alt

‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ৪৪টি শিক্ষা ভবন আপাতত ভাঙা হচ্ছে না

রাকিব উদ্দিন : মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪

রাজউকের ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষিত ৪৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন আপাতত ভাঙা হচ্ছে না। ভবনগুলোর ব্যবহার অব্যাহত রাখবে শিক্ষা প্রশাসন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) যে প্রক্রিয়ায় ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ শিক্ষা ভবনের তালিকা তৈরি করেছে তাতে আস্থা রাখতে পারছে না শিক্ষা প্রশাসন এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)।

রাজউক গত বছরের ২৯ জানুয়ারি স্কুল-কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের ১৮৭টি ভবনকে মজবুতিকরণ (রেট্রোফিটিং) ও ৪৪টি ভবনকে ‘সিলগালা’ করতে আটটি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী ৪৪টি ভবনকে ‘সিলগালা’ করতে গত ৩ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) নির্দেশনা জারি করেছিল। প্রায় সবকটি ভবন এখনও ব্যবহার হচ্ছে বলে মাউশির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার মঙ্গলবার (৭ মে) সংবাদকে বলেন, কোন একটি অবকাঠামোকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হলে নির্দিষ্ট ‘ইন্ডিকেটর’ (নির্দেশক বা সূচক) লাগে। ‘ইন্ডিকেটর’ ছাড়া কীভাবে একটি ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা সম্ভব?

রাজউক কোনো ‘ইন্ডিকেটরের’ ভিত্তিতে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ শিক্ষা ভবনের তালিকা তৈরি করেছে সেই প্রশ্ন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা জাপানি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হওয়া একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেই হলো?’

জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা হয় না মন্তব্য করে ইইডি প্রধান প্রকৌশলী বলেন, জাপান ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণপ্রবল দেশ। দেশটির ভূমিকম্প ঝুঁকি এক রকম; আর বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরেক রকম।

গত বছরের জানুয়ারি রাজউকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএসএমএমইউ’র (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়) তিনটি ভবন এবং জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের চারটি ভবন ভেঙে ফেলতে হবে।

এছাড়া ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলোজির তিনটি ভবন মজবুতিকরণ ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চারটি ভবন মজবুতিকরণ করতে হবে। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ছয়টি ভবন মজবুতিকরণ ও একটি ভবন ভেঙে ফেলা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) ১০টি ভবন মজবুতিকরণ ও একটি ভবন ভেঙে ফেলা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ১০টি ভবন মজবুতিকরণ ও তিনটি ভবন ভেঙে ফেলার সুপারিশ করে রাজউক।

রাজউক থেকে গত ১৪ মার্চ ইইডির প্রধান প্রকৌশলীকে দেয়া এক চিঠিতে ১৫৪টি ভবন মজবুতিকরণ ও ৩০টি ভবন ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে ১৮৭টি ভবন মজবুতিকরণ ও ৪২টি ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইইডির একজন জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী বলেন, ‘ভবন রেট্রোফিটিং অনেক ব্যয়বহুল। একটি চারতলা ভবন রেট্রোফিটিং করতে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। এই টাকা কে বহন করবে? তাছাড়া হঠাৎ ভবনগুলো ভাঙতে গেলে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। শ্রেণী কার্যক্রম ব্যাহত হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামতে পারে।’

এ বিষয়ে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘ভবনগুলোর কর্তৃপক্ষ মাউশি। আমরা চাইলেই ভেঙে ফেলতে পারি না, রেট্রোফিটিংও করতে পারি না। তাছাড়া হঠাৎ ভবনগুলো ভাঙা হলে প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে কীভাবে?’ তিনি এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে মাউশি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভা করা হবে বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ইইডি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করে থাকে। যে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নির্বাচিত অবকাঠামোর নির্মাণ সমাপ্তির পর সেটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’ এজন্য তারা চাইলেই কোনো ভবন ভেঙে ফেলা বা ‘রেট্রোফিটিং’ করতে পারেন না।

গত ৩ এপ্রিল মাউশির সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) আ. খালেক স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, রাজউকের তালিকায় থাকা বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবনগুলো মজবুত করতে হবে। আর ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ ৪৪টি ভবন সাত দিনের মধ্যে খালি করে সিলগালা করতে হবে অথবা ভেঙে ফেলতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী মঙ্গলবার সংবাদকে বলেছেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ্য থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরাও কথা বলেছি। হঠাৎ ভবনগুলো ভাঙতে গেলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। শিক্ষা উপকরণ নষ্ট হবে।’

