রংপুর বিআরটিএ দুর্নীতি: জরিমানার নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
জেলা বার্তা পরিবেশক, রংপুর

রংপুর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) রংপুর সার্কেল কার্যালয়ে কাগজে-কলমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা দেখিয়ে জরিমানা আদায় করা হলেও বাস্তবে নিয়ম অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

কাগজে-কলমে মোবাইল কোর্ট, বাস্তবে প্রমাণ নেই

ক্ষমতার অপব্যবহার, আর্থিক অনিয়ম ও জবাবদিহিতার ঘাটতি

অডিট আপত্তি প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এভাবে আদায়কৃত জরিমানার কোটি কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে পাওয়া পরিবহন অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রংপুর বিআরটিএ সার্কেলে ব্যাপক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্র উঠে এসেছে। সংবাদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।

অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা দেখিয়ে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫০ টাকা এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় দেখানো হলেও এসব অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার কোনো চালান বা রেকর্ড পাওয়া যায়নি। নিরীক্ষা দল বারবার অনুসন্ধান করেও অর্থ জমার কোনো প্রমাণ পায়নি। অডিট বিভাগ এটিকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নামে অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অনিয়ম হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে মোটরযানের বকেয়া ফিটনেস ফি, অগ্রিম আয়কর ও ট্যাক্স টোকেন আদায় না করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি ৪৬ লাখ ৩৯ হাজার ১২০ টাকা। একইভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রুট পারমিট ফি আদায় না করায় ২২ লাখ ৫২ হাজার ৪০০ টাকা এবং বিভিন্ন যানবাহনের ফিটনেস ফি, আয়কর ও ট্যাক্স টোকেন বাবদ আরও ৫ কোটি ৬২ লাখ ৬৪ হাজার ৯০০ টাকা রাজস্ব ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে ট্যাক্স টোকেন ও অগ্রিম আয়কর সময়মতো আদায় না করায় ৪১ লাখ ২০ হাজার ৫৬৫ টাকা এবং অনাদায়ী ফিটনেস ফি আদায় না করায় আরও ৪ লাখ ৮০ হাজার ৬৩ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

অডিট প্রতিবেদনে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, ৭ হাজার ৯৭৮টি ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিআরসি) ও ২ হাজার ৩৭০টি ডিজিটাল নম্বর প্লেট বিতরণ না করায় যানবাহন ও অপরাধী শনাক্তে জটিলতা তৈরি হচ্ছে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।

বিআরটিএ রংপুর সার্কেলের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রংপুরে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ১০ হাজার ৬৫৩টি হলেও বাস্তবে চলাচল করছে ৩০ হাজারের বেশি। ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনকারীর সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি হলেও লাইসেন্স দেয়া হয়েছে মাত্র ১৯ হাজার। লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ঘুষ নেয়া হয়- এমন অভিযোগও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে রংপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শফিকুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কার্যালয়ে কোনো ধরনের দুর্নীতি বা অনিয়ম নেই বলে দাবি করেন।

তবে অডিট আপত্তিতে উত্থাপিত কোটি কোটি টাকা অনিয়ম ও জরিমানার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

‘অপরাধ ও দুর্নীতি’ : আরও খবর

» ‘১৭০ টাকা হারানোয়’ কিশোরীকে পিটিয়ে হত্যা, চাচা আটক

» টাকার লোভে ৪ বছরের শিশুকে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যা

সম্প্রতি