ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন চানখাঁরপুলে তিনজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুইজন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার,(১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করে। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সেদিন চানখাঁরপুলে ৬ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার চলছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে যে দুজন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা হলেন ঢাকার নিউমার্কেটে কাপড়ের দোকানের কর্মচারী, নাজিম উদ্দিন রোডের বাসিন্দা মো. টিপু সুলতান ও নৌবাহিনীতে মালামাল সরবরাহকারী চানখাঁরপুলের বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামান।
টিপু সুলতান বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তার ‘নৈতিক’ সমর্থন ছিল। ওই বছরের ৫ আগস্ট বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে ‘লং মার্চ’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে চানখাঁরপুল বোরহানউদ্দিন কলেজের সামনে অবস্থান নেন তিনি।
ওই সময় আন্দোলনে তাদের সঙ্গে বর্তমান উপদেষ্টা আসিফ মোহাম্মদ সজীব ভূঁইয়াও অংশগ্রহণ করেন তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা সামনের দিকে যেতে থাকলে বোরহানউদ্দিন কলেজের গেইটের সামনে পৌঁছলে পুলিশ চানখাঁরপুল মোড় থেকে আমাদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি চালায়। আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই।
‘পরবর্তীতে শুনতে পাই, আমার এলাকার ইয়াকুব ভাই নাজিম উদ্দিন রোডে সোহাগ হোটেলের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমি সেখানে গিয়ে দেখি ইয়াকুব ভাইয়ের পেট দিয়ে গুলি লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে গেছে। তার ভুঁড়ি বের হয়ে যায়।’ জাহিদ নামের এক ব্যক্তি তার টি-শার্ট খুলে ইয়াকুবের গুলিবিদ্ধ ক্ষতস্থানে বেঁধে দেন, বলেন টিপু।
‘তারপর এক আন্দোলনকারী ইয়াকুবকে একটি অটোরিকশায় তুলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। শুনেছি, সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ এরপর আন্দোলনকারীদের বোরহানউদ্দিন কলেজের কাছাকাছি অবস্থান করার সময় পুলিশ গুলি করতে করতে কলেজের ফটক পর্যন্ত চলে আসার বর্ণনা দেন টিপু।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে সেই গুলিটি আমার পাশে থাকা আন্দোলনকারী ইসমামুলের পেটে লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়।’ টিপুর সাক্ষ্যে ইসমামুলকে প্রথমে অটোরিকশায় তুলে একজন আন্দোলনকারীর মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসার বর্ণনা উঠে আসে। তিনি বলেন, ‘পরবর্তী সময় জানতে পারি ইসমামুল তিন দিন পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।’ চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন টিপু।
অন্য সাক্ষী মনিরুজ্জামান বলেন, জুলাই আন্দোলনে তিনি ও তার ছেলে
তৌফাউজ্জামান ৪/৫ দিন অংশ নিয়েছিলেন। ৫ আগস্ট সকালে তার ছেলে তাকে না বলে আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তখন খুব গোলাগুলি হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি ছেলেকে খুঁজতে বের হয়ে নিমতলী যাই। ফোন করি। ছেলে বলে, ‘আমি নিমতলীর কাছাকাছি আছি। গোলাগুলির জন্য রাস্তা ক্রস করতে পারছি না’।”
বেলা ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে ছেলেসহ তিনি খলিফা পট্টি এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। ‘আমরা চানখাঁরপুলের দিকে এগুচ্ছিলাম। তখন পুলিশ গুলি করতে করতে আমাদের দিকে আসে। পুলিশের গুলিতে আমার সামনে থাকা জুনায়েদ নামে একজন আন্দোলনকারী মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়।’
‘৩/৪ জন আন্দোলনকারী তাকে রিকশায় তুলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেদিন বিকেলের দিকে জানতে পারি জুনায়েদ মারা গেছে।’ এই দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার মধ্য দিয়ে এ হত্যা মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হলো। সাক্ষীদের জেরা করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, শহিদুল ইসলামসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চাঁনখারপুলে ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেয়। এ মামলায় চার আসামি শাহবাগ থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি চার আসামি ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম এবং রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুলকে পলাতক রয়েছেন।