alt

স্ট্রিমকার গেমিং অ্যাপ : জুয়া আড্ডা ও টাকা পাচার

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১

অনলাইনভিত্তিক ভিডিও গেমিং অ্যাপ স্ট্রিমকার। তরুণীদের লাইভ ভিডিওতে যুক্ত করে আমন্ত্রণ জানানো হয় আড্ডার জন্য। যারা লাইভে আড্ডা দিতে চান তাদের বিন্স ও জেমস নামে দুটি কয়েন কিনে ওই তরুণীদের উপহার দিতে হয়। এরপর তার সঙ্গে লাইভে আড্ডার সুযোগ মেলে। পাশাপাশি চলে অনলাইন জুয়া খেলা। এ চক্রে ফেলে একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ এ গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত এক বছরে এ অ্যাপ ব্যবহারের নামে আড্ডা ও জুয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এজেন্টের ব্যাংক হিসেবে ৩০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। যা দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে। পুলিশের ধারণা, এ রকম বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হচ্ছে।

গত মে মাসে স্টীমকার অ্যাপসের মাধ্যমে জুয়া খেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে জঙ্গি কার্যক্রমবিরোধী কার্যক্রম পর্যবেক্ষন ও অভিযানকারী পুলিশের সংস্থা এন্টি টেররিজম ইউনিট। ওই ঘটনায় করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি সাইবার পুলিশ বিভাগ আরও ২ এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে। সিআইডির ভাষ্য, তারা স্ট্রিমকার অ্যাপসে জুয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়া চক্রের ১৫টি ব্যাংক হিসেব পেয়েছে। ৯ জুন সিলেট থেকে গ্রেপ্তার হন স্ট্রিমকার অ্যাপের এজেন্ট নিধু রাম দাস (২৭) এবং ফরিদ উদ্দিন (৪০)।

এর আগে এন্টি টেররিজম ইউনিট গত মে মাসের ১৫ তারিখে গ্রেপ্তার করে জমির উদ্দিন, কামরুল হোসেন ওরফে রুবেল, মনজুরুল ইসলাম হৃদয় ও অনামিকা সরকার। সে সময় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। সিআইডির অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া দুজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাইবার ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কামরুল আহসান বলেন, চক্রটি দেশের যুব সমাজ ও প্রবাসীদের টার্গেট করে এই ব্যবসায় নামে। ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (VPN) ব্যবহার করে দেশ থেকে অ্যাপটিতে যুক্ত হতেন ব্যবহারকারীরা। এ অ্যাপে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। একটি ব্যবহারকারীর ও অন্যটি হোস্ট আইডি। হোস্ট আইডি ব্যবহার করে চক্রটি এ ধরনের অপরাধজনক কার্যক্রম পরিচালনা করত।

অতিরিক্ত জিআইজি কামরুল আহসান বলেন, লেনদেনের জন্য নিজস্ব মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করে চক্রটি। চক্রটির কাছ থেকে এই মুদ্রা টাকায় কিনতে হতো ব্যবহারকারীদের। প্রথমে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তরুণীদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ আড্ডা দেয়ার প্রলোভনে অ্যাপে ঢোকেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা। সেজন্য বিন্স নামে ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনতে হয় তাদের। সেই মুদ্রা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হন ব্যবহারকারীরা। অনলাইনে এ কার্যক্রম পরিচালনায় বিন্স ও জেমস নামের দুটি ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহার করে এই লাইভ ভিডিও ও চ্যাট আপে তরুণীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে হতো। এক লাখ বিন্স এক হাজার ২০ টাকায় এবং এক লাখ জেমস ৬০০ টাকায় কিনতে হতো ব্যবহারকারীদের। চক্রটি ব্যবহারকারীদের কাছে অনলাইনে এ মুদ্রা বিক্রি করত।

