রংপুর সিটি করপোরেশনে নিষিদ্ধ অটোরিকশার লাইসেন্স দেবার নামে ‘৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেবার পায়তারা’ সংক্রান্ত প্রকাশিত খবরকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে নগরীর কাছারী বাজার এলাকায় মব সৃষ্টি করে হামলা ও গুরতর আহত করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে গণমাধ্যম কর্মীরা রংপুর সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে।

সমাবেশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মব সৃষ্টির ‘ইন্ধন দাতা’ রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমাকে অপসারণ এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করার আলটিমেটাম ঘোষণা করা হয়। অন্যথায় আজ রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সমাবেশে বক্তব্য দেন- রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামাস সালেক, সাধারণ সম্পাদক মাযহারুল মান্নান, সন্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী বাদল ভিডিও জার্নালিস্ট অ্যাসেসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুকুল, যুগান্তর প্রতিনিধি রংপুর সিটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর মানিক, রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি শাহ বায়েজীদ আহাম্মেদ, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুব রহমান, প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার জহির রায়হান জুয়েলসহ অন্য নেতারা।

বক্তারা অভিযোগ করেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর সংবাদে প্রথম পাতায় রংপুর সিটি করপোরেশনে নিষিদ্ধ অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে রংপুরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘জুলাই যোদ্ধা’ আর ‘জুলাই রাজবন্দীদের’ নামে ভুয়া তালিকা করে গোপনে পাঁচশ’ নিষিদ্ধ অটোরিকশার লাইসেন্স দিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগ করা হয় সেই প্রতিবেদনে।

সাংবাদিক নেতারা অভিযোগ করেন, ঘটনাকে ‘ধামা চাপা’ দেবার জন্য রংপুর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা ‘কোমর বেঁধে নেমে পড়েন’। আর তারপরই সাংবাদিক বাদলের ওপর মব ভায়োলেন্সের ঘটনা ঘটে।

রোববার,(২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বেলা সাড়ে ১১টায় রংপুর নগরীর কাছারী বাজার এলাকায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে থেকে সাংবাদিক বাদলকে মব তৈরি করে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তাকে অটোরিকশায় তুলে নিয়ে এক কিলোমিটার দূরে রংপুর সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুমের নিজস্ব কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে বলা হয় খবরটি প্রত্যাহার করতে। তাদের এসব কথায় রাজি না হলে জোর করে বসিয়ে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও অন্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন তাঁতি দলের নেতা রকি এবং বিএনপি নেতা লিটন পারভেজসহ অন্যরা।

এ সময় শতাধিক গণমাধ্যম কর্মী সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের সমানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বক্তারা ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে।

এ ঘটনার পর সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা এক জোট হয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। এতে ৫ জন সাংবাদিক আহত হয়।

এ ঘটনা নিয়ে রোববার বিকেলে রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রেসক্লাবের প্রশাসক রমিজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কর্মকর্তাসহ বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। সভায় ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করার দাবি জানানো হয়। তবে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়।