alt

সীমান্তে স্বর্ণ চোরাচালান, অধরা গডফাদাররা

জেলা বার্তা পরিবেশেক, কক্সবাজার : শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩

কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর ও সীমান্ত পার করে দিলেই স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তি পেয়ে যায় মোটা অঙ্কের টাকা। আকারে ছোট হওয়ায় লুকানো সহজ এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়ায় থামানো যাচ্ছে না এর চোরাচালান। অল্প সময়ে বেশি লাভের আশায় অনেকে জড়িয়ে পড়ছে চোরাচালান চক্রের সঙ্গে। তবে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দাবি, স্বর্ণ চোরাচালানকারীদের চিহ্নিত করে সীমান্ত এলাকায় বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ফলে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায়ই স্বর্ণসহ ধরা পড়ছে এই চক্রের সদস্যরা।

সীমন্ত এলাকার একাধিক পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে স্বর্ণ চোরাচালান। এই চোরাচালান কারবারে জড়িত রয়েছে অন্তত ২২ জনের একটি সিন্ডিকেট। বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্বর্ণ চোরাচালান জব্দ ও পাচারকারিদের আটকের খবর জানা গেলেও আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে রাঘব বোয়ালেরা। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আড়ালে এই সিন্ডিকেটটি প্রতিনিয়িত স্বর্ণ চোরাচালান ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মায়ানমার, টেকনাফ, চট্টগ্রাম ও ভারতভিত্তিক একাধিক সিন্ডিকেট স্বর্ণ চোরাচালানে যুক্ত। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের মাঝিপাড়া, সাবরাং নোয়াপাড়ার ঘাট, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, চৌধুরীপাড়া, টেকনাফ-মায়ানমার ট্রানজিট ঘাট, নাইট্যংপাড়া, টেকনাফ স্থলবন্দর, জাদিমোরা, আলীখালী, চৌধুরীপাড়া ও নীলা এসকে আনোয়ার প্রজেক্টসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ঢুকছে স্বর্ণের চোরাচালান।

তাছাড়া উখিয়ার কয়েকটি পয়েন্ট দিয়েও স্বর্ণের চালান আসছে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। বর্ডার গার্ড, কোস্টগার্ড ও কাস্টম গোয়েন্দারা মাঝেমধ্যে চোরাচালান কারবারিদের স্বর্ণ জব্দ করে থাকে। মামলা হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে, কিন্তু স্বর্ণ চোরাচালানের সিন্ডিকেটের মূল হোতারা অধরাই থেকে যাচ্ছে যুগ যুগ ধরে।

জানা যায়, ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তদন্তকারী অফিসারের টেবিলের তলায় পড়ে থাকে অজ্ঞাত মামলার কাগজগুলো। এমনকি মামলা থেকে বাদ পড়ছে প্রকৃত কারবারি ও সিন্ডিকেট প্রধান। তারপরও কারা চালান পাঠাচ্ছে আবার দেশে এই চালানের মূল রিসিভারকে তার কোন আদৌ হদিস মেলাতে পারছে না গোয়েন্দারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের এক ব্যবসায়ী বলেন, জনৈক জামাল মাঝি নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তিদের জন্য মায়ানমার মংডুর শহর থেকে বন্দর দিয়ে কিছু বৈধ পণ্যের আড়ালে অবৈধ মালামাল এনে থাকেন। আচার ও কফির প্যাকেটের ভেতরে করে এই অবৈধ স্বর্ণ আনেন বলে জানান। তিনি আরও বলেন, বন্দরের অনিয়মের বিষয় নিয়ে মুখ খুললেই বাণিজ্য বন্ধ করে দিবে। এসব তথ্য গোপন থাকায় দিন দিন স্বর্ণ চোরাচালান বাড়ছে।

বেশিরভাগ সময় দেখা যায় প্রশাসন মালিকবিহীন স্বর্ণ জব্দ করে থাকে। এতে মূল অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়। এতে সুযোগ পাচ্ছে চোরাকারবারিরা।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কথিত সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী, জুয়েলারি, সিআইপিসহ কাউন্সিলর ও বন্দর কর্তৃপক্ষের নাম। এছাড়া টেকনাফ ও মায়ানমারকেন্দ্রিক স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