তিনি আরও বলেন, মুদ্রা কেনার টাকা চক্রটির সদস্যরা বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে নিতেন। পরে তারা মুদ্রা কেনার টাকার একটি অংশ অ্যাপের বিদেশি অ্যাডমিনদের কাছে পাঠাতো। যেহেতু অ্যাপটি বিদেশি সেহেতু অ্যাপটি পরিচালনা করত বিদেশি অ্যাডমিনরা আর গ্রেপ্তাররা বাংলাদেশি এজেন্ট হিসেবে কাজ করত। লক্ষাধিক বাংলাদেশি ব্যবহারকারী অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, নেটেলার, স্ক্রিল ও বিদেশি একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ডিজিটাল মুদ্রা কিনছে। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। কামরুল আহসান বলেন, স্ট্রিমকার পরিচালনায় জড়িত প্রত্যেকের একাধিক ব্যাংক একাউন্ট ও বিকাশ একাউন্ট রয়েছে। গ্রেফতার নিধু রাম দাসের ব্যাংক একাউন্ট ও বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে গত এক বছরে ১০কোটিরও বেশি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। অন্যজন ফরিদ উদ্দিনের ব্যাংক একাউন্ট ও বিকাশ একাউন্টে প্রায় ৪ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের সঙ্গে দেশীয় এজেন্ট হিসেবে আরও অনেকে জড়িত আছেন। সব এজেন্টদের মিলিয়ে তাদের বিকাশ ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে ৩০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে জানা গেছে।

সিআইডি জানায়, সারাদেশেই স্ট্রিমকার অ্যাপস ব্যবহারকারী আছে। উঠতি বয়সী তরুনরাই এ অ্যপসের ব্যবহারকারী বেশি। ইতোমধ্যে তারা ২০ থেকে ২২ জনের একটি গ্রুপ পেয়েছে। ধারণা করা হচেছ দেশের প্রতিটি জেলা ও থানা এমনকি গ্রামাঞ্চলেও এ চক্রের এজেন্ট আছে। এ বিষয় নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছে।

এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউর) এসপি মোহাম্মদ আসলাম খান জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি বিশেষ অ্যাপ স্ট্রিমকার। বাংলাদেশে এই অ্যাপ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কে মাধ্যমে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে মূলত চ্যাটিং করা হয়। তারা যখন ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে তখন স্ট্রিমকার অ্যপসের মতো শত শত অ্যাপসের সন্ধান পেয়েছে। ওইসব অ্যাপসে ব্যবহারকারীরা সাধারণত সুন্দরী মেয়ে ও সেলিব্রিটিদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার জন্য ব্যবহার করেন। বাংলাদেশে যারা এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন তারা প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। দেশের সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের বাইরে অর্থ পাচার হওয়ার তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী স্ট্রিমকার অ্যাপ ব্যবহারকারী ওই চক্র প্রায় শতকোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করেছে।

ছবি

‘অর্থ পাচার’: স্ত্রীসহ মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

অন্তঃকোন্দলে ‘২ লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি’ দিয়ে মামুনকে হত্যা: ডিবি

ছবি

‘অর্থ আত্মসাৎ’: জয়, পুতুল ও ববিসহ আটজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

নরসিংদীতে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

ছবি

১০ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা ‘আত্মসাৎ’: এস আলমসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

‘প্লট দুর্নীতি’: হাসিনা, রেহানা ও টিউলিপের মামলায় আরও ২২ জনের সাক্ষ্য

ছবি

কাজী নাবিলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, ৩২ কোটি টাকার সম্পদ জব্দের আদেশ

ছবি

বাণিজ্যের আড়ালে ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার---------

ছবি

চেতনানাশক খাইয়ে সিএনজি ছিনতাই, চক্রের ৯ সদস্য গ্রেপ্তার

ছবি

জিমেইল হ্যাক করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৭ লাখ টাকা উধাও

ছবি

বিনিয়োগের ফাঁদে ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ২

ছবি

ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা, ৫ মাস পর আকাশের মরদেহ উত্তোলন

ছবি

দুর্নীতির মামলায় এস কে সুরের বিচার শুরু

২৪৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডিসি অফিসের কর্মচারীর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা

আসামিপক্ষের আইনজীবীর প্রশ্ন ‘মানহানিকর’, ট্রাইব্যুনালের ‘সতর্কতা’

ছবি

মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৬

ছবি

আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক এমডিকে ৫ কোটি টাকা জরিমানা

ছবি

দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডসের দুই সাবেক কর্মকর্তা কারাগারে

