খাগড়াছড়ির গুইমারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের পর স্থানীয় রমেসু বাজারের দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় -সংবাদ
মারমা স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় উত্তেজনার মধ্যে খাগড়াছড়ির গুইমারায় ১৪৪ ধারা ভেঙে সহিংসতা হয়েছে, নিহত হয়েছেন অন্তত তিনজন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিহতরা সবাই ‘পাহাড়ি’; তবে তাদের কারও পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গুইমারা উপজেলায় দুষ্কৃতকারীদের হামলায় তিনজন পাহাড়ি নিহত এবং মেজরসহ ১৩ জন সেনাসদস্য, গুইমারা থানার ওসিসহ তিনজন পুলিশ সদস্য এবং আরও অনেকে আহতের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।’
‘মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ মর্মে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অতি শিগগিরই তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেয়া হবে না।’
ততক্ষণ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধারণ করে শান্ত থাকার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘২০-২৫ বছরের মধ্যে তিনজন যুবক মারা গেছেন। কয়েকজন আহত আছেন। আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা গুলিতে না ঢিলের আঘাতে মারা গেছে, সেটা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পওয়ার পর জানা হবে।’
গুইমারার পরিস্থিতি এখন ‘নিয়ন্ত্রণে’ রয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ সাবের রোববার,(২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, গুইমারা থেকে তিনজন পুরুষের লাশ এসেছে খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতালে। তাদের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। আজ সকালে ময়নাতদন্ত করা হবে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে গুইমারা থেকে আনা আহত চারজন চিকিৎসাধীন।
পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’র ব্যানারে গতকাল শনিবার ভোর পাঁচটা থেকে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। রোববার সকালে জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করেন অবরোধকারীরা।
গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে ওই কিশোরী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’র ব্যানারে অবরোধ চলাকালে রোববার দুপুরে গুইমারার একটি বাজারে আগুন দেয়া হয়। আগুনে বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়। এ সময় বাজারের পাশে থাকা বসতঘরও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুপুর ১টায় খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
বাজারটি চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে। বাজারে আগুন দেয়ার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে আগুনে বাজারের দোকানপাট জ্বলতে দেখা যায়। বাজারের দোকান মালিকদের অধিকাংশ পাহাড়ি বলে জানা গেছে।
দুপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে অবরোধের সমর্থনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলির শব্দ শোনা যায়। এ ঘটনায় অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। এ ঘটনার পর খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল আছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মংসাজাই মারমা ও কংজরী মারমা গণমাধ্যমকে জানান, অবরোধের সমর্থনে তারা খাদ্যগুদামের সামনের সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এলে তাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর গুলি করেন বলে অভিযোগ করেন এই দুজন। তারা বলেন, গুলির পরপরই লোকজন ভয়ে দিগি¦দিক পালিয়ে যান। এরপর ২০-২৫ জন লোক এসে রামেসু বাজার ও বসতবাড়ি লুটপাট করে এবং যাওয়ার সময় আগুন ধরিয়ে দেন। এসব লোকের সঙ্গে মুখোশ পরা লোকও ছিল। এ সময় দোকানপাট ও বসতবাড়ির সঙ্গে অনেক মোটরসাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
খাগড়াছড়ি শহরে রোববার সকাল থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শহরের মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান দেখা গেছে। বাজার ও বাজারের আশপাশে কোনো দোকানপাট খোলেনি। প্রয়োজনীয় কাজে যারা বের হচ্ছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে নিরাপত্তা বাহিনী।
শাহবাগে আদিবাসী ছাত্র জনতার বিক্ষোভ
খাগড়াছড়িতে এক জুম্ম ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিচার দাবিতে ‘শান্তিপূর্ণ’ অবরোধ কর্মসূচিতে জুম্ম জনগণের ওপর ‘পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা ও ঘরবাড়ি-দোকানপাট ভাঙচুরের’ প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আদিবাসী ছাত্র জনতা নামের একটি সংগঠন।
রোববার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকারের ‘নীরব ভূমিকারও’ সমালোচনা করা হয়।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈসানু মারমার সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।
