দেশের সব বন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ
দেশের তিনটি বিমানবন্দর ও ২২টি স্থলবন্দরসহ ইমিগ্রেশন চেক পোস্টে দেশি-বিদেশি যাত্রীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্যরা যাত্রীদের সঙ্গে এ হয়রানিমূলক আচরণ করেন। ইমিগ্রেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা জানান, যাত্রীদের সঙ্গে অপেশাদার আচরণ, কর্তব্যে গাফিলতি, যাত্রী হয়রানি করার অভিযোগে অর্ধশত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসব শাস্তির মধ্যে রয়েছে- চাকরি থেকে বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, পদাবনতি, আর্থিক দন্ড, তিরস্কার ও সতর্ক করা হয়।
২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে চলতি বছরের ২০ মার্চ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইমিগ্রেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, যাত্রী হয়রানি ও অপেশাদার আচরণ যেই করুক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে ক্লোজ ও পরে বিভাগীয় তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এছাড়া বিমানবন্দরসহ ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে, এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন। আর কেউ অপরাধ করলে তাদের আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
জানা যায়, ২০১১ সালের সার্ভার সিস্টেম আরও আধুনিক করলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যেকোন ধরনের অপরাধ উদ্ঘাটনে আরও সহায়ক হবে। পুরনো তথ্যপ্রযুক্তির কারণে অনেক স্থানে নিরাপত্তা মনিটর করা কষ্টকর হচ্ছে। ইমিগ্রেশের জনবলসহ প্রযুক্তি আরও বাড়ালে অপরাধ কমে যাবে। আর অপরাধীরা তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আইনের আওতায় আসবে।
ইমিগ্রেশন ও পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন বিদেশ থেকে যাত্রী আসে ও অনেক যাত্রী বিদেশে যান। এরমধ্যে শুধু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দিনে গড়ে অর্ধলাখ যাত্রী বিদেশ যায় ও বিদেশ থেকে আসে।
এইসব যাত্রী বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন করতে গেলে সেখানে অনেক ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্য যাত্রীদের সঙ্গে অপেশাদার আচরণ করে। আবার কেউ নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অপরাধের আশ্রয় নেয়। তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে অনেক সময় অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার (কন্ট্রাকে) সুযোগ করে দেয়। এসব অভিযোগের কারণে ইমিগ্রেশন পুলিশের ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তা থেকে কনস্টেবল, এসআই, এএসআইসহ অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ক্লোজ করে বিভাগীয় তদন্ত করা হচ্ছে।
ইমিগ্রেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, পুলিশ কর্মকর্তাদের ভালো আচরণ করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের সঙ্গে তারা যাতে ভালো আচরণের নির্দেশনা রয়েছে। এরপরও কেউ কেউ অপেশাদার আচরণ ও কর্তব্যে গাফিলতি করেন। আবার কেউ ইচ্ছা করে ছোটখাটো ঘটনা নিয়ে যাত্রীদের হয়রানি করেন। এসব ঘটনায় গত এক বছরে অর্ধশত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শাহজালাল বিমানবন্দর ছাড়াও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে দিনে গড়ে ১৪শ’ যাত্রী যাতায়াত করে। আর সিলেটে দিনে প্রায় ৭শ’ যাত্রী যাতায়াত করে। এই তিনটি বিমানবন্দরকে ঘিরে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সর্বক্ষণ পালাক্রমে মনিটরিং করছে। কোন অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এরপর অভিযোগ গুরুতর হলে বিভাগীয় তদন্ত করে অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তি দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের আমলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ তিনটি বিমানবন্দরে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে বর্তমানে যে সার্ভার প্রযুক্তি রয়েছে তা ২০১১ সালের। এই প্রযুক্তি ও নতুন নতুন আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করলে পুরো সিস্টেম পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, তিনটি বিমানবন্দর ছাড়াও ২টি সমুদ্রবন্দর, ২২টি স্থলবন্দর রয়েছে। ওইসব স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী হয়রানি ঠেকাতে কড়া নজরদারি চলছে। এরপরও অনেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তবে প্রমাণের অভাবে অনেকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না। মানবপাচার, আদম বেপারীদের প্রলোভনে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই কিছু বাড়তি সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেন। যার কোন প্রমাণ পাওয়া কষ্টকর। তবে পেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আবার অনেকে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে টাকা নিয়ে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে মানবপাচার করার চেষ্টা করে। এসব বিষয় এখন কড়াকড়ি করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপের কারণে আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। মানবপাচার ঠেকাতে যা করার দরকার সবই করা হচ্ছে।
এ সম্পর্কে ইমিগ্রেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, ইমিগ্রেশন পুলিশের কেউ অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। কোন সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যা অন্য কোন সংস্থায় নেই। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, পদাবনতি, আর্থিক দন্ড, ইনক্রিমেন্ট কমিয়ে দেয়া, তিরস্কার করা, সতর্ক করা হয়। অপরাধের গুরুত্ব বুঝে সাময়িক সাসপেন্ডসহ পুলিশি আইনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
