alt

জাল নোট তৈরির ২০ চক্রের সন্ধান

বাকী বিল্লাহ : বুধবার, ২১ জুন ২০২৩

দেশে কোরবানির ঈদ ও পূজাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে জাল নোট তৈরি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশে এই ধরনের ২০টি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রতিটি চক্রের সদস্য সংখ্যা কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন। তারা জাল নোট তৈরি ও বিক্রিতে জড়িত। এসব চক্রের সদস্যরা তিন ভাগে বিভক্ত। একটি গ্রুপের অর্ডার অনুয়ায়ী জাল নোট তৈরি করা হয়। অন্য গ্রুপ জাল নোটের বান্ডিল পৌঁছে দেয়। আরেক গ্রুপ এই সব টাকা বাজারে বিক্রি করে। এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরি করতে খরচ পড়ে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ক্রাইম শাখার কর্মকর্তারা জাল নোট তৈরি চক্রের ওপর অনুসন্ধান চালিয়ে এসব তথ্য বের করেছেন। তারা তাদের গোপন প্রতিবেদন ও করণীয় নিয়ে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাল নোট ছড়িয়ে দেশের অর্থনীতিকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এই সব চক্র। এ জন্য আসছে ঈদের আগে আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটকে সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে জাল নোট সংক্রান্ত ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন থানায় এ সংক্রান্ত অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার ৮২৬টি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় (২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত) গত ৫ বছরে জাল নোট সংক্রান্ত ২২৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গড়ে বছরের প্রায় ৪৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ৪১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। চলতি বছরের (২০২৩) প্রথম দুই মাসে ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামির সংখ্যা ৮ জন।

পুলিশের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, জাল নোট সংক্রান্ত ২০১৮ সালে ৪২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই সব মামলায় মোট ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০১৯ সালে ৪৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জাল নোট তৈরি চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০২০ সালে মামলা হয়েছে ৩৪টি। গ্রেপ্তার হয়েছে ৭২ জন। ২০২১ সালে মামলা হয়েছে ৫৬টি। গ্রেপ্তার হয়েছে ৮৭ জন। ২০২২ সালে মামলা হয়েছে ৫১টি। গ্রেপ্তার হয়েছে ৮৯ জন। সব মিলিয়ে গেল ৫ বছরে জাল নোট সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা ২২৭টি। এই সব মামলায় মোট গ্রেপ্তার হয়েছে ৪১৬ জন।

পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছরের গত ৯ এপ্রিল রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০ লাখ টাকার সমমূল্যের বাংলাদেশি জাল নোট ও ভারতীয় জাল রুপিসহ জালিয়াত চক্রের এক সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এর আগে গত ১ ফেরুয়ারি ২৭ লাখ টাকা মূল্যের বাংলাদেশি জাল টাকা, ভারতীয় রুপি, মার্কিন জাল ডলারসহ এক কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প এবং ২০০ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন দেশের জাল মূদ্রা ও রেজিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির উপকরণসহ ৪ জালিয়াতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, জালিয়াত চক্রের মূলহোতা হুমায়ুন কবির, লিয়াকত হোসেন, জাকির, সগির, উজ্জ্বল দাস, সোবাহান সিকদার, ইমন, কালাম, সেলিম বেপারী, সাইফুল, মাহবুব মোল্লা, আলাউদ্দিন, বাবু, আরি সিহাব, সুমনর, জামান, সাগর ছাড়াও রাজধানীতে আরও অন্তত ২০ জন সক্রিয় আছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীরসহ দেশের বিভিন্ন থানায় কমপক্ষে ৩ থেকে ৫টি করে মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই সব অভিযুক্তরা জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। হয়রানি ও হুমকির ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে কেউ সাক্ষ্য দিতে রাজি হয় না। ফলে অনেকেই সহজেই জামিন পেয়ে যায়।

