ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের গাজীপুরে থাকা ৩৬ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তার নামে আইএফআইসি ব্যাংকের একটি হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়েছে। এই হিসাবে জমা রয়েছে ৫৪ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার,( ২৪ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. সাব্বির ফয়েজ এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও তার স্ত্রীর আয়কর নথি জব্দের আদেশ
নাসার নজরুলের ৪৪ কোটি টাকার জমি জব্দের আদেশ
বিনিয়োগকারীদের ‘অর্থ আত্মসাতের’ অভিযোগে সালমান এফ রহমানসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন এদিন তার জমি জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদনটি করেন। আবেদনে বলা হয়েছে, সালমান এফ ররহমান ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ অন্য আসামিদের সঙ্গে মিলে ‘প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে’ আইএফআইসি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় বন্ধক রাখা সম্পত্তি অতিমূল্যায়ন করে বন্ড ছাড়েন।
বন্ডের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের ১ হাজার কোটি টাকা শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবে
জমা হয়। সেই হিসাব থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ‘নিয়মবহির্ভূতভাবে নগদে ও সন্দেহজনক লেনদেনের’ মাধ্যমে বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডসহ বেক্সিমকো গ্রুপ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করে আসামিরা ‘আত্মসাৎ’ করার অভিযোগ রয়েছে।
দুদক বলেছে, আসামিরা ব্যাংক হিসাবের অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর এবং স্থাবর সম্পদের অন্যত্র হস্তান্তর বা স্থানান্তরের মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। এজন্য স্থাবর সম্পদসমূহ জব্দ এবং অস্থাবর সম্পদ/ব্যাংক হিসাবটি অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন। গত ২০ এপ্রিল অর্থ আত্মসাতের এই মামলাটি করেছে দুদক। মামলায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামও আসামি।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সালমান এফ রহমানকে সদরঘাট থেকে সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমানের বিরুদ্ধে শেয়ার বাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক হতে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
#সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও স্ত্রীর আয়কর নথি জব্দের আদেশ
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদ- পাওয়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিন খানের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ সাব্বির ফয়েজ এ আদেশ দেন।
এদিন দুদক কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনের করা আবেদনে বলা হয়, লুৎফুল তাহমিনা খান ১৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯১ টাকা জ্ঞাত ‘আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জন করেছেন। আসাদুজ্জামান খান কামাল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের’ মাধ্যমে লুৎফুল তাহমিন খানকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে নিজের এবং তার আংশিক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে ১০টি ব্যাংক হিসাবে জ্ঞাত ‘আয়বহির্ভূত’ ৪৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭৪৫ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেন। এই অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২, এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় শান্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন তারা। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার সব আয়কর রিটার্নসহ সংযুক্ত রেকর্ডপত্র জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছে দুদক।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-গণআন্দোলনের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান এবং সেখানেই আছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালও ভারতে পালিয়ে আছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার সঙ্গে কামালকেও প্রাণদ- দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধে ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের দুইজনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। গত বছর ৯ অক্টোবর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিন, ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতি, মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খান ও সাবেক এপিএস মনির হোসেনের বিরুদ্ধে ৪৪৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলাদা পাঁচটি মামলা করেছে দুদক। তার আগে ১৪ সেপ্টেম্বর জ্যোতিকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেয় পুলিশ।
# নাসার নজরুলের ৪৪ কোটি টাকার জমি জব্দের আদেশ
নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের রাজধানীর গুলশান, আশুলিয়া এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের থাকা ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকার জমি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। এর মধ্যে গুলশানের ৬৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ জমির মূল্য ২৬ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ বিচারক মো. সাব্বির ফয়েজ।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, এদিন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ এসব সম্পত্তি জব্দ চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৭৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করেছে। গত ৬ মার্চ ও ১৮ নভেম্বর আদালত তার নামে কিছু সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেয়। এর বাইরে এসব সম্পদের হদিশ পাওয়া যায়।
শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধসহ নাসা গ্রুপের অন্যান্য পাওনাদি পরিশোধের কথা বলে নজরুল ইসলাম মজুমদার তার অবৈধ সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে আবেদনে বলা হয়, মামলা নিষ্পত্তির আগে এসব অবৈধ সম্পত্তি হস্তান্তর, স্থানান্তর, রূপান্তর বা বিক্রি হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ‘সমূহ ক্ষতির’ কারণ রয়েছে। অবিলম্বে এসব সম্পদ জব্দ করা আবশ্যক।
ক্ষমতার পালাবদলের পর গত বছরের ২ অক্টোবর নজরুল ইসলাম মজুমদারকে রাজধানীর গুলশানে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তার আগে ব্যাংক খাতে পরিবর্তনের অংশ হিসেবে গত ২৯ আগস্ট এক্সিম ব্যাংকে তাকে বাদ দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বিএবির নেতৃত্বও হারান তিনি। এর মাধ্যমে ১৭ বছর পর নজরুল ইসলামের বলয় থেকে বের হলো শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির পর্ষদ।
ব্যাংক খাতের আলোচিত নাম নজরুল ইসলাম ২০০৭ সাল থেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। বিএবি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার সময় বেসরকারি ব্যাংক থেকে চাঁদা তুলে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা নিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। ব্যাংক থেকে নানা সময় চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে উদ্যোক্তাদের সুবিধা বাড়ানো ও নীতি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার অভিযোগও রয়েছে। পোশাক রপ্তানির আড়ালে ‘মানিলন্ডারিং’-এর মাধ্যমে প্রায় ৩০ লাখ ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগে নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের গাজীপুরে থাকা ৩৬ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তার নামে আইএফআইসি ব্যাংকের একটি হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়েছে। এই হিসাবে জমা রয়েছে ৫৪ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার,( ২৪ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. সাব্বির ফয়েজ এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও তার স্ত্রীর আয়কর নথি জব্দের আদেশ
