alt

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতি!

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা : সোমবার, ২০ জুন ২০২২

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাক্তার ওমর ফারুক মীরের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বাজার দরের চেয়ে উচ্চমূল্যে নিম্নমানের মালামাল ক্রয় ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালে মালামাল সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত বিলের কপি সংযুক্ত করে এই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী সাদেক হোসেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে গোপন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সহকারী পরিচালক কার্যাদেশ প্রদান করেছেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে সাদেক হোসেন জানান, সম্প্রতি হাসপাতালে ব্যক্তিগত কাজে গিয়ে অফিস কক্ষের সামনে সদ্য কেনা বর্জ্য ফেলার প্লাস্টিক বক্স দেখতে পান। বক্সগুলোর বিষয়ে কয়েকজন সাবেক সহকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে তিনি জানতে পারেন প্রতিটি বক্স কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৭৯০ টাকায়। সাধারণত এ ধরনের বক্স বাজারে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়।

সাদেক হোসেন আরও বলেন, সরকারি অর্থের অপচয় করে বাজারমূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মূল্যে এসব পণ্য কেন নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্মচারীরা বলেন, এডি স্যার জানেন। পরে আমি সহকারী পরিচালক ডাক্তার ওমর ফারুক মীরকে বেশি দামে পণ্য ক্রয় করা হচ্ছে জানালে তিনি আমাকে এ বিষয়ে নাক গলাতে নিষেধ করেন। মালামাল নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ফল ভালো হবে না বলেও জানান।

সাদেক হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আরও খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভূতভাবে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ কিংবা নোটিশ বোর্ডে না টানিয়েই ঢাকার এস.টি.এম. করপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে গত ১১ জুন কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। অফিসে যোগাযোগ করেও দরপত্র বিজ্ঞপ্তির কোন কপি পাওয়া যায়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে সহকারী পরিচালক এসব নিম্নমানের মালামাল উচ্চমূল্যে কিনেছেন, যা দাখিলকৃত বিলে প্রমাণিত। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুদকে আবেদন করেছি।

এই প্রতিবেদকের হাতে আসা হাসপাতালে এস.টি.এম করপোরেশনের দাখিলকৃত বিলে দেখা যায়, বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য কালো, হলুদ, সবুজ ও লাল রঙের প্লাস্টিকের বড় বিন কেনা হয়েছে ১৬০টি। যার প্রতিটির মূল্য ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭৯০ টাকা। কালো, হলুদ, সবুজ ও লাল রঙের ১২০টি ছোট বিনের প্রতিটির মূল্য ধরা হয়েছে ৭৪০ টাকা করে। ৪০১টি প্লাস্টিকের লাল সেফটি বক্সের প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ৩১৪ টাকা করে। ৩৫০টি নীল প্লাস্টিক গামলার প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ১৫৫ টাকা করে। ৩৬০টি নীল বালতির প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ২০৬ টাকা করে।

এছাড়া, পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণে কালো, হলুদ, সবুজ ও লাল রঙের বড় ব্যাগ কেনা হয়েছে ৪৭ হাজার ২০০টি। যার প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ৬৪.৯৫ টাকা। প্রতিটি ২৪.৯৫ টাকা দরে কালো, হলুদ, সবুজ ও লাল রঙের মাঝারি ব্যাগ কেনা হয়েছে ১২০০০ পিস, মৃতদেহ সংরক্ষণের ৯৬টি ব্যাগ কেনা হয়েছে প্রতিটি ১৩৭০ টাকা দরে।

