ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
হত্যা, রায় জালিয়াতি মামলার পর প্লট দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন শুনানিতে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক আদালতকে বলেছেন, ‘টাকা না থাকা তো কোনো অপরাধ নয়।’ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউককে বলেই অবসরের পর প্লটের বাকি টাকা পরিশোধ করেছেন বলে জানান তিনি। ‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগে দুদকের করা মামলায় গতকাল মঙ্গলবার খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানি নেয় ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া।
এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত খায়রুল হকের উপস্থিতিতে শুনানির জন্য বুধবার,(১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দিন ধার্য করেন। এদিন সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ প্রহরায় তাকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় সাবেক এ প্রধান বিচারপতির মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা ছিল। আসামির কাঠগড়ায় বসতে তাকে একটি প্লাস্টিকের চেয়ার দেয়া হয়। ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে ওঠেন। তখন তিনি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান।
এরপর খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। শুনানির একপর্যায়ে খায়রুল হক কথা বলতে আদালতের অনুমতি চান। তখন তাকে সামনে ডেকে নেয় বিচারক। খায়রুল হক আদালতকে বলেন, ‘সবাই যেভাবে প্লটের জন্য (রাজউকে) আবেদন করে, আমিও সেইভাবে করেছি। ২২/২৩ বছর আগের কথা, কারোরই মনে থাকার কথা না। সে সময় আমি লিখেছিলাম, আমার টাকা নেই। অবসর নেয়ার পরে টাকা দেব। টাকা না থাকা তো কোনো অপরাধ নয়।
‘আমার এত টাকা ছিল না। সেই কারণে রাজউককে জানাই অবসরের পরে টাকাটা দেব। অবসর নেয়ার পরে যে টাকাটা বাকি ছিল, সব টাকা আমি পরিশোধ করি। এরপর আমাকে (প্লট) রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার বয়স ৮১ বছরের বেশি। দুই সপ্তাহ আগে হার্ট অ্যাটাক হয়। আমি অসুস্থ। এগুলো বিবেচনা করে যা করার করবেন।’
সাবেক এ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রানা প্লাজা ভবন ধসের যে ঘটনা ঘটেছিল সে সময়ে আমাকে, সুলতানা কামালসহ তিনজনকে নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কমিশন গঠন করা হয়। আমাদের প্রতি মাসে বেতন ছিল সাড়ে ৯ হাজার ডলার। আমরা ১৮ মাস কাজ করেছিলাম। ‘একটা টাকাও আমরা নেয়নি। কেন নেয়নি? চেয়েছিলাম এ দেড় কোটি টাকা রানা প্লাজায় যাদের ক্ষতি হয়েছে তারা যেন পায়।’
কোথাও থেকে কোনোভাবে সুবিধাভোগী হননি বলে আদালতে দাবি করেন খায়রুল হক। বক্তব্য শেষ হলে আদালত তাকে প্লট দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেয়। এর পরে খায়রুল হকের পক্ষে তার আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহিন জামিন চেয়ে শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর হাফিজুর রহমান জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ হয়ে যায়। খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার পর ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা পুনর্নিয়োগ দেয়া হয় তাকে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১৩ আগস্ট আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন খায়রুল হক। গত ২৪ জুলাই সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই দিন রাতে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
এরপর গত ২৯ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনি রায় দেয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ৩০ জুলাই বিচারক হিসেবে দুর্নীতি ও বিদ্বেষমূলকভাবে বেআইনি রায় দেয়াসহ জাল রায় তৈরির অভিযোগে শাহবাগ থানার মামলায় তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়, আর রিমান্ড শেষে গেল গত ৭ আগস্ট খায়রুল হককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে ৬ আগস্ট বিধি বহির্ভূতভাবে রাজউকের প্লট গ্রহণের অভিযোগে খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক।
দুদকের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুনের করা মামলায় খায়রুল হকসহ ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়। অন্য আসামি হলেন- রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নুরুল হুদা, সাবেক সদস্য (অর্থ) ও সদস্য (এস্টেট) আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, সাবেক সদস্য (অর্থ) মো. আবু বক্কার সিকদার, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সিকদার, সাবেক সদস্য (এস্টেট) আখতার হোসেন ভুইয়া, সাবেক যুগ্মসচিব ও সদস্য (উন্নয়ন) এম মাহবুবুল আলম এবং সদস্য (প্রশাসন ও ভূমি) নাজমুল হাই।
অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজধানীর নায়েম রোডে প্রায় ১৮ কাঠা জমির ওপর ছয় তলা বাড়ি থাকার পরও তিনি প্রধান বিচারপতি থাকাবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে মিথ্যা হলফনামা দাখিলের মাধ্যমে পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্প থেকে ১০ কাঠা জমির একটি প্লট বরাদ্দ নেন। দুদকের অভিযোগ, প্রধান বিচারপতি থাকাবস্থায় মিথ্যা তথ্য ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ‘দ্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস) রুলস’, ১৯৬৯-এর বিধি ১৩ লঙ্ঘন করে প্লট বরাদ্দ পান খায়রুল হক। নিয়মানুযায়ী যাদের প্লট বরাদ্দ বাতিল হবে, তাদের আবেদন আর পুনর্বিবেচনা করা যাবে না। কিন্তু বরাদ্দ বাতিলের পরও তার নামে প্লট পুনর্বহাল করা হয়।
‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিস্তি ও সুদসহ অর্থ পরিশোধ না করে, পাঁচ বছর পরে সুদমুক্তভাবে টাকা জমা দিয়ে তিনি রাজউকের বিধি লঙ্ঘন করেন। এতে সুদের ৪ লাখ ৭৪ হাজার ২৪০ টাকা সরকারের ক্ষতি হয় এবং এ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।’ মামলায় বলা হয়েছে, রাজউকের প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি ও প্রসপেক্টাস অনুযায়ী, মূল্য এককালীন বা তিনটি কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য। প্রথম কিস্তি বাবদ ৪০ শতাংশ এবং ১৬ শতাংশ হারে সুদসহ দুইটি বাৎসরিক কিস্তিতে বাকি ৬০ শতাংশ পরিশোধের কথা থাকলেও খায়রুল হক অবসরের পর বিশেষ সুবিধা নিয়ে সুদমুক্তভাবে পরিশোধ করেন। অথচ বিধি অনুযায়ী, তৃতীয় কিস্তি শুধু দখল হস্তান্তরের আগেই সুদমুক্তভাবে দেয়া যেত।
‘গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২০১০ সালের ২১ সেপ্টেম্বরের এক স্মারকে রাজউকের নিজস্ব বিধি অনুসরণে সুদ আদায়ের নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়। খায়রুল হককে অবসরের পরে এ বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়, যা অন্য কোনো আবেদনকারী পাননি।’
দুদক বলছে, ২০০৪ সালের ২১ জানুয়ারিতে রাজউক একটি সাময়িক বরাদ্দপত্র জারি করে। সেখানে বলা হয়, প্রথম কিস্তি হিসাবে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ওই বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে, নাহলে বরাদ্দ বাতিল হবে। তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ না করায় বরাদ্দ বাতিল হয়, কিন্তু পরবর্তীতে তা পুনরায় কার্যকর করা হয় বিধি লঙ্ঘন করে। তিনি নিজের ও অন্যদের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিতে রাজউকের কর্মকর্তাদের সহায়তায় অনিয়মে যুক্ত হন। ফলে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে আইনভঙ্গের মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা গ্রহণের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলছে দুদক। এসব অভিযোগে ৮ আসামির বিরুদ্ধে দ-বিধির ১৬১/১৬৩/৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
হত্যা, রায় জালিয়াতি মামলার পর প্লট দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন শুনানিতে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক আদালতকে বলেছেন, ‘টাকা না থাকা তো কোনো অপরাধ নয়।’ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউককে বলেই অবসরের পর প্লটের বাকি টাকা পরিশোধ করেছেন বলে জানান তিনি। ‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগে দুদকের করা মামলায় গতকাল মঙ্গলবার খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানি নেয় ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া।
এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত খায়রুল হকের উপস্থিতিতে শুনানির জন্য বুধবার,(১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দিন ধার্য করেন। এদিন সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ প্রহরায় তাকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় সাবেক এ প্রধান বিচারপতির মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা ছিল। আসামির কাঠগড়ায় বসতে তাকে একটি প্লাস্টিকের চেয়ার দেয়া হয়। ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে ওঠেন। তখন তিনি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান।
এরপর খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। শুনানির একপর্যায়ে খায়রুল হক কথা বলতে আদালতের অনুমতি চান। তখন তাকে সামনে ডেকে নেয় বিচারক। খায়রুল হক আদালতকে বলেন, ‘সবাই যেভাবে প্লটের জন্য (রাজউকে) আবেদন করে, আমিও সেইভাবে করেছি। ২২/২৩ বছর আগের কথা, কারোরই মনে থাকার কথা না। সে সময় আমি লিখেছিলাম, আমার টাকা নেই। অবসর নেয়ার পরে টাকা দেব। টাকা না থাকা তো কোনো অপরাধ নয়।
‘আমার এত টাকা ছিল না। সেই কারণে রাজউককে জানাই অবসরের পরে টাকাটা দেব। অবসর নেয়ার পরে যে টাকাটা বাকি ছিল, সব টাকা আমি পরিশোধ করি। এরপর আমাকে (প্লট) রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার বয়স ৮১ বছরের বেশি। দুই সপ্তাহ আগে হার্ট অ্যাটাক হয়। আমি অসুস্থ। এগুলো বিবেচনা করে যা করার করবেন।’
সাবেক এ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রানা প্লাজা ভবন ধসের যে ঘটনা ঘটেছিল সে সময়ে আমাকে, সুলতানা কামালসহ তিনজনকে নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কমিশন গঠন করা হয়। আমাদের প্রতি মাসে বেতন ছিল সাড়ে ৯ হাজার ডলার। আমরা ১৮ মাস কাজ করেছিলাম। ‘একটা টাকাও আমরা নেয়নি। কেন নেয়নি? চেয়েছিলাম এ দেড় কোটি টাকা রানা প্লাজায় যাদের ক্ষতি হয়েছে তারা যেন পায়।’
