আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ১২১ বার
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত এ কার্যক্রম শেষ করতে ‘আপ্রাণ চেষ্টার’ তাগিদ দিয়েছে। রোববার,(১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) ঢাকার মহানগর হাকিম মিনহাজুর রহমানের আদালতে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। পাশাপাশি তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে শুনানির দিন ছিল। এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল আদালতে উপস্থিত হন। মামলা তদন্তের অগ্রগতি কতদূর? আদালত জানতে চাইলে এ তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্সের মাধ্যমে তদন্ত শুরু হয়। এরপর আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয় তদন্তের। আমি এই মামলা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও ডিএনএ এক্সপার্টদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি।
‘দুইজনের মিক্সড ডিএনএ তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এসব কারণে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে দেরি হচ্ছে।’ আজিজুল বলেন, ‘কিছুদিন আগে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্ধারিত সময় পার হলেও উচ্চ আদালত থেকে আরও সময় নেয়া হয়েছে।’
এ সময় বিচারক বলেন, ‘যা বুঝলাম- এই মামলার আগের তদন্ত কর্মকর্তা যিনি ছিলেন, তিনিও একই কথা বলেছেন। আপনার তদন্তের অগ্রগতিতে আদালত অসন্তুষ্ট, আপনি আপ্রাণ চেষ্টা করবেন।’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া করা বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। সাগর সে সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলী রোমান শেরেবাংলা থানায় মামলা করেন।
ওই হত্যাকান্ডের তদন্ত প্রতিবেদন এক যুগেও দাখিল হয়নি। আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ১২১ বার। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালত আগামী ৩০ নভেম্বর দিন ঠিক করেছে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই রফিকুল ইসলাম।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকে র্যাবকে বাদ দেয়া হয়। একইসঙ্গে সেদিন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করে এ তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে ছয় মাস বেঁধে দেয় হাইকোর্ট। গত ২৩ অক্টোবর আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত কাজ শেষ করতে টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংশ্লিষ্ট পরিপত্রে বলেছে, ‘৬ মাসের মধ্যে টাস্কফোর্স তার প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করবে। টাস্কফোর্স প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।’ পরে গত ২২ এপ্রিল টাস্কফোর্সকে আরও ৬ মাস সময় দিয়েছে হাইকোর্ট। টাস্কফোর্সের অধীনে পিবিআই মামলাটির তদন্ত করছে।
২০১২ সালে সাগর-রুনিকে হত্যার রাতে সেই ফ্ল্যাটে তাদের সঙ্গে ছিল একমাত্র সন্তান পাঁচ বছর বয়সী মাহির সরওয়ার মেঘ। তাকে উদ্ধৃত করে পুলিশ তখন জানিয়েছিল, খুনি ছিল দুইজন। আলোড়ন সৃষ্টি করা ওই হত্যাকান্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর বছরের পর বছর গড়ালেও হত্যা রহস্যের কিনারা হয়নি।
প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ এ হত্যা মামলার তদন্তে নামে। চারদিন পর তদন্তের ভার দেয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে। তারা রহস্যের কিনারা করতে না পারায় হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দায়িত্ব পেয়ে ডিএনএসহ অন্যান্য বায়োমেট্রিক পরীক্ষার জন্য ঘটনাস্থল থেকে বটি, পরিধেয় কাপড়সহ বেশ কিছু বস্তু পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবেও পাঠায় র্যাব। কিন্তু এতদিনেও তার ফল প্রকাশ করা হয়নি।
আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ১২১ বার
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত এ কার্যক্রম শেষ করতে ‘আপ্রাণ চেষ্টার’ তাগিদ দিয়েছে। রোববার,(১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) ঢাকার মহানগর হাকিম মিনহাজুর রহমানের আদালতে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। পাশাপাশি তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে শুনানির দিন ছিল। এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল আদালতে উপস্থিত হন। মামলা তদন্তের অগ্রগতি কতদূর? আদালত জানতে চাইলে এ তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্সের মাধ্যমে তদন্ত শুরু হয়। এরপর আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয় তদন্তের। আমি এই মামলা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও ডিএনএ এক্সপার্টদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি।
‘দুইজনের মিক্সড ডিএনএ তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এসব কারণে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে দেরি হচ্ছে।’ আজিজুল বলেন, ‘কিছুদিন আগে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্ধারিত সময় পার হলেও উচ্চ আদালত থেকে আরও সময় নেয়া হয়েছে।’
এ সময় বিচারক বলেন, ‘যা বুঝলাম- এই মামলার আগের তদন্ত কর্মকর্তা যিনি ছিলেন, তিনিও একই কথা বলেছেন। আপনার তদন্তের অগ্রগতিতে আদালত অসন্তুষ্ট, আপনি আপ্রাণ চেষ্টা করবেন।’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া করা বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। সাগর সে সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলী রোমান শেরেবাংলা থানায় মামলা করেন।
ওই হত্যাকান্ডের তদন্ত প্রতিবেদন এক যুগেও দাখিল হয়নি। আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ১২১ বার। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালত আগামী ৩০ নভেম্বর দিন ঠিক করেছে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই রফিকুল ইসলাম।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকে র্যাবকে বাদ দেয়া হয়। একইসঙ্গে সেদিন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করে এ তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে ছয় মাস বেঁধে দেয় হাইকোর্ট। গত ২৩ অক্টোবর আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত কাজ শেষ করতে টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংশ্লিষ্ট পরিপত্রে বলেছে, ‘৬ মাসের মধ্যে টাস্কফোর্স তার প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করবে। টাস্কফোর্স প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।’ পরে গত ২২ এপ্রিল টাস্কফোর্সকে আরও ৬ মাস সময় দিয়েছে হাইকোর্ট। টাস্কফোর্সের অধীনে পিবিআই মামলাটির তদন্ত করছে।
২০১২ সালে সাগর-রুনিকে হত্যার রাতে সেই ফ্ল্যাটে তাদের সঙ্গে ছিল একমাত্র সন্তান পাঁচ বছর বয়সী মাহির সরওয়ার মেঘ। তাকে উদ্ধৃত করে পুলিশ তখন জানিয়েছিল, খুনি ছিল দুইজন। আলোড়ন সৃষ্টি করা ওই হত্যাকান্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর বছরের পর বছর গড়ালেও হত্যা রহস্যের কিনারা হয়নি।
প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ এ হত্যা মামলার তদন্তে নামে। চারদিন পর তদন্তের ভার দেয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে। তারা রহস্যের কিনারা করতে না পারায় হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দায়িত্ব পেয়ে ডিএনএসহ অন্যান্য বায়োমেট্রিক পরীক্ষার জন্য ঘটনাস্থল থেকে বটি, পরিধেয় কাপড়সহ বেশ কিছু বস্তু পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবেও পাঠায় র্যাব। কিন্তু এতদিনেও তার ফল প্রকাশ করা হয়নি।