এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ
এইচএসসি ও সমমানের ফলাফলে এবার সর্বোচ্চ স্কোর ‘জিপিএ-৫’ বেশি পেয়েছে ৫৩ হাজার ৩১৬ জন। তবে এবার গড় পাসের হার দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে। সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়ার পর বাকি বিষয়গুলোতে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে’র মাধ্যমে ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিকের চেয়ে এবার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করেছে। জিপিএ-৫ ও গড় পাসের হার উভয় সূচকে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা শীর্ষে রয়েছে।
এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল মোট ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে দশ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। সেই হিসাবে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
গত বছর এই পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সেই হিসাবে এবার পাসের হার দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে।
আর এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট জিপিএ-৫ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) পেয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন; যা গতবার ছিল ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। সেই হিসাবে এবার ৫৩ হাজার ৩১৬টি জিপিএ-৫ বেড়েছে।
৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের গড় পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে শীর্ষে রয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের গড় পাসের হার ৯২ দশমিক ৭০ শতাংশের মতো এবং এ বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৯ হাজার ১৮১ জন শিক্ষার্থী।
মানবিক বিভাগে ছাত্রদের পাসের হার ৬৩ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭২ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর মানবিক বিভাগে মোট ২৩ হাজার ৩৪৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ছাত্রদের পাসের হার ৬৯ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে মোট আট হাজার ৮৪৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এবার মোট জিপিএ-৫ বৃদ্ধি পাওয়া ও পাসের হার কমার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। তিনি বলেছেন, যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ফল উচ্চমাধ্যমিকে (এইচএসসি) গড় পাসের হারে বড় রকমের প্রভাব পড়ে না।
এইচএসসির পাসের হার মূলত ইংরেজি এবং আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) বিষয়ের ওপর নির্ভর করে দাবি করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু এবার এই দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল। এর ফলে গড় পাসের হার স্বাভাবিক সময়ের মতোই হয়েছে।’
জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার পেছনে ‘অন্যতম প্রভাব’ হিসেবে বিষয় ম্যাপিং কাজ করেছে দাবি করে তপন কুমার সরকার বলেন, এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে যে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল, সেই শিক্ষার্থী হয়তো উচ্চমাধ্যমিকে মানবিকে পড়েছে। ফলে এসএসসির বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নম্বর এইচএসসিতে এসে মানবিকের বিষয়গুলোর বিপরীতে যোগ হয়েছে। এভাবে বিভাগ পরিবর্তনের কারণে জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে জানান তপন কুমার সরকার।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এ উপলক্ষে এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। বিগত সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করতেন। এর পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হতো। এবার বেলা ১১টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে প্রকাশিত হয়।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন, পাসের হার একটু কমলেও তারা একটা ‘গ্রহণযোগ্য রেজাল্ট’ দিতে পেরেছেন।
পাঁচ বছরের ফল বিশ্লেণে দেখা গেছে, কোভিড মহামারির কারণে ২০২০ সালে ‘অটোপাসে’ শতভাগ উত্তীর্ণ হয়। এর পর থেকে প্রতি বছর পাসের হার ক্রমান্বয়ে কমেছে। ২০২১ সালে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়। তাতেও পাসের হার কমে। ওই বছর ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে।
২০২২ সালে গড় পাসের হার কমে হয় ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এরপর সিলেবাস ও পরীক্ষার বিষয় বাড়িয়ে গতবছর (২০২৩) পরীক্ষা নেয়া হয়। তাতে পাসের হার আরও নেমে ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ দাঁড়ায়।
বোর্ডওয়ারি পাসের হার
এ বছর মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত আলিম পরীক্ষায় পাসের হার সবচেয়ে বেশি- ৯৩ দশমিক ৪০। দ্বিতীয় অবস্থান কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডের অধীন এইচএসসি ভোকেশনাল, বিএম, ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীক্ষায় পাসের হার ৮৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
