলে আটক

ছবি

উপদেষ্টা হতে সমন্বয়ককে ২শ’ কোটির চেক, ‘সত্যতা’ পেয়েছে দুদক

পীরগাছায় বাড়ির উঠোনে শুকোচ্ছে গাঁজা, কলাবাগানে লুকানো ৩০ গাছ

ছবি

চট্টগ্রাম থেকে স্কুলছাত্রীকে অপহরণ, কক্সবাজারে উদ্ধার

ছবি

জনশক্তি রপ্তানি ‘সিন্ডিকেট’: লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিনসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে ‘মানিলন্ডারিং’ মামলা

ছবি

জেনেভা ক্যাম্পে যৌথ অভিযান: সামুরাই-চাপাতিসহ গ্রেপ্তার ১১

ছবি

আরেক সাবেক এমপির অফিসে চাঁদাবাজি: ‘বৈষম্যবিরোধী’ সেই ৪ নেতা রিমান্ডে

ছবি

কারাগারে থাকা জ্বালাময়ী জালালের ভোটাধিকারের বিষয়ে নিশ্চিত নয় ডাকসু

ছবি

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের মামলায় সাবেক উপাচার্য কলিমউল্লাহর পাঁচ দিনের রিমান্ড

tab

news » crime-corruption

২১ আগস্ট: তারেকসহ সব আসামির খালাসের রায় সুপ্রিম কোর্টে বহাল

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ ও তাদের পায়ের জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে -ফাইলছবি

বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঢাকার সাবেক বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২১ বছর আগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার বহুল আলোচিত মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির খালাসের রায় বহাল রেখেছে সর্বোচ্চ আদালত। আসামিদের খালাস দিয়ে হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারকের আপিল বেঞ্চ গতকাল এ রায় দেয়।

খালাসের রায় বহাল রাখলেও হাইকোর্টের রায়ের একটি অংশ সংশোধন করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। ওই অংশটি বাদ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ওই ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন তুলেছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলীয় নেতা।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে ২০১২ সালে এ মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ওই হামলা চালানো হয়। হামলায় অংশ নেয় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) জঙ্গিরা। তারা সহযোগিতা নেয় বিদেশি জঙ্গিদের। আর এ ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল তখনকার চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষপর্যায়ের ‘ইন্ধন’। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড আনা হয় পাকিস্তান থেকে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জজ আদালত এ মামলায় বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিল। ২০১৮ সালে ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায়’ ওই হামলা ছিল আওয়ামী লীগকে ‘নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা’।

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে শত বিরোধ থাকবে। তাই বলে বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস চালানো হবে? এটা কাম্য নয়।’ দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে কারাগারে যারা ছিলেন, তারা সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছিলেন। পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আবেদন ‘ডেথ রেফারেন্স’ আকারে হাইকোর্টের বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছিল।

এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায় আসে ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর, ততদিনে চব্বিশের অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে দিয়েছে। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আসামিদের করা আপিল মঞ্জুর করার পাশাপাশি মৃত্যদণ্ড কার্যকরের আবেদন খারিজ করে দেয়। যারা আপিল করেছেন, তাদের পাশাপাশি যারা করেননি, সবাইকে এ মামলা থেকে খালাস দেয়া হয় হাইকোর্টের রায়ে।

আসামিদের খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, যেভাবে এ মামলায় পুনঃতদন্তের আদেশ দেয়া হয়েছিল, তা ছিল ‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’। যে সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে এ মামলার বিচার শুরু হয়েছিল, সেই অভিযোগপত্রই ছিল ‘অবৈধ’। হাইকোর্ট বলে, ‘সামগ্রিক বিবেচনায় আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, এ মামলায় যেভাবে আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়া হয়েছে, তা অবৈধ এবং আইনের বিচারে তা টেকে না।’

আসামিদের সবাই খালাস পাওয়ায় গত ১ ডিসেম্বর রায়ের দিন অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। তাদের প্রশ্ন ছিল, গ্রেনেড হামলায় নিহত ২৪ জনের পরিবার কি তাহলে সুবিচার পাবে না? সেই প্রশ্নের উত্তর আসে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত ৭৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে। সেখানে বলা হয়, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল দেশের ইতিহাসে ‘একটি জঘন্য ও মর্মান্তিক’ ঘটনা, যেখানে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আইভী রহমানও ছিলেন।

‘নিহতদের আত্মার প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতে এ হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, যা এ পর্যন্ত এ মামলায় সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত রয়েছে। ‘এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এ মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত, যাতে সঠিক এবং দক্ষ তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে পুনরায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যায়।’

আদালতের রায়ের এ পর্যবেক্ষণের আলোকে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এ আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়। হাইকোর্টের রায়ের এ অংশটি গতকাল চূড়ান্ত বিচারে বাদ দিয়েছে আপিল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষ জজ আদালতের দেয়া সাজার রায় বহাল রাখার এবং আসামিপক্ষ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ ও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছিল। তা নাকচ হয়ে গেছে। রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন- আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান, জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, কায়সার কামাল, মোহাম্মদ শিশির মনিরসহ আরও কয়েকজন।

