জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় নতুন করে বাধা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের। তারা বলছেন, রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা সাংস্কৃতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে শিল্পীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
শনিবার,(২২ নভেম্বর ২০২৫) সকালে রাজধানীর রমনায় বিআইআইএসএস অডিটরিয়ামে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সামাজিক রূপান্তর: সাংস্কৃতিক কর্মীদের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীরা এ আহ্বান জানান। এ সেমিনার আয়োজন করে ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশ। এতে কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা, সংগীতশিল্পী এবং নৃত্যশিল্পীরা অংশ নেন।
এ সময় শিল্পীদের কম পারিশ্রমিক, সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনে বাধা, রাজনীতিকরণসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন বক্তারা। নতুন বাংলাদেশে সংস্কৃতিকর্মীদের যেন কোনো বাধার সম্মুখীন হতে না হয়, সেই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তারা।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনেরা চান না যে শিল্পীরা একত্র হোক। শিল্পীরা তাদের জায়গা দখল করতে পারেন- এই শঙ্কায় তারা শিল্পীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে। উদাহরণ হিসেবে তিনি ১৯৭১ সালের পরে গঠিত কণ্ঠশিল্পী সংস্থার ব্যর্থতার কথা বলেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে একটি ধর্মান্ধ, উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটেছে, যারা বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি কখনো চায়নি। তারা এগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্ন কৌশলে শিল্পীদের কণ্ঠ চেপে ধরতে চায়। মব-সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে সবকিছুকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর একটি ধর্মান্ধ, উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটেছে, যারা বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি কখনো চায়নি। তারা এগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্ন কৌশলে শিল্পীদের কণ্ঠ চেপে ধরতে চায়। মব-সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে সবকিছু স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
কণ্ঠশিল্পী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, দেশের সাংস্কৃতিক পরিম-লে যা চলছে, তাতে মনে হয় এসব না দেখি। যখনই দেখি তখন বুকের মধ্যে ব্যথা অনুভূত হয়। কী চেয়েছিলাম আর কী পাচ্ছি। তিনি বলেন, পদে পদে বাধা পেতে হচ্ছে। বাধা পেরিয়ে গান করতে হচ্ছে।
সংস্কৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে উল্লেখ করে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সমৃদ্ধ এক সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সবাই মিলে এমন একটি সংগঠন দাঁড় করাতে হবে, যেন সংস্কৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। ‘একজন শিল্পীর জীবনে আর কী থাকে’
সুরকার ও সংগীত পরিচালক মকসুদ জামিল বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে মুক্ত স্বাধীন দেশে সাংস্কৃতিক চর্চা করা যাবে, এমন প্রত্যাশা থাকলেও এখন পরিস্থিতি একেবারেই অন্য রকম। তিনি বলেন, এক বছরের বেশি হয়ে গেছে, বাংলাদেশ বেতার এবং টেলিভিশনের সাংস্কৃতিক কর্মীদের সম্মানী ১০ পয়সাও বৃদ্ধি করা হয়নি।
সেমিনারে গত ১৬ বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সংগীতশিল্পী রিজিয়া পারভীন বলেন, গত ১৬ বছর সরকারি কোনো অনুষ্ঠানে কোথাও তাকে গান গাইতে দেয়া হয়নি। অনুষ্ঠানের জন্য চুক্তি করে, অগ্রিম টাকা দিয়ে সেই টাকা ফেরত নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। একজন শিল্পীর জীবন থেকে এতগুলো বছর চলে গেলে আর কী থাকে, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
গুণী শিল্পীদের স্বীকৃতি নেই, উল্লেখ করে রিজিয়া পারভীন আরও বলেন, ‘এমন অনেক শিল্পী একুশে পদক পেয়েছেন, যাদের পদকের আশপাশে যাওয়ার যোগ্যতা নেই। এখন টাকা দিলেই জাতীয় পুরস্কার পাওয়া পায়।’
সংস্কৃতিকর্মীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা এবং দুর্নীতিকে দায়ী করেন সংগীতশিল্পী মনির খান। তিনি বলেন, যদি কপিরাইট অফিস শিল্পীদের যোগ্য পাওনাটুকু বুঝিয়ে দিত, তাহলে শিল্পীদের কারও কাছে হাত পাতার দরকার হতো না।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন- অধ্যাপক শাহমান মৈশান। এ সময় আরও বক্তব্য দেন সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্কা গোপ, অভিনেতা শাহেদ শরীফ খান, প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নু, চিকিৎসক শাকিল আহমেদ, সংগীত পরিচালক জিয়াউল হাসান পিয়াল, সাংবাদিক কাজী জেসিন প্রমুখ। সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন নাট্য অভিনেতা মাসুম বাসার ও জিতু আহসান। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ-আল-মামুন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় নতুন করে বাধা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের। তারা বলছেন, রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা সাংস্কৃতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে শিল্পীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