ভবনগুলো অপসারণ করতে হলে ‘রিলোকেশন প্ল্যান’ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ জন্য বাজেট প্রয়োজন; ভবনগুলোতে যে শিক্ষা উপকরণ ও ল্যাব রয়েছে সেগুলো স্থানান্তর প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা কোথাও বসবে সেসব বিষয়ও ভাবতে হবে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ভবন ভাঙা হলে শিক্ষা কার্যক্রম একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।’

অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী জানান, ইইডির পক্ষ্য থেকে মাউশিকে বলা হয়েছে এ বিষয়ে তারা সভা করতে চান। সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের কর্মকর্তারাও থাকবেন। প্রয়োজনে ইইডির প্রকৌশলীরা ওইসব ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবন আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পারেন বলে জানান তিনি।

মাউশি যেসব প্রতিষ্ঠানের ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে সেগুলো হলোÑ বাড্ডার আলাতুন্নেছা উচ্চমাধ্যমিক স্কুল, আলাতুন্নেছা উচ্চমাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাভারের ভাকুর্তা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জের দেলপাড়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মিরপুর-১ নম্বরের সরকারি বাংলা কলেজ, নারায়ণগঞ্জের সরকারি কদম রসুল কলেজ, গাজীপুরের সরকারি কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজ, ডেমরার হায়দার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর ১৩ নম্বরের হাজী আলী হোসেন উচ্চবিদ্যালয়, পল্টনের আরামবাগ উচ্চবিদ্যালয়, সূত্রাপুরের কবি নজরুল সরকারি কলেজ, গাজীপুরের কালীগঞ্জ আর আর এন পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়, কেরানীগঞ্জ বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, গোড়ানের আলী আহমেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সায়েদাবাদের করাতিটোলা সিএমএস উচ্চবিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, যাত্রাবাড়ীর শহীদ জিয়া বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাভারের ভাকুর্তার শ্যামলনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, তেজগাঁও মডেল উচ্চবিদ্যালয়, কদমতলীর একেকে উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড ব্রাইট কলেজ, বাড্ডার একেএম রহমাতুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, কদমতলীর কেএম মাইনুদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় (মিঠাব), আজিমপুরের অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কোতয়ালী থানার আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি ও লালবাগের আনন্দময়ী বালিকা বিদ্যালয়।

এদিকে কবি নজরুল সরকারি কলেজ, খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, গোড়ানের আলী আহমেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আহমেদ বাওয়ানী একাডেমির শিক্ষকরা সংবাদকে জানিয়েছেন, তারা স্বাভাবিকভাবেই ভবনগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

রাজউকের অধীনে ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প : রাজউক অংশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিএমডিপি এলাকার সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবনগুলো ভেঙে ফেলার সুপারিশ করেছে।

‘ঢাকা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান’ (ডিএমডিপি) এলাকার সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন তিন হাজার ২৫২টি ভবনের (স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়, হাসপাতাল ইত্যাদি) র‌্যাপিড ভিজ্যুয়াল অ্যাসেসমেন্ট, ৫৭৯টি ভবনের প্রিলিমিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট এবং ১৮৭টি ডিটেইল ইঞ্জিরিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করে ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ নিরূপণ করা হয়।

ছবি

আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে ১০ শিক্ষার্থী

ছবি

বুয়েটের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি আবেদন শুরু ১৬ নভেম্বর

ছবি

শনিবারেও ক্লাস এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

ছবি

বছরে ১০ শতাংশ বেতন বাড়ানোর দাবি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশনের

ছবি

৪৯তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার ২ নভেম্বর শুরু

ছবি

সিরাজগঞ্জে ৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ফেল

ছবি

ইডেন ও বদরুন্নেসায় ‘সহশিক্ষা’ চালুর প্রস্তাব বাতিলের দাবি

আজ থেকে আমরণ অনশনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা

ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গলবারের সব পরীক্ষা স্থগিত

ছবি

ঢাকা কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ‘হাতাহাতি’: সরকারি কলেজগুলোতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন ও পরীক্ষার সূচি প্রকাশ

ছবি

এমআইএসটির ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা

ছবি

এইচএসসির ফল ১৬ অক্টোবর প্রকাশ হতে পারে

দুর্গাপূজার ছুটি শেষে খুলেছে স্কুল, রোববার থেকে কলেজ

ছবি

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ২-৩ হাজার টাকার প্রস্তাব পাঠাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ছবি

১২ ডিসেম্বর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা

ছবি

শিক্ষক দিবসে নারায়ণগঞ্জে ৫ শিক্ষককে সন্মাননা দেয়া হয়েছে

ছবি

এমপিও শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া বাড়লো ৫০০ টাকা, প্রত্যাখান

ছবি

ইউজিসি সদস্য হলেন চাবিপ্রবি উপাচার্য

ছবি

শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের হার্টে অস্ত্রোপচার

ছবি

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান-সহকারী প্রধান নিয়োগেও নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে সরকার