পুলিশের অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকার ভেদে বাজারে ৩ ধরনের জাল নোট তৈরি করার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১. ওয়াশ নোট, ১০০ টাকার নোট দিয়ে এটি তেরি করা হয়। প্রথমে ১০০ টাকার নোটকে রাসায়নিক দিয়ে সাদা করা হয়। পরে প্রিন্টারের মাধ্যমে ৫০০ টাকার জাল নোট তৈরি করে বের করা হয়। এক লাখ টাকা মূল্যের এই ওয়াশ নোট বিক্রি করা হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। এর চাহিদা সব চেয়ে বেশি।

২. আর্ট পেপার : এ আর্ট পেপারে তৈরি জাল নোট ১০০টি এক হাজার টাকার নোট বিক্রি করা হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়।

৩. খসখসে কাগজ : এক লাখ টাকা মূল্যবানের এক হাজার টাকার জাল নোট ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।

কাঁচামাল কেনার স্থান : জাল নোট তৈরিতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল সরঞ্জামাদি প্রিন্টার ডায়াস পেপার কেনা হয় মূলত পুরান ঢাকা ও নীলক্ষেত থেকে। জাল নোট তৈরি চক্র বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহ করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ফ্ল্যাট বাড়ি ভাড়া নিয়ে জাল নোট তৈরি করে। এছাড়া কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে জাল নোট তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে।

সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র পরস্পর যোগসাজশে সাধারণত দেশের কোন মেলার অনুষ্ঠান, ঈদের পশুর হাটে ও অধিকসংখ্যক জনসমাগমের স্থানে জাল নোট বিভিন্ন কৌশলে বিক্রি করে। মাঝে মধ্যে এটিএম বুথে ও ব্যাংকের শাখা থেকেও আসল নোটের মাঝখানে জাল নোট পাওয়া যায়। বর্তমানে জাল নোট কারবারিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ফেইসবুকের মাধ্যমে জাল নোট বিক্রির কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দুইজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, আইনি দুর্বলতা, অভিযুক্তরা নানা কৌশলে জামিনে ছাড়া পাওয়া ও তাদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষদর্শীরা ভয়ে সাক্ষ্য না দেয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আসামিরা জামিয়ে ছাড়া পেয়ে যায়। এরপরও বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার করা হয়। আর জাল নোট তৈরি চক্রকে ধরতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট সবসময় প্রস্তুত আছে। তাদের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিংসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। আর জাল নোট ও আসল নোটের পার্থক্য সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পুলিশ কাজ করছে। বাড়ির মালিকদের জেনে শুনে ফ্্যাট ভাড়া দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এই চক্র যাতে বাসা ভাড়া নিয়ে জাল নোট তৈরি করতে না পারে তার জন্য সচেতন থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ছবি

‘অর্থ পাচার’: স্ত্রীসহ মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

অন্তঃকোন্দলে ‘২ লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি’ দিয়ে মামুনকে হত্যা: ডিবি

ছবি

‘অর্থ আত্মসাৎ’: জয়, পুতুল ও ববিসহ আটজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

নরসিংদীতে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

ছবি

১০ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা ‘আত্মসাৎ’: এস আলমসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

‘প্লট দুর্নীতি’: হাসিনা, রেহানা ও টিউলিপের মামলায় আরও ২২ জনের সাক্ষ্য

ছবি

কাজী নাবিলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, ৩২ কোটি টাকার সম্পদ জব্দের আদেশ

ছবি

বাণিজ্যের আড়ালে ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার---------

ছবি

চেতনানাশক খাইয়ে সিএনজি ছিনতাই, চক্রের ৯ সদস্য গ্রেপ্তার

ছবি

জিমেইল হ্যাক করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৭ লাখ টাকা উধাও

ছবি

বিনিয়োগের ফাঁদে ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ২

ছবি

ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা, ৫ মাস পর আকাশের মরদেহ উত্তোলন

ছবি

দুর্নীতির মামলায় এস কে সুরের বিচার শুরু

২৪৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডিসি অফিসের কর্মচারীর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা

আসামিপক্ষের আইনজীবীর প্রশ্ন ‘মানহানিকর’, ট্রাইব্যুনালের ‘সতর্কতা’

ছবি

মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৬

ছবি

আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক এমডিকে ৫ কোটি টাকা জরিমানা

ছবি

দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডসের দুই সাবেক কর্মকর্তা কারাগারে