দেশের সব বন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ
বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
দেশের তিনটি বিমানবন্দর ও ২২টি স্থলবন্দরসহ ইমিগ্রেশন চেক পোস্টে দেশি-বিদেশি যাত্রীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্যরা যাত্রীদের সঙ্গে এ হয়রানিমূলক আচরণ করেন। ইমিগ্রেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা জানান, যাত্রীদের সঙ্গে অপেশাদার আচরণ, কর্তব্যে গাফিলতি, যাত্রী হয়রানি করার অভিযোগে অর্ধশত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসব শাস্তির মধ্যে রয়েছে- চাকরি থেকে বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, পদাবনতি, আর্থিক দন্ড, তিরস্কার ও সতর্ক করা হয়।
২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে চলতি বছরের ২০ মার্চ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইমিগ্রেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, যাত্রী হয়রানি ও অপেশাদার আচরণ যেই করুক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে ক্লোজ ও পরে বিভাগীয় তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এছাড়া বিমানবন্দরসহ ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে, এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন। আর কেউ অপরাধ করলে তাদের আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
জানা যায়, ২০১১ সালের সার্ভার সিস্টেম আরও আধুনিক করলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যেকোন ধরনের অপরাধ উদ্ঘাটনে আরও সহায়ক হবে। পুরনো তথ্যপ্রযুক্তির কারণে অনেক স্থানে নিরাপত্তা মনিটর করা কষ্টকর হচ্ছে। ইমিগ্রেশের জনবলসহ প্রযুক্তি আরও বাড়ালে অপরাধ কমে যাবে। আর অপরাধীরা তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আইনের আওতায় আসবে।
ইমিগ্রেশন ও পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন বিদেশ থেকে যাত্রী আসে ও অনেক যাত্রী বিদেশে যান। এরমধ্যে শুধু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দিনে গড়ে অর্ধলাখ যাত্রী বিদেশ যায় ও বিদেশ থেকে আসে।
এইসব যাত্রী বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন করতে গেলে সেখানে অনেক ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্য যাত্রীদের সঙ্গে অপেশাদার আচরণ করে। আবার কেউ নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অপরাধের আশ্রয় নেয়। তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে অনেক সময় অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার (কন্ট্রাকে) সুযোগ করে দেয়। এসব অভিযোগের কারণে ইমিগ্রেশন পুলিশের ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তা থেকে কনস্টেবল, এসআই, এএসআইসহ অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ক্লোজ করে বিভাগীয় তদন্ত করা হচ্ছে।
ইমিগ্রেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, পুলিশ কর্মকর্তাদের ভালো আচরণ করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের সঙ্গে তারা যাতে ভালো আচরণের নির্দেশনা রয়েছে। এরপরও কেউ কেউ অপেশাদার আচরণ ও কর্তব্যে গাফিলতি করেন। আবার কেউ ইচ্ছা করে ছোটখাটো ঘটনা নিয়ে যাত্রীদের হয়রানি করেন। এসব ঘটনায় গত এক বছরে অর্ধশত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শাহজালাল বিমানবন্দর ছাড়াও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে দিনে গড়ে ১৪শ’ যাত্রী যাতায়াত করে। আর সিলেটে দিনে প্রায় ৭শ’ যাত্রী যাতায়াত করে। এই তিনটি বিমানবন্দরকে ঘিরে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সর্বক্ষণ পালাক্রমে মনিটরিং করছে। কোন অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এরপর অভিযোগ গুরুতর হলে বিভাগীয় তদন্ত করে অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তি দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের আমলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ তিনটি বিমানবন্দরে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে বর্তমানে যে সার্ভার প্রযুক্তি রয়েছে তা ২০১১ সালের। এই প্রযুক্তি ও নতুন নতুন আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করলে পুরো সিস্টেম পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, তিনটি বিমানবন্দর ছাড়াও ২টি সমুদ্রবন্দর, ২২টি স্থলবন্দর রয়েছে। ওইসব স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী হয়রানি ঠেকাতে কড়া নজরদারি চলছে। এরপরও অনেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তবে প্রমাণের অভাবে অনেকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না। মানবপাচার, আদম বেপারীদের প্রলোভনে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই কিছু বাড়তি সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেন। যার কোন প্রমাণ পাওয়া কষ্টকর। তবে পেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আবার অনেকে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে টাকা নিয়ে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে মানবপাচার করার চেষ্টা করে। এসব বিষয় এখন কড়াকড়ি করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপের কারণে আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। মানবপাচার ঠেকাতে যা করার দরকার সবই করা হচ্ছে।
এ সম্পর্কে ইমিগ্রেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, ইমিগ্রেশন পুলিশের কেউ অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। কোন সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যা অন্য কোন সংস্থায় নেই। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, পদাবনতি, আর্থিক দন্ড, ইনক্রিমেন্ট কমিয়ে দেয়া, তিরস্কার করা, সতর্ক করা হয়। অপরাধের গুরুত্ব বুঝে সাময়িক সাসপেন্ডসহ পুলিশি আইনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।