সূত্র জানায়, স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্তরা হলেন ফারুক, এনামুল হাসান, আবদুল আমিন, জিয়াবুল, আয়াস, সবুজ ধর, মংমংসে, মংডুর জামাল মাঝি, অমল দাশ, মিজান প্রকাশ কোস্টগার্ড মিজান, নাফ শিল্পালয়ের মালিক সজল, স্বর্ণকার জ এ থুইন, মোহাম্মদ সালাম, সুজিত, নির্মল ধর, বিমল ধর, জাহাঙ্গীর, স্বর্ণকার মনথকিং, মায়ানমারের হারিপাড়ার মোস্তাক, কক্সবাজার উকিলপাড়ার সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী আইয়ুব, ইয়াঙ্গুনের ফয়েজ ও বার্মায়া সায়িদ করিম। এছাড়া তাদের নাম স্বর্ণ চোরাচালানে সক্রিয় রয়েছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জিয়াবুল ও আয়াসের সহযোগী আপন ভাগিনা, কেফায়েত ও কামরুল বন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তারাই নিয়ন্ত্রণ করে স্বর্ণ চালানগুলো। জিয়াবুল ও আয়াস টেকনাফের বাসিন্দা হলেও চট্টগ্রাম শহরের চকবাজারে বসবাস করেন। চকবাজার হচ্ছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের আস্তানা। মায়ানমার থেকে আসা স্বর্ণগুলো পাচার হয়ে থাকে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ বিভিন্ন দেশে। নামে সিআইপি ও সিআ্যন্টএফ ব্যবসায়ী মাত্র। বন্দর ব্যবসায়ীদের মধ্যে এমন ব্যবসায়ী আছে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীদের এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট লাইসেন্সটি বাৎসরিকভাবে ভাড়া দেয়। সে সুবাদে সিআ্যন্টএফ ব্যবসাকে ঢাল স্বরূপ ব্যবহার করে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে করে যাচ্ছে চোরাচালান ব্যবসা। এসব অবৈধ কাজে সহযোগিতা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষের কয়েকজন সদস্য ও রোহিঙ্গা মাঝি।

একটি সূত্র বলছে, স্থল সীমান্ত দিয়ে আনা কিছু চালান আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ধরা পড়লেও অধিকাংশ চালান পাচার হয়ে যাচ্ছে। বন্দর দিয়ে বের হচ্ছে ভিআইপি, সিআইপি মারফতে। মূল হোতারা খুব কৌশলে কাজটি সম্পন্ন করে। বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোক বন্দরে ঢুকতে চাইলেও অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যায় না। অনুমতির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্দরের গেটে দাঁড় করিয়ে রাখে। বর্তমানে বন্দরটি নিয়ন্ত্রণ করছে রোহিঙ্গা মাঝি ও লেবাররা।

বিভিন্ন সময় অনেককে আটক করে আইনের আওতায় এনে থাকে শুল্ক গোয়েন্দারা। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, চাহিদা বেশি থাকায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে স্বর্ণ আনা হচ্ছে। অবৈধভাবে স্বর্ণের টাকা দিয়ে অস্ত্র ও মাদক কেনা হচ্ছে বলে জানা যায়।

টেকনাফের স্বর্ণ চোরা কারবারিদের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, কারবারিদের নজরদারি করে রেখেছি। সেই সঙ্গে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে আমাদের বিজিবি। স্বর্ণ কারবারিদের ধরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো এবং প্রশাসনিকভাবে স্থলবন্দরে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে।

সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ চোরাচালান জব্দও করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ১২ জানুয়ারি শাহ পরীর দ্বীপ নাফন দীর পাড়ে কেওড়া বাগানে অভিযান চালিয়ে ২০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে টেকনাফ ২ বিজিবি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর স্থলবন্দরে মায়ানমার থেকে আসা একটি কাঠের বোটে কোস্টগার্ড অভিযান পরিচালনা করে ২ হাজার ১৫৯. ৪৩ গ্রামের ১৩টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে।