এর পাশাপাশি নিরপত্তা সরঞ্জাম হিসেবে আরও কেনা হয়েছে ৪,৭৯০ টাকা দরে ৩টি নিডল কাটার, ৩৯৯০ টাকা দরে ২টি নিডল ডিস্ট্রয়ার, ২৪৯০ টাকা দরে ১০০টি এপ্রোন, ২৪৭ টাকা জোড়া দরে ২০০টি হ্যান্ডগ্লাবস, ৯৭ টাকা দরে ১০৬টি মাস্ক, ৭৪৫ টাকা দরে ৫০ জোড়া গামবুট, ১২২ টাকা পিস দরে ৬০টি গগলস এবং ২২৯৯০ টাকা দরে ১৪টি বর্জ্য পরিবহন ট্রলি।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান মালামাল ক্রয়ের দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র ঠিক না থাকায় এস.টি.এম করপোরেশন যে দর দেয় তাই অনুমোদন পায়। বিষয়টি সন্দেহজনক। পণ্যমূল্য অধিকাংশই বাজার দরের দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। কোন কোনটি কয়েকগুণ বেশি। তবে তা কৌশলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্ট্যান্ডার্ড রেটের মধ্যেই রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক ঠিকাদার জানান, জুন মাস সামনে রেখে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করতেই উচ্চমূল্যে নি¤œমানের মালামাল কেনা হয়েছে। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বা নোটিশ বোর্ডে টানানো হয়নি। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এস.টি.এম করপোরেশনকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড রেটে মালামাল কেনা হয়েছে বলা হলেও, পণ্যের কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত না থাকায় এখানে তা বিবেচ্য হওয়ার কথা নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে টেন্ডারে প্রতিযোগী না রেখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় সর্বোচ্চ মূল্য হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে।

এ বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের প্রধান সহকারী সনজিৎ কুমার দাসের কাছে জানতে চাইলে কোন পত্রিকায় কবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। সহকারী পরিচালক স্যার জানেন।

তবে, মালামাল ক্রয়ে কোন দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাক্তার ওমর ফারুক মীর। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনেই দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। মূল্যায়ন কমিটি নীতিমালা মেনে যাচাই-বাছাই করে কার্যাদেশ দিয়েছে। এখানে দুর্নীতি বা অনিয়মের সুযোগ নেই। জাতীয় পত্রিকায় দরপত্র আহ্বান ও নোটিশ বোর্ডে বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ সুবিধা না পেয়ে অসত্য অভিযোগ করছেন। তবে, অফিসিয়াল গোপনীয় বিষয় বলে তিনি পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি দেখাতে রাজি হননি।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে প্রকাশ্যে যুবককে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা,পুলিশ বলছে কিছু জানেনা

ছবি

দুর্নীতির মামলায় আসাদুজ্জামান নূরের জামিন নাকচ

ছবি

গোমতী সেতুর টোলের কার্যাদেশে ‘অনিয়ম’: হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক

ছবি

হিরো আলম হত্যাচেষ্টা মামলা: ম্যাক্স অভির জামিন আবেদন নাকচ

ছবি

ছাত্রীনিবাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে আটকে মারধরের ঘটনায় পরিচালক রাজিয়া বেগমের জামিন

ছবি

মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় মদসহ ১১ বাংলাদেশি আটক

ছবি

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে মাছের ঘের ব্যবসায়ীরা অতিষ্ট, প্রতিকার দাবী

সিলেটে ফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

ছবি

পীরগাছায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি,বেড়েছে চুরি

ছবি

যশোরে মাদক সিন্ডিকেটের হামলায় যুবক খুন, আহত ৬

ছবি

সাবেক অতিরিক্ত সচিব হারুনের ফ্ল্যাট ও জমি জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

ছবি

চাঁদাবাজির মামলায় ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার আট বছরের কারাদণ্ড

ছবি

পলাশে প্রবাসীর বাড়িতে চুরি মালামালসহ ২ চোর গ্রেপ্তার

ভাঙারি ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, শ্যালিকা গ্রেপ্তার

ছবি

মালিবাগে বোরকা পরে জুয়েলারি দোকান থেকে ‘৫০০ ভরি’ স্বর্ণালংকার চুরি

ছবি

ফরিদপুরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে যুবকের আমৃত্যু কারাদণ্ড

ছবি

ঝিনাইদহে ভাড়া নিয়ে তর্ক, পিতা-পুত্রকে কুপিয়ে জখম

ছবি

ফরিদপুরে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে যুবকের আমৃত্যু কারাদণ্ড

