উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটকের ৯৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ঋত্বিক আলোচনা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন। এ আয়োজনের প্রথম দিন সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর মহানগরীর মিয়াপাড়াস্থ ঋত্বিকের পৈতৃক ভিটায় আয়োজনের উদ্বোধন করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আলোচনা শেষে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘অযান্ত্রিক’ (১৯৫৮) প্রদর্শিত হয়েছে ।
সোমবার সন্ধ্যায় ঋত্বিক ঘটকের জন্মভূমি নগরীর মিয়াপাড়ায় ভাঙাবাড়ির ধ্বংসস্তুপের মধ্যেই আলোচনা সভার আয়োজন করে ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি।
ইটের দুটি স্তুপের মাঝের সামান্য ফাঁকা স্থানে করা হয় অতিথিদের বসার জায়গা। ইটের স্তুপে জ্বালানো হয় অসংখ্য মোমবাতি। এরই মধ্যে রাখা হয় ঋত্বিক ঘটকের ছবি। অন্য আরেকটি ইটের স্তুপের ওপর রাখা ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ঋত্বিক ঘটকের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী’।
জন্মবার্ষিকীর আলোচনায় বক্তব্য দিতে গিয়ে সভাপ্রধান ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন মাসুদ বলেন, ‘ঋত্বিক ঘটকের মূল বাড়ির যে অংশটুকু সেটা সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের এ দাবির মুখে সরকার ৫২ লাখ টাকার প্রকল্পও দিয়েছিল। বাস্তবায়নের আগেই ‘ছাত্র-জনতা’ ও ‘দুস্কৃতিকারীদের’ ওপর দায় চাপিয়ে বাড়িটি ভেঙে ফেলা হলো। পাবনায় সুচিত্রা সেনের বাড়িও দখল করে নিয়েছিল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেটি উদ্ধার হয়েছে। এটাও হবে। যারা ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভাঙার সঙ্গে জড়িত তারা অপরাধী। তারা ঐতিহ্যকে হত্যা করেছে। এদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান। তিনি বলেন, ‘দিন দিন আমরা সাংস্কৃতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছি। ঋত্বিক ঘটকের পৈত্রিক ভিটা এভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া তারই বড় প্রমাণ। এখন আমরা কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারি সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। গুঁড়িয়ে দেওয়া বাড়ি নিয়ে আমাদের মন খারাপ করে বসে থাকলে চলবে না। হতাশ হওয়া যাবে না। ভাঙা বাড়ি থেকেই যেন আমরা ফিনিক্স পাখির মতো উঠতে পারি। সামনে ঋত্বিক ঘটকের ১০০তম জন্মবার্ষিকী। তার আগেই আমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে। ঋত্বিককেন্দ্রীক চলচ্চিত্রচর্চা গতিশীল করতে হবে। আমরা যেন এখানে দায়বদ্ধ হয়ে থাকতে পারি।’
আলোচক হিসেবে কথা বলেন ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি। তিনি বলেন, ‘যে জাতি গুণিজনের কদর করে না, সেখানে গুণিজন জন্মে না। তাই আমরা চাই, যার যেটুকু সম্মান প্রাপ্য, তাকে সেটা দেওয়া হোক। একসময় ঋত্বিক ঘটকদের জন্য রাজশাহী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য সমৃদ্ধ ছিল। এখন সেই কর্মকান্ড নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এতদিনেও ঋত্বিকের ভিটা সংরক্ষণ কেন হয়নি, সেটা ভেবে আমি অবাক হচ্ছি। ঋত্বিক ঘটকের বাড়িটি উদ্ধার করে এখানে স্মৃতি কমপ্লেক্স কিংবা জাদুঘর করা উচিত। এ উদ্যোগ যারা নিয়েছেন, তারা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। অচিরেই যেন এই কাজটা বাস্তবায়ন হয়, এটাই আমার চাওয়া।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- রাজশাহীর প্রবীণ সাংবাদিক মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আ. আল-মামুন।
অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মাদ তাওকীর ইসলাম, ডিরেক্টরস অ্যান্ড অ্যাক্টরস গিল্ড রাজশাহীর সভাপতি ওয়ালিউর রহমান বাবুসহ সাংস্কৃতিককর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সবনাজ মোস্তারি স্মৃতি।
খেলাঘর আসর, রাজশাহীর শিল্পীদের জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে অনুষ্ঠানের অতিথিরা মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন।
তিন দিনের এ আয়োজনের দ্বিতীয় দিন গতকাল মঙ্গল সন্ধ্যায় আলোচনা শেষে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘অযান্ত্রিক’ (১৯৫৮) প্রদর্শিত হবে। অনুষ্ঠানের শেষদিন আগামী বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আলোচনার পর প্রদর্শিত হবে ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০)
মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪
উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটকের ৯৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ঋত্বিক আলোচনা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন। এ আয়োজনের প্রথম দিন সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর মহানগরীর মিয়াপাড়াস্থ ঋত্বিকের পৈতৃক ভিটায় আয়োজনের উদ্বোধন করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আলোচনা শেষে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘অযান্ত্রিক’ (১৯৫৮) প্রদর্শিত হয়েছে ।
সোমবার সন্ধ্যায় ঋত্বিক ঘটকের জন্মভূমি নগরীর মিয়াপাড়ায় ভাঙাবাড়ির ধ্বংসস্তুপের মধ্যেই আলোচনা সভার আয়োজন করে ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি।
ইটের দুটি স্তুপের মাঝের সামান্য ফাঁকা স্থানে করা হয় অতিথিদের বসার জায়গা। ইটের স্তুপে জ্বালানো হয় অসংখ্য মোমবাতি। এরই মধ্যে রাখা হয় ঋত্বিক ঘটকের ছবি। অন্য আরেকটি ইটের স্তুপের ওপর রাখা ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ঋত্বিক ঘটকের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী’।
জন্মবার্ষিকীর আলোচনায় বক্তব্য দিতে গিয়ে সভাপ্রধান ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন মাসুদ বলেন, ‘ঋত্বিক ঘটকের মূল বাড়ির যে অংশটুকু সেটা সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের এ দাবির মুখে সরকার ৫২ লাখ টাকার প্রকল্পও দিয়েছিল। বাস্তবায়নের আগেই ‘ছাত্র-জনতা’ ও ‘দুস্কৃতিকারীদের’ ওপর দায় চাপিয়ে বাড়িটি ভেঙে ফেলা হলো। পাবনায় সুচিত্রা সেনের বাড়িও দখল করে নিয়েছিল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেটি উদ্ধার হয়েছে। এটাও হবে। যারা ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভাঙার সঙ্গে জড়িত তারা অপরাধী। তারা ঐতিহ্যকে হত্যা করেছে। এদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান। তিনি বলেন, ‘দিন দিন আমরা সাংস্কৃতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছি। ঋত্বিক ঘটকের পৈত্রিক ভিটা এভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া তারই বড় প্রমাণ। এখন আমরা কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারি সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। গুঁড়িয়ে দেওয়া বাড়ি নিয়ে আমাদের মন খারাপ করে বসে থাকলে চলবে না। হতাশ হওয়া যাবে না। ভাঙা বাড়ি থেকেই যেন আমরা ফিনিক্স পাখির মতো উঠতে পারি। সামনে ঋত্বিক ঘটকের ১০০তম জন্মবার্ষিকী। তার আগেই আমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে। ঋত্বিককেন্দ্রীক চলচ্চিত্রচর্চা গতিশীল করতে হবে। আমরা যেন এখানে দায়বদ্ধ হয়ে থাকতে পারি।’
আলোচক হিসেবে কথা বলেন ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি। তিনি বলেন, ‘যে জাতি গুণিজনের কদর করে না, সেখানে গুণিজন জন্মে না। তাই আমরা চাই, যার যেটুকু সম্মান প্রাপ্য, তাকে সেটা দেওয়া হোক। একসময় ঋত্বিক ঘটকদের জন্য রাজশাহী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য সমৃদ্ধ ছিল। এখন সেই কর্মকান্ড নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এতদিনেও ঋত্বিকের ভিটা সংরক্ষণ কেন হয়নি, সেটা ভেবে আমি অবাক হচ্ছি। ঋত্বিক ঘটকের বাড়িটি উদ্ধার করে এখানে স্মৃতি কমপ্লেক্স কিংবা জাদুঘর করা উচিত। এ উদ্যোগ যারা নিয়েছেন, তারা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। অচিরেই যেন এই কাজটা বাস্তবায়ন হয়, এটাই আমার চাওয়া।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- রাজশাহীর প্রবীণ সাংবাদিক মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আ. আল-মামুন।
অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মাদ তাওকীর ইসলাম, ডিরেক্টরস অ্যান্ড অ্যাক্টরস গিল্ড রাজশাহীর সভাপতি ওয়ালিউর রহমান বাবুসহ সাংস্কৃতিককর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সবনাজ মোস্তারি স্মৃতি।
খেলাঘর আসর, রাজশাহীর শিল্পীদের জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে অনুষ্ঠানের অতিথিরা মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন।
তিন দিনের এ আয়োজনের দ্বিতীয় দিন গতকাল মঙ্গল সন্ধ্যায় আলোচনা শেষে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘অযান্ত্রিক’ (১৯৫৮) প্রদর্শিত হবে। অনুষ্ঠানের শেষদিন আগামী বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আলোচনার পর প্রদর্শিত হবে ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০)