alt

‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’ মামুনুলে বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য ঝর্ণার

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ: : বুধবার, ২৪ নভেম্বর ২০২১

ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী ও কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। তিনি এই মামলার বাদীও। তিনি আদালতকে জানান, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন মামুনুল হক। এর আগেও একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করেছেন আসামি।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণা। পরে বাদীকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। এই সময় আদালতে এই মামলার একমাত্র আসামি মামুনুল হকও উপস্থিত ছিলেন। এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) রকিবুদ্দিন আহমেদ।

কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সকাল ৯টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আনা হয় মামুনুল হককে। এই সময় তার অনুসারীরা আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তাকে আদালতে তোলা হয়। আদালতে উপস্থিত হয়ে এই মামলার বাদী সাক্ষ্য দেন। তিনি আদালতে বলেন, তার পূর্বের স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর মামুনুল হকই তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তাকে ঢাকার কলাবাগানের একটি মেসে তোলেন মামুনুল হক। চলতি বছরের ৩ এপ্রিল ঘোরাঘুরির কথা বলে সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে নিয়ে যান। সেখানে তাকে ধর্ষণ করেন মামুনুল হক। এর আগেও একাধিকবার তাকে বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ করা হয়েছে।

সাক্ষ্যশেষে ১২টা ৪০ মিনিটে বাদীকে জেরা শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেসবাহ। জেরার সময় বাদী জানান, ঘোরাঘুরির কথা বলেই তাকে রয়্যাল রিসোর্টে নেন মামুনুল হক। রিসোর্টের গেইটে দারোয়ান ও রিসিপশনে কথা বলেছেন মামুনুল হকই। রিসোর্টের পঞ্চম তলার ৫০১ নম্বর কক্ষ ভাড়াও করেন তিনি। রিসিপশনে নিজে কোনো স্বাক্ষর দেননি বলে জানান ঝর্ণা।

আদালতে আসাপিক্ষের আইনজীবী জানান, বাদীর মেডিকেল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি মেডিকেল পরীক্ষা করাননি। কেন করাননি জানতে চাইলে বাদী বলেন, ওই সময় রমজান মাস চলছিল। তিনি রোজা রেখেছিলেন বলে মেডিকেল পরীক্ষা করাতে রাজি হননি। মেডিকেল পরীক্ষা পরে আর করানো হয়নি বলে সংবাদকে নিশ্চিত করেছেন আদালতের পিপি রকিবুদ্দিন আহমেদ।

জেরার শেষ দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. জয়নুল আবেদীন আদালতে বলেন, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ টাকা দেনমোহরে জান্নাত আরা ঝর্ণাকে শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করেন আসামি মামুনুল হক। দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে বিয়ে সম্পন্ন হয়। তবে মামলার ভুক্তভোগী নারী ঝর্ণা আদলতকে জানান, মামুনুলের সাথে তার বিয়ে হয়নি। কোনো স্ট্যাম্পে তিনি স্বাক্ষর করেননি।

এই বিষয়ে পরে জয়নুল আবেদীন সংবাদকে বলেন, শরীয়ত মোতাবেক আসামির সাথে জান্নাত আরা ঝর্ণা বিয়ে হয়েছে। তাদের কাছে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প রয়েছে। সময়মতো আদালতে তা দাখিল করবেন।

আদালতে জেরার শেষদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী তার মক্কেলকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে অস্থীতিশীল পরিস্থিতিতে তার মক্কেলকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তার মক্কেল সম্পূর্ণ নির্দোষ। বাদী আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রকিবুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় আদালত বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। পরে তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। আদালতে ৪১ বার বাদীকে দিয়ে বলাতে চেয়েছে যে, তাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই বাদী বলেছেন, তাদের বিয়ে হয়নি। বিয়ের প্রলোভনে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে আসামি মামুনুল হক।’

এক প্রশ্নের জবাবে পিপি বলেন, ‘আসামির দাবি, বিয়ে হয়েছে কিন্তু বাদী বারবারই বলেছেন, তাকে বিয়ে করেননি। স্ট্যাম্পের বিয়ে তো আইনত অবৈধ। এই ধরনের কোনো কাগজ আদালতে টিকবে না। মাত্র তো সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এই মামলায় ৪৩ জন সাক্ষী রয়েছেন।’