ছবি

রূপগঞ্জে কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগে ধর্ষক গ্রেপ্তার

ছবি

ঢাবি ছাত্রীকে ‘আটকে রেখে মারধর’

ছবি

পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার ১৪ বছর পর আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

রামপুরা হত্যাকাণ্ডে বি‌জি‌বি ও পুলি‌শের চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

নড়াইলে ভ্যানচালক হত্যায় গ্রেপ্তার ২

ছবি

পাথরঘাটায় স্ত্রী হত্যার দায়ে তিন জনের মৃত্যুদণ্ড

ছবি

গৌরনদীতে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি

ছবি

গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ঝালকাঠিতে মা ইলিশ ধরায় ১১ জেলের কারাদণ্ড

ছবি

যশোরে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যার দায়ে যুবকের মৃত্যুদণ্ড

ছবি

গুমের দুই মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ

নতুন মামলায় রাশেদ মেনন, দস্তগীর গাজী, পলক ও আতিকুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

ছবি

প্রায় ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এনবিআর সদস্য বেলাল হোসাইনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

পাউবো’র জমিতে অবৈধ স্থাপনা: সংবাদে প্রতিবেদন প্রকাশে উচ্ছেদ অভিযান

সোনারগাঁয়ে মেঘনা নদীতে পুলিশের সাথে চাঁদাবাজদের সংঘর্ষ পুলিশসহ আহত ৫, গ্রেপ্তার ২

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পদ্মায় ইলিশ নিধনের অপরাধে শিবচরে ৭ জেলেকে অর্থদন্ড

ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কোটি টাকার শাড়ি ও ৪৭ লাখ টাকার ফুচকা জব্দ

ছবি

ডিমলায় মোবাইল কোর্টের জব্দকৃত পাথর হরিলুটের অভিযোগ

tab

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতি!

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা

সোমবার, ২০ জুন ২০২২

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাক্তার ওমর ফারুক মীরের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বাজার দরের চেয়ে উচ্চমূল্যে নিম্নমানের মালামাল ক্রয় ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালে মালামাল সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত বিলের কপি সংযুক্ত করে এই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী সাদেক হোসেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে গোপন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সহকারী পরিচালক কার্যাদেশ প্রদান করেছেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে সাদেক হোসেন জানান, সম্প্রতি হাসপাতালে ব্যক্তিগত কাজে গিয়ে অফিস কক্ষের সামনে সদ্য কেনা বর্জ্য ফেলার প্লাস্টিক বক্স দেখতে পান। বক্সগুলোর বিষয়ে কয়েকজন সাবেক সহকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে তিনি জানতে পারেন প্রতিটি বক্স কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৭৯০ টাকায়। সাধারণত এ ধরনের বক্স বাজারে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়।

সাদেক হোসেন আরও বলেন, সরকারি অর্থের অপচয় করে বাজারমূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মূল্যে এসব পণ্য কেন নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্মচারীরা বলেন, এডি স্যার জানেন। পরে আমি সহকারী পরিচালক ডাক্তার ওমর ফারুক মীরকে বেশি দামে পণ্য ক্রয় করা হচ্ছে জানালে তিনি আমাকে এ বিষয়ে নাক গলাতে নিষেধ করেন। মালামাল নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ফল ভালো হবে না বলেও জানান।

সাদেক হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আরও খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভূতভাবে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ কিংবা নোটিশ বোর্ডে না টানিয়েই ঢাকার এস.টি.এম. করপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে গত ১১ জুন কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। অফিসে যোগাযোগ করেও দরপত্র বিজ্ঞপ্তির কোন কপি পাওয়া যায়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে সহকারী পরিচালক এসব নিম্নমানের মালামাল উচ্চমূল্যে কিনেছেন, যা দাখিলকৃত বিলে প্রমাণিত। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুদকে আবেদন করেছি।

