ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রংপুরের ৩টি নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৫ হাজারেরও বেশি মামলার বিচার শেষ হচ্ছে না। দিনের পর দিন বছরের পর বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন বিচার প্রত্যাশিত নির্যাতিত নারীরা। এর মধ্যে দু’হাজারেরও বেশি ধর্ষণের মামলা।
৩শ’ মামলা ২০ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায়
বিচারপ্রার্থীদের
চরম দুর্ভোগ
৩শ’র বেশি মামলা ১৮-২০ বছর ধরে বিচারই শুরু হয়নি। এজন্য আইনের সঠিক প্রয়োগ আর আদালতে সাক্ষী হাজির করার ব্যাপারে পুলিশের দায়িত্বহীনতা আর রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনাকারীদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিনে রংপুরের ৩ নারী নির্যাতন আদালতে ঘুরে ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর নানান তথ্য। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রংপুরের পীরগঞ্জের বড় ফলিয়া গ্রামের লাল মিয়ার অন্ধ মেয়েকে ধর্ষণ করেছে দুর্বৃত্তরা। ৫ বছরেও বিচার শুরু হয়নি। তিনি বলেন সহায় সম্বল যা ছিল বিক্রি করে প্রতি তারিখে আদালতে আসেন উকিল, মুহুরী পেশকারকে টাকা দেন আর বাড়ি ফিরে যান। একই অভিযোগ মিঠাপুকুর উপজেলার হতদরিদ্র আসমা বেগমের, তার মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে ৪ বছরেও বিচার শুরু হয়নি। তাদের মতো আরো অনেক নারী ও শিশু পাশবিক নির্যাতনের শিকার হলেও বিচার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ বিচারপ্রার্থীদের।
অন্যদিকে রংপুরে ৩টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত থাকলেও ৩ নম্বর আদালতের বিচারক বদলিজনিত কারণে অন্যত্র চলে যাওয়ায় ওই আদালতে দেড় হাজারেরও বেশি মামলার বিচার কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে কয়েক মাস ধরে।
এ ব্যাপারে মানবাধিকার কর্মী ও রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ কান্তি নাগ অ্যাডভোকেট জানালেন নারী নির্যাতন মামলায় দিনের পর দিন, বছরের পর বছর আদালতে আসছেন সহায় সম্বল বিক্রি করে বিচার হচ্ছে না তাদের মামলাগুলোর। তিনি বলেন, বিচারপ্রার্থীরা অভিযোগ করেন কবে তারা ন্যায় বিচার পাবেন। আদালতে প্রতিমাসে আসেন আর হাজিরা দেন আর বাড়িতে চলে যাচ্ছেন বিচার পাচ্ছেন না।
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের আফসানা বেগম জানালেন যৌতুক না দেয়ায় তার স্বামী তাকে অকথ্য নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। থানায় গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। ৫ বছর আগে নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে আদালতের বারান্দায় প্রতি মাসে আসছি বিচার হচ্ছে না। কবে বিচার পাবো জানিনা। তবে আমার বাবা মা অত্যন্ত গরিব, মামলার খরচ চালানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে, তিনি দ্রুত বিচারের দাবি করেন। একই অভিযোগ পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী গ্রামের রহিমা বেগমের। তিনি জানান তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। প্রতিবাদ করায় ১ বছরের কন্যা সন্তানসহ বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। ৬ বছর আগে মামলা করেছি এখনও বিচার শেষ হয় নাই। এরকম শত শত নির্যাতিতা নারী প্রতিদিন আদালতে আসছেন আর ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের।
এ ব্যাপারে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিশেষ পিপি মোকসেদুল হক অ্যাডভোকেট জানালেন, আমি কয়েক মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছি। তার আদালতে ২০০৩ সালের বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তিনি দাবি করেন বিচারক আদালত-২ এর মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছেন। তিনিও মামলার সাক্ষী আসলে যেভাবে হোক সাক্ষ্য গ্রহণ করার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১ এর বিশেষ পিপি সফি কামাল অ্যাডভোকেট জানালেন ৩টি নারী নির্যাতন আদালতে প্রায় ৫ হাজারের মতো মামলা রয়েছে। আমরা দ্রুত বিচার শেষ করার চেষ্টা করছি বলে দাবি করেন তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্বীকার করেন- এখনও ১৮-২০ বছরের পুরাতন অনেকগুলো মামলা বিচারাধীন আছে, আমরা দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি বলেও জানান তিনি।
তবে রংপুরের সিনিয়র আইনজীবী রইছ উদ্দিন বাদশা অ্যাডভোকেট বলেছেন, ৩ কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। পুলিশের মামলা তদন্তের নামে বছরের পর বছর কালক্ষেপণ, দফায় দফায় আদালতে আবেদন করে সময় নেয়া, আর সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে পুলিশের অনীহা, এসব কারণে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাদী ও আসামি দুই পক্ষ।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রংপুরের আদালতে নারী নির্যাতন মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আলাদা সেল গঠন করা সেই সঙ্গে উচ্চ আদালতের কঠোর মনিটারিং দাবি করেছেন তারা।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫
