এইচএসসির ফল বাতিল ও পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ করেছে একদল শিক্ষার্থী। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া ও লাঠিপেটা করে সচিবালয় এলাকা থেকে সরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সব বিষয়ে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে’ ফল প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছেন।
গতকাল বেলা ২টা ৫০ মিনিটের দিকে শতাধিক শিক্ষার্থী সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। তারা সেখানে ৬ নম্বর ভবনের সামনে ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘মুগ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘তুমি কে আমি কে ছাত্র-ছাত্র’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম-সংগ্রাম’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। ৬ নম্বর ভবনের ১৮ ও ১৯ তলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সচিবালয়ে দায়িত্বপালনরত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রথমে শিক্ষার্থীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা সরে না যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের ধাওয়া দেয়, লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
বিকেল পৌনে চারটার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাড়া খেয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে সচিবালয়ের ভেতরে আটকা পড়েন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ৫৩ জন শিক্ষার্থীকে পুলিশের দুটি প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, সচিবালয়ে বিক্ষোভের ঘটনায় মোট ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এইচএসসির ‘বৈষম্যহীন’ ফলের দাবিতে এর আগে গত ২০ অক্টোবর ঢাকাসহ অন্যান্য শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা। একদল শিক্ষার্থী ওইদিন দিনভর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে রাতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি।
এইচএসসির ‘বৈষম্যহীন’ ফলের দাবিতে গত ২২ অক্টোবর ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্র্থীরা। তারা বোর্ডের গেটে তালা ঝুঁলিয়ে দেন। শিক্ষার্থীদের এই ‘অযৌক্তিক’ আন্দোলনে কারণে শিক্ষা বোর্ডেগুলোর প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
গত ১৫ অক্টোবর এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এতে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
এর আগে গত ৩০ জুন এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। সিলেট বিভাগে বন্যার কারণে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয় ৯ জুলাই। সিলেট বোর্ড মাত্র তিনটি পরীক্ষা নিতে পেরেছে। বাকি বোর্ডগুলো ছয়টি পরীক্ষা নিয়েছে।
জুলাইয়ের শুরুর দিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থবিরতা দেখা দেয়। এতে অন্তত পাঁচবার পরীক্ষা পেছানো হয়।
পরবর্তীতে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পুনরায় এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নেয়। এরপর ২০ আগস্ট পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে প্রবেশ করে বিক্ষোভ করেন একদল শিক্ষার্র্থী। তারা সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার দপ্তরের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এরপর স্থগিত হওয়া ৬/৭টি বিষয়ের পরীক্ষা বাতিলের সিন্ধান্ত নেয় শিক্ষা প্রশাসন। আর এসব বিষয়ে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের’ মাধ্যমে ফল প্রকাশের সিন্ধান্ত হয়।
এই প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে একটি বিষয়ে যত নম্বর পেয়েছিল, এইচএসসিতে সেই বিষয় থাকলে তাতে এসএসসিতে প্রাপ্ত পুরো নম্বর বিবেচনায় নেয়া হয়। তবে এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় বিষয়ে ভিন্নতা থাকলে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে’ও এসএসসির বিষয় অনুযায়ী নম্বর দেয়া হয়।
কিন্তু ‘ফেল’ বা ‘অকৃতকার্য’ হওয়া শিক্ষার্থীরা এখন সব বিষয়ে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের’ মাধ্যমে পুনরায় ফল প্রকাশের দাবিতে আন্দোলন করছেন। সব বিষয়ে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ হলে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া সব শিক্ষার্থীই উত্তীর্ণ হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
এইচএসসির ফল বাতিল ও পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ করেছে একদল শিক্ষার্থী। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া ও লাঠিপেটা করে সচিবালয় এলাকা থেকে সরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সব বিষয়ে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে’ ফল প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছেন।
গতকাল বেলা ২টা ৫০ মিনিটের দিকে শতাধিক শিক্ষার্থী সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। তারা সেখানে ৬ নম্বর ভবনের সামনে ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘মুগ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘তুমি কে আমি কে ছাত্র-ছাত্র’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম-সংগ্রাম’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। ৬ নম্বর ভবনের ১৮ ও ১৯ তলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সচিবালয়ে দায়িত্বপালনরত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রথমে শিক্ষার্থীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা সরে না যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের ধাওয়া দেয়, লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
বিকেল পৌনে চারটার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাড়া খেয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে সচিবালয়ের ভেতরে আটকা পড়েন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ৫৩ জন শিক্ষার্থীকে পুলিশের দুটি প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, সচিবালয়ে বিক্ষোভের ঘটনায় মোট ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এইচএসসির ‘বৈষম্যহীন’ ফলের দাবিতে এর আগে গত ২০ অক্টোবর ঢাকাসহ অন্যান্য শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা। একদল শিক্ষার্থী ওইদিন দিনভর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে রাতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি।
এইচএসসির ‘বৈষম্যহীন’ ফলের দাবিতে গত ২২ অক্টোবর ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্র্থীরা। তারা বোর্ডের গেটে তালা ঝুঁলিয়ে দেন। শিক্ষার্থীদের এই ‘অযৌক্তিক’ আন্দোলনে কারণে শিক্ষা বোর্ডেগুলোর প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
গত ১৫ অক্টোবর এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এতে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
এর আগে গত ৩০ জুন এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। সিলেট বিভাগে বন্যার কারণে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয় ৯ জুলাই। সিলেট বোর্ড মাত্র তিনটি পরীক্ষা নিতে পেরেছে। বাকি বোর্ডগুলো ছয়টি পরীক্ষা নিয়েছে।
জুলাইয়ের শুরুর দিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থবিরতা দেখা দেয়। এতে অন্তত পাঁচবার পরীক্ষা পেছানো হয়।
পরবর্তীতে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পুনরায় এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নেয়। এরপর ২০ আগস্ট পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে প্রবেশ করে বিক্ষোভ করেন একদল শিক্ষার্র্থী। তারা সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার দপ্তরের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এরপর স্থগিত হওয়া ৬/৭টি বিষয়ের পরীক্ষা বাতিলের সিন্ধান্ত নেয় শিক্ষা প্রশাসন। আর এসব বিষয়ে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের’ মাধ্যমে ফল প্রকাশের সিন্ধান্ত হয়।
এই প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে একটি বিষয়ে যত নম্বর পেয়েছিল, এইচএসসিতে সেই বিষয় থাকলে তাতে এসএসসিতে প্রাপ্ত পুরো নম্বর বিবেচনায় নেয়া হয়। তবে এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় বিষয়ে ভিন্নতা থাকলে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে’ও এসএসসির বিষয় অনুযায়ী নম্বর দেয়া হয়।
কিন্তু ‘ফেল’ বা ‘অকৃতকার্য’ হওয়া শিক্ষার্থীরা এখন সব বিষয়ে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের’ মাধ্যমে পুনরায় ফল প্রকাশের দাবিতে আন্দোলন করছেন। সব বিষয়ে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ হলে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া সব শিক্ষার্থীই উত্তীর্ণ হবে।