ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এনা ট্রান্সপোর্টের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলায় এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে ১০৭ কোটি ৩২ লাখ ৬১ হাজার টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪(২) ধারায় এনায়েত উল্লাহ ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।
বিএনপির রাজনীতি দিয়ে শুরু, আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে বেপরোয়া হয়: সিআইডি
একটি পুরান গাড়ি থেকে ২০টি বাসের মালিক
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি পরিবহন খাতে দীর্ঘদিনের চাঁদাবাজি ও আধিপত্য খাটিয়ে অর্জিত বিপুল অবৈধ সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট থেকে বুধবার,(২৬ নভেম্বর ২০২৫) রমনা থানায় এই মামলা করা হয় বলে জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।
এ বিষয়ে সিআইডির গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে এনায়েত উল্লাহ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নিজেদের অনুসন্ধানের বরাতে সিআইডি জানায়, খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১৯৯টি ব্যাংক হিসাবে মোট ২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা জমা হয়েছে। আর এসব হিসাব থেকে উত্তোলন করা হয়েছে ২ হাজার ৭ কোটি টাকা।
এর মধ্যে ‘এনা ট্রান্সপোর্ট’-এর ৪৩টি হিসাবে জমা হয় ৯৩৪ কোটি টাকা। ‘এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ’-এর ৮টি হিসাবে জমা ৪১০ কোটি টাকা এবং এনায়েত উল্লাহর ব্যক্তিগত ৭৪টি হিসাবে জমা হয় ৪৫৯ কোটি টাকা।
সিআইডি জানায়, চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্জিত এই বিপুল অর্থ অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে থেকে ‘স্ট্রাকচারিং’ বা ‘স্মার্ট লেয়ারিং’ কৌশল ব্যবহার করে নানা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ১০৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা পাচার করা হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্পদ জব্দের নির্দেশ অনুসন্ধান চলাকালে আদালতের আদেশে এনায়েত উল্লাহর ধানমন্ডির দুটি ফ্ল্যাট এবং রূপগঞ্জের দুটি প্লট ক্রোক (জব্দ) করা হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ১০ কোটি টাকা। এছাড়া তার ও সহযোগীদের নামে থাকা ৫৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে, যেখানে স্থিতি রয়েছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা।
একটি পুরান গাড়ি থেকে ২০টি বাসের মালিক
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান খন্দকার এনায়েত উল্লাহ আশির দশকের পরে পরিবহন সেক্টরে আসেন। পার্টনারশিপে একটি পুরাতন বাস কেনার মাধ্যমে তার ব্যবসার সূচনা হলেও কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি ২০টি বাসের মালিক হয়ে ওঠেন।
অল্প সময়েই তিনি পরিবহন মালিকদের সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেন। এরপর তার আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব বাড়িয়ে নেন।
প্রথমে বিএনপির রাজনীতি, পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিও ছিলেন। এই রাজনৈতিক পরিচয় খন্দকার এনায়েত উল্লাহকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর্যন্ত টানা ১৬ বছর তিনি ধারাবাহিকভাবে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিবের দায়িত্বে থাকেন।
এই দীর্ঘ সময়ে তিনি সংগঠনের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং পরিবহন সেক্টরে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন সময়ে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল ও অবরোধে পরিবহন সচল রাখার ঘোষণা দিয়ে তিনি সংবাদ শিরোনামে থাকলেও নিজের কোম্পানির বাসগুলো রাস্তায় নামাতেন না। চাঁদাবাজি কার্যক্রমগুলো ছিল অত্যন্ত সংগঠিত। এনায়েত উল্লাহ ও তার সহযোগীরা সিন্ডিকেট গড়ে বিভিন্ন অজুহাতে বাস মালিকদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় করতো। সিআইডির তথ্য বলছে, দৈনিক চাঁদার পাশাপাশি মাসিক চাঁদাও নেয়া হতো। নতুন বাস কোনো রুটে নামাতে হলে ২-৫ লাখ টাকা দিতে হতো। নতুন বাস কেনার সময় মালিকদের সেই বাসের একটি ভাগও এনায়েতকে দিতে বাধ্য করা হতো, নইলে বাসটি সড়কে চলতে পারতো না।
ঢাকার প্রতিটি বাস টার্মিনাল তার নিয়ন্ত্রণে ছিল বলেও সিআইডির তদন্তে উঠে আসে। শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশের বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতিগুলো থেকেও জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করা হতো। সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করে তিনি পরিবহন সেক্টরে ত্রাসের রাজত্ব চালাতেন বলেও জানায় সিআইডি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এনা ট্রান্সপোর্টের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলায় এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে ১০৭ কোটি ৩২ লাখ ৬১ হাজার টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪(২) ধারায় এনায়েত উল্লাহ ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।