এই প্রতিবেদকের হাতে আসা হাসপাতালে এস.টি.এম করপোরেশনের দাখিলকৃত বিলে দেখা যায়, বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য কালো, হলুদ, সবুজ ও লাল রঙের প্লাস্টিকের বড় বিন কেনা হয়েছে ১৬০টি। যার প্রতিটির মূল্য ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭৯০ টাকা। কালো, হলুদ, সবুজ ও লাল রঙের ১২০টি ছোট বিনের প্রতিটির মূল্য ধরা হয়েছে ৭৪০ টাকা করে। ৪০১টি প্লাস্টিকের লাল সেফটি বক্সের প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ৩১৪ টাকা করে। ৩৫০টি নীল প্লাস্টিক গামলার প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ১৫৫ টাকা করে। ৩৬০টি নীল বালতির প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ২০৬ টাকা করে।

এছাড়া, পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণে কালো, হলুদ, সবুজ ও লাল রঙের বড় ব্যাগ কেনা হয়েছে ৪৭ হাজার ২০০টি। যার প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ৬৪.৯৫ টাকা। প্রতিটি ২৪.৯৫ টাকা দরে কালো, হলুদ, সবুজ ও লাল রঙের মাঝারি ব্যাগ কেনা হয়েছে ১২০০০ পিস, মৃতদেহ সংরক্ষণের ৯৬টি ব্যাগ কেনা হয়েছে প্রতিটি ১৩৭০ টাকা দরে।

এর পাশাপাশি নিরপত্তা সরঞ্জাম হিসেবে আরও কেনা হয়েছে ৪,৭৯০ টাকা দরে ৩টি নিডল কাটার, ৩৯৯০ টাকা দরে ২টি নিডল ডিস্ট্রয়ার, ২৪৯০ টাকা দরে ১০০টি এপ্রোন, ২৪৭ টাকা জোড়া দরে ২০০টি হ্যান্ডগ্লাবস, ৯৭ টাকা দরে ১০৬টি মাস্ক, ৭৪৫ টাকা দরে ৫০ জোড়া গামবুট, ১২২ টাকা পিস দরে ৬০টি গগলস এবং ২২৯৯০ টাকা দরে ১৪টি বর্জ্য পরিবহন ট্রলি।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান মালামাল ক্রয়ের দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র ঠিক না থাকায় এস.টি.এম করপোরেশন যে দর দেয় তাই অনুমোদন পায়। বিষয়টি সন্দেহজনক। পণ্যমূল্য অধিকাংশই বাজার দরের দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। কোন কোনটি কয়েকগুণ বেশি। তবে তা কৌশলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্ট্যান্ডার্ড রেটের মধ্যেই রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক ঠিকাদার জানান, জুন মাস সামনে রেখে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করতেই উচ্চমূল্যে নি¤œমানের মালামাল কেনা হয়েছে। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বা নোটিশ বোর্ডে টানানো হয়নি। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এস.টি.এম করপোরেশনকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড রেটে মালামাল কেনা হয়েছে বলা হলেও, পণ্যের কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত না থাকায় এখানে তা বিবেচ্য হওয়ার কথা নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে টেন্ডারে প্রতিযোগী না রেখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় সর্বোচ্চ মূল্য হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে।

এ বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের প্রধান সহকারী সনজিৎ কুমার দাসের কাছে জানতে চাইলে কোন পত্রিকায় কবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। সহকারী পরিচালক স্যার জানেন।

তবে, মালামাল ক্রয়ে কোন দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাক্তার ওমর ফারুক মীর। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনেই দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। মূল্যায়ন কমিটি নীতিমালা মেনে যাচাই-বাছাই করে কার্যাদেশ দিয়েছে। এখানে দুর্নীতি বা অনিয়মের সুযোগ নেই। জাতীয় পত্রিকায় দরপত্র আহ্বান ও নোটিশ বোর্ডে বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ সুবিধা না পেয়ে অসত্য অভিযোগ করছেন। তবে, অফিসিয়াল গোপনীয় বিষয় বলে তিনি পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি দেখাতে রাজি হননি।

back to top