দুপুর দুইটার দিকে জেরা শেষে আদালত থেকে বের করা হয় আসামি মামুনুল হককে। এজলাসের সামনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মামুনুল হক। তিনি এক পুলিশ সদস্যের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘হ্যান্ডকাপ লাগাইছেন আবার টানতেছেন কেন?’। এই সময় আদালতপাড়ায় উপস্থিত ছিলেন মামুনুলের অনুসারী নেতা-কর্মীরা। তাদের দেখে হাত নাড়েন মামুনুল হক। কর্মীরাও পাল্টা সাড়া দিলে তাদের উদ্দেশ্যে মামুনুল বলেন, ‘অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবে না কেউ।’ এই সময় কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেয়। পরে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। কড়া নিরাপত্তায় তাকে প্রিজন ভ্যানে তুলে পুনরায় কাশিমপুর কারাগারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় পুলিশের একটি দল।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ছাড়াও বাদীর পক্ষে দাঁড়ান জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহসীন মিয়া ও সাবেক সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল। অন্যদিকে আসামিপক্ষে জয়নুল আবেদীন ছাড়াও অ্যাড. ওমর ফারুক নয়ন উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল বিকেলে সোনারগাঁ উপজেলার রয়্যাল রিসোর্টের একটি কক্ষে এক নারীসহ স্থানীয়দের হাতে অবরুদ্ধ হন মামুনুল হক। তখন ওই নারীকে নিজের বিবাহিত দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন মামুনুল। ঘটনা জানাজানি হলে সন্ধ্যায় হেফাজতের কর্মী-সমর্থকরা ওই রিসোর্ট ঘেরাও করেন। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত থাকা অবস্থায় মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যায় নেতা-কর্মীরা। পরে রাতভর সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন উত্তেজিত হেফাজত কর্মীরা। ওই ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। এই ঘটনার প্রায় মাসখানেক পর ৩০ এপ্রিল মামুনুলের বিরুদ্ধে তারই দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা ওই নারী ধর্ষণ মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন মাওলানা মামুনুল হক। তাদের আইনত বিয়ে হয়নি। এই মামলায় গত ৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র গঠন করা হয়। এর আগে ১৮ এপ্রিল ঢাকায় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ হেফাজত নেতা মামুনুল হককে গ্রেফতার করে।

ছবি

হাইকোর্টের সামনে খণ্ডিত লাশ: ‘প্রেমঘটিত সংকট’ বলছে ডিবি

ছবি

চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীকে ‘ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারার’ হুমকি

ছবি

বিচারকের ছেলে হত্যা মামলা: লিমন মিয়ার পাঁচ দিনের রিমান্ড, পুলিশ কমিশনারকে আদালতের নোটিশ

সখীপুরে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে অব্যাহতি

ছবি

মোহনপুরে শটগান, স্পিড বোর্টসহ ৫ ডাকাত আটক

ছবি

চট্টগ্রামে জালিয়াতির অভিযোগে ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কচুয়ায় গণ-ধর্ষণ মামলার আসামী গ্রেপ্তার

ছবি

শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ১৭ নভেম্বর

ছবি

‘অর্থ পাচার’: স্ত্রীসহ মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

অন্তঃকোন্দলে ‘২ লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি’ দিয়ে মামুনকে হত্যা: ডিবি

ছবি

‘অর্থ আত্মসাৎ’: জয়, পুতুল ও ববিসহ আটজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

নরসিংদীতে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

ছবি

১০ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা ‘আত্মসাৎ’: এস আলমসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

‘প্লট দুর্নীতি’: হাসিনা, রেহানা ও টিউলিপের মামলায় আরও ২২ জনের সাক্ষ্য

ছবি

কাজী নাবিলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, ৩২ কোটি টাকার সম্পদ জব্দের আদেশ

ছবি

বাণিজ্যের আড়ালে ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার---------

ছবি

চেতনানাশক খাইয়ে সিএনজি ছিনতাই, চক্রের ৯ সদস্য গ্রেপ্তার

ছবি

জিমেইল হ্যাক করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৭ লাখ টাকা উধাও