রংপুরের ৩টি নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৫ হাজারেরও বেশি মামলার বিচার শেষ হচ্ছে না। দিনের পর দিন বছরের পর বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন বিচার প্রত্যাশিত নির্যাতিত নারীরা। এর মধ্যে দু’হাজারেরও বেশি ধর্ষণের মামলা।
৩শ’ মামলা ২০ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায়
বিচারপ্রার্থীদের
চরম দুর্ভোগ
৩শ’র বেশি মামলা ১৮-২০ বছর ধরে বিচারই শুরু হয়নি। এজন্য আইনের সঠিক প্রয়োগ আর আদালতে সাক্ষী হাজির করার ব্যাপারে পুলিশের দায়িত্বহীনতা আর রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনাকারীদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিনে রংপুরের ৩ নারী নির্যাতন আদালতে ঘুরে ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর নানান তথ্য। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রংপুরের পীরগঞ্জের বড় ফলিয়া গ্রামের লাল মিয়ার অন্ধ মেয়েকে ধর্ষণ করেছে দুর্বৃত্তরা। ৫ বছরেও বিচার শুরু হয়নি। তিনি বলেন সহায় সম্বল যা ছিল বিক্রি করে প্রতি তারিখে আদালতে আসেন উকিল, মুহুরী পেশকারকে টাকা দেন আর বাড়ি ফিরে যান। একই অভিযোগ মিঠাপুকুর উপজেলার হতদরিদ্র আসমা বেগমের, তার মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে ৪ বছরেও বিচার শুরু হয়নি। তাদের মতো আরো অনেক নারী ও শিশু পাশবিক নির্যাতনের শিকার হলেও বিচার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ বিচারপ্রার্থীদের।
অন্যদিকে রংপুরে ৩টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত থাকলেও ৩ নম্বর আদালতের বিচারক বদলিজনিত কারণে অন্যত্র চলে যাওয়ায় ওই আদালতে দেড় হাজারেরও বেশি মামলার বিচার কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে কয়েক মাস ধরে।
এ ব্যাপারে মানবাধিকার কর্মী ও রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ কান্তি নাগ অ্যাডভোকেট জানালেন নারী নির্যাতন মামলায় দিনের পর দিন, বছরের পর বছর আদালতে আসছেন সহায় সম্বল বিক্রি করে বিচার হচ্ছে না তাদের মামলাগুলোর। তিনি বলেন, বিচারপ্রার্থীরা অভিযোগ করেন কবে তারা ন্যায় বিচার পাবেন। আদালতে প্রতিমাসে আসেন আর হাজিরা দেন আর বাড়িতে চলে যাচ্ছেন বিচার পাচ্ছেন না।
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের আফসানা বেগম জানালেন যৌতুক না দেয়ায় তার স্বামী তাকে অকথ্য নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। থানায় গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। ৫ বছর আগে নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে আদালতের বারান্দায় প্রতি মাসে আসছি বিচার হচ্ছে না। কবে বিচার পাবো জানিনা। তবে আমার বাবা মা অত্যন্ত গরিব, মামলার খরচ চালানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে, তিনি দ্রুত বিচারের দাবি করেন। একই অভিযোগ পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী গ্রামের রহিমা বেগমের। তিনি জানান তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। প্রতিবাদ করায় ১ বছরের কন্যা সন্তানসহ বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। ৬ বছর আগে মামলা করেছি এখনও বিচার শেষ হয় নাই। এরকম শত শত নির্যাতিতা নারী প্রতিদিন আদালতে আসছেন আর ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের।
এ ব্যাপারে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিশেষ পিপি মোকসেদুল হক অ্যাডভোকেট জানালেন, আমি কয়েক মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছি। তার আদালতে ২০০৩ সালের বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তিনি দাবি করেন বিচারক আদালত-২ এর মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছেন। তিনিও মামলার সাক্ষী আসলে যেভাবে হোক সাক্ষ্য গ্রহণ করার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১ এর বিশেষ পিপি সফি কামাল অ্যাডভোকেট জানালেন ৩টি নারী নির্যাতন আদালতে প্রায় ৫ হাজারের মতো মামলা রয়েছে। আমরা দ্রুত বিচার শেষ করার চেষ্টা করছি বলে দাবি করেন তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্বীকার করেন- এখনও ১৮-২০ বছরের পুরাতন অনেকগুলো মামলা বিচারাধীন আছে, আমরা দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি বলেও জানান তিনি।
তবে রংপুরের সিনিয়র আইনজীবী রইছ উদ্দিন বাদশা অ্যাডভোকেট বলেছেন, ৩ কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। পুলিশের মামলা তদন্তের নামে বছরের পর বছর কালক্ষেপণ, দফায় দফায় আদালতে আবেদন করে সময় নেয়া, আর সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে পুলিশের অনীহা, এসব কারণে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাদী ও আসামি দুই পক্ষ।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রংপুরের আদালতে নারী নির্যাতন মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আলাদা সেল গঠন করা সেই সঙ্গে উচ্চ আদালতের কঠোর মনিটারিং দাবি করেছেন তারা।