২০২১ সালের ১০ নভেম্বর। স্থান- রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা। সামসু মাষ্টার পাড়ার বাসিন্দা লতিফের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার কথা বলে দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে বের হন ‘মুক্তি মহিলা সমিতি’র সহ-সভাপতি লিলি বেগম (৩৮)। বিকেল গড়িয়ে গেলেও তার সন্ধান নেই। সেই থেকে পেরিয়ে গেলো চারটি বছর। আজও তার হদিস দিতে পারেনি কেউ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও না।
প্রায় চার বছর পর চার্জশিট দিলো পিবিআই
সন্তুষ্ট নন বাদী
শেষতক লিলির নিখোঁজের মামলায় গত ১৬ নভেম্বর চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই ফরিদপুর শাখা। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তদন্তে এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
তবে এতে সন্তুষ্ট নয় নারাজ বাদীপক্ষ। তারা চান, পুনঃতদন্ত, ‘সুষ্ঠু’ একটা তদন্ত।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদপুর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক গৌরাঙ্গ কুমার বসু বলেছেন, ‘মামলাটির দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত চলেছে। এতো সময় ধরে অনুসন্ধান ও সার্বিক তদন্ত চালিয়ে ভিকটিমকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, আমরা উদ্ধার করতে পারিনি এবং এজাহারনামীয় আসামিদেরও এই মামলায় সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।’
‘তাই আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে দিয়েছি। সেই সঙ্গে লিখে দিয়েছি যে, ভবিষ্যতে যদি লিলি বেগমের মামলাটির নতুন কোন তথ্য বা যোগসূত্র পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে মামলাটি পুনর্জীবিত করা যাবে,’ বলেন গৌরাঙ্গ বসু।
তবে মামলার বাদী লিলির মেয়ের জামাই মুরাদ হোসেন বলেন, ‘এক তরফা চার্জশিটে আমরা নারাজী দিবো আগামী তারিখেই।’ লিলি বেগমের সঙ্গে কী ঘটেছে সে জীবিত না মৃত, তার পরিষ্কার তথ্য জানতে চায় মুরাদ। তিনি বলেন, ‘আমার শাশুড়ির হদিস না পাওয়া পর্যন্ত এ মামলা চলবে।’
নিখোঁজ লিলি ও তারপর
গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট সংলগ্ন যৌনপল্লীতে নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘মুক্তি মহিলা সমিতি’র নেত্রী লিলি বেগম। তার পল্লীর চৌহদ্দির বাইরে গিয়েই চার বছর ধরে নিখোঁজ তিনি।
জানা যায়, ২০২১ সালে ঘটনার দিন অর্থাৎ ১০ নভেম্বর লিলি তার ‘কথিত বাবু’ দৌলতদিয়ার সামসু মাষ্টার পাড়ার বাসিন্দা লতিফের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার কথা বলে দুপুরে বাড়ি থেকে বের হন।
ওই দিন বিকেলে লিলি বেগম বাড়িতে না ফেরায় তার ভাড়াটিয়া পুষ্প ও ঝর্ণা ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু মোবাইল বন্ধ থাকায় তারা লিলির আত্মীয়-স্বজনদের বিষয়টি জানান। স্বজনরাও নানাভাবে খোঁজ করে ব্যর্থ হন। পরে লিলির বোনের ছেলে মো. শফি ইসলাম ১২ নভেম্বর গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর ১৫ নভেম্বর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিলি বেগমকে উদ্ধারে সহযোগিতা চেয়ে লিখিত আবেদন করেন মুক্তি মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম।
ওই সময় এ বিষয়ে নিখোঁজ হওয়া লিলির ‘কথিত বাবু’ লতিফ শেখ বলেছিলেন, ‘লিলি বেগমের সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্কের সুবাদে সে আমার বাড়িতে দাওয়াত খেতে আসে। খাবার শেষে সে চলে যেতে চাইলে আমার ছেলেকে দিয়ে তাকে রিকশায় উঠিয়ে দিই। এরপর থেকে আমার সঙ্গেও তার আর কোন যোগাযোগ হয়নি।’
