ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে এবং আগের সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে সকাল ১১টা থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হতে থাকে স্থানীয় জনতা। দুপুরে তারা থানায় ভাঙচুর চালায়, অগ্নিসংযোগ করে। হামলা চালানো হয় উপজেলা পরিষদ কার্যালয়েও -সংবাদ
গত ৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে ও পুরনো সীমানা বহালের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
থানায় এবং ইউএনও’র কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ
নাম দিয়ে ৯০
এবং অজ্ঞাত পরিচয়
১৫০ জনকে আসামি করে মামলা
সোমবার,(১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) তারা ভাঙ্গা থানায় ঢুকে গাড়ি ভাঙচুর করেছে এবং উপজেলা পরিষদে আগুন দিয়েছে। পূর্বঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে প্রশাসনের জোর নিরাপত্তার মধ্যেই সোমবার দুপুরে আন্দোলনকারীরা এ ঘটনা ঘটান।
গতকাল রোববার থেকে তিন দিনের সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন স্থানীয় জনতা।
তবে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
বেলা ১১টা থেকে ফরিদপুরে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ও পুরনো সীমানা বহালের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দুটি স্থানে অবরোধ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। তবে পুলিশের তরফ থেকে আন্দোলনকারীদের কোনো বাধা দিতে দেখা যায়নি।
এতদিন ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামেরদীবাসী আন্দোলন করলেও সোমবার অন্য ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন। সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় আন্দোলনকারীরা সড়কের পাশে অবস্থান নেন। তবে বেলা ১১টার দিকে তারা ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দুটি স্থানে অবরোধ শুরু করেন। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা হঠাৎ মহাসড়কে নেমে টায়ারে আগুন দেয় এবং বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে অবরোধ শুরু করে। দাবি না মানা পর্যন্ত সড়ক ছাড়বেন না বলেও ঘোষণা দেয়।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের আলগী ইউনিয়নের সোয়াদী এলাকা থেকে শুরু হওয়া ‘লং মার্চ টু ভাঙ্গা’ বেলা ১২টার মধ্যে গোলচত্বর এলাকায় এসে পৌঁছায়। বিক্ষোভকারীদের হাতে লাঠি দেখা যায়। তখন ভাঙ্গা গোলচত্বরসহ আশপাশের এলাকায় হাজারো মানুষ নিয়ন্ত্রণ নেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অল্পসংখ্যক পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করলে তাদের ধাওয়া করে বিক্ষোভকারীরা।
মুহূর্তেই সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালান তারা। এ সময় ১০-১২ জন আর্মড পুলিশ সদস্য দৌড়ে গিয়ে পাশের ভাঙ্গা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মসজিদে আশ্রয় নেন।
উত্তেজিত জনতার ইটপাটকেলে রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়াতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। একপর্যায়ে মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও মসজিদের লোকজন অবস্থান নিয়ে তাদের রক্ষা করেন।
এরপর সেখান থেকে বিক্ষুব্ধরা থানার দিকে চলে যান আন্দোলনকারীরা। পরে থানায় হামলা চালিয়ে তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে, পাশাপাশি উপজেলা কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় অস্ত্র ও লাঠিসোটা হাতে নিয়ে ব্যাপক তা-ব চালায় আন্দোলনকারীরা।
সরজমিনে দেখা যায়, ভাঙ্গা থানার সামনে অন্তত চার-পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পুরনো থানার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা কমপ্লেক্সে ঘটেছে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ। মিলনায়তনের চেয়ার-টেবিল, শোকেস গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে জানালার কাঁচ। উপজেলা পরিষদের পুরনো ভবনের নিচ তলার সব কার্যালয় ও নতুন তিন তলা ভবনের বিভিন্ন কক্ষেও হামলা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের সামনে একাধিক মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অফিসার্স ক্লাবসংলগ্ন গ্যারেজে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্লাবের এসি, লুট হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