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষার ফল ৬০ দিনের মধ্যেই

ছবি

স্বাতন্ত্র্য ও শিক্ষার উন্নয়নে ‘অক্সফোর্ড মডেলে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগের বিরুদ্ধে মানববন্ধন সাত কলেজের শিক্ষকদের

ছবি

অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর

ছবি

জরিপ: পিআর সম্পর্কে ধারণা নেই ৫৬ শতাংশের, ভোট দিতে চান ৯৪ শতাংশ

ছবি

এসএসসি পরীক্ষায় ১৪০টি ভেন্যু কেন্দ্রের সবগুলোই বাতিল করছে যশোর বোর্ড

ছবি

র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ তিনে নেই অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়!

ছবি

ইইডি ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতি: কাউন্সিল নিয়ে কর্তৃত্বের ‘দ্বন্দ্ব’

ছবি

ডিমলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রক্সি দিয়ে চলছে পাঠদান

ছবি

৪৭তম বিসিএস: পৌনে চার লাখ পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণে প্রিলিমিনারি সম্পন্ন

ছবি

ঢাকার ৭ সরকারি কলেজ: উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষা সংকোচন, কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো বিলুপ্তির চেষ্টার অভিযোগ

ছবি

দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১১ দিনের লম্বা ছুটিতে স্কুল-কলেজ

ছবি

তৃতীয় আবেদনেও কলেজ পায়নি জিপিএ-৫ পাওয়া ২৯৫ জনসহ ৫ হাজার শিক্ষার্থী

ছবি

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই: প্রাথমিকের বই ছাপা শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহে

ছবি

ঢাকা কলেজ অর্থনীতি বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠিত

tab

‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ৪৪টি শিক্ষা ভবন আপাতত ভাঙা হচ্ছে না

রাকিব উদ্দিন

মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪

রাজউকের ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষিত ৪৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন আপাতত ভাঙা হচ্ছে না। ভবনগুলোর ব্যবহার অব্যাহত রাখবে শিক্ষা প্রশাসন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) যে প্রক্রিয়ায় ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ শিক্ষা ভবনের তালিকা তৈরি করেছে তাতে আস্থা রাখতে পারছে না শিক্ষা প্রশাসন এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)।

রাজউক গত বছরের ২৯ জানুয়ারি স্কুল-কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের ১৮৭টি ভবনকে মজবুতিকরণ (রেট্রোফিটিং) ও ৪৪টি ভবনকে ‘সিলগালা’ করতে আটটি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী ৪৪টি ভবনকে ‘সিলগালা’ করতে গত ৩ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) নির্দেশনা জারি করেছিল। প্রায় সবকটি ভবন এখনও ব্যবহার হচ্ছে বলে মাউশির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার মঙ্গলবার (৭ মে) সংবাদকে বলেন, কোন একটি অবকাঠামোকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হলে নির্দিষ্ট ‘ইন্ডিকেটর’ (নির্দেশক বা সূচক) লাগে। ‘ইন্ডিকেটর’ ছাড়া কীভাবে একটি ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা সম্ভব?

রাজউক কোনো ‘ইন্ডিকেটরের’ ভিত্তিতে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ শিক্ষা ভবনের তালিকা তৈরি করেছে সেই প্রশ্ন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা জাপানি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হওয়া একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেই হলো?’

জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা হয় না মন্তব্য করে ইইডি প্রধান প্রকৌশলী বলেন, জাপান ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণপ্রবল দেশ। দেশটির ভূমিকম্প ঝুঁকি এক রকম; আর বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরেক রকম।

গত বছরের জানুয়ারি রাজউকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএসএমএমইউ’র (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়) তিনটি ভবন এবং জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের চারটি ভবন ভেঙে ফেলতে হবে।

এছাড়া ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলোজির তিনটি ভবন মজবুতিকরণ ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চারটি ভবন মজবুতিকরণ করতে হবে। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ছয়টি ভবন মজবুতিকরণ ও একটি ভবন ভেঙে ফেলা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) ১০টি ভবন মজবুতিকরণ ও একটি ভবন ভেঙে ফেলা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ১০টি ভবন মজবুতিকরণ ও তিনটি ভবন ভেঙে ফেলার সুপারিশ করে রাজউক।

রাজউক থেকে গত ১৪ মার্চ ইইডির প্রধান প্রকৌশলীকে দেয়া এক চিঠিতে ১৫৪টি ভবন মজবুতিকরণ ও ৩০টি ভবন ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে ১৮৭টি ভবন মজবুতিকরণ ও ৪২টি ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইইডির একজন জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী বলেন, ‘ভবন রেট্রোফিটিং অনেক ব্যয়বহুল। একটি চারতলা ভবন রেট্রোফিটিং করতে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। এই টাকা কে বহন করবে? তাছাড়া হঠাৎ ভবনগুলো ভাঙতে গেলে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। শ্রেণী কার্যক্রম ব্যাহত হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামতে পারে।’

