alt

শিক্ষা

শিক্ষায় বড় চ্যালেঞ্জ নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন

রাকিব উদ্দিন : শনিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৪

শিক্ষায় এখন বড় চ্যালেঞ্জ নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন। গত শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত সব ধরনের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এই সিন্ধান্ত গ্রহণে অংশীজনদের মতামত না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। এই অসন্তোষ লাঘব এবং শিক্ষাক্রমের ওপর অভিভাবকদের আস্থা ফেরানোই এখন শিক্ষা প্রশাসনের বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যক্তিরা।

এছাড়া ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া, এই নীতিমালার আলোকে ‘শিক্ষা আইন’ করতে না পারা, শিক্ষক নিয়োগে ‘পিএসসি’র আলোকে একটি কর্মকমিশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ না নেয়া, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যথাযথ জবাবদিহিতার আওতায় আনতে না পারা এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এক শ্রেণীর স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ কারণে প্রায়ই আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়ছে শিক্ষা প্রশাসন।

জানতে চাইলে ‘শিক্ষানীতি ২০১০’ প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর শেখ ইকরামুল কবির সংবাদকে বলেন, ‘আমরা ছয় মাসে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিলাম। দুই হাজারের বেশি অংশীজন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতামত নিয়ে এটি করেছিলাম। এই নীতির বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা আইন জরুরি ছিল। সেটি হলো না ১২ বছরের বেশি সময়েও।’

কোচিং সেন্টারের মালিক ও নোট-গাইড বইয়ের ব্যবসায়ীদের বাধার কারণে আইনটি হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘তারা ব্যাপকভাবে টাকা-পয়সা ব্যয় করেছে। এর প্রভাবেই আইন না করে ব্লেইম গেম হয়েছে। শিক্ষা আইন হলে কোচিং বাণিজ্য ও নোট-গাইড বইয়ের ব্যবসা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যেতো।’

শিক্ষা আইন হলে শিক্ষা প্রশাসনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা অনেকটাই কমে আসতো মন্তব্য করে শেখ ইকরামুল কবির বলেন, ‘আইনটি না হওয়ার কারণেই এখন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশকেই ওইসব অনিয়ম-দুর্নীতির পেছতে ছুটতে হচ্ছে। সমালোচনাও হচ্ছে।’

পরীক্ষা পদ্ধতি আবারও ফিরতে পারে

প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত বার্ষিক ও অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরতে পারে। গত শিক্ষাবর্ষে ওই পরীক্ষা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে আগের মতো বিষয়ভিত্তিক শতভাগ নম্বরে এই পরীক্ষা না নিয়ে ৫০ নম্বরে পরীক্ষা নেয়া হতে পারে। চলতি শিক্ষাবর্ষেই এ পরীক্ষা পুনরায় চালু হতে পারে বলে শিক্ষা প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন।

পরীক্ষা পদ্ধতিতে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রম ও এর মূল্যায়ন পদ্ধতিতে প্রয়োজনে পরিবর্তন আনা হতে পারে। এটি এখন যে একেবারে শতভাগ স্থায়ী তা কিন্তু নয়। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের কাছে যে ‘কারেকশনগুলো’ আসবে সেগুলো সমাধান করা হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানিয়ে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, মূল্যায়ন পদ্ধতিতে চ্যালেঞ্জ আছে। নতুন শিক্ষাক্রমে বেশকিছু সংযোজন আসছে, এগুলো বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। এখানে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তনের পাশাপাশি আরও কিছু পরিবর্তন করতে হবে বলে মনে করেন নতুন শিক্ষামন্ত্রী।

তড়িৎ গতিতে পরীক্ষা

উঠিয়ে দেয়ায় সমস্যা

নতুন শিক্ষাক্রমে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে নবম শ্রেণীতে বিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) বিভাজন থাকছে না। এ বিষয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়ে আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের আলাদা বিভাগ বেছে নেয়ার সুযোগ থাকছে না। সব শিক্ষার্থীকে একই পাঠ্যবই পড়তে হবে।