পরে হাইওয়ে অফিস ও পৌরসভা কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে পড়েন সাংবাদিকদরা। এ সময় সাংবাদিকদের ওপরও হামলা হয়; এতে কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয়।
সহিংস পরিস্থিতি বিকেল তিনটার পর কিছুটা প্রশমিত হয়। আড়াইটা পর্যন্ত ভাঙ্গা গোলচত্বর ও আশপাশে হাজারো মানুষ অবস্থান করছিলেন। তিনটার পর থেকে ধীরে ধীরে লোকজন ঘরে ফিরে যান। বিকেল নাগাদ গোলচত্বর ফাঁকা হয়ে গেলেও অলিগলিতে পরেও আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি দেখা যায়।
তবে ঢাকা-খুলনা ও ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পুকুরিয়া হামিরদী বাসস্ট্যান্ড ও নওপাড়া বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ ও সোয়াদী বাসস্ট্যান্ডে অবরোধকারীরা অবস্থান করছেন। এতে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকা যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। এ মহাসড়ক দিয়ে দক্ষিণবঙ্গে ২১ জেলার মানুষ যাতায়ত করে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ রোকিবুজ্জামান বিকেলে বলেন, ‘জনগণ ঘরে ফিরে গেছে। মহাসড়ক বন্ধ আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রহরী মো. সামসু বলেন, তিনি হামলার সময় দোতলায় ইউএনও কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন। ওই সময় শত শত লোক উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে। তার আগে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। যেসব অফিস খোলা ছিল, প্রতিটিতে ভাঙচুর চালায়। তবে যেসব কক্ষ বন্ধ ছিল সেগুলো ভাঙার চেষ্টা করেনি। কাউকে মারধরও করেনি।
অন্য প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিস সহকারী মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘পৌনে একটার দিকে এ হামলা শুরু হয়। উপজেলা পরিষদের পূর্ব দিক থেকে চিৎকার করতে করতে সহস্রাধিক লোক ভেতরে প্রবেশ করে। পরিস্থিতি দেখে আমরা দ্রুত আত্মরক্ষার জন্য অফিস থেকে বের হয়ে যাই। দুপুর পৌনে দুইটার দিকে ফিরে এসে দেখি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র।’
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আবদুল জলিল বর্তমানে ভাঙ্গা থানায় যান। তবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি।
ভাঙ্গায় চলমান বিক্ষোভ-অবরোধকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে ৯০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।
ভাঙ্গা থানার এসআই হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনে এ মামলা করেন। এতে আন্দোলন ঘিরে গঠিত ‘সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের’ প্রধান সমন্বয়ক ভাঙ্গার আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম ম সিদ্দিক মিয়াকে প্রধান আসামি করা হয়। পরে সিদ্দিক মিয়াকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, ‘আমরা বিক্ষুব্ধদের শান্ত করার চেষ্টা করছি এবং নির্বাচন কমিশনে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের বলা হয়েছে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে। আমরা প্রতিবেদন দিলে আশা করি দুই একদিনের মধ্যে সমাধান হবে।’
৪টি আসন পুর্নবহালের দাবিতে বাগেরহাটে আবারও ৩ দিনের হরতাল
বাগেরহাটের জেলা বার্তা পরিবেশক আজাদুল হক জানান, বাগেরহাটে ৪টি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে ৩ দিনের হরতাল কর্মসূচি। পূর্ব ঘোষিত টানা তিন দিনের হরতালের পরিধি ও সময় কিছুটা কমিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় ভ্যান-রিকশা ইজিবাইক হরতালের আওতামুক্ত রেখে সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য জরুরি সেবাদানেও কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে না। সরকারি অফিস-আদালতের ওপর নজরদারি রাখছে আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার ও সোমবার,(১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত পালিত হবে এ হরতাল। এর আগে গতকাল রোববার দুপুরে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির নেতা এম এ সালাম প্রেস ব্রিফিং করে হরতালের এ পরিধি ও সময় ঘোষণা করেন। এ দিকে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাগেরহাট জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে এবং আগের সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে সকাল ১১টা থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হতে থাকে স্থানীয় জনতা। দুপুরে তারা থানায় ভাঙচুর চালায়, অগ্নিসংযোগ করে। হামলা চালানো হয় উপজেলা পরিষদ কার্যালয়েও -সংবাদ
সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গত ৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে ও পুরনো সীমানা বহালের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
থানায় এবং ইউএনও’র কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ
নাম দিয়ে ৯০
এবং অজ্ঞাত পরিচয়
১৫০ জনকে আসামি করে মামলা
সোমবার,(১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) তারা ভাঙ্গা থানায় ঢুকে গাড়ি ভাঙচুর করেছে এবং উপজেলা পরিষদে আগুন দিয়েছে। পূর্বঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে প্রশাসনের জোর নিরাপত্তার মধ্যেই সোমবার দুপুরে আন্দোলনকারীরা এ ঘটনা ঘটান।
গতকাল রোববার থেকে তিন দিনের সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন স্থানীয় জনতা।
তবে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
বেলা ১১টা থেকে ফরিদপুরে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ও পুরনো সীমানা বহালের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দুটি স্থানে অবরোধ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। তবে পুলিশের তরফ থেকে আন্দোলনকারীদের কোনো বাধা দিতে দেখা যায়নি।
এতদিন ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামেরদীবাসী আন্দোলন করলেও সোমবার অন্য ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন। সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় আন্দোলনকারীরা সড়কের পাশে অবস্থান নেন। তবে বেলা ১১টার দিকে তারা ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দুটি স্থানে অবরোধ শুরু করেন। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা হঠাৎ মহাসড়কে নেমে টায়ারে আগুন দেয় এবং বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে অবরোধ শুরু করে। দাবি না মানা পর্যন্ত সড়ক ছাড়বেন না বলেও ঘোষণা দেয়।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের আলগী ইউনিয়নের সোয়াদী এলাকা থেকে শুরু হওয়া ‘লং মার্চ টু ভাঙ্গা’ বেলা ১২টার মধ্যে গোলচত্বর এলাকায় এসে পৌঁছায়। বিক্ষোভকারীদের হাতে লাঠি দেখা যায়। তখন ভাঙ্গা গোলচত্বরসহ আশপাশের এলাকায় হাজারো মানুষ নিয়ন্ত্রণ নেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অল্পসংখ্যক পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করলে তাদের ধাওয়া করে বিক্ষোভকারীরা।
মুহূর্তেই সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালান তারা। এ সময় ১০-১২ জন আর্মড পুলিশ সদস্য দৌড়ে গিয়ে পাশের ভাঙ্গা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মসজিদে আশ্রয় নেন।
উত্তেজিত জনতার ইটপাটকেলে রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়াতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। একপর্যায়ে মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও মসজিদের লোকজন অবস্থান নিয়ে তাদের রক্ষা করেন।
এরপর সেখান থেকে বিক্ষুব্ধরা থানার দিকে চলে যান আন্দোলনকারীরা। পরে থানায় হামলা চালিয়ে তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে, পাশাপাশি উপজেলা কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় অস্ত্র ও লাঠিসোটা হাতে নিয়ে ব্যাপক তা-ব চালায় আন্দোলনকারীরা।
সরজমিনে দেখা যায়, ভাঙ্গা থানার সামনে অন্তত চার-পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পুরনো থানার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা কমপ্লেক্সে ঘটেছে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ। মিলনায়তনের চেয়ার-টেবিল, শোকেস গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে জানালার কাঁচ। উপজেলা পরিষদের পুরনো ভবনের নিচ তলার সব কার্যালয় ও নতুন তিন তলা ভবনের বিভিন্ন কক্ষেও হামলা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের সামনে একাধিক মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অফিসার্স ক্লাবসংলগ্ন গ্যারেজে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্লাবের এসি, লুট হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
