এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্কোর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক বছরে কমে প্রায় অর্ধেক হয়েছে। এই পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হারও ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ কমেছে।
করোনা মহামারীর পর প্রথমবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হওয়ায় গড় পাসের হার ও জিপিএ-৫ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) কমেছে বলে শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা মনে করছেন।
এ বছর এইচএসসি (উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট) ও সমমান পরীক্ষায় মোট ৯২ হাজার ৫৯৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে; গত বছর তা পেয়েছিল এক লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। সেই হিসেবে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে হাজার ৮৩ হাজার ৬৮৭ জন।
৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসি, মাদ্রাসার আলিম এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের (বিএম ও ভোকেশনাল) পরীক্ষায় এবার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। গত বছর এই পরীক্ষায় পাসের গড় হার ছিল ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সেই হিসেবে এবার পাসের হার ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ কমেছে।
জিপিএ-৫ এর পাশাপাশি গড় পাসের হারেও এগিয়ে ছাত্রীরা। এবার ছাত্রীদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
গতকাল সকাল ১১টায় শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট ও স্ব-স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফল প্রকাশ করা হয়। এর আগে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এই পরীক্ষার ফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেয়া হয়।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সকালে শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তার হাতে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলের সারসংক্ষেপ হাতে তুলে দেন।
পরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী।
দেশে করোনা মহামারী শুরুর আগে ২০১৯ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিল মোট ৪৭ হাজার ২৮৬ জন।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, ২০২১ সালে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন, ২০২০ সালে এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন এবং ২০১৯ সালে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন।
এ বছর ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীদের জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বেশি-এমন তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এবার ৪৩ হাজার ২৩০ জন ছাত্র এবং ৪৯ হাজার ৩৬৫ জন ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ছয় হাজার ১৩৫ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
দীপু মনি বলেন, এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯২ হাজার ৫৯৫ জন।
এ বছর বিদেশের আটটি কেন্দ্রে মোট ৩২১ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে পাস করেছে ৩০৩ জন। পাসের হার শতকরা ৯৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
২০২০ সালে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ কারণে জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ‘মূল্যায়ন ফল’ প্রকাশ করা হয়। মূল্যায়নে পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের সবাই উত্তীর্ণ হয়; আর জিপিএ-৫ পায় এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন।
মহামারীতে ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষাও ব্যাহত হয়। স্বাভাবিক সময়ে এপ্রিলের প্রথম দিকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হতো, কিন্তু ২০২১ সালে এই পরীক্ষা শুরু হয় ডিসেম্বরে। ওই বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে মাত্র ছয়টি পত্রে পরীক্ষা হয়। পাশাপাশি সময় কমিয়ে দেড় ঘণ্টায় পরীক্ষা নেয়া হয়। ২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমানে ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। আর জিপিএ-৫ পায় এক লাখ এক লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন।
২০২২ সালের পরীক্ষা এগিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়ছিল শিক্ষা প্রশাসন। কিন্তু সিলেট অঞ্চলে বন্যার কারণে তা আবার পিছিয়ে শুরু হয় ৬ নভেম্বর থেকে। এরপর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়া হয়। সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় একই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেয়ায় সেই পরীক্ষায় গড়ে ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। আর জিপিএ-৫ পায় এক লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন।
টানা তিন বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার পর একটি বিষয় বাদে সব বিষয়ে ২০২৩ সালে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বসে ছাত্রছাত্রীরা। চলতি বছর শুধু তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৭৫ নম্বরে পরীক্ষা হয়।
গত ১৭ আগস্ট এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এবারে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে দশ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন। সার্বিক পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
২০২২ সালে এই পরীক্ষার্থীয় অংশ নিয়েছিল ১২ লাখ তিন হাজার ৪০৭ জন। সেই হিসাবে এবার এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ জন পরীক্ষার্থী বেড়েছে।
বোর্ডওয়ারি ফলাফল
এবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসিতে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৮০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, কুমিল্লায় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ, রাজশাহীতে ৭৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৭১ দশমিক ৬২ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ ও যশোর শিক্ষা বোর্ডে ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।