তবে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এবার গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে আছে সিলেটি শিক্ষাবোর্ড। এ বোর্ডে এবার পাসে হার ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
সিলেট বিভাগের বন্যার কারণে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের মাত্র তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়েছিল। বাকি ১০টি বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া যায়নি। এসব বিষয়ে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের’ মাধ্যমে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থাৎ ১০টি বিষয়ে সবাই এসএসসির সমান নম্বর পেয়েছে। সেজন্য সিলেটে এবার পাসের হার একটু বেশি বলে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এবার এইচএসসিতে পাসের হারে সবার পেছনে রয়েছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। এবার এ বোর্ডের গড় পাসের হার ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। আর এবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ।
অন্যান্য বোর্ডের মধ্যে বরিশালে ৮১ দশমিক ৮৫, রাজশাহীতে ৮১ দশমিক ২৪, দিনাজপুরে ৭৭ দশমিক ৫৬, কুমিল্লায় ৭১ দশমিক ১৫, চট্টগ্রামে ৭০ দশমিক ৩২ এবং যশোর শিক্ষা বোর্ডে ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
জিপিএ-৫ ও পাসের হারে এগিয়ে মেয়েরা
বরাবরের মতো এবারও এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ অর্জনে এগিয়ে মেয়েরা। এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর ছাত্রদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ৮০ হাজার ৯৩৩ জন। আর ছাত্র ৬৪ হাজার ৯৭৮ জন।
৬৫ প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি
এইচএসসি ও সমমানে ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি। তবে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে এক হাজার ৩৮৮টি প্রতিষ্ঠানে।
এ বিষয়ে তপন কুমার সরকার বলেন, ‘২০২৩ সালে শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪০টি; এবার তা বেড়েছে। তবে গত বছর আমরা চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চারটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
এবারও যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করেনি সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়ে আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করে না, এমন প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থী থাকে কম দুই-একজন। এসব প্রতিষ্ঠান নন-এমপিও।’
পুন:নিরীক্ষার আবেদন আজ থেকে
এইচএসসি ও সমমানের ফলে যেসব পরীক্ষার্থী অসন্তুষ্ট হয়েছে তারা এবারও ফল পুন:নিরীক্ষার আবেদনের সুযোগ পাচ্ছেন। এই আবেদন আজ থেকেই শুরু হবে। তা ২২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি।
আন্ত:শিক্ষা বোর্ড থেকে বলা হয়েছে, ফলে সন্তুষ্ট না হওয়া শিক্ষার্থীরা প্রতিবারের মতো এবারও বোর্ড চ্যালেঞ্জ বা ফল পুন:নিরীক্ষার আবেদনের সুযোগ পাবে। এজন্য বোর্ড চ্যালেঞ্জ আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা।
সাবজেক্ট ম্যাপিং নিয়ে বোর্ডের অভিমত
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কিছুটা প্রভাব শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকবেই। তবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে না। কারণ যেখানেই তারা ভর্তি হতে যাক না কেনো এডমিশন টেস্টের মধ্য দিয়ে তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে লেখাপড়ারও প্রস্তুতি থাকে শিক্ষার্থীদের।
‘ইন্টারন্যাশনালি এই সাবজেক্ট ম্যাপিং’ বিষয়টির স্বীকৃতি রয়েছে দাবি করে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, বাতিল হওয়া বিষয়গুলোর পরীক্ষা দেয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছিলো। অভিভাবক-শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ রইলো ভবিষ্যতে যেনো এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।
পরীক্ষা বাতিল সমর্থন করেন না জানিয়ে তপন কুমার সরকার বলেন, ‘পরীক্ষাগুলো দেয়া উচিত। পরীক্ষার মাধ্যমেই ফলাফল আসে। আমরা কতটুকু শিখলাম তার জাস্টিফিকেশন পরীক্ষার মাধ্যমেই হয়। পরীক্ষা নেয়া আমাদের কর্তব্য। আশা করবো আগামীতে পরীক্ষাগুলো যাতে হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখবো। সবার সহযোগিতা কামনা করবো।’
শিক্ষার্থীদের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের লার্নিং স্কিল ডেভলেপমেন্ট করেছিল। তারা শুধু পরীক্ষা দিতে পারেননি। কিন্তু তাদের প্রস্তুতি ছিল। কয়েকবার এই পরীক্ষা পিছিয়ে একসময় তা বাতিল করা হয়েছে। তার মানে তাদের লার্নিং গ্যাপ নেই।
আন্ত:বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি বলেন, ‘আমরা ৬টা পরীক্ষা নিতে পারিনি। এবারে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল হয়েছে। এরমধ্যে যখন আমাদের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট পাবে তখন কিন্তু এই রেজাল্ট ম্যাপিংটা নিয়ে কোনো কথা থাকবে না।’