জকিগঞ্জ সীমান্তে অনুপ্রবেশ: পতাকা বৈঠকে বিএসএফ’র দুঃখ প্রকাশ

ছবি

সিলেটে স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

সিলেটে আ.লীগ নেতা হত্যা মামলায় ছেলে আসাদ ৩ দিনের রিমান্ডে

ছবি

দেওয়ানগঞ্জ বালু মহলে অভিযান, একজনকে জরিমানা

ছবি

শাহজালালে পেটে ইয়াবা পাচার: গ্রেপ্তার পান্নু দুইদিনের রিমান্ডে

ছবি

বিরুদ্ধে ৪২ মামলা, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসায়’ অভিযোগ তার

ছবি

নরসিংদীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

মোহাম্মদপুরে বাসে তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পিয়ন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১শ’ কোটি টাকা পাচারের মামলা

ছবি

পার্বতীপুরে ভবানীপুর-মধ্যপাড়া রেলপথের ফিসপ্লেটসহ ৬ হাজার নাটবল্টু চুরি

সঞ্চয়পত্রের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ১

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ৪০ জন: অধিকারের প্রতিবেদন

ছবি

‘অর্থ পাচার’: রন ও রিকের বিরুদ্ধে দুই অভিযোগপত্র দুদকের

ছবি

এস আলমের আরও ৪৬৯ একর জমি জব্দের আদেশ

ছবি

খুলনায় জোড়া খুন: ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড

সোনারগাঁয়ে ডাকাতির মালামাল ভাগ নিয়ে দুই ডাকাত গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ৩

ছবি

অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেপ্তার

ছবি

পার্বতীপুরে লগি-বৈঠার নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

tab

জাল নোট তৈরির ২০ চক্রের সন্ধান

বাকী বিল্লাহ

বুধবার, ২১ জুন ২০২৩

দেশে কোরবানির ঈদ ও পূজাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে জাল নোট তৈরি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশে এই ধরনের ২০টি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রতিটি চক্রের সদস্য সংখ্যা কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন। তারা জাল নোট তৈরি ও বিক্রিতে জড়িত। এসব চক্রের সদস্যরা তিন ভাগে বিভক্ত। একটি গ্রুপের অর্ডার অনুয়ায়ী জাল নোট তৈরি করা হয়। অন্য গ্রুপ জাল নোটের বান্ডিল পৌঁছে দেয়। আরেক গ্রুপ এই সব টাকা বাজারে বিক্রি করে। এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরি করতে খরচ পড়ে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ক্রাইম শাখার কর্মকর্তারা জাল নোট তৈরি চক্রের ওপর অনুসন্ধান চালিয়ে এসব তথ্য বের করেছেন। তারা তাদের গোপন প্রতিবেদন ও করণীয় নিয়ে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাল নোট ছড়িয়ে দেশের অর্থনীতিকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এই সব চক্র। এ জন্য আসছে ঈদের আগে আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটকে সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে জাল নোট সংক্রান্ত ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন থানায় এ সংক্রান্ত অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার ৮২৬টি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় (২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত) গত ৫ বছরে জাল নোট সংক্রান্ত ২২৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গড়ে বছরের প্রায় ৪৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ৪১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। চলতি বছরের (২০২৩) প্রথম দুই মাসে ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামির সংখ্যা ৮ জন।

পুলিশের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, জাল নোট সংক্রান্ত ২০১৮ সালে ৪২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই সব মামলায় মোট ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০১৯ সালে ৪৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জাল নোট তৈরি চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০২০ সালে মামলা হয়েছে ৩৪টি। গ্রেপ্তার হয়েছে ৭২ জন। ২০২১ সালে মামলা হয়েছে ৫৬টি। গ্রেপ্তার হয়েছে ৮৭ জন। ২০২২ সালে মামলা হয়েছে ৫১টি। গ্রেপ্তার হয়েছে ৮৯ জন। সব মিলিয়ে গেল ৫ বছরে জাল নোট সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা ২২৭টি। এই সব মামলায় মোট গ্রেপ্তার হয়েছে ৪১৬ জন।

পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছরের গত ৯ এপ্রিল রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০ লাখ টাকার সমমূল্যের বাংলাদেশি জাল নোট ও ভারতীয় জাল রুপিসহ জালিয়াত চক্রের এক সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এর আগে গত ১ ফেরুয়ারি ২৭ লাখ টাকা মূল্যের বাংলাদেশি জাল টাকা, ভারতীয় রুপি, মার্কিন জাল ডলারসহ এক কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প এবং ২০০ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন দেশের জাল মূদ্রা ও রেজিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির উপকরণসহ ৪ জালিয়াতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, জালিয়াত চক্রের মূলহোতা হুমায়ুন কবির, লিয়াকত হোসেন, জাকির, সগির, উজ্জ্বল দাস, সোবাহান সিকদার, ইমন, কালাম, সেলিম বেপারী, সাইফুল, মাহবুব মোল্লা, আলাউদ্দিন, বাবু, আরি সিহাব, সুমনর, জামান, সাগর ছাড়াও রাজধানীতে আরও অন্তত ২০ জন সক্রিয় আছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীরসহ দেশের বিভিন্ন থানায় কমপক্ষে ৩ থেকে ৫টি করে মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই সব অভিযুক্তরা জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। হয়রানি ও হুমকির ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে কেউ সাক্ষ্য দিতে রাজি হয় না। ফলে অনেকেই সহজেই জামিন পেয়ে যায়।

পুলিশের অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকার ভেদে বাজারে ৩ ধরনের জাল নোট তৈরি করার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১. ওয়াশ নোট, ১০০ টাকার নোট দিয়ে এটি তেরি করা হয়। প্রথমে ১০০ টাকার নোটকে রাসায়নিক দিয়ে সাদা করা হয়। পরে প্রিন্টারের মাধ্যমে ৫০০ টাকার জাল নোট তৈরি করে বের করা হয়। এক লাখ টাকা মূল্যের এই ওয়াশ নোট বিক্রি করা হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। এর চাহিদা সব চেয়ে বেশি।

২. আর্ট পেপার : এ আর্ট পেপারে তৈরি জাল নোট ১০০টি এক হাজার টাকার নোট বিক্রি করা হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়।

৩. খসখসে কাগজ : এক লাখ টাকা মূল্যবানের এক হাজার টাকার জাল নোট ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।

কাঁচামাল কেনার স্থান : জাল নোট তৈরিতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল সরঞ্জামাদি প্রিন্টার ডায়াস পেপার কেনা হয় মূলত পুরান ঢাকা ও নীলক্ষেত থেকে। জাল নোট তৈরি চক্র বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহ করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ফ্ল্যাট বাড়ি ভাড়া নিয়ে জাল নোট তৈরি করে। এছাড়া কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে জাল নোট তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে।

সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র পরস্পর যোগসাজশে সাধারণত দেশের কোন মেলার অনুষ্ঠান, ঈদের পশুর হাটে ও অধিকসংখ্যক জনসমাগমের স্থানে জাল নোট বিভিন্ন কৌশলে বিক্রি করে। মাঝে মধ্যে এটিএম বুথে ও ব্যাংকের শাখা থেকেও আসল নোটের মাঝখানে জাল নোট পাওয়া যায়। বর্তমানে জাল নোট কারবারিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ফেইসবুকের মাধ্যমে জাল নোট বিক্রির কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দুইজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, আইনি দুর্বলতা, অভিযুক্তরা নানা কৌশলে জামিনে ছাড়া পাওয়া ও তাদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষদর্শীরা ভয়ে সাক্ষ্য না দেয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আসামিরা জামিয়ে ছাড়া পেয়ে যায়। এরপরও বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার করা হয়। আর জাল নোট তৈরি চক্রকে ধরতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট সবসময় প্রস্তুত আছে। তাদের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিংসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। আর জাল নোট ও আসল নোটের পার্থক্য সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পুলিশ কাজ করছে। বাড়ির মালিকদের জেনে শুনে ফ্্যাট ভাড়া দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এই চক্র যাতে বাসা ভাড়া নিয়ে জাল নোট তৈরি করতে না পারে তার জন্য সচেতন থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

back to top