alt

শিক্ষা

দাবির মুখে এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা বাতিল

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০২৪

মঙ্গলবার সচিবালয়ে গিয়ে ছাত্রছাত্রীরা এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা বাতিল এবং অটো প্রমোশনের দাবি জানায়-সংবাদ

পরীক্ষার্থীদের দাবিতে প্রেক্ষিতে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কীভাবে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে সেটি পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘বাকি পরীক্ষাগুলো আর হবে না। ফলাফল কীভাবে দেয়া হবে সে সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।’

নতুন করে আর পরীক্ষা না নিয়ে এ পর্যন্ত নেয়া পরীক্ষা ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের’ মাধ্যমে ফল প্রকাশ করার দাবিতে গত চার-পাঁচ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল পরীক্ষার্থীরা। সেই দাবির প্রেক্ষিতেই অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়েছে।

‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ কীভাবে হতে পারে- জানতে চাইলে তপন কুমার সরকার বলেন, ‘যেসব পরীক্ষা আমরা ইতোমধ্যে নিয়েছি, সেসব বিষয়ে এসএসসিতে শিক্ষার্থীরা যে নম্বর পেয়েছিল সেই আলোকে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। তাছাড়া কোভিড-মহামারীর সময় আমাদের সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে। খুব একটা সমস্যা হবে না।’

মূল্যায়ন প্রক্রিয়া কবে নাগাদ চূড়ান্ত হতে পারে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই-তিন দিনের মধ্যেই সভা করে তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টের দিকের গেট দিয়ে একসঙ্গে নিরাপত্তা বাধা উপেক্ষা করে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। তারা ৬ ও ১১ নম্বর ভবনের মাঝামাঝি জায়গায় বসে পড়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

এ সময় সচিবালয়ের সবগুলো গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিপত্তিতে পড়তে হয়। বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাউকে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি এবং কেউ সচিবালয় থেকে বেরও হতে পারেনি।

সচিবালয়ে প্রবেশের পর দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় পরীক্ষার্থীরা। এ সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের কোনো কিছু জানানো হয়নি। এর এক ঘণ্টা পর বিকেল ৪টার কিছু আগে শতাধিক শিক্ষার্থী একযোগে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের ২০ তলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অবস্থান নেয়।

সেখানেও বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ৬ নম্বর ভবনের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছুটা ‘উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা’ নিয়ে চলাচলা করতে দেখা যায়। যদিও পরীক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেন।

এর পর শিক্ষার্থীদের পক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব শেখ আবদুর রশীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তখনও শিক্ষা সচিবের দপ্তরের সামনে নানা স্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা।

বৈঠক শেষে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন। এ সময় উল্লাসে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এর পর সচিবালয় ত্যাগ করতে থাকেন পরীক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে ঢাকা কলেজ, ঢাকা স্টেট কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ, বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজসহ ঢাকা এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।

‘পরীক্ষার্থী’ নবদ্বীপ চৌধুরী বলেন, তারা গত চার দিন ধরে আন্দোলন করছেন। তাদের ‘অনেক ভাই’ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন পরীক্ষা নিলে তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না।

‘মূল মেধাটা’ অনার্সে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই হয় মন্তব্য করে ওই পরীক্ষার্থী বলেন, নতুন করে আর পরীক্ষা না নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হোক।

শিক্ষার্থীরা জানান, তারা এ পর্যন্ত মাত্র ৭টি পরীক্ষা দিতে পেরেছেন। নতুন করে রুটিন প্রকাশ করলে পরীক্ষা শেষ করতে আরও অনেক সময় লেগে যাবে। তখন তারা ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সময় পাবেন না। সে জন্য যে সাতটি পরীক্ষা হয়েছে, সেসব পরীক্ষা এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এভাবে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের’ মাধ্যমে এইচএসসির ফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন ওই পরীক্ষার্থী।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপাতিত্বে এক সভায় এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের জানান, ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত বিষয়গুলোর পরীক্ষা নেয়ার কথা থাকলেও তা আরো দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পাশাপাশি ঠিক হয়েছে, শিক্ষার্থীদের অর্ধেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। অর্থাৎ, আগে যে বিষয়ে আটটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো, সেই বিষয়ে এখন চারটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পরীক্ষার জন্য আগের মতোই পূর্ণ সময় থাকবে।

কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অটল থেকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দশ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি এবং আলোচনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যান। এ সময় অন্যরা বাইরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।