২০২৫ সালে এই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণীতে উঠবে, ওই সময়ও বিভাগ বিভাজনের সুযোগ থাকবে না। ২০২৬ সালে এ শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। সেখানে তাদের পরীক্ষার বিষয় ও প্রশ্নপত্র একই থাকবে। তখন শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে সূচক বা চিহ্নভিত্তিক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর তাসলিমা বেগম সংবাদকে বলেছেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম খুবই ভালো ও সময়োপযোগী উদ্যোগ ছিল। কিন্তু খুবই তড়িৎ গড়িতে এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কারও মতামত না নিয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করা সঠিক হয়নি।’

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিন্ধান্ত নেয়া উচিৎ ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘প্রথম বর্ষে প্রথম শ্রেণী, এরপর দ্বিতীয় শ্রেণী এভাবে পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা পদ্ধতি উঠিয়ে দেয়া যেতো। এর আগে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া, অভিভাবক নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর ধারণা দেয়া এবং শিক্ষকদের বেতনভাতা ও মর্যাদা বাড়িয়ে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এগুলোর কোনোটিই ঠিকমত হয়নি।’ এ কারণে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে বলে তার অভিমত।

২০২৩ সালে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। প্রথম বছর প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমের পুরো পাঠদান শুরু হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ২০২৫ সালে প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম এবং মাধ্যমিকের দশম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদানের সিন্ধান্ত রয়েছে সরকারের।

নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর ২০২২ থেকে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে চার লাখের মতো শিক্ষককে সাত দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের’ (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম।

তিনি সংবাদকে বলেন, ‘অষ্টম ও নবম শ্রেণীতেও নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদানের জন্য গত নভেম্বর-ডিসেম্বর চার লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।’

তবে শিক্ষক প্রশিক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর তাসলিমা বেগম বলেন, ‘গতানুগতিক প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশ^মানের শিক্ষক তৈরি করা সম্ভব নয়।’ এজন্য তিনি ‘ইউনিভার্সিটি অব এডুকেশন ইন শ্রীলঙ্কা’র আদলে দেশে একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন।

প্রফেসর তাসলিমা বেগম বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার ওই ইউনিভার্সিটি থেকে ন্যূনতম তিনমাস প্রশিক্ষণ না নিয়ে কেউ ক্লাস রুমে ঢুকতে পারেন না। ভালো প্রশিক্ষণ পেলে কেউ শিক্ষকতার পেশাও ছাড়তে চাইবে না। কিন্তু আমাদের এখানে যে কেউ ইচ্ছেমতো শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। আবার অপেক্ষাকৃত ভালোমানের শিক্ষকরা সম্মানজনক বেতনভাতা ও মর্যাদা না পেয়ে এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।’

লক্ষ্যহীন শিক্ষা

শিক্ষাবিদরা বলছেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ‘টার্গেট বা লক্ষ্যহীন’। বেশিরভাগই শিক্ষার্থীই জানে না লেখাপড়া শেষ করে তারা কী করবে। এ কারণে কর্মমুখী অর্থাৎ কারিগরি শিক্ষা প্রসারের ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা লক্ষ্যহীন। শিক্ষার্থীরা এখন জানে না শেখাপড়া শেষে তারা কী করবে; তাদের টার্গেট কী। তারা কী চাকরি করবে আদৌ চাকরি পাবে কি না তা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগের শেষ নেই। এই হতাশা ও আস্থাহীনতার কারণে শিক্ষার্থীরা ঠিকমত স্কুল-কলেজে যেতে চায় না।’

এ কারণে যাদের যথেষ্ট টাকা-পয়সা আছে তারা সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই সঙ্কট নিরসনে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই।’

নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও (নওফেল) তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নজর দিতে চান। তিনি বিদায়ী মন্ত্রিসভার শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, আগের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে দায়িত্ব পালন করবেন।

তারা কর্মসংস্থানের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে, স্মার্ট জেনারেশনের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট যত দক্ষতা আছে, সেগুলো তারা শিক্ষাক্রমে নিয়ে আসতে চান।

