রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর আগে জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয়প্রধান তাবিউর রহমান প্রধানকে সরকারি চাকরিবিধি ২০১৮ অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। কিন্তু ৯ দিন অতিবাহিত হবার পরেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয় সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত সম্বলিত রেজুলেশনটিও এখনও লেখা হয়নি বলেও অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
অন্যদিকে অবৈধ নিয়োগ পাওয়া তাবিউর রহমান চাকরিচ্যুতির রেজুলেশন না লেখার জন্য গত বুধবার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকত আলীর সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্ত শিক্ষকসহ কয়েকজন চাকরিচ্যুতি না করার জন্য আকুতি-মিনতি করে রেজুলেশনে ওই সিদ্ধান্ত না লেখার অনুরোধ করেছে। এ বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এর আগে শিক্ষক তাবিউর রহমানের বিরুদ্ধে গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকৃতভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী মো. মাহামুদুল হককে বঞ্চিত করে তাবিউরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশে কাটাছেঁড়া করে ‘যে কাউকে’ বলে তাবিউরের নাম কলম দিয়ে বসানো হয়। এই প্রতিবেদন দেয়ার পরেও নানান অজুহাতে ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কোনো ব্যাবস্থা নেয়া হয়নি। দাপট দেখিয়ে ১৩ বছর ধরে অবৈধভাবে শিক্ষকতা করা বেরোবির শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধানের নিয়োগে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবারও উচ্চপর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়
হাইকোর্টের রুল ও দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ১১৩তম সিন্ডিকেট সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম শাহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের (অব.) শামসুল আলম সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশিদ। তদন্ত কমিটি দীর্ঘ তদন্ত করে তাবিউর রহমানের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়াসহ প্রতিবেদন জমা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৮তম সিন্ডিকেট সভায় অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া তাবিউর রহমানকে সরকারি চাকরিবিধি ২০১৮ অনুয়ায়ী চাকরিচ্যুত ও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত ৯ দিনেও বাস্তবায়িত হয়নি।
উপাচার্য যা বললেন: এ ব্যাপারে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলী শিক্ষক তাবিউর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ব্রাকসুর নির্বাচনসহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ততার জন্য সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত এখনও রেজুলেশনে লেখা হয়নি জানিয়ে বলেন- এ ব্যাপারে আমরা লিগ্যাল অ্যাডভাইজারের সঙ্গে কথা বলে বাকি কাজ করবো।
শিক্ষক মাহমুদুল হকের অভিযোগ: এ ব্যাপারে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহামুদুল হক অভিযোগ করেন ১৩ বছর ধরে জালিয়াতি করে চাকরি করছে তাবিউর রহমান প্রধান। কারণ মহামান্য হাইকোর্ট ২০২২ সালে এক রুলে জানতে চেয়েছেন কেন তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে চাকরি চলমান রাখার জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত তাকে দ্রুত বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা কিন্তু এখন পর্যন্ত আদালতের জবাব দেয়া হয়নি। গত সিন্ডিকেটে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে শুনেছি কিন্তু সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো চিঠি পাইনি।