জকিগঞ্জ সীমান্তে অনুপ্রবেশ: পতাকা বৈঠকে বিএসএফ’র দুঃখ প্রকাশ

ছবি

সিলেটে স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

সিলেটে আ.লীগ নেতা হত্যা মামলায় ছেলে আসাদ ৩ দিনের রিমান্ডে

ছবি

দেওয়ানগঞ্জ বালু মহলে অভিযান, একজনকে জরিমানা

ছবি

শাহজালালে পেটে ইয়াবা পাচার: গ্রেপ্তার পান্নু দুইদিনের রিমান্ডে

ছবি

বিরুদ্ধে ৪২ মামলা, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসায়’ অভিযোগ তার

ছবি

নরসিংদীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

মোহাম্মদপুরে বাসে তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পিয়ন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১শ’ কোটি টাকা পাচারের মামলা

ছবি

পার্বতীপুরে ভবানীপুর-মধ্যপাড়া রেলপথের ফিসপ্লেটসহ ৬ হাজার নাটবল্টু চুরি

সঞ্চয়পত্রের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ১

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ৪০ জন: অধিকারের প্রতিবেদন

ছবি

‘অর্থ পাচার’: রন ও রিকের বিরুদ্ধে দুই অভিযোগপত্র দুদকের

ছবি

এস আলমের আরও ৪৬৯ একর জমি জব্দের আদেশ

ছবি

খুলনায় জোড়া খুন: ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড

সোনারগাঁয়ে ডাকাতির মালামাল ভাগ নিয়ে দুই ডাকাত গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ৩

ছবি

অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেপ্তার

ছবি

পার্বতীপুরে লগি-বৈঠার নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

tab

স্ট্রিমকার গেমিং অ্যাপ : জুয়া আড্ডা ও টাকা পাচার

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১

অনলাইনভিত্তিক ভিডিও গেমিং অ্যাপ স্ট্রিমকার। তরুণীদের লাইভ ভিডিওতে যুক্ত করে আমন্ত্রণ জানানো হয় আড্ডার জন্য। যারা লাইভে আড্ডা দিতে চান তাদের বিন্স ও জেমস নামে দুটি কয়েন কিনে ওই তরুণীদের উপহার দিতে হয়। এরপর তার সঙ্গে লাইভে আড্ডার সুযোগ মেলে। পাশাপাশি চলে অনলাইন জুয়া খেলা। এ চক্রে ফেলে একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ এ গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত এক বছরে এ অ্যাপ ব্যবহারের নামে আড্ডা ও জুয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এজেন্টের ব্যাংক হিসেবে ৩০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। যা দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে। পুলিশের ধারণা, এ রকম বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হচ্ছে।

গত মে মাসে স্টীমকার অ্যাপসের মাধ্যমে জুয়া খেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে জঙ্গি কার্যক্রমবিরোধী কার্যক্রম পর্যবেক্ষন ও অভিযানকারী পুলিশের সংস্থা এন্টি টেররিজম ইউনিট। ওই ঘটনায় করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি সাইবার পুলিশ বিভাগ আরও ২ এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে। সিআইডির ভাষ্য, তারা স্ট্রিমকার অ্যাপসে জুয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়া চক্রের ১৫টি ব্যাংক হিসেব পেয়েছে। ৯ জুন সিলেট থেকে গ্রেপ্তার হন স্ট্রিমকার অ্যাপের এজেন্ট নিধু রাম দাস (২৭) এবং ফরিদ উদ্দিন (৪০)।

এর আগে এন্টি টেররিজম ইউনিট গত মে মাসের ১৫ তারিখে গ্রেপ্তার করে জমির উদ্দিন, কামরুল হোসেন ওরফে রুবেল, মনজুরুল ইসলাম হৃদয় ও অনামিকা সরকার। সে সময় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। সিআইডির অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া দুজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাইবার ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কামরুল আহসান বলেন, চক্রটি দেশের যুব সমাজ ও প্রবাসীদের টার্গেট করে এই ব্যবসায় নামে। ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (VPN) ব্যবহার করে দেশ থেকে অ্যাপটিতে যুক্ত হতেন ব্যবহারকারীরা। এ অ্যাপে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। একটি ব্যবহারকারীর ও অন্যটি হোস্ট আইডি। হোস্ট আইডি ব্যবহার করে চক্রটি এ ধরনের অপরাধজনক কার্যক্রম পরিচালনা করত।