এতে করে শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে নিজেদের শিক্ষা বিষয়ে পরিকল্পনা সাজাতে পারবে-এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মূলত কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় নিয়ে তারা গোটা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে চান।

সরকার ২০১০ সালে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ প্রণয়ন করে। এরপর ২০১২ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৩ সালে ওই শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়।

পরীক্ষার আগের সপ্তাহ পর্যন্ত ফরম পূরণের সুযোগ, জানাল শিক্ষা বোর্ড

ছবি

মহামারির আশঙ্কায় এইচএসসি কেন্দ্রে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও ডেঙ্গু প্রতিরোধের নির্দেশ

পরীক্ষা পেছানোর পরিকল্পনা নেই, প্রস্তুত শিক্ষা বোর্ডগুলো

ছবি

ভিসি নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ২৬ জুন

ছবি

আদালতের রায়ে এক যুগ পর চাকরিতে ফিরছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী

ছবি

‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ চালু না হওয়া পর্যন্ত ইউজিসির অধীনেই চলবে সাত কলেজ

ছবি

উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি, আন্দোলনে ছাত্রদলসহ শিক্ষার্থীরা

ছবি

শাহরিয়ার সাম্য হত্যার ঘটনায় ঢাবিতে অর্ধদিবস শ্রদ্ধা, নিরাপত্তা জোরদারে উদ্যোগ

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল স্থানান্তর ও রাজস্ব ফাঁকিতে দুদকের নজরে দুই প্রতিষ্ঠান

ছবি

কোরবানির ঈদ আর গ্রীষ্ম: লম্বা ছুটিতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

ছবি

১৬ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন, বাদ শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী নেতাদের নাম

ছবি

কুয়েটে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষকদের অনড় কর্মবিরতি, অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা

ছবি

৬ বছর পর ইইডিতে উপপরিচালক পদায়ন

ছবি

শিক্ষার্থী-শিক্ষক উত্তেজনায় কুয়েটে অনিশ্চয়তায় একাডেমিক কার্যক্রম

ছবি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে নিয়মিত কমিটি গঠন স্থগিত

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ২৪ মে

ছবি

মে মাসের মাঝামাঝিতে তারিখ ঘোষণার লক্ষ্যে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ

ছবি

কক্সবাজারে পরীক্ষা দিচ্ছে সেই ১৩ শিক্ষার্থী

ছবি

ভিসি অপসারণ একমাত্র দাবি: কুয়েট শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলন

ছবি

কৃষি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ১২ এপ্রিল

ছবি

বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা, অংশ নেবে ১৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থী

ছবি

১৩৫ কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ছবি

শিক্ষা সংস্কারে পদক্ষেপ নেই, বাজেট বাড়ানোর দাবি শিক্ষাবিদদের

ছবি

এসএসসি পরীক্ষার জন্য কোচিং সেন্টার বন্ধ ও কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা

ছবি

ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের ফল প্রকাশে দুই মাসের স্থগিতাদেশ

ছবি

পেছালো এসএসসির গণিত পরীক্ষা, নতুন সময়সূচি প্রকাশ

ছবি

ঢাবির সহিংসতা: ১২৮ জনের তালিকা চূড়ান্ত নয়, পুনঃতদন্তে কমিটি

ছবি

নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ অনুমোদিত

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিংসতা: ১২৮ জনের তালিকা প্রকাশ

ছবি

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা

ছবি

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে ঢাবিতে রোববার ছুটি

ছবি

শাবিপ্রবির ভর্তি পরীক্ষায় আপাতত সব কোটা স্থগিত

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪-২০ মার্চ অনলাইনে ক্লাস

ছবি

এডাব্লিউএস ক্লাউড ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য জাপানে ক্যারিয়ারের সুযোগ

ছবি

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং সেন্টার

ছবি

ঢাবি ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার আসিফের মুক্তির দাবিতে শাহবাগ থানায় একদল ব্যক্তি

tab

শিক্ষা

শিক্ষায় বড় চ্যালেঞ্জ নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন

রাকিব উদ্দিন

শনিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৪

শিক্ষায় এখন বড় চ্যালেঞ্জ নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন। গত শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত সব ধরনের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এই সিন্ধান্ত গ্রহণে অংশীজনদের মতামত না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। এই অসন্তোষ লাঘব এবং শিক্ষাক্রমের ওপর অভিভাবকদের আস্থা ফেরানোই এখন শিক্ষা প্রশাসনের বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যক্তিরা।