স্বর্ণ চোরাচালানের বিষয়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে স্থলবন্দর দিয়ে বৈধ পণ্যের আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী। আমরা তাদের নজরদারিতে রেখেছি। তবে স্থলবন্দরে চোরাচালান বন্ধ করতে আরও বেশি গোয়েন্দা নজরদারি প্রয়োজন বলে সংস্থাগুলো জানায়।

ছবি

শাহজালালে পেটে ইয়াবা পাচার: গ্রেপ্তার পান্নু দুইদিনের রিমান্ডে

ছবি

বিরুদ্ধে ৪২ মামলা, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসায়’ অভিযোগ তার

ছবি

নরসিংদীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

মোহাম্মদপুরে বাসে তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পিয়ন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১শ’ কোটি টাকা পাচারের মামলা

ছবি

পার্বতীপুরে ভবানীপুর-মধ্যপাড়া রেলপথের ফিসপ্লেটসহ ৬ হাজার নাটবল্টু চুরি

সঞ্চয়পত্রের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ১

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ৪০ জন: অধিকারের প্রতিবেদন

ছবি

‘অর্থ পাচার’: রন ও রিকের বিরুদ্ধে দুই অভিযোগপত্র দুদকের

ছবি

এস আলমের আরও ৪৬৯ একর জমি জব্দের আদেশ

ছবি

খুলনায় জোড়া খুন: ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড

সোনারগাঁয়ে ডাকাতির মালামাল ভাগ নিয়ে দুই ডাকাত গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ৩

ছবি

অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেপ্তার

ছবি

পার্বতীপুরে লগি-বৈঠার নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

ছবি

সিরাজদিখানে র‌্যাব পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় আমামি গ্রেপ্তার

ছবি

বাঘায় চর দখলের সংঘর্ষে গুলিতে ২ জন নিহত

ছবি

সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদক মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে

ছবি

জেনেভা ক্যাম্পে বোমা বিস্ফোরণে যুবক নিহতের মামলায় ৪ জন রিমান্ডে

ছবি

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি: ৮ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিআইডির মানিলন্ডারিং আইনে মামলা

ছবি

সোনাইমুড়ীতে মাদারাসায় ঘুমন্ত ছাত্রকে জবাই করে হত্যা, হত্যাকারী আটক

ছবি

শেওড়াপাড়ায় কিশোরী নির্যাতন: গৃহকর্ত্রী পারভীন চৌধুরীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড

বালিশ চাপা দিয়ে স্ত্রীকে হত্যা, ফরিদপুরের সৌরভকে গোপালগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করলো র‍্যাব

ছবি

নির্বাচন কমিশনের সামনে ‘ককটেল বিস্ফোরণ’, আটক ১

ছবি

পাঁচ মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের জামিন নিয়ে হাইকোর্টের রুল

ছবি

হাসিনার বাণিজ্য উপদেষ্টা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ

ছবি

৬ ভরি স্বর্ণ লুট করতে শরীয়তপুরের ওই নারীকে হত্যা করা হয়: র‌্যাব

ছবি

রাউজানে ১৮ দিনের মাথায় আরও এক যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা

ছবি

বদলগাছীতে প্রবাসীর বাড়িতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলা; আহত ২

ছবি

জামালপুরে ২২ হাজার পিস ইয়াবাসহ স্বামী-স্ত্রী গ্রেপ্তার

ছবি

সালিশ বৈঠকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা

ছবি

মোহাম্মদপুরে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার ৩১, সারাদেশে ১৭২৬

কদমতলীতে ছুরিকাঘাতে আহত পোশাককর্মীর মৃত্যু

ছবি

কুমিল্লায় বিচারের নামে নারী নির্যাতন ইউপি মেম্বারের, ভিডিও ভাইরা

ছবি

যশোরে গুলি ছুড়ে পালানোর সময় দুই সন্ত্রাসীকে আটক করল জনতা

ছবি

মেয়েকে হত্যার দায়ে পিতার কারাদণ্ড

ছবি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতের কন্যাকে দলবেঁধে ধর্ষণ: তিন আসামির কারাদণ্ড

tab

সীমান্তে স্বর্ণ চোরাচালান, অধরা গডফাদাররা

জেলা বার্তা পরিবেশেক, কক্সবাজার

শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩

কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর ও সীমান্ত পার করে দিলেই স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তি পেয়ে যায় মোটা অঙ্কের টাকা। আকারে ছোট হওয়ায় লুকানো সহজ এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়ায় থামানো যাচ্ছে না এর চোরাচালান। অল্প সময়ে বেশি লাভের আশায় অনেকে জড়িয়ে পড়ছে চোরাচালান চক্রের সঙ্গে। তবে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দাবি, স্বর্ণ চোরাচালানকারীদের চিহ্নিত করে সীমান্ত এলাকায় বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ফলে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায়ই স্বর্ণসহ ধরা পড়ছে এই চক্রের সদস্যরা।