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ
বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
এইচএসসি ও সমমানের ফলাফলে এবার সর্বোচ্চ স্কোর ‘জিপিএ-৫’ বেশি পেয়েছে ৫৩ হাজার ৩১৬ জন। তবে এবার গড় পাসের হার দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে। সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়ার পর বাকি বিষয়গুলোতে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে’র মাধ্যমে ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিকের চেয়ে এবার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করেছে। জিপিএ-৫ ও গড় পাসের হার উভয় সূচকে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা শীর্ষে রয়েছে।
এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল মোট ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে দশ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। সেই হিসাবে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
গত বছর এই পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সেই হিসাবে এবার পাসের হার দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে।
আর এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট জিপিএ-৫ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) পেয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন; যা গতবার ছিল ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। সেই হিসাবে এবার ৫৩ হাজার ৩১৬টি জিপিএ-৫ বেড়েছে।
৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের গড় পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে শীর্ষে রয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের গড় পাসের হার ৯২ দশমিক ৭০ শতাংশের মতো এবং এ বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৯ হাজার ১৮১ জন শিক্ষার্থী।
মানবিক বিভাগে ছাত্রদের পাসের হার ৬৩ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭২ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর মানবিক বিভাগে মোট ২৩ হাজার ৩৪৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ছাত্রদের পাসের হার ৬৯ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে মোট আট হাজার ৮৪৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এবার মোট জিপিএ-৫ বৃদ্ধি পাওয়া ও পাসের হার কমার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। তিনি বলেছেন, যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ফল উচ্চমাধ্যমিকে (এইচএসসি) গড় পাসের হারে বড় রকমের প্রভাব পড়ে না।
এইচএসসির পাসের হার মূলত ইংরেজি এবং আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) বিষয়ের ওপর নির্ভর করে দাবি করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু এবার এই দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল। এর ফলে গড় পাসের হার স্বাভাবিক সময়ের মতোই হয়েছে।’
জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার পেছনে ‘অন্যতম প্রভাব’ হিসেবে বিষয় ম্যাপিং কাজ করেছে দাবি করে তপন কুমার সরকার বলেন, এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে যে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল, সেই শিক্ষার্থী হয়তো উচ্চমাধ্যমিকে মানবিকে পড়েছে। ফলে এসএসসির বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নম্বর এইচএসসিতে এসে মানবিকের বিষয়গুলোর বিপরীতে যোগ হয়েছে। এভাবে বিভাগ পরিবর্তনের কারণে জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে জানান তপন কুমার সরকার।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এ উপলক্ষে এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। বিগত সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করতেন। এর পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হতো। এবার বেলা ১১টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে প্রকাশিত হয়।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন, পাসের হার একটু কমলেও তারা একটা ‘গ্রহণযোগ্য রেজাল্ট’ দিতে পেরেছেন।
পাঁচ বছরের ফল বিশ্লেণে দেখা গেছে, কোভিড মহামারির কারণে ২০২০ সালে ‘অটোপাসে’ শতভাগ উত্তীর্ণ হয়। এর পর থেকে প্রতি বছর পাসের হার ক্রমান্বয়ে কমেছে। ২০২১ সালে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়। তাতেও পাসের হার কমে। ওই বছর ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে।
২০২২ সালে গড় পাসের হার কমে হয় ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এরপর সিলেবাস ও পরীক্ষার বিষয় বাড়িয়ে গতবছর (২০২৩) পরীক্ষা নেয়া হয়। তাতে পাসের হার আরও নেমে ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ দাঁড়ায়।
বোর্ডওয়ারি পাসের হার
এ বছর মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত আলিম পরীক্ষায় পাসের হার সবচেয়ে বেশি- ৯৩ দশমিক ৪০। দ্বিতীয় অবস্থান কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডের অধীন এইচএসসি ভোকেশনাল, বিএম, ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীক্ষায় পাসের হার ৮৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
