সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এনজিও কর্মীর একাংশ জড়িত
দেশে ৩ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জমি ক্রয়-অধিগ্রহণ-ক্ষতিপূরণে ৩৯০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে দাবি করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছে, দুর্নীতির এই টাকা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী, এনজিওকর্মী ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের পকেটে গেছে। টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (১১ মে) ‘বাংলাদেশে কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্প : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি ওয়েবিনারের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
টিআইবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বরিশালের ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। গবেষণার সময়কাল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল। গবেষণাটি করতে গিয়ে সরকারি দপ্তর, স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি ২৫৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ীর এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্রে ভূমি কেনাবেচায় দুর্নীতি হয়েছে ১১৯ কোটি টাকা। আর ১৬ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বরিশালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণে।
টিআইবি বলেছে, অন্য দেশগুলোতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যতটুকু জমি অধিগ্রহণ করা দরকার, বাংলাদেশে তার চেয়ে বেশি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় জমি ছিল ৮১ একর। কিন্তু অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৩১০ একর। বাঁশখালীতে দরকার ছিল ৩০৪ একর। জমি নেয়া হয়েছে ৬৬০ একর। মাতারবাড়ীতে জমির প্রয়োজন ছিল ৪১৮ একর। কেনা হয়েছে এক হাজার ৩৫৮ একর। এই জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়েই দুর্নীতি হয়েছে বেশি।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারত, চীন, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে ৩ টাকা থেকে সোয়া ৫ টাকা পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে তার চেয়ে বেশি দাম ধরা হয়েছে। বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৬ টাকা ৬১ পয়সা, যা অন্য দেশের তুলনায় এক টাকা ৪৬ পয়সা থেকে ৩ টাকা ১৫ পয়সা বেশি। বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৬ টাকা ৭৭ পয়সা, যা অন্য দেশের তুলনায় ৩ টাকা ৩১ পয়সা বেশি।
গবেষণাপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, প্যারিস চুক্তির আওতায় আইএনডিসিতে বাংলাদেশ শর্তহীনভাবে ৫ শতাংশ এবং তহবিল প্রাপ্তি সাপেক্ষে ১৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। প্রস্তাবিত ১৮টি বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর এক লাখ ১০ হাজার টন কার্বন নিঃসরণের আশঙ্কাসহ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৬৩ গুণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ২০০৮ সালে জ্বালানি খাত থেকে ৪১ মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরিত হয়েছে। ২০১৯ সালে তা বেড়ে ৮৯ মিলিয়ন টনে উন্নীত হয়েছে যা ২০০৮ সালের তুলনায় ১১৮ শতাংশ বেশি।
সংস্থাটির গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার জ্বালানি খাতের মহাপরিকল্পনা (পিএসএমপি) নিজেরা প্রস্তুত করতে পারেনি। এই মহাপরিকল্পনা তৈরিতে সরকার বারবার জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) অর্থ গ্রহণ করেছে। আর জাইকা একই প্রতিষ্ঠানকে (টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি-টেপকো) বারবার পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। ফলে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে জাপানের নিজস্ব ব্যবস্থা সম্প্রসারণের স্বার্থে কয়লা এবং এলএনজিকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশের জ্বালানি মহাপরিকল্পনা প্রস্তুত হয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে খুব একটা মনোযোগ নেই সরকারের। সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে।
সমস্যা থেকে উত্তরণে টিআইবির ৭ দফা সুপারিশ
এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে ৭ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি। সেগুলো হলো- জ্বালানি খাতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক উপায়ে প্রস্তাবিত ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি) প্রণয়ন করতে হবে এবং একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপসহ প্রস্তাবিত আইইপিএমপিতে কৌশলগতভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ বাতিল করতে হবে এবং ২০২২ সালের পর নতুন কোন প্রকার জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থায়ন না করার ঘোষণা দিতে হবে।
জ্বালানি প্রকল্প অনুমোদন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন, ঋণের শর্ত নির্ধারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত সকল নথি প্রকাশ করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের ক্ষতি রোধ এবং জীবন-জীবিকা ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় চলমান ঝুঁকিপূর্ণ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থগিত করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ কৌশলগত, সামাজিক ও পরিবেশগত সমীক্ষা সম্পাদন সাপেক্ষে অগ্রসর হতে হবে।
আইএনডিসির অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পরিকল্পনাধীন কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিতে সোলারসহ নাবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।
ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ও বিতরণ এবং ক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রমে শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে সংঘটিত দুর্নীতির তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনবিষয়ক টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মো. মাহফুজুল হক এবং রিসার্চ ফেলো মো. নেওয়াজুল মাওলা। সংস্থাটির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মনজুর-ই-আলম, পরিচালক (গবেষণা ও পলিসি) মোহাম্মদ রফিকুল হাসান ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন।
 