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন চানখাঁরপুলে তিনজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুইজন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার,(১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করে। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সেদিন চানখাঁরপুলে ৬ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার চলছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে যে দুজন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা হলেন ঢাকার নিউমার্কেটে কাপড়ের দোকানের কর্মচারী, নাজিম উদ্দিন রোডের বাসিন্দা মো. টিপু সুলতান ও নৌবাহিনীতে মালামাল সরবরাহকারী চানখাঁরপুলের বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামান।
টিপু সুলতান বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তার ‘নৈতিক’ সমর্থন ছিল। ওই বছরের ৫ আগস্ট বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে ‘লং মার্চ’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে চানখাঁরপুল বোরহানউদ্দিন কলেজের সামনে অবস্থান নেন তিনি।
ওই সময় আন্দোলনে তাদের সঙ্গে বর্তমান উপদেষ্টা আসিফ মোহাম্মদ সজীব ভূঁইয়াও অংশগ্রহণ করেন তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা সামনের দিকে যেতে থাকলে বোরহানউদ্দিন কলেজের গেইটের সামনে পৌঁছলে পুলিশ চানখাঁরপুল মোড় থেকে আমাদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি চালায়। আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই।
‘পরবর্তীতে শুনতে পাই, আমার এলাকার ইয়াকুব ভাই নাজিম উদ্দিন রোডে সোহাগ হোটেলের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমি সেখানে গিয়ে দেখি ইয়াকুব ভাইয়ের পেট দিয়ে গুলি লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে গেছে। তার ভুঁড়ি বের হয়ে যায়।’ জাহিদ নামের এক ব্যক্তি তার টি-শার্ট খুলে ইয়াকুবের গুলিবিদ্ধ ক্ষতস্থানে বেঁধে দেন, বলেন টিপু।
‘তারপর এক আন্দোলনকারী ইয়াকুবকে একটি অটোরিকশায় তুলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। শুনেছি, সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ এরপর আন্দোলনকারীদের বোরহানউদ্দিন কলেজের কাছাকাছি অবস্থান করার সময় পুলিশ গুলি করতে করতে কলেজের ফটক পর্যন্ত চলে আসার বর্ণনা দেন টিপু।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে সেই গুলিটি আমার পাশে থাকা আন্দোলনকারী ইসমামুলের পেটে লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়।’ টিপুর সাক্ষ্যে ইসমামুলকে প্রথমে অটোরিকশায় তুলে একজন আন্দোলনকারীর মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসার বর্ণনা উঠে আসে। তিনি বলেন, ‘পরবর্তী সময় জানতে পারি ইসমামুল তিন দিন পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।’ চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন টিপু।
অন্য সাক্ষী মনিরুজ্জামান বলেন, জুলাই আন্দোলনে তিনি ও তার ছেলে
তৌফাউজ্জামান ৪/৫ দিন অংশ নিয়েছিলেন। ৫ আগস্ট সকালে তার ছেলে তাকে না বলে আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তখন খুব গোলাগুলি হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি ছেলেকে খুঁজতে বের হয়ে নিমতলী যাই। ফোন করি। ছেলে বলে, ‘আমি নিমতলীর কাছাকাছি আছি। গোলাগুলির জন্য রাস্তা ক্রস করতে পারছি না’।”
বেলা ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে ছেলেসহ তিনি খলিফা পট্টি এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। ‘আমরা চানখাঁরপুলের দিকে এগুচ্ছিলাম। তখন পুলিশ গুলি করতে করতে আমাদের দিকে আসে। পুলিশের গুলিতে আমার সামনে থাকা জুনায়েদ নামে একজন আন্দোলনকারী মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়।’
‘৩/৪ জন আন্দোলনকারী তাকে রিকশায় তুলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেদিন বিকেলের দিকে জানতে পারি জুনায়েদ মারা গেছে।’ এই দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার মধ্য দিয়ে এ হত্যা মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হলো। সাক্ষীদের জেরা করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, শহিদুল ইসলামসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চাঁনখারপুলে ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেয়। এ মামলায় চার আসামি শাহবাগ থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি চার আসামি ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম এবং রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুলকে পলাতক রয়েছেন।