শনিবার,(২২ নভেম্বর ২০২৫) সকালে রাজধানীর রমনায় বিআইআইএসএস অডিটরিয়ামে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সামাজিক রূপান্তর: সাংস্কৃতিক কর্মীদের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীরা এ আহ্বান জানান। এ সেমিনার আয়োজন করে ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশ। এতে কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা, সংগীতশিল্পী এবং নৃত্যশিল্পীরা অংশ নেন।
এ সময় শিল্পীদের কম পারিশ্রমিক, সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনে বাধা, রাজনীতিকরণসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন বক্তারা। নতুন বাংলাদেশে সংস্কৃতিকর্মীদের যেন কোনো বাধার সম্মুখীন হতে না হয়, সেই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তারা।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনেরা চান না যে শিল্পীরা একত্র হোক। শিল্পীরা তাদের জায়গা দখল করতে পারেন- এই শঙ্কায় তারা শিল্পীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে। উদাহরণ হিসেবে তিনি ১৯৭১ সালের পরে গঠিত কণ্ঠশিল্পী সংস্থার ব্যর্থতার কথা বলেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে একটি ধর্মান্ধ, উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটেছে, যারা বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি কখনো চায়নি। তারা এগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্ন কৌশলে শিল্পীদের কণ্ঠ চেপে ধরতে চায়। মব-সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে সবকিছুকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর একটি ধর্মান্ধ, উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটেছে, যারা বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি কখনো চায়নি। তারা এগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্ন কৌশলে শিল্পীদের কণ্ঠ চেপে ধরতে চায়। মব-সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে সবকিছু স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
কণ্ঠশিল্পী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, দেশের সাংস্কৃতিক পরিম-লে যা চলছে, তাতে মনে হয় এসব না দেখি। যখনই দেখি তখন বুকের মধ্যে ব্যথা অনুভূত হয়। কী চেয়েছিলাম আর কী পাচ্ছি। তিনি বলেন, পদে পদে বাধা পেতে হচ্ছে। বাধা পেরিয়ে গান করতে হচ্ছে।
সংস্কৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে উল্লেখ করে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সমৃদ্ধ এক সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সবাই মিলে এমন একটি সংগঠন দাঁড় করাতে হবে, যেন সংস্কৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। ‘একজন শিল্পীর জীবনে আর কী থাকে’
সুরকার ও সংগীত পরিচালক মকসুদ জামিল বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে মুক্ত স্বাধীন দেশে সাংস্কৃতিক চর্চা করা যাবে, এমন প্রত্যাশা থাকলেও এখন পরিস্থিতি একেবারেই অন্য রকম। তিনি বলেন, এক বছরের বেশি হয়ে গেছে, বাংলাদেশ বেতার এবং টেলিভিশনের সাংস্কৃতিক কর্মীদের সম্মানী ১০ পয়সাও বৃদ্ধি করা হয়নি।
সেমিনারে গত ১৬ বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সংগীতশিল্পী রিজিয়া পারভীন বলেন, গত ১৬ বছর সরকারি কোনো অনুষ্ঠানে কোথাও তাকে গান গাইতে দেয়া হয়নি। অনুষ্ঠানের জন্য চুক্তি করে, অগ্রিম টাকা দিয়ে সেই টাকা ফেরত নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। একজন শিল্পীর জীবন থেকে এতগুলো বছর চলে গেলে আর কী থাকে, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
গুণী শিল্পীদের স্বীকৃতি নেই, উল্লেখ করে রিজিয়া পারভীন আরও বলেন, ‘এমন অনেক শিল্পী একুশে পদক পেয়েছেন, যাদের পদকের আশপাশে যাওয়ার যোগ্যতা নেই। এখন টাকা দিলেই জাতীয় পুরস্কার পাওয়া পায়।’
সংস্কৃতিকর্মীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা এবং দুর্নীতিকে দায়ী করেন সংগীতশিল্পী মনির খান। তিনি বলেন, যদি কপিরাইট অফিস শিল্পীদের যোগ্য পাওনাটুকু বুঝিয়ে দিত, তাহলে শিল্পীদের কারও কাছে হাত পাতার দরকার হতো না।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন- অধ্যাপক শাহমান মৈশান। এ সময় আরও বক্তব্য দেন সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্কা গোপ, অভিনেতা শাহেদ শরীফ খান, প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নু, চিকিৎসক শাকিল আহমেদ, সংগীত পরিচালক জিয়াউল হাসান পিয়াল, সাংবাদিক কাজী জেসিন প্রমুখ। সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন নাট্য অভিনেতা মাসুম বাসার ও জিতু আহসান। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ-আল-মামুন।