তবে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এবার গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে আছে সিলেটি শিক্ষাবোর্ড। এ বোর্ডে এবার পাসে হার ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
সিলেট বিভাগের বন্যার কারণে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের মাত্র তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়েছিল। বাকি ১০টি বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া যায়নি। এসব বিষয়ে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের’ মাধ্যমে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থাৎ ১০টি বিষয়ে সবাই এসএসসির সমান নম্বর পেয়েছে। সেজন্য সিলেটে এবার পাসের হার একটু বেশি বলে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এবার এইচএসসিতে পাসের হারে সবার পেছনে রয়েছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। এবার এ বোর্ডের গড় পাসের হার ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। আর এবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ।
অন্যান্য বোর্ডের মধ্যে বরিশালে ৮১ দশমিক ৮৫, রাজশাহীতে ৮১ দশমিক ২৪, দিনাজপুরে ৭৭ দশমিক ৫৬, কুমিল্লায় ৭১ দশমিক ১৫, চট্টগ্রামে ৭০ দশমিক ৩২ এবং যশোর শিক্ষা বোর্ডে ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
জিপিএ-৫ ও পাসের হারে এগিয়ে মেয়েরা
বরাবরের মতো এবারও এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ অর্জনে এগিয়ে মেয়েরা। এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর ছাত্রদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ৮০ হাজার ৯৩৩ জন। আর ছাত্র ৬৪ হাজার ৯৭৮ জন।
৬৫ প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি
এইচএসসি ও সমমানে ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি। তবে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে এক হাজার ৩৮৮টি প্রতিষ্ঠানে।
এ বিষয়ে তপন কুমার সরকার বলেন, ‘২০২৩ সালে শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪০টি; এবার তা বেড়েছে। তবে গত বছর আমরা চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চারটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
এবারও যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করেনি সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়ে আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করে না, এমন প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থী থাকে কম দুই-একজন। এসব প্রতিষ্ঠান নন-এমপিও।’
পুন:নিরীক্ষার আবেদন আজ থেকে
এইচএসসি ও সমমানের ফলে যেসব পরীক্ষার্থী অসন্তুষ্ট হয়েছে তারা এবারও ফল পুন:নিরীক্ষার আবেদনের সুযোগ পাচ্ছেন। এই আবেদন আজ থেকেই শুরু হবে। তা ২২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি।
আন্ত:শিক্ষা বোর্ড থেকে বলা হয়েছে, ফলে সন্তুষ্ট না হওয়া শিক্ষার্থীরা প্রতিবারের মতো এবারও বোর্ড চ্যালেঞ্জ বা ফল পুন:নিরীক্ষার আবেদনের সুযোগ পাবে। এজন্য বোর্ড চ্যালেঞ্জ আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা।
সাবজেক্ট ম্যাপিং নিয়ে বোর্ডের অভিমত
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কিছুটা প্রভাব শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকবেই। তবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে না। কারণ যেখানেই তারা ভর্তি হতে যাক না কেনো এডমিশন টেস্টের মধ্য দিয়ে তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে লেখাপড়ারও প্রস্তুতি থাকে শিক্ষার্থীদের।
‘ইন্টারন্যাশনালি এই সাবজেক্ট ম্যাপিং’ বিষয়টির স্বীকৃতি রয়েছে দাবি করে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, বাতিল হওয়া বিষয়গুলোর পরীক্ষা দেয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছিলো। অভিভাবক-শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ রইলো ভবিষ্যতে যেনো এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।
পরীক্ষা বাতিল সমর্থন করেন না জানিয়ে তপন কুমার সরকার বলেন, ‘পরীক্ষাগুলো দেয়া উচিত। পরীক্ষার মাধ্যমেই ফলাফল আসে। আমরা কতটুকু শিখলাম তার জাস্টিফিকেশন পরীক্ষার মাধ্যমেই হয়। পরীক্ষা নেয়া আমাদের কর্তব্য। আশা করবো আগামীতে পরীক্ষাগুলো যাতে হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখবো। সবার সহযোগিতা কামনা করবো।’
শিক্ষার্থীদের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের লার্নিং স্কিল ডেভলেপমেন্ট করেছিল। তারা শুধু পরীক্ষা দিতে পারেননি। কিন্তু তাদের প্রস্তুতি ছিল। কয়েকবার এই পরীক্ষা পিছিয়ে একসময় তা বাতিল করা হয়েছে। তার মানে তাদের লার্নিং গ্যাপ নেই।
আন্ত:বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি বলেন, ‘আমরা ৬টা পরীক্ষা নিতে পারিনি। এবারে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল হয়েছে। এরমধ্যে যখন আমাদের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট পাবে তখন কিন্তু এই রেজাল্ট ম্যাপিংটা নিয়ে কোনো কথা থাকবে না।’