লিলির সহকর্মী মর্জিনা বেগম বলেন, ‘লিলি বেগম অত্যন্ত ভালো মনের একজন মানুষ। তিনি পলীর অসহায় নারী ও শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। এ জন্য তার হয়তো কোনো শত্রু সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। এভাবে তার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আমরা সবাই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
নিখোঁজের এক মাস চারদিন পর অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর লিলির মেয়ে জামাই মুরাদ হোসেন রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলা করেন। আদালত মামলাটিকে গোয়ালন্দ ঘাট থানাকে নথিভুক্ত করতে এবং তদন্তের জন্য ফরিদপুর পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়।
এ মামলায় আসামী করা হয় ৩ জনকে লিলি বেগমের কথিত স্বামী দৌলতদিয়া সামছু মাষ্টারের পাড়ার হালিম শেখের ছেলে লতিফ শেখ (৪৮), লতিফ শেখের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৪০), লতিফ সেখের ছেলে রবিউল শেখ (২৪)।
ঘটনার পরের বছর ২০২২ সালের ১ জুলাই অর্থাৎ লিলি নিখোঁজের প্রায় ছয় মাস পর, মামলার ১নং আসামি তখনকার যুবলীগ নেতা লতিফ শেখ (৪৮) ও তার স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে (৪০) গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
ওই সময় তাদেরকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী একদিনের রিমান্ডেও নেয়া হয়। রিমান্ড শেষে তাদের রাজবাড়ী কারাগারে পাঠানো হয়।
আসামিরা দৌলতদিয়া শামসু মাষ্টার পাড়ার বাসিন্দা। সে সময় লতিফ শেখ দৌলতদিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
নিখোঁজ লিলি বেগম দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বাড়িয়ালী এবং যৌনকর্মী। যৌনকর্মীদের সন্তানদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মরত বেসরকারি সংগঠন মুক্তি মহিলা সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন লিলি বেগম।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
২০২১ সালের ১০ নভেম্বর। স্থান- রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা। সামসু মাষ্টার পাড়ার বাসিন্দা লতিফের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার কথা বলে দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে বের হন ‘মুক্তি মহিলা সমিতি’র সহ-সভাপতি লিলি বেগম (৩৮)। বিকেল গড়িয়ে গেলেও তার সন্ধান নেই। সেই থেকে পেরিয়ে গেলো চারটি বছর। আজও তার হদিস দিতে পারেনি কেউ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও না।
প্রায় চার বছর পর চার্জশিট দিলো পিবিআই
সন্তুষ্ট নন বাদী
শেষতক লিলির নিখোঁজের মামলায় গত ১৬ নভেম্বর চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই ফরিদপুর শাখা। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তদন্তে এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
তবে এতে সন্তুষ্ট নয় নারাজ বাদীপক্ষ। তারা চান, পুনঃতদন্ত, ‘সুষ্ঠু’ একটা তদন্ত।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদপুর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক গৌরাঙ্গ কুমার বসু বলেছেন, ‘মামলাটির দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত চলেছে। এতো সময় ধরে অনুসন্ধান ও সার্বিক তদন্ত চালিয়ে ভিকটিমকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, আমরা উদ্ধার করতে পারিনি এবং এজাহারনামীয় আসামিদেরও এই মামলায় সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।’
‘তাই আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে দিয়েছি। সেই সঙ্গে লিখে দিয়েছি যে, ভবিষ্যতে যদি লিলি বেগমের মামলাটির নতুন কোন তথ্য বা যোগসূত্র পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে মামলাটি পুনর্জীবিত করা যাবে,’ বলেন গৌরাঙ্গ বসু।