এছাড়া ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া, এই নীতিমালার আলোকে ‘শিক্ষা আইন’ করতে না পারা, শিক্ষক নিয়োগে ‘পিএসসি’র আলোকে একটি কর্মকমিশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ না নেয়া, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যথাযথ জবাবদিহিতার আওতায় আনতে না পারা এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এক শ্রেণীর স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ কারণে প্রায়ই আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়ছে শিক্ষা প্রশাসন।

জানতে চাইলে ‘শিক্ষানীতি ২০১০’ প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর শেখ ইকরামুল কবির সংবাদকে বলেন, ‘আমরা ছয় মাসে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিলাম। দুই হাজারের বেশি অংশীজন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতামত নিয়ে এটি করেছিলাম। এই নীতির বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা আইন জরুরি ছিল। সেটি হলো না ১২ বছরের বেশি সময়েও।’

কোচিং সেন্টারের মালিক ও নোট-গাইড বইয়ের ব্যবসায়ীদের বাধার কারণে আইনটি হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘তারা ব্যাপকভাবে টাকা-পয়সা ব্যয় করেছে। এর প্রভাবেই আইন না করে ব্লেইম গেম হয়েছে। শিক্ষা আইন হলে কোচিং বাণিজ্য ও নোট-গাইড বইয়ের ব্যবসা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যেতো।’

শিক্ষা আইন হলে শিক্ষা প্রশাসনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা অনেকটাই কমে আসতো মন্তব্য করে শেখ ইকরামুল কবির বলেন, ‘আইনটি না হওয়ার কারণেই এখন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশকেই ওইসব অনিয়ম-দুর্নীতির পেছতে ছুটতে হচ্ছে। সমালোচনাও হচ্ছে।’

পরীক্ষা পদ্ধতি আবারও ফিরতে পারে

প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত বার্ষিক ও অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরতে পারে। গত শিক্ষাবর্ষে ওই পরীক্ষা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে আগের মতো বিষয়ভিত্তিক শতভাগ নম্বরে এই পরীক্ষা না নিয়ে ৫০ নম্বরে পরীক্ষা নেয়া হতে পারে। চলতি শিক্ষাবর্ষেই এ পরীক্ষা পুনরায় চালু হতে পারে বলে শিক্ষা প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন।

পরীক্ষা পদ্ধতিতে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রম ও এর মূল্যায়ন পদ্ধতিতে প্রয়োজনে পরিবর্তন আনা হতে পারে। এটি এখন যে একেবারে শতভাগ স্থায়ী তা কিন্তু নয়। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের কাছে যে ‘কারেকশনগুলো’ আসবে সেগুলো সমাধান করা হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানিয়ে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, মূল্যায়ন পদ্ধতিতে চ্যালেঞ্জ আছে। নতুন শিক্ষাক্রমে বেশকিছু সংযোজন আসছে, এগুলো বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। এখানে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তনের পাশাপাশি আরও কিছু পরিবর্তন করতে হবে বলে মনে করেন নতুন শিক্ষামন্ত্রী।

তড়িৎ গতিতে পরীক্ষা

উঠিয়ে দেয়ায় সমস্যা

নতুন শিক্ষাক্রমে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে নবম শ্রেণীতে বিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) বিভাজন থাকছে না। এ বিষয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়ে আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের আলাদা বিভাগ বেছে নেয়ার সুযোগ থাকছে না। সব শিক্ষার্থীকে একই পাঠ্যবই পড়তে হবে।