সিলেট বিভাগ বাদে গত ৩০ জুন এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা ৯ জুলাই শুরু হয়। মোট ৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আটকে যায় পরীক্ষা। ১৮ জুলাই থেকে কোনো পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। এরপর বারবার পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয় শিক্ষা প্রশাসন। সূচি অনুযায়ী, এখনো ১৩ দিনের মোট ৬১টি বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া বাকি রয়েছে। এইচএসসি ও সমমানে এবার ১৪ লাখ ৫০ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী সহিংসতার মধ্যে ১৬ জুলাই রাতেই সারাদেশে স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিকসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সে কারণে ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়।

পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাদ

ছবি

এনসিটিবি ঘেরাও নিয়ে দুই সংগঠনের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

শিক্ষাবর্ষের ১৪ দিন গড়ালেও সব শিক্ষার্থী পাঠ্যবই পায়নি

ছবি

গত বছর বিডিকলিংয়ে আইসিটি প্রশিক্ষণ নিয়েছে ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী

পীরগাছায় অধ্যক্ষ পদ শূন্য: সংকটে শিক্ষক-কর্মচারী ও প্রশাসনিক কার্যক্রম

প্রকল্পের আওতায় সাধারণ হাইস্কুলে বৃত্তিমূলক শিক্ষা, ৫ বছরেও শিক্ষক নিয়োগের সুরাহা হয়নি

মাধ্যমিকের ৩টি বইয়ের ছাপা ২০ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করতে চায় এনসিটিবি

জাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা নাতি-নাতনি ও ভিসি কোটা বাতিল; ইউনিট থাকছে ৭টি

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: গুচ্ছে থাকতে ‘তৃতীয় অনুরোধ’ মন্ত্রণালয়ের

চার বছর পর ৬ লাখ শিক্ষার্র্থীর বৃত্তির বকেয়া টাকা ছাড়

ছবি

মিডওয়াইফারি ডিপ্লোমা কোর্সে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে বিকাশ

ছবি

প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে জাইকা ও সরকারের ৩৭.৮ কোটি টাকার অনুদান চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ

ছবি

২০ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি

অভিবাসীদের দক্ষতা উন্নয়নে আমি প্রবাসী ও শিখো

ছবি

স্কুলে ভর্তির ফল প্রকাশ,‌ জানবেন যেভাবে

ছবি

প্রাথমিকের মাত্র ১ কোটি বই উপজেলায় পৌঁছেছে

ছবি

আইডাব্লিউএস অনলাইন স্কুলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০% পর্যন্ত স্কলারশিপ

ছবি

বাউবি প্রকাশ করেছে ২০২৪ সালের এইচএসসি (নিশ-১) পরীক্ষার ফলাফল

ছবি

টেকসই বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের মধ্যে সেরা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি

ছবি

অবসর প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও বলবৎ হবে

পাঠ্যপুস্তক ছাপা ও শিক্ষাক্রমের ওপর ‘শে^তপত্র’ প্রকাশ: বই ছাপায় অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পায়নি এনসিটিবি

ছবি

টিএমজিবি সদস্যদের সন্তানদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ

ছবি

২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা ১০ এপ্রিল শুরু, রুটিন প্রকাশ

ছবি

র‌্যাগিংয়ের দায়ে চুয়েটের ১১ শিক্ষার্থী ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার

ইএফটিতে শিক্ষকদের এমপিও প্রক্রিয়ায় জটিলতা

ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকটে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের অস্থায়ী সমাধান

ছবি

স্কুলে ভর্তির ‘ভাগ্য নির্ধারণ’ ১৭ ডিসেম্বর, মাউশির বিজ্ঞপ্তি

ছবি

৮৫ শতাংশ উপস্থিতি ছাড়া প্রাথমিকে উপবৃত্তি নয়

ছবি

১১তম বেলটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ স্থগিত আদেশ বহাল

ছবি

প্রাথমিকে শরীরচর্চা, সংগীত, চারুকলার শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ: উপদেষ্টা

ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের বেকারত্ব ২৮ শতাংশ

ছবি

আইসিপিসি ঢাকা রিজিওনাল ২০২৪ এ চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি

স্কুলে ভর্তির লটারির তারিখ পরিবর্তন করে ১৭ ডিসেম্বর

মাধ্যমিকের ৩১ কোটি বই ছাপার কাজ এখনও শুরু হয়নি

tab

শিক্ষা

দাবির মুখে এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা বাতিল

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার সচিবালয়ে গিয়ে ছাত্রছাত্রীরা এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা বাতিল এবং অটো প্রমোশনের দাবি জানায়-সংবাদ

মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০২৪

পরীক্ষার্থীদের দাবিতে প্রেক্ষিতে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কীভাবে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে সেটি পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘বাকি পরীক্ষাগুলো আর হবে না। ফলাফল কীভাবে দেয়া হবে সে সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।’