যেভাবে ফল জানা যাচ্ছে
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফল জানতে শিক্ষার্থীদের প্রথমে িি.িবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফৎবংঁষঃং.মড়া.নফ এ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। ওয়েবসাইটের ফলাফল অপশনে ক্লিক করে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে সাবমিট করলে শিক্ষার্থী তার রেজাল্ট শিট দেখতে পারবে।
এসএমএসের মাধ্যমে ফল পেতে মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে ইংরেজি অক্ষরে এইচএসসি (ঐঝঈ) লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখতে হবে। এরপর ১৬২২২ নম্বরে সেন্ড করলে ফিরতি ম্যাসেজে ফল পাওয়া যাবে।
ঢাকা বোর্ডের একজন পরীক্ষার্থীকে ঐঝঈ উঐঅ ১২৩৪৫৬ ২০২৩ লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। সঙ্গে সঙ্গেই ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেয়া হবে।
মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে ঐঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে শিক্ষা বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৩ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে (যেমন ঐঝঈ উযধ ১২৩৪৫৬ ২০২২ ংবহফ ঃড় ১৬২২২)। ফিরতি এসএমএসেই ফল পাওয়া যাবে।
ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন শুরু আজ
যেসব পরীক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের ফলে সন্তুষ্ট নয় তারা ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদনের সুযোগ পাবে। আজ থেকেই এই আবেদন করা যাবে। পুনঃনিরীক্ষার জন্য আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা। দ্বিপত্র বিশিষ্ট বিষয়ের ক্ষেত্রে খাতা চ্যালেঞ্জে উভয় পত্রের আবেদন করতে হবে। সে হিসেবে এইচএসসির প্রতিটি বিষয়ের পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনের জন্য ফি ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গতকাল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শুধু টেলিটকের প্রিপেইড মোবাইল থেকেই এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা যাবে। প্রথমে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিনটি অক্ষর লিখতে হবে (ঢাকা বোর্ডের ক্ষেত্রে উযধ ও বরিশাল বোর্ডের ক্ষেত্রে ইধৎ)। এরপর স্পেস দিয়ে রোল লিখে আবার স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএ RSC<>YES<>PIN-NUMBER<>MobileNumber করতে হবে।
মেসেজ সেন্ড হলে টেলিটক থেকে পিন নম্বরসহ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি এসএমএস আসবে। পিন নম্বরটি সংগ্রহ করতে হবে। এতে সম্মত হলে আবারও মেসেজ অপশনে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে ‘পিন নম্বর’ লিখে স্পেস দিয়ে নিজস্ব মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে সেন্ড করতে হবে। (উদাহারণ: RSC<>YES<>PIN-NUMBER<>MobileNumber লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান এবং বিভিন্ন বোডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা
রোববার, ২৬ নভেম্বর ২০২৩
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্কোর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক বছরে কমে প্রায় অর্ধেক হয়েছে। এই পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হারও ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ কমেছে।
করোনা মহামারীর পর প্রথমবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হওয়ায় গড় পাসের হার ও জিপিএ-৫ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) কমেছে বলে শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা মনে করছেন।
এ বছর এইচএসসি (উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট) ও সমমান পরীক্ষায় মোট ৯২ হাজার ৫৯৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে; গত বছর তা পেয়েছিল এক লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। সেই হিসেবে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে হাজার ৮৩ হাজার ৬৮৭ জন।
৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসি, মাদ্রাসার আলিম এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের (বিএম ও ভোকেশনাল) পরীক্ষায় এবার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। গত বছর এই পরীক্ষায় পাসের গড় হার ছিল ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সেই হিসেবে এবার পাসের হার ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ কমেছে।
জিপিএ-৫ এর পাশাপাশি গড় পাসের হারেও এগিয়ে ছাত্রীরা। এবার ছাত্রীদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
গতকাল সকাল ১১টায় শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট ও স্ব-স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফল প্রকাশ করা হয়। এর আগে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এই পরীক্ষার ফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেয়া হয়।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সকালে শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তার হাতে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলের সারসংক্ষেপ হাতে তুলে দেন।
পরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী।
দেশে করোনা মহামারী শুরুর আগে ২০১৯ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিল মোট ৪৭ হাজার ২৮৬ জন।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, ২০২১ সালে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন, ২০২০ সালে এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন এবং ২০১৯ সালে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন।
এ বছর ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীদের জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বেশি-এমন তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এবার ৪৩ হাজার ২৩০ জন ছাত্র এবং ৪৯ হাজার ৩৬৫ জন ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ছয় হাজার ১৩৫ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