নাসার নজরুলের ৪৪ কোটি টাকার জমি জব্দের আদেশ
বিনিয়োগকারীদের ‘অর্থ আত্মসাতের’ অভিযোগে সালমান এফ রহমানসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন এদিন তার জমি জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদনটি করেন। আবেদনে বলা হয়েছে, সালমান এফ ররহমান ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ অন্য আসামিদের সঙ্গে মিলে ‘প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে’ আইএফআইসি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় বন্ধক রাখা সম্পত্তি অতিমূল্যায়ন করে বন্ড ছাড়েন।
বন্ডের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের ১ হাজার কোটি টাকা শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবে
জমা হয়। সেই হিসাব থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ‘নিয়মবহির্ভূতভাবে নগদে ও সন্দেহজনক লেনদেনের’ মাধ্যমে বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডসহ বেক্সিমকো গ্রুপ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করে আসামিরা ‘আত্মসাৎ’ করার অভিযোগ রয়েছে।
দুদক বলেছে, আসামিরা ব্যাংক হিসাবের অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর এবং স্থাবর সম্পদের অন্যত্র হস্তান্তর বা স্থানান্তরের মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। এজন্য স্থাবর সম্পদসমূহ জব্দ এবং অস্থাবর সম্পদ/ব্যাংক হিসাবটি অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন। গত ২০ এপ্রিল অর্থ আত্মসাতের এই মামলাটি করেছে দুদক। মামলায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামও আসামি।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সালমান এফ রহমানকে সদরঘাট থেকে সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমানের বিরুদ্ধে শেয়ার বাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক হতে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
#সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও স্ত্রীর আয়কর নথি জব্দের আদেশ
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদ- পাওয়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিন খানের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ সাব্বির ফয়েজ এ আদেশ দেন।
এদিন দুদক কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনের করা আবেদনে বলা হয়, লুৎফুল তাহমিনা খান ১৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯১ টাকা জ্ঞাত ‘আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জন করেছেন। আসাদুজ্জামান খান কামাল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের’ মাধ্যমে লুৎফুল তাহমিন খানকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে নিজের এবং তার আংশিক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে ১০টি ব্যাংক হিসাবে জ্ঞাত ‘আয়বহির্ভূত’ ৪৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭৪৫ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেন। এই অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২, এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় শান্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন তারা। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার সব আয়কর রিটার্নসহ সংযুক্ত রেকর্ডপত্র জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছে দুদক।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-গণআন্দোলনের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান এবং সেখানেই আছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালও ভারতে পালিয়ে আছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার সঙ্গে কামালকেও প্রাণদ- দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধে ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের দুইজনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। গত বছর ৯ অক্টোবর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিন, ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতি, মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খান ও সাবেক এপিএস মনির হোসেনের বিরুদ্ধে ৪৪৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলাদা পাঁচটি মামলা করেছে দুদক। তার আগে ১৪ সেপ্টেম্বর জ্যোতিকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেয় পুলিশ।
# নাসার নজরুলের ৪৪ কোটি টাকার জমি জব্দের আদেশ
নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের রাজধানীর গুলশান, আশুলিয়া এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের থাকা ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকার জমি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। এর মধ্যে গুলশানের ৬৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ জমির মূল্য ২৬ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ বিচারক মো. সাব্বির ফয়েজ।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, এদিন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ এসব সম্পত্তি জব্দ চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৭৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করেছে। গত ৬ মার্চ ও ১৮ নভেম্বর আদালত তার নামে কিছু সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেয়। এর বাইরে এসব সম্পদের হদিশ পাওয়া যায়।
শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধসহ নাসা গ্রুপের অন্যান্য পাওনাদি পরিশোধের কথা বলে নজরুল ইসলাম মজুমদার তার অবৈধ সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে আবেদনে বলা হয়, মামলা নিষ্পত্তির আগে এসব অবৈধ সম্পত্তি হস্তান্তর, স্থানান্তর, রূপান্তর বা বিক্রি হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ‘সমূহ ক্ষতির’ কারণ রয়েছে। অবিলম্বে এসব সম্পদ জব্দ করা আবশ্যক।
ক্ষমতার পালাবদলের পর গত বছরের ২ অক্টোবর নজরুল ইসলাম মজুমদারকে রাজধানীর গুলশানে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তার আগে ব্যাংক খাতে পরিবর্তনের অংশ হিসেবে গত ২৯ আগস্ট এক্সিম ব্যাংকে তাকে বাদ দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বিএবির নেতৃত্বও হারান তিনি। এর মাধ্যমে ১৭ বছর পর নজরুল ইসলামের বলয় থেকে বের হলো শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির পর্ষদ।
ব্যাংক খাতের আলোচিত নাম নজরুল ইসলাম ২০০৭ সাল থেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। বিএবি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার সময় বেসরকারি ব্যাংক থেকে চাঁদা তুলে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা নিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। ব্যাংক থেকে নানা সময় চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে উদ্যোক্তাদের সুবিধা বাড়ানো ও নীতি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার অভিযোগও রয়েছে। পোশাক রপ্তানির আড়ালে ‘মানিলন্ডারিং’-এর মাধ্যমে প্রায় ৩০ লাখ ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগে নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।