সীমন্ত এলাকার একাধিক পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে স্বর্ণ চোরাচালান। এই চোরাচালান কারবারে জড়িত রয়েছে অন্তত ২২ জনের একটি সিন্ডিকেট। বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্বর্ণ চোরাচালান জব্দ ও পাচারকারিদের আটকের খবর জানা গেলেও আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে রাঘব বোয়ালেরা। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আড়ালে এই সিন্ডিকেটটি প্রতিনিয়িত স্বর্ণ চোরাচালান ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মায়ানমার, টেকনাফ, চট্টগ্রাম ও ভারতভিত্তিক একাধিক সিন্ডিকেট স্বর্ণ চোরাচালানে যুক্ত। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের মাঝিপাড়া, সাবরাং নোয়াপাড়ার ঘাট, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, চৌধুরীপাড়া, টেকনাফ-মায়ানমার ট্রানজিট ঘাট, নাইট্যংপাড়া, টেকনাফ স্থলবন্দর, জাদিমোরা, আলীখালী, চৌধুরীপাড়া ও নীলা এসকে আনোয়ার প্রজেক্টসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ঢুকছে স্বর্ণের চোরাচালান।

তাছাড়া উখিয়ার কয়েকটি পয়েন্ট দিয়েও স্বর্ণের চালান আসছে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। বর্ডার গার্ড, কোস্টগার্ড ও কাস্টম গোয়েন্দারা মাঝেমধ্যে চোরাচালান কারবারিদের স্বর্ণ জব্দ করে থাকে। মামলা হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে, কিন্তু স্বর্ণ চোরাচালানের সিন্ডিকেটের মূল হোতারা অধরাই থেকে যাচ্ছে যুগ যুগ ধরে।

জানা যায়, ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তদন্তকারী অফিসারের টেবিলের তলায় পড়ে থাকে অজ্ঞাত মামলার কাগজগুলো। এমনকি মামলা থেকে বাদ পড়ছে প্রকৃত কারবারি ও সিন্ডিকেট প্রধান। তারপরও কারা চালান পাঠাচ্ছে আবার দেশে এই চালানের মূল রিসিভারকে তার কোন আদৌ হদিস মেলাতে পারছে না গোয়েন্দারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের এক ব্যবসায়ী বলেন, জনৈক জামাল মাঝি নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তিদের জন্য মায়ানমার মংডুর শহর থেকে বন্দর দিয়ে কিছু বৈধ পণ্যের আড়ালে অবৈধ মালামাল এনে থাকেন। আচার ও কফির প্যাকেটের ভেতরে করে এই অবৈধ স্বর্ণ আনেন বলে জানান। তিনি আরও বলেন, বন্দরের অনিয়মের বিষয় নিয়ে মুখ খুললেই বাণিজ্য বন্ধ করে দিবে। এসব তথ্য গোপন থাকায় দিন দিন স্বর্ণ চোরাচালান বাড়ছে।

বেশিরভাগ সময় দেখা যায় প্রশাসন মালিকবিহীন স্বর্ণ জব্দ করে থাকে। এতে মূল অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়। এতে সুযোগ পাচ্ছে চোরাকারবারিরা।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কথিত সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী, জুয়েলারি, সিআইপিসহ কাউন্সিলর ও বন্দর কর্তৃপক্ষের নাম। এছাড়া টেকনাফ ও মায়ানমারকেন্দ্রিক স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

