চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকায় পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ২০২১ সালে জুন মাসে এ ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত টিম ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রাসেল শেখ নামে একজনকে গত শনিবার গ্রেপ্তার করেছে।
পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদে সে ধর্ষণের পর শিশুটিকে হত্যার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। সোমবার,(০৮ ডিসেম্বর ২০২৫) সে আদালতে নিজেকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সোমবার পিবিআই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
পিবিআই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার বাহির সিগন্যাল এলাকার ফকির কলোনিতে শিশু নুসরাত জাহান তরী (৫) তার মা আতুশি মারমা ওরফে নওমুসলিম ফাতেমা বেগমের সঙ্গে ওই বাসায় থাকতো।
২০২১ সালে ২৭ জুন সকালে মা কর্মস্থলে যায়। আর শিশুটি ঘরে ঘুমাচ্ছিল। আর প্রতিবেশী রুমি বেগম দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। সকাল ৯টার দিকে শিশুটিকে ঘরে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়।
দুপুর ১২টার দিকে বাসার শয়নকক্ষের খাটের নিচে শিশুটিকে মুখে কাপড় গোঁজা অবস্থায় মৃত পাওয়া যায়। পরীক্ষায় তার লজ্জাস্থানে রক্তক্ষরণ, গলায় আঙুলের কালো দাগ ও হাতের নখ ভাঙার চিহ্ন পাওয়া যায়।
ধারণা করা হচ্ছে, সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে কোনো এক সময়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে। এ ঘটনায় ভিকটিমের মাতা আতুশি মারমা ওরফে নওমুসলিম ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
প্রথমে থানা পুলিশ দুই বছরের অধিক সময় তদন্তের পরে কোনো রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারায় থানা পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে এ পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মর্জিনা আক্তার মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন।
পিবিআইপ্রধান মোস্তফা কামালের নির্দেশনায় পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট ইনর্চাজ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রুহুল কবীর খান এর নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মর্জিনা আক্তার দীর্ঘদিন চেষ্টা করে ঘটনাস্থলের আশপাশের ভাড়া থাকা প্রায় ৪০-৫০ পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পারিপার্শ্বিক সাক্ষী, ঘটনাস্থলে ঘটনার সময় আসামির অবস্থান, ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা ডিএনএ স্যাম্পল ও জব্দকৃত আলামত ইত্যাদি বিষয়কে আমলে নিয়ে ঘটনাস্থলের পাশের রুমের ভাড়াটিয়া রাসেল হোসেন শেখকে (৩২) সন্দেহ হয়।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মর্জিনা আক্তার সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ গত ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ এ সন্দেহভাজন রাসেল শেখকে পিবিআই এর হেফাজতে নিয়ে গভীর জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে একপর্যায়ে ধর্ষণের পরে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে এবং বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
পিবিআই এর তদন্ত ও আসামির জবানবন্দি থেকে জানা যায় যে, উক্ত আসামি মামলার শিশু নুসরাত জাহান তরী (৫) এর পাশের বাসার প্রতিবেশী হওয়ার সুযোগে ভিকটিম তরী’র মায়ের কর্মস্থলে চলে যাওয়া, তরী একাকী ঘুমিয়ে থাকা ও ধর্ষণের ঘটনা সংঘটনের সময়কালে ঘটনাস্থল ভবনের সব মহিলা ও পুরুষের যার যার কর্মে যাওয়া এবং তাদের ফেরত আসার সময় দীর্ঘক্ষণ লাগবে। এটা আসামি জানতো।