বিএনপির রাজনীতি দিয়ে শুরু, আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে বেপরোয়া হয়: সিআইডি
একটি পুরান গাড়ি থেকে ২০টি বাসের মালিক
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি পরিবহন খাতে দীর্ঘদিনের চাঁদাবাজি ও আধিপত্য খাটিয়ে অর্জিত বিপুল অবৈধ সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট থেকে বুধবার,(২৬ নভেম্বর ২০২৫) রমনা থানায় এই মামলা করা হয় বলে জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।
এ বিষয়ে সিআইডির গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে এনায়েত উল্লাহ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নিজেদের অনুসন্ধানের বরাতে সিআইডি জানায়, খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১৯৯টি ব্যাংক হিসাবে মোট ২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা জমা হয়েছে। আর এসব হিসাব থেকে উত্তোলন করা হয়েছে ২ হাজার ৭ কোটি টাকা।
এর মধ্যে ‘এনা ট্রান্সপোর্ট’-এর ৪৩টি হিসাবে জমা হয় ৯৩৪ কোটি টাকা। ‘এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ’-এর ৮টি হিসাবে জমা ৪১০ কোটি টাকা এবং এনায়েত উল্লাহর ব্যক্তিগত ৭৪টি হিসাবে জমা হয় ৪৫৯ কোটি টাকা।
সিআইডি জানায়, চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্জিত এই বিপুল অর্থ অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে থেকে ‘স্ট্রাকচারিং’ বা ‘স্মার্ট লেয়ারিং’ কৌশল ব্যবহার করে নানা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ১০৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা পাচার করা হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্পদ জব্দের নির্দেশ অনুসন্ধান চলাকালে আদালতের আদেশে এনায়েত উল্লাহর ধানমন্ডির দুটি ফ্ল্যাট এবং রূপগঞ্জের দুটি প্লট ক্রোক (জব্দ) করা হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ১০ কোটি টাকা। এছাড়া তার ও সহযোগীদের নামে থাকা ৫৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে, যেখানে স্থিতি রয়েছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা।
একটি পুরান গাড়ি থেকে ২০টি বাসের মালিক
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান খন্দকার এনায়েত উল্লাহ আশির দশকের পরে পরিবহন সেক্টরে আসেন। পার্টনারশিপে একটি পুরাতন বাস কেনার মাধ্যমে তার ব্যবসার সূচনা হলেও কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি ২০টি বাসের মালিক হয়ে ওঠেন।
অল্প সময়েই তিনি পরিবহন মালিকদের সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেন। এরপর তার আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব বাড়িয়ে নেন।
প্রথমে বিএনপির রাজনীতি, পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিও ছিলেন। এই রাজনৈতিক পরিচয় খন্দকার এনায়েত উল্লাহকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর্যন্ত টানা ১৬ বছর তিনি ধারাবাহিকভাবে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিবের দায়িত্বে থাকেন।
এই দীর্ঘ সময়ে তিনি সংগঠনের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং পরিবহন সেক্টরে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন সময়ে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল ও অবরোধে পরিবহন সচল রাখার ঘোষণা দিয়ে তিনি সংবাদ শিরোনামে থাকলেও নিজের কোম্পানির বাসগুলো রাস্তায় নামাতেন না। চাঁদাবাজি কার্যক্রমগুলো ছিল অত্যন্ত সংগঠিত। এনায়েত উল্লাহ ও তার সহযোগীরা সিন্ডিকেট গড়ে বিভিন্ন অজুহাতে বাস মালিকদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় করতো। সিআইডির তথ্য বলছে, দৈনিক চাঁদার পাশাপাশি মাসিক চাঁদাও নেয়া হতো। নতুন বাস কোনো রুটে নামাতে হলে ২-৫ লাখ টাকা দিতে হতো। নতুন বাস কেনার সময় মালিকদের সেই বাসের একটি ভাগও এনায়েতকে দিতে বাধ্য করা হতো, নইলে বাসটি সড়কে চলতে পারতো না।
ঢাকার প্রতিটি বাস টার্মিনাল তার নিয়ন্ত্রণে ছিল বলেও সিআইডির তদন্তে উঠে আসে। শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশের বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতিগুলো থেকেও জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করা হতো। সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করে তিনি পরিবহন সেক্টরে ত্রাসের রাজত্ব চালাতেন বলেও জানায় সিআইডি।