পরে হাইওয়ে অফিস ও পৌরসভা কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে পড়েন সাংবাদিকদরা। এ সময় সাংবাদিকদের ওপরও হামলা হয়; এতে কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয়।
সহিংস পরিস্থিতি বিকেল তিনটার পর কিছুটা প্রশমিত হয়। আড়াইটা পর্যন্ত ভাঙ্গা গোলচত্বর ও আশপাশে হাজারো মানুষ অবস্থান করছিলেন। তিনটার পর থেকে ধীরে ধীরে লোকজন ঘরে ফিরে যান। বিকেল নাগাদ গোলচত্বর ফাঁকা হয়ে গেলেও অলিগলিতে পরেও আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি দেখা যায়।
তবে ঢাকা-খুলনা ও ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পুকুরিয়া হামিরদী বাসস্ট্যান্ড ও নওপাড়া বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ ও সোয়াদী বাসস্ট্যান্ডে অবরোধকারীরা অবস্থান করছেন। এতে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকা যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। এ মহাসড়ক দিয়ে দক্ষিণবঙ্গে ২১ জেলার মানুষ যাতায়ত করে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ রোকিবুজ্জামান বিকেলে বলেন, ‘জনগণ ঘরে ফিরে গেছে। মহাসড়ক বন্ধ আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রহরী মো. সামসু বলেন, তিনি হামলার সময় দোতলায় ইউএনও কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন। ওই সময় শত শত লোক উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে। তার আগে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। যেসব অফিস খোলা ছিল, প্রতিটিতে ভাঙচুর চালায়। তবে যেসব কক্ষ বন্ধ ছিল সেগুলো ভাঙার চেষ্টা করেনি। কাউকে মারধরও করেনি।
অন্য প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিস সহকারী মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘পৌনে একটার দিকে এ হামলা শুরু হয়। উপজেলা পরিষদের পূর্ব দিক থেকে চিৎকার করতে করতে সহস্রাধিক লোক ভেতরে প্রবেশ করে। পরিস্থিতি দেখে আমরা দ্রুত আত্মরক্ষার জন্য অফিস থেকে বের হয়ে যাই। দুপুর পৌনে দুইটার দিকে ফিরে এসে দেখি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র।’
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আবদুল জলিল বর্তমানে ভাঙ্গা থানায় যান। তবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি।
ভাঙ্গায় চলমান বিক্ষোভ-অবরোধকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে ৯০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।
ভাঙ্গা থানার এসআই হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনে এ মামলা করেন। এতে আন্দোলন ঘিরে গঠিত ‘সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের’ প্রধান সমন্বয়ক ভাঙ্গার আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম ম সিদ্দিক মিয়াকে প্রধান আসামি করা হয়। পরে সিদ্দিক মিয়াকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, ‘আমরা বিক্ষুব্ধদের শান্ত করার চেষ্টা করছি এবং নির্বাচন কমিশনে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের বলা হয়েছে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে। আমরা প্রতিবেদন দিলে আশা করি দুই একদিনের মধ্যে সমাধান হবে।’
৪টি আসন পুর্নবহালের দাবিতে বাগেরহাটে আবারও ৩ দিনের হরতাল
বাগেরহাটের জেলা বার্তা পরিবেশক আজাদুল হক জানান, বাগেরহাটে ৪টি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে ৩ দিনের হরতাল কর্মসূচি। পূর্ব ঘোষিত টানা তিন দিনের হরতালের পরিধি ও সময় কিছুটা কমিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় ভ্যান-রিকশা ইজিবাইক হরতালের আওতামুক্ত রেখে সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য জরুরি সেবাদানেও কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে না। সরকারি অফিস-আদালতের ওপর নজরদারি রাখছে আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার ও সোমবার,(১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত পালিত হবে এ হরতাল। এর আগে গতকাল রোববার দুপুরে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির নেতা এম এ সালাম প্রেস ব্রিফিং করে হরতালের এ পরিধি ও সময় ঘোষণা করেন। এ দিকে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাগেরহাট জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।