দীপু মনি বলেন, এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯২ হাজার ৫৯৫ জন।
এ বছর বিদেশের আটটি কেন্দ্রে মোট ৩২১ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে পাস করেছে ৩০৩ জন। পাসের হার শতকরা ৯৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
২০২০ সালে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ কারণে জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ‘মূল্যায়ন ফল’ প্রকাশ করা হয়। মূল্যায়নে পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের সবাই উত্তীর্ণ হয়; আর জিপিএ-৫ পায় এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন।
মহামারীতে ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষাও ব্যাহত হয়। স্বাভাবিক সময়ে এপ্রিলের প্রথম দিকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হতো, কিন্তু ২০২১ সালে এই পরীক্ষা শুরু হয় ডিসেম্বরে। ওই বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে মাত্র ছয়টি পত্রে পরীক্ষা হয়। পাশাপাশি সময় কমিয়ে দেড় ঘণ্টায় পরীক্ষা নেয়া হয়। ২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমানে ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। আর জিপিএ-৫ পায় এক লাখ এক লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন।
২০২২ সালের পরীক্ষা এগিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়ছিল শিক্ষা প্রশাসন। কিন্তু সিলেট অঞ্চলে বন্যার কারণে তা আবার পিছিয়ে শুরু হয় ৬ নভেম্বর থেকে। এরপর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়া হয়। সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় একই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেয়ায় সেই পরীক্ষায় গড়ে ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। আর জিপিএ-৫ পায় এক লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন।
টানা তিন বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার পর একটি বিষয় বাদে সব বিষয়ে ২০২৩ সালে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বসে ছাত্রছাত্রীরা। চলতি বছর শুধু তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৭৫ নম্বরে পরীক্ষা হয়।
গত ১৭ আগস্ট এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এবারে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে দশ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন। সার্বিক পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
২০২২ সালে এই পরীক্ষার্থীয় অংশ নিয়েছিল ১২ লাখ তিন হাজার ৪০৭ জন। সেই হিসাবে এবার এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ জন পরীক্ষার্থী বেড়েছে।
বোর্ডওয়ারি ফলাফল
এবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসিতে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৮০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, কুমিল্লায় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ, রাজশাহীতে ৭৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৭১ দশমিক ৬২ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ ও যশোর শিক্ষা বোর্ডে ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।
যেভাবে ফল জানা যাচ্ছে
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফল জানতে শিক্ষার্থীদের প্রথমে িি.িবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফৎবংঁষঃং.মড়া.নফ এ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। ওয়েবসাইটের ফলাফল অপশনে ক্লিক করে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে সাবমিট করলে শিক্ষার্থী তার রেজাল্ট শিট দেখতে পারবে।
এসএমএসের মাধ্যমে ফল পেতে মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে ইংরেজি অক্ষরে এইচএসসি (ঐঝঈ) লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখতে হবে। এরপর ১৬২২২ নম্বরে সেন্ড করলে ফিরতি ম্যাসেজে ফল পাওয়া যাবে।
ঢাকা বোর্ডের একজন পরীক্ষার্থীকে ঐঝঈ উঐঅ ১২৩৪৫৬ ২০২৩ লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। সঙ্গে সঙ্গেই ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেয়া হবে।
মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে ঐঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে শিক্ষা বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৩ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে (যেমন ঐঝঈ উযধ ১২৩৪৫৬ ২০২২ ংবহফ ঃড় ১৬২২২)। ফিরতি এসএমএসেই ফল পাওয়া যাবে।
ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন শুরু আজ
যেসব পরীক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের ফলে সন্তুষ্ট নয় তারা ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদনের সুযোগ পাবে। আজ থেকেই এই আবেদন করা যাবে। পুনঃনিরীক্ষার জন্য আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা। দ্বিপত্র বিশিষ্ট বিষয়ের ক্ষেত্রে খাতা চ্যালেঞ্জে উভয় পত্রের আবেদন করতে হবে। সে হিসেবে এইচএসসির প্রতিটি বিষয়ের পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনের জন্য ফি ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গতকাল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শুধু টেলিটকের প্রিপেইড মোবাইল থেকেই এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা যাবে। প্রথমে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিনটি অক্ষর লিখতে হবে (ঢাকা বোর্ডের ক্ষেত্রে উযধ ও বরিশাল বোর্ডের ক্ষেত্রে ইধৎ)। এরপর স্পেস দিয়ে রোল লিখে আবার স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএ RSC<>YES<>PIN-NUMBER<>MobileNumber করতে হবে।
মেসেজ সেন্ড হলে টেলিটক থেকে পিন নম্বরসহ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি এসএমএস আসবে। পিন নম্বরটি সংগ্রহ করতে হবে। এতে সম্মত হলে আবারও মেসেজ অপশনে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে ‘পিন নম্বর’ লিখে স্পেস দিয়ে নিজস্ব মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে সেন্ড করতে হবে। (উদাহারণ: RSC<>YES<>PIN-NUMBER<>MobileNumber লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান এবং বিভিন্ন বোডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।