কোথাও থেকে কোনোভাবে সুবিধাভোগী হননি বলে আদালতে দাবি করেন খায়রুল হক। বক্তব্য শেষ হলে আদালত তাকে প্লট দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেয়। এর পরে খায়রুল হকের পক্ষে তার আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহিন জামিন চেয়ে শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর হাফিজুর রহমান জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ হয়ে যায়। খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার পর ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা পুনর্নিয়োগ দেয়া হয় তাকে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১৩ আগস্ট আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন খায়রুল হক। গত ২৪ জুলাই সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই দিন রাতে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
এরপর গত ২৯ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনি রায় দেয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ৩০ জুলাই বিচারক হিসেবে দুর্নীতি ও বিদ্বেষমূলকভাবে বেআইনি রায় দেয়াসহ জাল রায় তৈরির অভিযোগে শাহবাগ থানার মামলায় তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়, আর রিমান্ড শেষে গেল গত ৭ আগস্ট খায়রুল হককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে ৬ আগস্ট বিধি বহির্ভূতভাবে রাজউকের প্লট গ্রহণের অভিযোগে খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক।
দুদকের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুনের করা মামলায় খায়রুল হকসহ ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়। অন্য আসামি হলেন- রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নুরুল হুদা, সাবেক সদস্য (অর্থ) ও সদস্য (এস্টেট) আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, সাবেক সদস্য (অর্থ) মো. আবু বক্কার সিকদার, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সিকদার, সাবেক সদস্য (এস্টেট) আখতার হোসেন ভুইয়া, সাবেক যুগ্মসচিব ও সদস্য (উন্নয়ন) এম মাহবুবুল আলম এবং সদস্য (প্রশাসন ও ভূমি) নাজমুল হাই।
অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজধানীর নায়েম রোডে প্রায় ১৮ কাঠা জমির ওপর ছয় তলা বাড়ি থাকার পরও তিনি প্রধান বিচারপতি থাকাবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে মিথ্যা হলফনামা দাখিলের মাধ্যমে পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্প থেকে ১০ কাঠা জমির একটি প্লট বরাদ্দ নেন। দুদকের অভিযোগ, প্রধান বিচারপতি থাকাবস্থায় মিথ্যা তথ্য ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ‘দ্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস) রুলস’, ১৯৬৯-এর বিধি ১৩ লঙ্ঘন করে প্লট বরাদ্দ পান খায়রুল হক। নিয়মানুযায়ী যাদের প্লট বরাদ্দ বাতিল হবে, তাদের আবেদন আর পুনর্বিবেচনা করা যাবে না। কিন্তু বরাদ্দ বাতিলের পরও তার নামে প্লট পুনর্বহাল করা হয়।
‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিস্তি ও সুদসহ অর্থ পরিশোধ না করে, পাঁচ বছর পরে সুদমুক্তভাবে টাকা জমা দিয়ে তিনি রাজউকের বিধি লঙ্ঘন করেন। এতে সুদের ৪ লাখ ৭৪ হাজার ২৪০ টাকা সরকারের ক্ষতি হয় এবং এ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।’ মামলায় বলা হয়েছে, রাজউকের প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি ও প্রসপেক্টাস অনুযায়ী, মূল্য এককালীন বা তিনটি কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য। প্রথম কিস্তি বাবদ ৪০ শতাংশ এবং ১৬ শতাংশ হারে সুদসহ দুইটি বাৎসরিক কিস্তিতে বাকি ৬০ শতাংশ পরিশোধের কথা থাকলেও খায়রুল হক অবসরের পর বিশেষ সুবিধা নিয়ে সুদমুক্তভাবে পরিশোধ করেন। অথচ বিধি অনুযায়ী, তৃতীয় কিস্তি শুধু দখল হস্তান্তরের আগেই সুদমুক্তভাবে দেয়া যেত।
‘গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২০১০ সালের ২১ সেপ্টেম্বরের এক স্মারকে রাজউকের নিজস্ব বিধি অনুসরণে সুদ আদায়ের নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়। খায়রুল হককে অবসরের পরে এ বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়, যা অন্য কোনো আবেদনকারী পাননি।’
দুদক বলছে, ২০০৪ সালের ২১ জানুয়ারিতে রাজউক একটি সাময়িক বরাদ্দপত্র জারি করে। সেখানে বলা হয়, প্রথম কিস্তি হিসাবে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ওই বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে, নাহলে বরাদ্দ বাতিল হবে। তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ না করায় বরাদ্দ বাতিল হয়, কিন্তু পরবর্তীতে তা পুনরায় কার্যকর করা হয় বিধি লঙ্ঘন করে। তিনি নিজের ও অন্যদের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিতে রাজউকের কর্মকর্তাদের সহায়তায় অনিয়মে যুক্ত হন। ফলে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে আইনভঙ্গের মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা গ্রহণের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলছে দুদক। এসব অভিযোগে ৮ আসামির বিরুদ্ধে দ-বিধির ১৬১/১৬৩/৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।