নতুন করে আর পরীক্ষা না নিয়ে এ পর্যন্ত নেয়া পরীক্ষা ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের’ মাধ্যমে ফল প্রকাশ করার দাবিতে গত চার-পাঁচ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল পরীক্ষার্থীরা। সেই দাবির প্রেক্ষিতেই অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়েছে।

‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ কীভাবে হতে পারে- জানতে চাইলে তপন কুমার সরকার বলেন, ‘যেসব পরীক্ষা আমরা ইতোমধ্যে নিয়েছি, সেসব বিষয়ে এসএসসিতে শিক্ষার্থীরা যে নম্বর পেয়েছিল সেই আলোকে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। তাছাড়া কোভিড-মহামারীর সময় আমাদের সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে। খুব একটা সমস্যা হবে না।’

মূল্যায়ন প্রক্রিয়া কবে নাগাদ চূড়ান্ত হতে পারে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই-তিন দিনের মধ্যেই সভা করে তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টের দিকের গেট দিয়ে একসঙ্গে নিরাপত্তা বাধা উপেক্ষা করে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। তারা ৬ ও ১১ নম্বর ভবনের মাঝামাঝি জায়গায় বসে পড়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

এ সময় সচিবালয়ের সবগুলো গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিপত্তিতে পড়তে হয়। বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাউকে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি এবং কেউ সচিবালয় থেকে বেরও হতে পারেনি।

সচিবালয়ে প্রবেশের পর দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় পরীক্ষার্থীরা। এ সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের কোনো কিছু জানানো হয়নি। এর এক ঘণ্টা পর বিকেল ৪টার কিছু আগে শতাধিক শিক্ষার্থী একযোগে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের ২০ তলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অবস্থান নেয়।

সেখানেও বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ৬ নম্বর ভবনের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছুটা ‘উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা’ নিয়ে চলাচলা করতে দেখা যায়। যদিও পরীক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেন।

এর পর শিক্ষার্থীদের পক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব শেখ আবদুর রশীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তখনও শিক্ষা সচিবের দপ্তরের সামনে নানা স্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা।

বৈঠক শেষে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন। এ সময় উল্লাসে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এর পর সচিবালয় ত্যাগ করতে থাকেন পরীক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে ঢাকা কলেজ, ঢাকা স্টেট কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ, বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজসহ ঢাকা এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।

‘পরীক্ষার্থী’ নবদ্বীপ চৌধুরী বলেন, তারা গত চার দিন ধরে আন্দোলন করছেন। তাদের ‘অনেক ভাই’ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন পরীক্ষা নিলে তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না।

‘মূল মেধাটা’ অনার্সে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই হয় মন্তব্য করে ওই পরীক্ষার্থী বলেন, নতুন করে আর পরীক্ষা না নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হোক।

শিক্ষার্থীরা জানান, তারা এ পর্যন্ত মাত্র ৭টি পরীক্ষা দিতে পেরেছেন। নতুন করে রুটিন প্রকাশ করলে পরীক্ষা শেষ করতে আরও অনেক সময় লেগে যাবে। তখন তারা ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সময় পাবেন না। সে জন্য যে সাতটি পরীক্ষা হয়েছে, সেসব পরীক্ষা এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এভাবে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের’ মাধ্যমে এইচএসসির ফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন ওই পরীক্ষার্থী।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপাতিত্বে এক সভায় এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের জানান, ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত বিষয়গুলোর পরীক্ষা নেয়ার কথা থাকলেও তা আরো দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পাশাপাশি ঠিক হয়েছে, শিক্ষার্থীদের অর্ধেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। অর্থাৎ, আগে যে বিষয়ে আটটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো, সেই বিষয়ে এখন চারটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পরীক্ষার জন্য আগের মতোই পূর্ণ সময় থাকবে।

কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অটল থেকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দশ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি এবং আলোচনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যান। এ সময় অন্যরা বাইরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।

সিলেট বিভাগ বাদে গত ৩০ জুন এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা ৯ জুলাই শুরু হয়। মোট ৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আটকে যায় পরীক্ষা। ১৮ জুলাই থেকে কোনো পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। এরপর বারবার পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয় শিক্ষা প্রশাসন। সূচি অনুযায়ী, এখনো ১৩ দিনের মোট ৬১টি বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া বাকি রয়েছে। এইচএসসি ও সমমানে এবার ১৪ লাখ ৫০ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী সহিংসতার মধ্যে ১৬ জুলাই রাতেই সারাদেশে স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিকসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সে কারণে ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়।

back to top