পার্বত্য জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘আপনারা এত টালবাহানা না করে পাহাড়ের জন্য আইন করে দেন যে, যারা জাতে সেটেলার বাঙালি, ধর্মে মুসলিম তাদের জন্য ধর্ষণ বৈধ। আইন করে দেন পাহাড়ে ধর্ষণ হলে কোনো প্রতিবাদ, বিক্ষোভ করা যাবে না।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নিকোলাস চাকমা বলেন, ‘ধর্ষকের বিচার চাইতে গিয়ে আমাদের আদিবাসী ভাই-বোনদের নিপীড়নের শিকার হতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন জারি রেখে, ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্র আদিবাসীদের বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। সংবিধানের দোহাই দিয়ে এই রাষ্ট্রযন্ত্র নিপীড়নের মাধ্যমে আদিবাসীদের মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করে চলেছে।’
বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সভাপতি টনি চিরান বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কেনা বুলেটে আদিবাসী ভাই-বোনদেরকে গুলি করে রক্তাক্ত করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যদি খাগড়াছড়িতে চলমান ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত না করে, তাহলে আদিবাসীদের মনে প্রতিবাদের যে আগুন জ্বলছে, তা বিস্ফোরিত হতে দেরি হবে না।’
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা বলেন, ‘বছরের পর বছর রাষ্ট্র আমাদেরকে সন্ত্রাসী বানিয়ে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী খাগড়াছড়িতে সন্ত্রাসী কায়দায় গুলি করেছে। এই রাষ্ট্রযন্ত্র আদিবাসীদের শান্তিপূর্ণ অবরোধে হামলার ইন্ধন যুগিয়েছে।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মেঘমল্লার বসু, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি নুমংপ্রু মারমা, পিসিপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমা বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন।
‘তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন’ দেখছেন পার্বত্য উপদেষ্টা
খাগড়াছড়িতে চলমান আন্দোলনের পেছনে একটি পক্ষের ইন্ধন থাকতে পারে বলে ধারণা করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
রোববার খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘আন্দোলনের নামে সহিংসতা তৈরি করতে সেখানে একটি পক্ষ অর্থায়ন করছে। আমি নিশ্চিত, কেউ না কেউ এদের পেছনে অর্থায়ন করছে।
যারা আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে তাদের বয়স অনেক কম। তাদের পক্ষে গাড়ি ভাড়া খরচ করে দীঘিনালা, পানছড়ি থেকে জেলা সদরে আসা সম্ভব নয়। একটি পক্ষ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।’
পাহাড়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি রোধ ও পরিস্থিতি শান্ত রাখতে আইনশৃঙ্খলা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন পার্বত্য উপদেষ্টা।
খাগড়াছড়ির গুইমারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের পর স্থানীয় রমেসু বাজারের দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় -সংবাদ
রোববার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মারমা স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় উত্তেজনার মধ্যে খাগড়াছড়ির গুইমারায় ১৪৪ ধারা ভেঙে সহিংসতা হয়েছে, নিহত হয়েছেন অন্তত তিনজন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিহতরা সবাই ‘পাহাড়ি’; তবে তাদের কারও পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গুইমারা উপজেলায় দুষ্কৃতকারীদের হামলায় তিনজন পাহাড়ি নিহত এবং মেজরসহ ১৩ জন সেনাসদস্য, গুইমারা থানার ওসিসহ তিনজন পুলিশ সদস্য এবং আরও অনেকে আহতের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।’
‘মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ মর্মে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অতি শিগগিরই তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেয়া হবে না।’
ততক্ষণ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধারণ করে শান্ত থাকার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘২০-২৫ বছরের মধ্যে তিনজন যুবক মারা গেছেন। কয়েকজন আহত আছেন। আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা গুলিতে না ঢিলের আঘাতে মারা গেছে, সেটা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পওয়ার পর জানা হবে।’
গুইমারার পরিস্থিতি এখন ‘নিয়ন্ত্রণে’ রয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ সাবের রোববার,(২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, গুইমারা থেকে তিনজন পুরুষের লাশ এসেছে খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতালে। তাদের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। আজ সকালে ময়নাতদন্ত করা হবে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে গুইমারা থেকে আনা আহত চারজন চিকিৎসাধীন।
পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’র ব্যানারে গতকাল শনিবার ভোর পাঁচটা থেকে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। রোববার সকালে জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করেন অবরোধকারীরা।
গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে ওই কিশোরী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’র ব্যানারে অবরোধ চলাকালে রোববার দুপুরে গুইমারার একটি বাজারে আগুন দেয়া হয়। আগুনে বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়। এ সময় বাজারের পাশে থাকা বসতঘরও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুপুর ১টায় খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