২০২৫ সালে এই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণীতে উঠবে, ওই সময়ও বিভাগ বিভাজনের সুযোগ থাকবে না। ২০২৬ সালে এ শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। সেখানে তাদের পরীক্ষার বিষয় ও প্রশ্নপত্র একই থাকবে। তখন শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে সূচক বা চিহ্নভিত্তিক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর তাসলিমা বেগম সংবাদকে বলেছেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম খুবই ভালো ও সময়োপযোগী উদ্যোগ ছিল। কিন্তু খুবই তড়িৎ গড়িতে এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কারও মতামত না নিয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করা সঠিক হয়নি।’

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিন্ধান্ত নেয়া উচিৎ ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘প্রথম বর্ষে প্রথম শ্রেণী, এরপর দ্বিতীয় শ্রেণী এভাবে পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা পদ্ধতি উঠিয়ে দেয়া যেতো। এর আগে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া, অভিভাবক নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর ধারণা দেয়া এবং শিক্ষকদের বেতনভাতা ও মর্যাদা বাড়িয়ে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এগুলোর কোনোটিই ঠিকমত হয়নি।’ এ কারণে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে বলে তার অভিমত।

২০২৩ সালে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। প্রথম বছর প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমের পুরো পাঠদান শুরু হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ২০২৫ সালে প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম এবং মাধ্যমিকের দশম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদানের সিন্ধান্ত রয়েছে সরকারের।

নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর ২০২২ থেকে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে চার লাখের মতো শিক্ষককে সাত দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের’ (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম।

তিনি সংবাদকে বলেন, ‘অষ্টম ও নবম শ্রেণীতেও নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদানের জন্য গত নভেম্বর-ডিসেম্বর চার লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।’

তবে শিক্ষক প্রশিক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর তাসলিমা বেগম বলেন, ‘গতানুগতিক প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশ^মানের শিক্ষক তৈরি করা সম্ভব নয়।’ এজন্য তিনি ‘ইউনিভার্সিটি অব এডুকেশন ইন শ্রীলঙ্কা’র আদলে দেশে একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন।

প্রফেসর তাসলিমা বেগম বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার ওই ইউনিভার্সিটি থেকে ন্যূনতম তিনমাস প্রশিক্ষণ না নিয়ে কেউ ক্লাস রুমে ঢুকতে পারেন না। ভালো প্রশিক্ষণ পেলে কেউ শিক্ষকতার পেশাও ছাড়তে চাইবে না। কিন্তু আমাদের এখানে যে কেউ ইচ্ছেমতো শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। আবার অপেক্ষাকৃত ভালোমানের শিক্ষকরা সম্মানজনক বেতনভাতা ও মর্যাদা না পেয়ে এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।’

লক্ষ্যহীন শিক্ষা

শিক্ষাবিদরা বলছেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ‘টার্গেট বা লক্ষ্যহীন’। বেশিরভাগই শিক্ষার্থীই জানে না লেখাপড়া শেষ করে তারা কী করবে। এ কারণে কর্মমুখী অর্থাৎ কারিগরি শিক্ষা প্রসারের ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা লক্ষ্যহীন। শিক্ষার্থীরা এখন জানে না শেখাপড়া শেষে তারা কী করবে; তাদের টার্গেট কী। তারা কী চাকরি করবে আদৌ চাকরি পাবে কি না তা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগের শেষ নেই। এই হতাশা ও আস্থাহীনতার কারণে শিক্ষার্থীরা ঠিকমত স্কুল-কলেজে যেতে চায় না।’

এ কারণে যাদের যথেষ্ট টাকা-পয়সা আছে তারা সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই সঙ্কট নিরসনে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই।’

নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও (নওফেল) তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নজর দিতে চান। তিনি বিদায়ী মন্ত্রিসভার শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, আগের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে দায়িত্ব পালন করবেন।

তারা কর্মসংস্থানের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে, স্মার্ট জেনারেশনের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট যত দক্ষতা আছে, সেগুলো তারা শিক্ষাক্রমে নিয়ে আসতে চান।

এতে করে শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে নিজেদের শিক্ষা বিষয়ে পরিকল্পনা সাজাতে পারবে-এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মূলত কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় নিয়ে তারা গোটা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে চান।

সরকার ২০১০ সালে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ প্রণয়ন করে। এরপর ২০১২ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৩ সালে ওই শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়।

back to top