তবে মামলার বাদী লিলির মেয়ের জামাই মুরাদ হোসেন বলেন, ‘এক তরফা চার্জশিটে আমরা নারাজী দিবো আগামী তারিখেই।’ লিলি বেগমের সঙ্গে কী ঘটেছে সে জীবিত না মৃত, তার পরিষ্কার তথ্য জানতে চায় মুরাদ। তিনি বলেন, ‘আমার শাশুড়ির হদিস না পাওয়া পর্যন্ত এ মামলা চলবে।’
নিখোঁজ লিলি ও তারপর
গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট সংলগ্ন যৌনপল্লীতে নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘মুক্তি মহিলা সমিতি’র নেত্রী লিলি বেগম। তার পল্লীর চৌহদ্দির বাইরে গিয়েই চার বছর ধরে নিখোঁজ তিনি।
জানা যায়, ২০২১ সালে ঘটনার দিন অর্থাৎ ১০ নভেম্বর লিলি তার ‘কথিত বাবু’ দৌলতদিয়ার সামসু মাষ্টার পাড়ার বাসিন্দা লতিফের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার কথা বলে দুপুরে বাড়ি থেকে বের হন।
ওই দিন বিকেলে লিলি বেগম বাড়িতে না ফেরায় তার ভাড়াটিয়া পুষ্প ও ঝর্ণা ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু মোবাইল বন্ধ থাকায় তারা লিলির আত্মীয়-স্বজনদের বিষয়টি জানান। স্বজনরাও নানাভাবে খোঁজ করে ব্যর্থ হন। পরে লিলির বোনের ছেলে মো. শফি ইসলাম ১২ নভেম্বর গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর ১৫ নভেম্বর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিলি বেগমকে উদ্ধারে সহযোগিতা চেয়ে লিখিত আবেদন করেন মুক্তি মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম।
ওই সময় এ বিষয়ে নিখোঁজ হওয়া লিলির ‘কথিত বাবু’ লতিফ শেখ বলেছিলেন, ‘লিলি বেগমের সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্কের সুবাদে সে আমার বাড়িতে দাওয়াত খেতে আসে। খাবার শেষে সে চলে যেতে চাইলে আমার ছেলেকে দিয়ে তাকে রিকশায় উঠিয়ে দিই। এরপর থেকে আমার সঙ্গেও তার আর কোন যোগাযোগ হয়নি।’
লিলির সহকর্মী মর্জিনা বেগম বলেন, ‘লিলি বেগম অত্যন্ত ভালো মনের একজন মানুষ। তিনি পলীর অসহায় নারী ও শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। এ জন্য তার হয়তো কোনো শত্রু সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। এভাবে তার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আমরা সবাই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
নিখোঁজের এক মাস চারদিন পর অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর লিলির মেয়ে জামাই মুরাদ হোসেন রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলা করেন। আদালত মামলাটিকে গোয়ালন্দ ঘাট থানাকে নথিভুক্ত করতে এবং তদন্তের জন্য ফরিদপুর পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়।
এ মামলায় আসামী করা হয় ৩ জনকে লিলি বেগমের কথিত স্বামী দৌলতদিয়া সামছু মাষ্টারের পাড়ার হালিম শেখের ছেলে লতিফ শেখ (৪৮), লতিফ শেখের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৪০), লতিফ সেখের ছেলে রবিউল শেখ (২৪)।
ঘটনার পরের বছর ২০২২ সালের ১ জুলাই অর্থাৎ লিলি নিখোঁজের প্রায় ছয় মাস পর, মামলার ১নং আসামি তখনকার যুবলীগ নেতা লতিফ শেখ (৪৮) ও তার স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে (৪০) গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
ওই সময় তাদেরকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী একদিনের রিমান্ডেও নেয়া হয়। রিমান্ড শেষে তাদের রাজবাড়ী কারাগারে পাঠানো হয়।
আসামিরা দৌলতদিয়া শামসু মাষ্টার পাড়ার বাসিন্দা। সে সময় লতিফ শেখ দৌলতদিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
নিখোঁজ লিলি বেগম দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বাড়িয়ালী এবং যৌনকর্মী। যৌনকর্মীদের সন্তানদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মরত বেসরকারি সংগঠন মুক্তি মহিলা সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন লিলি বেগম।