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                        ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                           	                                            সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এনজিও কর্মীর একাংশ জড়িত
বুধবার, ১১ মে ২০২২
দেশে ৩ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জমি ক্রয়-অধিগ্রহণ-ক্ষতিপূরণে ৩৯০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে দাবি করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছে, দুর্নীতির এই টাকা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী, এনজিওকর্মী ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের পকেটে গেছে। টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (১১ মে) ‘বাংলাদেশে কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্প : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি ওয়েবিনারের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
টিআইবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বরিশালের ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। গবেষণার সময়কাল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল। গবেষণাটি করতে গিয়ে সরকারি দপ্তর, স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি ২৫৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ীর এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্রে ভূমি কেনাবেচায় দুর্নীতি হয়েছে ১১৯ কোটি টাকা। আর ১৬ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বরিশালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণে।
টিআইবি বলেছে, অন্য দেশগুলোতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যতটুকু জমি অধিগ্রহণ করা দরকার, বাংলাদেশে তার চেয়ে বেশি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় জমি ছিল ৮১ একর। কিন্তু অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৩১০ একর। বাঁশখালীতে দরকার ছিল ৩০৪ একর। জমি নেয়া হয়েছে ৬৬০ একর। মাতারবাড়ীতে জমির প্রয়োজন ছিল ৪১৮ একর। কেনা হয়েছে এক হাজার ৩৫৮ একর। এই জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়েই দুর্নীতি হয়েছে বেশি।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারত, চীন, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে ৩ টাকা থেকে সোয়া ৫ টাকা পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে তার চেয়ে বেশি দাম ধরা হয়েছে। বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৬ টাকা ৬১ পয়সা, যা অন্য দেশের তুলনায় এক টাকা ৪৬ পয়সা থেকে ৩ টাকা ১৫ পয়সা বেশি। বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৬ টাকা ৭৭ পয়সা, যা অন্য দেশের তুলনায় ৩ টাকা ৩১ পয়সা বেশি।
গবেষণাপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, প্যারিস চুক্তির আওতায় আইএনডিসিতে বাংলাদেশ শর্তহীনভাবে ৫ শতাংশ এবং তহবিল প্রাপ্তি সাপেক্ষে ১৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। প্রস্তাবিত ১৮টি বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর এক লাখ ১০ হাজার টন কার্বন নিঃসরণের আশঙ্কাসহ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৬৩ গুণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ২০০৮ সালে জ্বালানি খাত থেকে ৪১ মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরিত হয়েছে। ২০১৯ সালে তা বেড়ে ৮৯ মিলিয়ন টনে উন্নীত হয়েছে যা ২০০৮ সালের তুলনায় ১১৮ শতাংশ বেশি।
সংস্থাটির গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার জ্বালানি খাতের মহাপরিকল্পনা (পিএসএমপি) নিজেরা প্রস্তুত করতে পারেনি। এই মহাপরিকল্পনা তৈরিতে সরকার বারবার জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) অর্থ গ্রহণ করেছে। আর জাইকা একই প্রতিষ্ঠানকে (টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি-টেপকো) বারবার পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। ফলে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে জাপানের নিজস্ব ব্যবস্থা সম্প্রসারণের স্বার্থে কয়লা এবং এলএনজিকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশের জ্বালানি মহাপরিকল্পনা প্রস্তুত হয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে খুব একটা মনোযোগ নেই সরকারের। সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে।
সমস্যা থেকে উত্তরণে টিআইবির ৭ দফা সুপারিশ
এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে ৭ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি। সেগুলো হলো- জ্বালানি খাতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক উপায়ে প্রস্তাবিত ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি) প্রণয়ন করতে হবে এবং একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপসহ প্রস্তাবিত আইইপিএমপিতে কৌশলগতভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ বাতিল করতে হবে এবং ২০২২ সালের পর নতুন কোন প্রকার জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থায়ন না করার ঘোষণা দিতে হবে।
জ্বালানি প্রকল্প অনুমোদন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন, ঋণের শর্ত নির্ধারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত সকল নথি প্রকাশ করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের ক্ষতি রোধ এবং জীবন-জীবিকা ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় চলমান ঝুঁকিপূর্ণ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থগিত করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ কৌশলগত, সামাজিক ও পরিবেশগত সমীক্ষা সম্পাদন সাপেক্ষে অগ্রসর হতে হবে।
আইএনডিসির অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পরিকল্পনাধীন কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিতে সোলারসহ নাবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।
ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ও বিতরণ এবং ক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রমে শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে সংঘটিত দুর্নীতির তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনবিষয়ক টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মো. মাহফুজুল হক এবং রিসার্চ ফেলো মো. নেওয়াজুল মাওলা। সংস্থাটির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মনজুর-ই-আলম, পরিচালক (গবেষণা ও পলিসি) মোহাম্মদ রফিকুল হাসান ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন।
