পিকনিকের কথা বলে আশুলিয়ায় নিয়ে গিয়ে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ‘ধর্ষণ’ ও ভিডিও ধারণের মামলায় সহপাঠীসহ তিন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। তাদের মধ্যে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাজুল ইসলাম তাজ ও শ্রাবণ সাহা উৎসকে তিন দিন এবং অন্তু দেওয়ানকে দুই দিনের রিমান্ডের আনুমতি পেয়েছে পুলিশ।
আরেক আসামি দেলোয়ার ভূঁইয়ার রিমান্ড শুনানির দিন আগামী রোববার ঠিক করা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তু দেওয়ান ক্যাম্পাসের সিনিয়র, অন্য তিন আসামি ভুক্তভোগীর সহপাঠী। ৯ মাস আগের ঘটনায় গত ২ ডিসেম্বর করা মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পিকনিকের নামে ডেকে নিয়ে গিয়ে কোমল পানীয়ের সঙ্গে চেতনানাশক পান করিয়ে অচেতন করে ‘ধর্ষণ’ ছাড়াও ভিডিও ধারণ এবং তা ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় ও মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আশুলিয়া থানায় মামলার পর গতকাল বুধবার আশুলিয়ার ফুলেরটেক এলাকার একটি মেস থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামিরা গত নভেম্বরের শুরুতে তাকে আবারও শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। ৬ নভেম্বর তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং পানীয়তে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। তখন কোনোমতে ছাড়া পেয়ে ক্যাম্পাসে এলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর গত ২৬ নভেম্বর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়া অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দেন আসামিরা।
বৃহস্পতিবার, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাজুল ইসলাম সোহাগের আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পরিদর্শক সফিকুল ইসলাম সুমন। পরে তার আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারক তাদের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতে প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই বিশ্বজিৎ দেবনাথ রিমান্ডের তথ্য দেন সাংবাদিকদের।
এদের মধ্যে দেলোয়ার ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তার বক্তব্য রেকর্ড করতে আদালতে আবেদন করা হয়। অন্য তিন আসামির সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তিনি। তবে পরে দেলোয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন তাকে সাত দিন রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী এস এইচ কৃষ্ণ রিমান্ডের শুনানি করেন। বলেন ‘তারা শুধু ধর্ষণই করেনি, ভিডিও ধারণ করে ভাইরাল করার হুমকি দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কাজ হয়নি। তাদের (আসামিদের) কাছে শিক্ষক, শিক্ষিকা, প্রশাসন জিম্মি। আইন বিভাগের ছাত্র হয়ে তারা এ অন্যায় করেছে। এরা আইনজীবী হয়ে আদালতে আসলে কী করবে?’
তিনি তাদের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট রায়হানুর রশীদসহ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। পরে আদালত এ আদেশ দেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৭ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে পিকনিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ওই ছাত্রীকে আশুলিয়ার ফুলেরটেক এলাকায় নিয়ে যায় তার সহপাঠীরা। পথিমধ্যে কোমল পানীর সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খওয়ালে কিছুক্ষণ পর অচেতন হয়ে যান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ওইদিন বিকেল ৫টার দিকে জ্ঞান ফিরলে আসামিদের ফুলের টেকের মেছে নিজেকে দেখতে পান ভুক্তভোগী। তখন বুঝতে পারেন তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করা হয়েছে। এ সময় ওই শিক্ষার্থী চিৎকার শুরু করলে আসামিরা ধারণ করা ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়াসহ এসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেয়ার হুমকি দেয়।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়, এ ঘটনার পর জিম্মি করে একাধিক ধাপে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোট ৯৬ হাজার টাকা হাতিয়েও নেয় তারা। ঘটনা সেখানেই শেষ হয়নি তুলে ধরে মামলায় বলা হয়, গত ৪ নভেম্বর তাকে আবারও শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসামিরা। পরে গত ৬ নভেম্বর আসামি অন্তু দেওয়ানের নির্দেশনায় হুমকি ও অন্তু দেওয়ানের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে ভুক্তভোগীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ এলোপাথারি চড়, থাপ্পর দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে অন্তু দেওয়ানের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
এ সময় আবারও বোতলে থাকা বিষাক্ত নেশাজাতীয় পানীয় ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক খেতে বাধ্য করে। ঘটনার পর কোনোমতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে গুরুত্বর অসুস্থ ও অচেতন হয়ে পড়েন। পরে সহপাঠী ও শিক্ষকরা গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেলে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিলে আসামিরা আবারও চড়াও হন। গত ২৬ নভেম্বর তাকে আটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে রেখে অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দেয় আসামিরা। পরে ২ ডিসেম্বর মামলা করেন তিনি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