তিনি আরও বলেন, আমার জ্যেষ্ঠতা ও সার্ভিস বেনিফট অবশ্যই ২০১২ সাল থেকেই দিতে হবে কেননা, আমাকে মহামান্য হাইকোর্ট ২০১২ সালের রায়ে ওই সময়ের সুপারিশপত্র অনুযায়ী নিয়োগ দিতে বলেছেন এবং ২০২২ সালের হাইকোর্ট এক রুলে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। ২০১৯ সালে আমার নিয়োগ দিয়ে আংশিক রায় বাস্তবায়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১২ সালের রায় বাস্তবায়ন না করলে আমি আদালত অবমাননার মামলা করি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যা এখনও নিষ্পতি হয়নি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক তাবিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
যেভাবে নিয়োগ জালিয়াতি করার অভিযোগ ওঠে: বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৯ অক্টোবর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক (স্থায়ী) পদে একটি এবং সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক দুটি স্থায়ী পদে বিজ্ঞাপন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে তাবিউর রহমান প্রধানসহ মোট ২২ জন প্রভাষক পদে দরখাস্ত করেন। পরের বছরের ১৩ জানুয়ারি প্রভাষক পদের জন্য বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। বাছাই বোর্ড যথাক্রমে মোহা. মাহামুদুল হক ও নিয়ামুন নাহারকে অপেক্ষমান তালিকায় রেখে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু বাছাই বোর্ডের সুপারিশপত্রে দেখা যায়, ‘জালিয়াতি’ করে অপেক্ষমাণ তালিকায় তৃতীয় হিসেবে তাবিউর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বাছাই বোর্ডের পর।
বাছাই বোর্ডের সুপারিশপত্রে দেখা যায়, কম্পিউটারে কম্পোজকৃত ‘মেধাক্রমানুসারে’ শব্দটি কলম দিয়ে কেটে ‘যে কোনো’ শব্দটি লেখা হয়েছে সুপারিশপত্রে। ওই সুপারিশপত্রে বলা হয়েছে: ‘চূড়ান্তভাবে মনোনয়নপ্রাপ্ত আবেদনকারী ওই বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করতে অপারগ হলে অপেক্ষামান তালিকা থেকে প্রথমজনকে নিয়োগ করার সুপারিশ করা হলো। অপেক্ষমাণ তালিকার প্রথমজন যোগদানে অপারগ হলে দ্বিতীয় জনকে নিয়োগ করার জন্য সুপারিশ করা হলো।’ তালিকায় তৃতীয়জন সম্পর্কে কিছুই বলা নেই কারণ ওই সিরিয়ালই ছিল না এজন্য যে দুটি পদের বিপরীতে দুজনকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছিল। এরপর ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ২১তম সিন্ডিকেট অপেক্ষমাণ তালিকায় দুজনের পরিবর্তে তৃতীয়জন তাবিউর রহমানের নাম অনুমোদন করা হয় এবং বলা হয় নিচের তালিকা থেকে ‘যে কাউকে’ নিয়োগ দেয়া যাবে। সিরিয়াল রাখা হয় ১. মোহা. মাহামুদুল হক ২. নিয়ামুন নাহার ৩. তাবিউর রহমান প্রধান। এতে মেধাতালিকার প্রথমজন যোগদান না করায় তার নিয়োগ বাতিল করা হয়।উল্লেখ্য যে, অপেক্ষামাণ তালিকায় দুজনের পরিবর্তে ‘জালিয়াতি’ করে তাবিউরের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন দেয়া হয়।
একই সিন্ডিকেটে (২১তম) অনুমোদনপ্রাপ্ত ‘যে কাউকে’ শব্দটি ২২তম সিন্ডিকেটে সিন্ডিকেট সদস্যদের আপত্তির কারণে বাতিল করা হয়। অর্থাৎ অপেক্ষমাণ তালিকার প্রথমজন মোহা. মাহামুদুল হক এবং দ্বিতীয়জন নিয়ামুন নাহার নিয়োগ পান সুপারিশ ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। ২২তম সিন্ডিকেটেও জালিয়াতি করা হয়। ‘যে কাউকে’ শব্দটি বাতিল করা হয় কিন্তু অপেক্ষমাণ তালিকায় সিরিয়াল পরিবর্তন করা হয়। এতে নিয়োগের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত ২ জন শিক্ষকদের নাম লেখার সময় প্রথমজন হিসেবে তাবিউর রহমান প্রধান এবং দ্বিতীয়জন হিসেবে নিয়ামুন নাহারের নাম লেখা হয়। অপেক্ষমাণ তালিকায় প্রথম মোহা. মাহামুদুল হকের নাম বাদ দিয়ে তালিকার সিরিয়াল পরিবর্তন করা হয়।
এছাড়া তাবিউর রহমান প্রধানকে অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। অথচ নিয়োগ বাছাই বোর্ড ছিল প্রভাষক পদে। অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল কিন্তু কেউ দরখাস্ত না করায় অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের কোনো বাছাই বোর্ড হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদে প্রার্থী পাওয়া না গেলে এর বিপরীতে প্রভাষক নিয়োগ দিতে হলে নতুন করে বিজ্ঞাপন দিতে হয় কিন্তু তাবিউর রহমানের নিয়োগের সময় এ নিয়মও অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর আগে জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয়প্রধান তাবিউর রহমান প্রধানকে সরকারি চাকরিবিধি ২০১৮ অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। কিন্তু ৯ দিন অতিবাহিত হবার পরেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয় সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত সম্বলিত রেজুলেশনটিও এখনও লেখা হয়নি বলেও অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