এ বিষয়ে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘ভবনগুলোর কর্তৃপক্ষ মাউশি। আমরা চাইলেই ভেঙে ফেলতে পারি না, রেট্রোফিটিংও করতে পারি না। তাছাড়া হঠাৎ ভবনগুলো ভাঙা হলে প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে কীভাবে?’ তিনি এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে মাউশি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভা করা হবে বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ইইডি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করে থাকে। যে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নির্বাচিত অবকাঠামোর নির্মাণ সমাপ্তির পর সেটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’ এজন্য তারা চাইলেই কোনো ভবন ভেঙে ফেলা বা ‘রেট্রোফিটিং’ করতে পারেন না।

গত ৩ এপ্রিল মাউশির সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) আ. খালেক স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, রাজউকের তালিকায় থাকা বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবনগুলো মজবুত করতে হবে। আর ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ ৪৪টি ভবন সাত দিনের মধ্যে খালি করে সিলগালা করতে হবে অথবা ভেঙে ফেলতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী মঙ্গলবার সংবাদকে বলেছেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ্য থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরাও কথা বলেছি। হঠাৎ ভবনগুলো ভাঙতে গেলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। শিক্ষা উপকরণ নষ্ট হবে।’

ভবনগুলো অপসারণ করতে হলে ‘রিলোকেশন প্ল্যান’ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ জন্য বাজেট প্রয়োজন; ভবনগুলোতে যে শিক্ষা উপকরণ ও ল্যাব রয়েছে সেগুলো স্থানান্তর প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা কোথাও বসবে সেসব বিষয়ও ভাবতে হবে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ভবন ভাঙা হলে শিক্ষা কার্যক্রম একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।’

অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী জানান, ইইডির পক্ষ্য থেকে মাউশিকে বলা হয়েছে এ বিষয়ে তারা সভা করতে চান। সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের কর্মকর্তারাও থাকবেন। প্রয়োজনে ইইডির প্রকৌশলীরা ওইসব ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবন আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পারেন বলে জানান তিনি।

মাউশি যেসব প্রতিষ্ঠানের ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে সেগুলো হলোÑ বাড্ডার আলাতুন্নেছা উচ্চমাধ্যমিক স্কুল, আলাতুন্নেছা উচ্চমাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাভারের ভাকুর্তা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জের দেলপাড়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মিরপুর-১ নম্বরের সরকারি বাংলা কলেজ, নারায়ণগঞ্জের সরকারি কদম রসুল কলেজ, গাজীপুরের সরকারি কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজ, ডেমরার হায়দার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর ১৩ নম্বরের হাজী আলী হোসেন উচ্চবিদ্যালয়, পল্টনের আরামবাগ উচ্চবিদ্যালয়, সূত্রাপুরের কবি নজরুল সরকারি কলেজ, গাজীপুরের কালীগঞ্জ আর আর এন পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়, কেরানীগঞ্জ বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, গোড়ানের আলী আহমেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সায়েদাবাদের করাতিটোলা সিএমএস উচ্চবিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, যাত্রাবাড়ীর শহীদ জিয়া বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাভারের ভাকুর্তার শ্যামলনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, তেজগাঁও মডেল উচ্চবিদ্যালয়, কদমতলীর একেকে উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড ব্রাইট কলেজ, বাড্ডার একেএম রহমাতুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, কদমতলীর কেএম মাইনুদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় (মিঠাব), আজিমপুরের অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কোতয়ালী থানার আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি ও লালবাগের আনন্দময়ী বালিকা বিদ্যালয়।

এদিকে কবি নজরুল সরকারি কলেজ, খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, গোড়ানের আলী আহমেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আহমেদ বাওয়ানী একাডেমির শিক্ষকরা সংবাদকে জানিয়েছেন, তারা স্বাভাবিকভাবেই ভবনগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

রাজউকের অধীনে ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প : রাজউক অংশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিএমডিপি এলাকার সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবনগুলো ভেঙে ফেলার সুপারিশ করেছে।

‘ঢাকা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান’ (ডিএমডিপি) এলাকার সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন তিন হাজার ২৫২টি ভবনের (স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়, হাসপাতাল ইত্যাদি) র‌্যাপিড ভিজ্যুয়াল অ্যাসেসমেন্ট, ৫৭৯টি ভবনের প্রিলিমিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট এবং ১৮৭টি ডিটেইল ইঞ্জিরিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করে ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ নিরূপণ করা হয়।

back to top