সূত্র জানায়, স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্তরা হলেন ফারুক, এনামুল হাসান, আবদুল আমিন, জিয়াবুল, আয়াস, সবুজ ধর, মংমংসে, মংডুর জামাল মাঝি, অমল দাশ, মিজান প্রকাশ কোস্টগার্ড মিজান, নাফ শিল্পালয়ের মালিক সজল, স্বর্ণকার জ এ থুইন, মোহাম্মদ সালাম, সুজিত, নির্মল ধর, বিমল ধর, জাহাঙ্গীর, স্বর্ণকার মনথকিং, মায়ানমারের হারিপাড়ার মোস্তাক, কক্সবাজার উকিলপাড়ার সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী আইয়ুব, ইয়াঙ্গুনের ফয়েজ ও বার্মায়া সায়িদ করিম। এছাড়া তাদের নাম স্বর্ণ চোরাচালানে সক্রিয় রয়েছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জিয়াবুল ও আয়াসের সহযোগী আপন ভাগিনা, কেফায়েত ও কামরুল বন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তারাই নিয়ন্ত্রণ করে স্বর্ণ চালানগুলো। জিয়াবুল ও আয়াস টেকনাফের বাসিন্দা হলেও চট্টগ্রাম শহরের চকবাজারে বসবাস করেন। চকবাজার হচ্ছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের আস্তানা। মায়ানমার থেকে আসা স্বর্ণগুলো পাচার হয়ে থাকে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ বিভিন্ন দেশে। নামে সিআইপি ও সিআ্যন্টএফ ব্যবসায়ী মাত্র। বন্দর ব্যবসায়ীদের মধ্যে এমন ব্যবসায়ী আছে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীদের এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট লাইসেন্সটি বাৎসরিকভাবে ভাড়া দেয়। সে সুবাদে সিআ্যন্টএফ ব্যবসাকে ঢাল স্বরূপ ব্যবহার করে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে করে যাচ্ছে চোরাচালান ব্যবসা। এসব অবৈধ কাজে সহযোগিতা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষের কয়েকজন সদস্য ও রোহিঙ্গা মাঝি।

একটি সূত্র বলছে, স্থল সীমান্ত দিয়ে আনা কিছু চালান আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ধরা পড়লেও অধিকাংশ চালান পাচার হয়ে যাচ্ছে। বন্দর দিয়ে বের হচ্ছে ভিআইপি, সিআইপি মারফতে। মূল হোতারা খুব কৌশলে কাজটি সম্পন্ন করে। বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোক বন্দরে ঢুকতে চাইলেও অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যায় না। অনুমতির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্দরের গেটে দাঁড় করিয়ে রাখে। বর্তমানে বন্দরটি নিয়ন্ত্রণ করছে রোহিঙ্গা মাঝি ও লেবাররা।

বিভিন্ন সময় অনেককে আটক করে আইনের আওতায় এনে থাকে শুল্ক গোয়েন্দারা। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, চাহিদা বেশি থাকায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে স্বর্ণ আনা হচ্ছে। অবৈধভাবে স্বর্ণের টাকা দিয়ে অস্ত্র ও মাদক কেনা হচ্ছে বলে জানা যায়।

টেকনাফের স্বর্ণ চোরা কারবারিদের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, কারবারিদের নজরদারি করে রেখেছি। সেই সঙ্গে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে আমাদের বিজিবি। স্বর্ণ কারবারিদের ধরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো এবং প্রশাসনিকভাবে স্থলবন্দরে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে।

সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ চোরাচালান জব্দও করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ১২ জানুয়ারি শাহ পরীর দ্বীপ নাফন দীর পাড়ে কেওড়া বাগানে অভিযান চালিয়ে ২০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে টেকনাফ ২ বিজিবি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর স্থলবন্দরে মায়ানমার থেকে আসা একটি কাঠের বোটে কোস্টগার্ড অভিযান পরিচালনা করে ২ হাজার ১৫৯. ৪৩ গ্রামের ১৩টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে।

স্বর্ণ চোরাচালানের বিষয়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে স্থলবন্দর দিয়ে বৈধ পণ্যের আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী। আমরা তাদের নজরদারিতে রেখেছি। তবে স্থলবন্দরে চোরাচালান বন্ধ করতে আরও বেশি গোয়েন্দা নজরদারি প্রয়োজন বলে সংস্থাগুলো জানায়।

back to top