ছবি

বিনিয়োগের ফাঁদে ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ২

ছবি

ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা, ৫ মাস পর আকাশের মরদেহ উত্তোলন

ছবি

দুর্নীতির মামলায় এস কে সুরের বিচার শুরু

২৪৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডিসি অফিসের কর্মচারীর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা

আসামিপক্ষের আইনজীবীর প্রশ্ন ‘মানহানিকর’, ট্রাইব্যুনালের ‘সতর্কতা’

ছবি

মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৬

ছবি

আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক এমডিকে ৫ কোটি টাকা জরিমানা

ছবি

দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডসের দুই সাবেক কর্মকর্তা কারাগারে

জকিগঞ্জ সীমান্তে অনুপ্রবেশ: পতাকা বৈঠকে বিএসএফ’র দুঃখ প্রকাশ

ছবি

সিলেটে স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

সিলেটে আ.লীগ নেতা হত্যা মামলায় ছেলে আসাদ ৩ দিনের রিমান্ডে

ছবি

দেওয়ানগঞ্জ বালু মহলে অভিযান, একজনকে জরিমানা

ছবি

শাহজালালে পেটে ইয়াবা পাচার: গ্রেপ্তার পান্নু দুইদিনের রিমান্ডে

ছবি

বিরুদ্ধে ৪২ মামলা, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসায়’ অভিযোগ তার

ছবি

নরসিংদীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

মোহাম্মদপুরে বাসে তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পিয়ন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১শ’ কোটি টাকা পাচারের মামলা

ছবি

পার্বতীপুরে ভবানীপুর-মধ্যপাড়া রেলপথের ফিসপ্লেটসহ ৬ হাজার নাটবল্টু চুরি

tab

‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’ মামুনুলে বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য ঝর্ণার

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ:

বুধবার, ২৪ নভেম্বর ২০২১

ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী ও কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। তিনি এই মামলার বাদীও। তিনি আদালতকে জানান, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন মামুনুল হক। এর আগেও একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করেছেন আসামি।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণা। পরে বাদীকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। এই সময় আদালতে এই মামলার একমাত্র আসামি মামুনুল হকও উপস্থিত ছিলেন। এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) রকিবুদ্দিন আহমেদ।

কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সকাল ৯টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আনা হয় মামুনুল হককে। এই সময় তার অনুসারীরা আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তাকে আদালতে তোলা হয়। আদালতে উপস্থিত হয়ে এই মামলার বাদী সাক্ষ্য দেন। তিনি আদালতে বলেন, তার পূর্বের স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর মামুনুল হকই তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তাকে ঢাকার কলাবাগানের একটি মেসে তোলেন মামুনুল হক। চলতি বছরের ৩ এপ্রিল ঘোরাঘুরির কথা বলে সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে নিয়ে যান। সেখানে তাকে ধর্ষণ করেন মামুনুল হক। এর আগেও একাধিকবার তাকে বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ করা হয়েছে।

সাক্ষ্যশেষে ১২টা ৪০ মিনিটে বাদীকে জেরা শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেসবাহ। জেরার সময় বাদী জানান, ঘোরাঘুরির কথা বলেই তাকে রয়্যাল রিসোর্টে নেন মামুনুল হক। রিসোর্টের গেইটে দারোয়ান ও রিসিপশনে কথা বলেছেন মামুনুল হকই। রিসোর্টের পঞ্চম তলার ৫০১ নম্বর কক্ষ ভাড়াও করেন তিনি। রিসিপশনে নিজে কোনো স্বাক্ষর দেননি বলে জানান ঝর্ণা।

আদালতে আসাপিক্ষের আইনজীবী জানান, বাদীর মেডিকেল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি মেডিকেল পরীক্ষা করাননি। কেন করাননি জানতে চাইলে বাদী বলেন, ওই সময় রমজান মাস চলছিল। তিনি রোজা রেখেছিলেন বলে মেডিকেল পরীক্ষা করাতে রাজি হননি। মেডিকেল পরীক্ষা পরে আর করানো হয়নি বলে সংবাদকে নিশ্চিত করেছেন আদালতের পিপি রকিবুদ্দিন আহমেদ।