অতিরিক্ত জিআইজি কামরুল আহসান বলেন, লেনদেনের জন্য নিজস্ব মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করে চক্রটি। চক্রটির কাছ থেকে এই মুদ্রা টাকায় কিনতে হতো ব্যবহারকারীদের। প্রথমে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তরুণীদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ আড্ডা দেয়ার প্রলোভনে অ্যাপে ঢোকেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা। সেজন্য বিন্স নামে ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনতে হয় তাদের। সেই মুদ্রা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হন ব্যবহারকারীরা। অনলাইনে এ কার্যক্রম পরিচালনায় বিন্স ও জেমস নামের দুটি ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহার করে এই লাইভ ভিডিও ও চ্যাট আপে তরুণীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে হতো। এক লাখ বিন্স এক হাজার ২০ টাকায় এবং এক লাখ জেমস ৬০০ টাকায় কিনতে হতো ব্যবহারকারীদের। চক্রটি ব্যবহারকারীদের কাছে অনলাইনে এ মুদ্রা বিক্রি করত।

তিনি আরও বলেন, মুদ্রা কেনার টাকা চক্রটির সদস্যরা বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে নিতেন। পরে তারা মুদ্রা কেনার টাকার একটি অংশ অ্যাপের বিদেশি অ্যাডমিনদের কাছে পাঠাতো। যেহেতু অ্যাপটি বিদেশি সেহেতু অ্যাপটি পরিচালনা করত বিদেশি অ্যাডমিনরা আর গ্রেপ্তাররা বাংলাদেশি এজেন্ট হিসেবে কাজ করত। লক্ষাধিক বাংলাদেশি ব্যবহারকারী অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, নেটেলার, স্ক্রিল ও বিদেশি একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ডিজিটাল মুদ্রা কিনছে। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। কামরুল আহসান বলেন, স্ট্রিমকার পরিচালনায় জড়িত প্রত্যেকের একাধিক ব্যাংক একাউন্ট ও বিকাশ একাউন্ট রয়েছে। গ্রেফতার নিধু রাম দাসের ব্যাংক একাউন্ট ও বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে গত এক বছরে ১০কোটিরও বেশি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। অন্যজন ফরিদ উদ্দিনের ব্যাংক একাউন্ট ও বিকাশ একাউন্টে প্রায় ৪ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের সঙ্গে দেশীয় এজেন্ট হিসেবে আরও অনেকে জড়িত আছেন। সব এজেন্টদের মিলিয়ে তাদের বিকাশ ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টে ৩০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে জানা গেছে।

সিআইডি জানায়, সারাদেশেই স্ট্রিমকার অ্যাপস ব্যবহারকারী আছে। উঠতি বয়সী তরুনরাই এ অ্যপসের ব্যবহারকারী বেশি। ইতোমধ্যে তারা ২০ থেকে ২২ জনের একটি গ্রুপ পেয়েছে। ধারণা করা হচেছ দেশের প্রতিটি জেলা ও থানা এমনকি গ্রামাঞ্চলেও এ চক্রের এজেন্ট আছে। এ বিষয় নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছে।

এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউর) এসপি মোহাম্মদ আসলাম খান জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি বিশেষ অ্যাপ স্ট্রিমকার। বাংলাদেশে এই অ্যাপ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কে মাধ্যমে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে মূলত চ্যাটিং করা হয়। তারা যখন ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে তখন স্ট্রিমকার অ্যপসের মতো শত শত অ্যাপসের সন্ধান পেয়েছে। ওইসব অ্যাপসে ব্যবহারকারীরা সাধারণত সুন্দরী মেয়ে ও সেলিব্রিটিদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার জন্য ব্যবহার করেন। বাংলাদেশে যারা এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন তারা প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। দেশের সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের বাইরে অর্থ পাচার হওয়ার তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী স্ট্রিমকার অ্যাপ ব্যবহারকারী ওই চক্র প্রায় শতকোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করেছে।

back to top