খালাসের রায় কেন বহাল

এদিন সকাল ১০টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৬ বিচারক এজলাসে ওঠেন। এ বেঞ্চের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এ মামলায় হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে সব আসামিকে খালাস দিয়ে যে রায় দিয়েছে, তা অবজারভেশন, এক্সপানশন ও মোডিফিকেশনসহ বহাল রাখা হলো। ‘যারা আপিল করতে পারেননি তাদেরও খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে এ মামলায় যদি কেউ কারাগারে থাকেন, তার অন্য কোনো মামলা না থাকলে এখনই যেন তাকে মুক্তি দেয়া হয়।’

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি (হুজি নেতা) মুফতি হান্নানের কাছ থেকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দুইবার স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে। আনোয়ার চৌধুরী হত্যাচেষ্টা মামলায় টিএফআই সেল থেকে এনে দ্বিতীয়বার তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়। আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জবানবন্দি দেয়ার আগে মুফতি হান্নানকে (অন্য মামলায়) ফাঁসি দেয়া হয়। এছাড়া এ মামলায় এক ম্যাজিস্ট্রেট তিনজনের স্বীকারোক্তি নেন একদিনে, ‘অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে’।

হাইকোর্টের রায়ে মামলা পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়ে যে পর্যবেক্ষণ ছিল, সে বিষয়ে আপিল বিভাগ বলেছে, ‘এটি রাষ্ট্রের প্রশাসনের বিষয়। মাজদার হোসেন মামলার রায় অনুযায়ী এখানে বিচার বিভাগ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তাই হাইকোর্টের রায়ের এ পর্যবেক্ষণ বাতিল করা হল।’ পরে অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘২১ আগস্টের গ্রেনেড মামলায় সব আসামিকে খালাস দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সরকার কর্তৃক আনীত সব আপিল এবং পিটিশন খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া যে রায় তা বহাল আছে।

‘হাইকোর্ট বিভাগ যে অভজারভেশন দিয়েছিলেন, যে এ মামলার তদন্ত ঠিকমতো হয়নি, এটি পুনঃতদন্ত করতে হবে, সে ব্যাপারে আপিল বিভাগ বলেছে, যেটা আমরা শর্ট অর্ডারে বুঝেছি তা হলো এটা রাষ্ট্রের কাজ, বিচার বিভাগের কাজ নয়। কাজেই এটা এক্সপাঞ্জ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নন আপিল্যান্ট, অর্থাৎ তারেক রহমানসহ যারা আপিল করতে পারেন নাই, তাদের খালাসে হাইহোর্টের রায়ও বহাল রাখা হয়ছে।’

শিশির মনির বলেন, ‘আজকের অবজারভেশনগুলো হলো- যে কনফেশনগুলো দেয়া হয়েছিল ১২টা স্বীকারোক্তি এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলোকে সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করেননি। এ স্বীকারোক্তিগুলো আদায় করা হয়েছে নির্যাতন এবং নিপীড়ন করে। এ স্বীকারোক্তি আদায় করার আগে কেনো ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে তাদের পুলিশ কাস্টডিতে নেয়া হয়নি। নেয়া হয়েছিল টিএফআই (টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্স) সেলে বিচারিক আদেশ ছাড়াই। একই দিনে একজন ম্যাজিস্ট্রেট তিনটি কনফেশন নিয়েছিলেন, প্রতিটি কনফেশন ৩৬ পৃষ্ঠার, আদালত সেটিও বলেছেন যে এটি আইন দ্বারা কখনো সিদ্ধ নয়।’

এ আইনজীবী বলেন, ‘আরও একটি কনফেশনের কথা বলেছেন, মুফতি হান্নানের কনফেশনের ব্যাপারে। তখন মুফতি হান্নান ছিলেন কনডেম সেলে। কনডেম সেল থেকে এনে তার কনফেশন রেকর্ড করা হয়েছিল। যখন ৩৪২ এ সব আসামির স্টেটমেন্ট নেয়া হয়েছিল, তার আগে মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। কাজেই মুফতি হান্নানের ৩৪২ করা হয়নি।’ বিএনপি নেতা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, তারেক রহমানের নামে এখন আর কোনো মামলা নেই।

কী ঘটেছিল সেদিন

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রা হওয়ার কথা ছিল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের মাঝখানে একটি ট্রাক এনে তৈরি করা হয়েছিল মঞ্চ। শোভাযাত্রার আগে সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বক্তৃতা শেষ করে তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলার সময় ঘটে পর পর দুটি বিস্ফোরণ। এরপর সামান্য বিরতি দিয়ে একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ শুরু হয়। তারই মধ্যে শোনা যায় গুলির আওয়াজ।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা তখনও ভয়াবহতার মাত্রা বুঝে উঠতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এগোতেই তারা দেখতে পান শত শত জুতো, স্যান্ডেল রাস্তায় ছড়ানো। তারই মধ্যে পড়ে রয়েছে মানুষের রক্তাক্ত নিথর দেহ; আহতদের আর্তনাদে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি। হামলায় আহতদের সাহায্য করতে আওয়ামী লীগের অন্য নেতাকর্মীরা যখন ছুটে গেলেন, তখন পুলিশ তাদের ওপর টিয়ার শেল ছোড়ে। পুলিশ সে সময় হামলার আলামত সংগ্রহ না করে তা নষ্ট করতে উদ্যোগী হয়েছিল বলে পরে অভিযোগ ওঠে। সেদিনের হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ আগস্ট মারা যান। প্রায় দেড় বছর পর মৃত্যু হয় ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের। পরে সবমিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে।

back to top