জেরার শেষ দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. জয়নুল আবেদীন আদালতে বলেন, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ টাকা দেনমোহরে জান্নাত আরা ঝর্ণাকে শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করেন আসামি মামুনুল হক। দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে বিয়ে সম্পন্ন হয়। তবে মামলার ভুক্তভোগী নারী ঝর্ণা আদলতকে জানান, মামুনুলের সাথে তার বিয়ে হয়নি। কোনো স্ট্যাম্পে তিনি স্বাক্ষর করেননি।

এই বিষয়ে পরে জয়নুল আবেদীন সংবাদকে বলেন, শরীয়ত মোতাবেক আসামির সাথে জান্নাত আরা ঝর্ণা বিয়ে হয়েছে। তাদের কাছে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প রয়েছে। সময়মতো আদালতে তা দাখিল করবেন।

আদালতে জেরার শেষদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী তার মক্কেলকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে অস্থীতিশীল পরিস্থিতিতে তার মক্কেলকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তার মক্কেল সম্পূর্ণ নির্দোষ। বাদী আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রকিবুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় আদালত বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। পরে তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। আদালতে ৪১ বার বাদীকে দিয়ে বলাতে চেয়েছে যে, তাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই বাদী বলেছেন, তাদের বিয়ে হয়নি। বিয়ের প্রলোভনে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে আসামি মামুনুল হক।’

এক প্রশ্নের জবাবে পিপি বলেন, ‘আসামির দাবি, বিয়ে হয়েছে কিন্তু বাদী বারবারই বলেছেন, তাকে বিয়ে করেননি। স্ট্যাম্পের বিয়ে তো আইনত অবৈধ। এই ধরনের কোনো কাগজ আদালতে টিকবে না। মাত্র তো সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এই মামলায় ৪৩ জন সাক্ষী রয়েছেন।’

দুপুর দুইটার দিকে জেরা শেষে আদালত থেকে বের করা হয় আসামি মামুনুল হককে। এজলাসের সামনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মামুনুল হক। তিনি এক পুলিশ সদস্যের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘হ্যান্ডকাপ লাগাইছেন আবার টানতেছেন কেন?’। এই সময় আদালতপাড়ায় উপস্থিত ছিলেন মামুনুলের অনুসারী নেতা-কর্মীরা। তাদের দেখে হাত নাড়েন মামুনুল হক। কর্মীরাও পাল্টা সাড়া দিলে তাদের উদ্দেশ্যে মামুনুল বলেন, ‘অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবে না কেউ।’ এই সময় কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেয়। পরে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। কড়া নিরাপত্তায় তাকে প্রিজন ভ্যানে তুলে পুনরায় কাশিমপুর কারাগারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় পুলিশের একটি দল।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ছাড়াও বাদীর পক্ষে দাঁড়ান জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহসীন মিয়া ও সাবেক সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল। অন্যদিকে আসামিপক্ষে জয়নুল আবেদীন ছাড়াও অ্যাড. ওমর ফারুক নয়ন উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল বিকেলে সোনারগাঁ উপজেলার রয়্যাল রিসোর্টের একটি কক্ষে এক নারীসহ স্থানীয়দের হাতে অবরুদ্ধ হন মামুনুল হক। তখন ওই নারীকে নিজের বিবাহিত দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন মামুনুল। ঘটনা জানাজানি হলে সন্ধ্যায় হেফাজতের কর্মী-সমর্থকরা ওই রিসোর্ট ঘেরাও করেন। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত থাকা অবস্থায় মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যায় নেতা-কর্মীরা। পরে রাতভর সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন উত্তেজিত হেফাজত কর্মীরা। ওই ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। এই ঘটনার প্রায় মাসখানেক পর ৩০ এপ্রিল মামুনুলের বিরুদ্ধে তারই দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা ওই নারী ধর্ষণ মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন মাওলানা মামুনুল হক। তাদের আইনত বিয়ে হয়নি। এই মামলায় গত ৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র গঠন করা হয়। এর আগে ১৮ এপ্রিল ঢাকায় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ হেফাজত নেতা মামুনুল হককে গ্রেফতার করে।

back to top