পিকনিকের কথা বলে আশুলিয়ায় নিয়ে গিয়ে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ‘ধর্ষণ’ ও ভিডিও ধারণের মামলায় সহপাঠীসহ তিন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। তাদের মধ্যে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাজুল ইসলাম তাজ ও শ্রাবণ সাহা উৎসকে তিন দিন এবং অন্তু দেওয়ানকে দুই দিনের রিমান্ডের আনুমতি পেয়েছে পুলিশ।
আরেক আসামি দেলোয়ার ভূঁইয়ার রিমান্ড শুনানির দিন আগামী রোববার ঠিক করা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তু দেওয়ান ক্যাম্পাসের সিনিয়র, অন্য তিন আসামি ভুক্তভোগীর সহপাঠী। ৯ মাস আগের ঘটনায় গত ২ ডিসেম্বর করা মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পিকনিকের নামে ডেকে নিয়ে গিয়ে কোমল পানীয়ের সঙ্গে চেতনানাশক পান করিয়ে অচেতন করে ‘ধর্ষণ’ ছাড়াও ভিডিও ধারণ এবং তা ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় ও মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আশুলিয়া থানায় মামলার পর গতকাল বুধবার আশুলিয়ার ফুলেরটেক এলাকার একটি মেস থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামিরা গত নভেম্বরের শুরুতে তাকে আবারও শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। ৬ নভেম্বর তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং পানীয়তে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। তখন কোনোমতে ছাড়া পেয়ে ক্যাম্পাসে এলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর গত ২৬ নভেম্বর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়া অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দেন আসামিরা।
বৃহস্পতিবার, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাজুল ইসলাম সোহাগের আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পরিদর্শক সফিকুল ইসলাম সুমন। পরে তার আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারক তাদের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতে প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই বিশ্বজিৎ দেবনাথ রিমান্ডের তথ্য দেন সাংবাদিকদের।
এদের মধ্যে দেলোয়ার ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তার বক্তব্য রেকর্ড করতে আদালতে আবেদন করা হয়। অন্য তিন আসামির সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তিনি। তবে পরে দেলোয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন তাকে সাত দিন রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী এস এইচ কৃষ্ণ রিমান্ডের শুনানি করেন। বলেন ‘তারা শুধু ধর্ষণই করেনি, ভিডিও ধারণ করে ভাইরাল করার হুমকি দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কাজ হয়নি। তাদের (আসামিদের) কাছে শিক্ষক, শিক্ষিকা, প্রশাসন জিম্মি। আইন বিভাগের ছাত্র হয়ে তারা এ অন্যায় করেছে। এরা আইনজীবী হয়ে আদালতে আসলে কী করবে?’
তিনি তাদের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট রায়হানুর রশীদসহ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। পরে আদালত এ আদেশ দেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৭ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে পিকনিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ওই ছাত্রীকে আশুলিয়ার ফুলেরটেক এলাকায় নিয়ে যায় তার সহপাঠীরা। পথিমধ্যে কোমল পানীর সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খওয়ালে কিছুক্ষণ পর অচেতন হয়ে যান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ওইদিন বিকেল ৫টার দিকে জ্ঞান ফিরলে আসামিদের ফুলের টেকের মেছে নিজেকে দেখতে পান ভুক্তভোগী। তখন বুঝতে পারেন তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করা হয়েছে। এ সময় ওই শিক্ষার্থী চিৎকার শুরু করলে আসামিরা ধারণ করা ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়াসহ এসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেয়ার হুমকি দেয়।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়, এ ঘটনার পর জিম্মি করে একাধিক ধাপে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোট ৯৬ হাজার টাকা হাতিয়েও নেয় তারা। ঘটনা সেখানেই শেষ হয়নি তুলে ধরে মামলায় বলা হয়, গত ৪ নভেম্বর তাকে আবারও শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসামিরা। পরে গত ৬ নভেম্বর আসামি অন্তু দেওয়ানের নির্দেশনায় হুমকি ও অন্তু দেওয়ানের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে ভুক্তভোগীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ এলোপাথারি চড়, থাপ্পর দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে অন্তু দেওয়ানের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
এ সময় আবারও বোতলে থাকা বিষাক্ত নেশাজাতীয় পানীয় ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক খেতে বাধ্য করে। ঘটনার পর কোনোমতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে গুরুত্বর অসুস্থ ও অচেতন হয়ে পড়েন। পরে সহপাঠী ও শিক্ষকরা গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেলে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিলে আসামিরা আবারও চড়াও হন। গত ২৬ নভেম্বর তাকে আটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে রেখে অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দেয় আসামিরা। পরে ২ ডিসেম্বর মামলা করেন তিনি।