বাজারটি চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে। বাজারে আগুন দেয়ার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে আগুনে বাজারের দোকানপাট জ্বলতে দেখা যায়। বাজারের দোকান মালিকদের অধিকাংশ পাহাড়ি বলে জানা গেছে।
দুপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে অবরোধের সমর্থনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলির শব্দ শোনা যায়। এ ঘটনায় অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। এ ঘটনার পর খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল আছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মংসাজাই মারমা ও কংজরী মারমা গণমাধ্যমকে জানান, অবরোধের সমর্থনে তারা খাদ্যগুদামের সামনের সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এলে তাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর গুলি করেন বলে অভিযোগ করেন এই দুজন। তারা বলেন, গুলির পরপরই লোকজন ভয়ে দিগি¦দিক পালিয়ে যান। এরপর ২০-২৫ জন লোক এসে রামেসু বাজার ও বসতবাড়ি লুটপাট করে এবং যাওয়ার সময় আগুন ধরিয়ে দেন। এসব লোকের সঙ্গে মুখোশ পরা লোকও ছিল। এ সময় দোকানপাট ও বসতবাড়ির সঙ্গে অনেক মোটরসাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
খাগড়াছড়ি শহরে রোববার সকাল থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শহরের মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান দেখা গেছে। বাজার ও বাজারের আশপাশে কোনো দোকানপাট খোলেনি। প্রয়োজনীয় কাজে যারা বের হচ্ছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে নিরাপত্তা বাহিনী।
শাহবাগে আদিবাসী ছাত্র জনতার বিক্ষোভ
খাগড়াছড়িতে এক জুম্ম ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিচার দাবিতে ‘শান্তিপূর্ণ’ অবরোধ কর্মসূচিতে জুম্ম জনগণের ওপর ‘পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা ও ঘরবাড়ি-দোকানপাট ভাঙচুরের’ প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আদিবাসী ছাত্র জনতা নামের একটি সংগঠন।
রোববার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকারের ‘নীরব ভূমিকারও’ সমালোচনা করা হয়।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈসানু মারমার সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।
পার্বত্য জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘আপনারা এত টালবাহানা না করে পাহাড়ের জন্য আইন করে দেন যে, যারা জাতে সেটেলার বাঙালি, ধর্মে মুসলিম তাদের জন্য ধর্ষণ বৈধ। আইন করে দেন পাহাড়ে ধর্ষণ হলে কোনো প্রতিবাদ, বিক্ষোভ করা যাবে না।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নিকোলাস চাকমা বলেন, ‘ধর্ষকের বিচার চাইতে গিয়ে আমাদের আদিবাসী ভাই-বোনদের নিপীড়নের শিকার হতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন জারি রেখে, ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্র আদিবাসীদের বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। সংবিধানের দোহাই দিয়ে এই রাষ্ট্রযন্ত্র নিপীড়নের মাধ্যমে আদিবাসীদের মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করে চলেছে।’
বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সভাপতি টনি চিরান বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কেনা বুলেটে আদিবাসী ভাই-বোনদেরকে গুলি করে রক্তাক্ত করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যদি খাগড়াছড়িতে চলমান ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত না করে, তাহলে আদিবাসীদের মনে প্রতিবাদের যে আগুন জ্বলছে, তা বিস্ফোরিত হতে দেরি হবে না।’
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা বলেন, ‘বছরের পর বছর রাষ্ট্র আমাদেরকে সন্ত্রাসী বানিয়ে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী খাগড়াছড়িতে সন্ত্রাসী কায়দায় গুলি করেছে। এই রাষ্ট্রযন্ত্র আদিবাসীদের শান্তিপূর্ণ অবরোধে হামলার ইন্ধন যুগিয়েছে।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মেঘমল্লার বসু, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি নুমংপ্রু মারমা, পিসিপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমা বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন।
‘তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন’ দেখছেন পার্বত্য উপদেষ্টা
খাগড়াছড়িতে চলমান আন্দোলনের পেছনে একটি পক্ষের ইন্ধন থাকতে পারে বলে ধারণা করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
রোববার খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘আন্দোলনের নামে সহিংসতা তৈরি করতে সেখানে একটি পক্ষ অর্থায়ন করছে। আমি নিশ্চিত, কেউ না কেউ এদের পেছনে অর্থায়ন করছে।
যারা আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে তাদের বয়স অনেক কম। তাদের পক্ষে গাড়ি ভাড়া খরচ করে দীঘিনালা, পানছড়ি থেকে জেলা সদরে আসা সম্ভব নয়। একটি পক্ষ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।’
পাহাড়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি রোধ ও পরিস্থিতি শান্ত রাখতে আইনশৃঙ্খলা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন পার্বত্য উপদেষ্টা।