অন্যদিকে অবৈধ নিয়োগ পাওয়া তাবিউর রহমান চাকরিচ্যুতির রেজুলেশন না লেখার জন্য গত বুধবার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকত আলীর সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্ত শিক্ষকসহ কয়েকজন চাকরিচ্যুতি না করার জন্য আকুতি-মিনতি করে রেজুলেশনে ওই সিদ্ধান্ত না লেখার অনুরোধ করেছে। এ বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এর আগে শিক্ষক তাবিউর রহমানের বিরুদ্ধে গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকৃতভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী মো. মাহামুদুল হককে বঞ্চিত করে তাবিউরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশে কাটাছেঁড়া করে ‘যে কাউকে’ বলে তাবিউরের নাম কলম দিয়ে বসানো হয়। এই প্রতিবেদন দেয়ার পরেও নানান অজুহাতে ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কোনো ব্যাবস্থা নেয়া হয়নি। দাপট দেখিয়ে ১৩ বছর ধরে অবৈধভাবে শিক্ষকতা করা বেরোবির শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধানের নিয়োগে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবারও উচ্চপর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়
হাইকোর্টের রুল ও দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ১১৩তম সিন্ডিকেট সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম শাহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের (অব.) শামসুল আলম সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশিদ। তদন্ত কমিটি দীর্ঘ তদন্ত করে তাবিউর রহমানের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়াসহ প্রতিবেদন জমা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৮তম সিন্ডিকেট সভায় অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া তাবিউর রহমানকে সরকারি চাকরিবিধি ২০১৮ অনুয়ায়ী চাকরিচ্যুত ও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত ৯ দিনেও বাস্তবায়িত হয়নি।
উপাচার্য যা বললেন: এ ব্যাপারে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলী শিক্ষক তাবিউর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ব্রাকসুর নির্বাচনসহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ততার জন্য সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত এখনও রেজুলেশনে লেখা হয়নি জানিয়ে বলেন- এ ব্যাপারে আমরা লিগ্যাল অ্যাডভাইজারের সঙ্গে কথা বলে বাকি কাজ করবো।
শিক্ষক মাহমুদুল হকের অভিযোগ: এ ব্যাপারে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহামুদুল হক অভিযোগ করেন ১৩ বছর ধরে জালিয়াতি করে চাকরি করছে তাবিউর রহমান প্রধান। কারণ মহামান্য হাইকোর্ট ২০২২ সালে এক রুলে জানতে চেয়েছেন কেন তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে চাকরি চলমান রাখার জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত তাকে দ্রুত বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা কিন্তু এখন পর্যন্ত আদালতের জবাব দেয়া হয়নি। গত সিন্ডিকেটে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে শুনেছি কিন্তু সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো চিঠি পাইনি।
তিনি আরও বলেন, আমার জ্যেষ্ঠতা ও সার্ভিস বেনিফট অবশ্যই ২০১২ সাল থেকেই দিতে হবে কেননা, আমাকে মহামান্য হাইকোর্ট ২০১২ সালের রায়ে ওই সময়ের সুপারিশপত্র অনুযায়ী নিয়োগ দিতে বলেছেন এবং ২০২২ সালের হাইকোর্ট এক রুলে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। ২০১৯ সালে আমার নিয়োগ দিয়ে আংশিক রায় বাস্তবায়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১২ সালের রায় বাস্তবায়ন না করলে আমি আদালত অবমাননার মামলা করি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যা এখনও নিষ্পতি হয়নি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক তাবিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
যেভাবে নিয়োগ জালিয়াতি করার অভিযোগ ওঠে: বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৯ অক্টোবর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক (স্থায়ী) পদে একটি এবং সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক দুটি স্থায়ী পদে বিজ্ঞাপন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে তাবিউর রহমান প্রধানসহ মোট ২২ জন প্রভাষক পদে দরখাস্ত করেন। পরের বছরের ১৩ জানুয়ারি প্রভাষক পদের জন্য বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। বাছাই বোর্ড যথাক্রমে মোহা. মাহামুদুল হক ও নিয়ামুন নাহারকে অপেক্ষমান তালিকায় রেখে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু বাছাই বোর্ডের সুপারিশপত্রে দেখা যায়, ‘জালিয়াতি’ করে অপেক্ষমাণ তালিকায় তৃতীয় হিসেবে তাবিউর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বাছাই বোর্ডের পর।
বাছাই বোর্ডের সুপারিশপত্রে দেখা যায়, কম্পিউটারে কম্পোজকৃত ‘মেধাক্রমানুসারে’ শব্দটি কলম দিয়ে কেটে ‘যে কোনো’ শব্দটি লেখা হয়েছে সুপারিশপত্রে। ওই সুপারিশপত্রে বলা হয়েছে: ‘চূড়ান্তভাবে মনোনয়নপ্রাপ্ত আবেদনকারী ওই বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করতে অপারগ হলে অপেক্ষামান তালিকা থেকে প্রথমজনকে নিয়োগ করার সুপারিশ করা হলো। অপেক্ষমাণ তালিকার প্রথমজন যোগদানে অপারগ হলে দ্বিতীয় জনকে নিয়োগ করার জন্য সুপারিশ করা হলো।’ তালিকায় তৃতীয়জন সম্পর্কে কিছুই বলা নেই কারণ ওই সিরিয়ালই ছিল না এজন্য যে দুটি পদের বিপরীতে দুজনকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছিল। এরপর ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ২১তম সিন্ডিকেট অপেক্ষমাণ তালিকায় দুজনের পরিবর্তে তৃতীয়জন তাবিউর রহমানের নাম অনুমোদন করা হয় এবং বলা হয় নিচের তালিকা থেকে ‘যে কাউকে’ নিয়োগ দেয়া যাবে। সিরিয়াল রাখা হয় ১. মোহা. মাহামুদুল হক ২. নিয়ামুন নাহার ৩. তাবিউর রহমান প্রধান। এতে মেধাতালিকার প্রথমজন যোগদান না করায় তার নিয়োগ বাতিল করা হয়।উল্লেখ্য যে, অপেক্ষামাণ তালিকায় দুজনের পরিবর্তে ‘জালিয়াতি’ করে তাবিউরের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন দেয়া হয়।
একই সিন্ডিকেটে (২১তম) অনুমোদনপ্রাপ্ত ‘যে কাউকে’ শব্দটি ২২তম সিন্ডিকেটে সিন্ডিকেট সদস্যদের আপত্তির কারণে বাতিল করা হয়। অর্থাৎ অপেক্ষমাণ তালিকার প্রথমজন মোহা. মাহামুদুল হক এবং দ্বিতীয়জন নিয়ামুন নাহার নিয়োগ পান সুপারিশ ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। ২২তম সিন্ডিকেটেও জালিয়াতি করা হয়। ‘যে কাউকে’ শব্দটি বাতিল করা হয় কিন্তু অপেক্ষমাণ তালিকায় সিরিয়াল পরিবর্তন করা হয়। এতে নিয়োগের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত ২ জন শিক্ষকদের নাম লেখার সময় প্রথমজন হিসেবে তাবিউর রহমান প্রধান এবং দ্বিতীয়জন হিসেবে নিয়ামুন নাহারের নাম লেখা হয়। অপেক্ষমাণ তালিকায় প্রথম মোহা. মাহামুদুল হকের নাম বাদ দিয়ে তালিকার সিরিয়াল পরিবর্তন করা হয়।
এছাড়া তাবিউর রহমান প্রধানকে অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। অথচ নিয়োগ বাছাই বোর্ড ছিল প্রভাষক পদে। অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল কিন্তু কেউ দরখাস্ত না করায় অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের কোনো বাছাই বোর্ড হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদে প্রার্থী পাওয়া না গেলে এর বিপরীতে প্রভাষক নিয়োগ দিতে হলে নতুন করে বিজ্ঞাপন দিতে হয় কিন্তু তাবিউর রহমানের নিয়োগের সময় এ নিয়মও অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।