আগামী শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি দুইমাস। এই সময়ের মধ্যে ছাপতে হবে অন্তত ৪০ কোটি পাঠ্যবই। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে পাঁচ কোটি বই বেশি ছাপতে হবে। কিন্তু ছাপার কার্যক্রমে এবার অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষাবর্ষের শেষ প্রান্তে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের বই ছাপার উদ্যোগ নেয়া, পান্ডুলিপির পরিমার্জন ও সংশোধন এবং সরকার পরিবর্তনের পর প্রশাসনে রদবদলের কারণে পাঠ্যবই ছাপার নানা প্রক্রিয়া অনুমোদনে বিলম্ব হয়েছে। নতুন করে টেন্ডার বা দরপত্র আহ্বান করতে হয়েছে। দরপত্রের শর্তেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বই ছাপাতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান। তিনি শনিবার (২৬ অক্টোবর) সংবাদকে বলেন, ‘রোববার (আজ) প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর বই ছাপার ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হবে। এরপর দু’তিন দিনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বই ছাপার ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হবে।’
প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে-এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ও খুব শিগগিরই দেয়ার চেষ্টা চলছে। এর ফলে যেসব ছাপাখানার মালিক দুই স্তরের বই ছাপার কাজ পাচ্ছে তারা প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ শেষ করেই মাধ্যমিকের কাজ শুরু করতে পারবে। পাশাপাশি এবার ‘শিট মেশিনে’ও কাজ দেয়া হচ্ছে। এতে অনেক প্রতিষ্ঠান বই ছাপার কাজ পাচ্ছে। এসব কারণে ড. রিয়াজুল হাসান আশা করছেন, সব বই ছাপা শেষ করতে খুব বেশি দেরি হবে না।
যদিও মুদ্রণ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ সংবাদকে বলেন, ‘এবার বই ছাপার কাজে সরকার অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। এরপরও আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আমরা যদি ওয়ার্কঅর্ডার (কার্যাদেশ) পাই তাহলে ১ জানুয়ারির মধ্যে ৬০ শতাংশ বই দেয়ার চেষ্টা করবো।’
জানা গেছে, আসন্ন শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৪০ কোটি বই ছাপার প্রস্তুতি নিচ্ছে এনসিটিবি। এর মধ্যে মাদ্রাসার এবতেদায়ি এবং মাধ্যমিক স্তরের মোট দুই কোটি ২৪ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপা হচ্ছে। আর প্রাথমিক স্তরের জন্য ৯ কোটি ২০ লাখের মতো বই ছাপার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফেরত যাওয়ায় মাধ্যমিকে বইয়ের সংখ্যা বাড়ছে। কারণ স্থগিত হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে দশম পর্যন্ত প্রতি শ্রেণীতে ১৪টি করে বই পড়তে হতো। আর ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম পর্যন্ত ২২টি করে এবং নবম-দশম শ্রেণীতে একজন শিক্ষার্থীর জন্য ৩৩টি করে বই ছাপা হতো। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের পড়তে হতো ১৪টি বই।
মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার কার্যক্রম সমন্বয় হয় এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রণ শাখায়। সংস্থার বিতরণ নিয়ন্ত্রক হাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেছেন, ‘এবার মাধ্যমিক স্তরের জন্যই প্রায় ৩১ কোটির মতো বই ছাপা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম দ্রƒত এগুচ্ছে। এরপর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের নতুন বই সরবরাহ করতে পারবো।’
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৩ সাল থেকে নতুন যে শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল সেটি অন্তর্বর্তী সরকার স্থগিত করেছে। সেজন্য নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতিসহ নানা অসঙ্গতির সংশোধন করতে হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইয়ের ছবি ও বিষয়বস্তুসহ যেসব সমস্যা বা অসঙ্গতি আছে তা পরিমার্জন শেষে পা-ুলিপিও সংশোধন করতে হচ্ছে।
তবে এর আওতায় থাকবে না নবম ও দশম শ্রেণী। এই দুই শ্রেণীর জন্য পুরনো শিক্ষাক্রমেই পাঠ্যবই ছাপানো হবে। একই সঙ্গে থাকবে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগও।
চলতি শিক্ষাবর্ষে যারা নবম শ্রেণীতে বিভাগহীন নতুন শিক্ষাক্রমের বই পড়ছে, আগামী বছর দশম শ্রেণীতে তাদের পুরনো শিক্ষাক্রমের বই পড়তে হবে। ২০২৬ সালে তাদের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়া হবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। সেই হিসেবে এবার নবম ও দশম দুই শ্রেণীর জন্যই নতুন বই ছাপতে হচ্ছে। সেজন্য বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে।
বই মুদ্রণ প্রস্তুতি
আসন্ন শিক্ষাবর্ষের জন্য এবারও ৯৮টি লটে প্রাথমিকের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীর বই ছাপার দরপত্র (টেন্ডার) আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে দরপত্র মূল্যায়ন শেষে ৭০টি লটের বই ছাপার জন্য কার্যাদেশ পর্যায়ে রয়েছে।
বাকি লটগুলোর মধ্যে ১০টি লটের বই ছাপাতে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ‘ভারতীয়’ প্রতিষ্ঠান ‘সর্বনিম্ন’ দরদাতা হওয়ায় ১৮টি লটের দরপত্র সরকারের ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেনি বলে এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এসব লটের বই ছাপাতেও ‘রিটেন্ডার’ বা পুনঃদরপত্র আহ্বানের উদ্যোগে নেয়া হয়।
এ ছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর দরপত্রের মূল্যায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বই ছাপার দরপত্র ইতোমধ্যে আহ্বান করা হয়েছে, যা গত সপ্তাহে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখন মূল্যায়ন কার্যক্রম চলছে। অষ্টম শ্রেণীর বই ছাপার দরপত্র আহ্বান হয়েছে, যা ২৮ অক্টোবর উন্মুক্ত করার কথা রয়েছে। তবে নবম শ্রেণীর বই ছাপার দরপত্র এখনও আহ্বান হয়নি বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শনিবার সংবাদকে বলেছেন, গত চার-পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করলে এই সময়ে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বই ছাপা শেষ হতো। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত বই ছাপার কার্যাদেশও দিতে পারেনি এনসিটিবি।
এবার ৪০ কোটির বেশি বই ছাপাতে হবে উল্লেখ করে ওই ব্যবসায়ী বলেন, এসব বই ছাপতে প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন কাগজ প্রয়োজন হবে। এবারের কাগজের ব্রাইটনেস ৮২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই মানের কাগজ উৎপাদনের সক্ষমতা দেশের মাত্র ৬/৭টি প্রতিষ্ঠানের রয়েছে।
কার্যাদেশ দেয়ার পর ৪০ কোটি বই ছাপতে কতদিন লাগতে পারে-জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ছয় থেকে সাতমাস সময় লাগবে। সেই হিসেবে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত লাগতে পারে।
এ বিষয়ে জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ সংবাদকে বলেন, ‘কার্যাদেশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে প্রেস মালিকরা বই ছাপা শুরু করতে পারে। বই ছাপার প্লেইট, বইয়ের কনটেন্ট ও কাগজ সংগ্রহ করতে এই সময় লাগে।’
মুদ্র্রণ শিল্প মালিকরা জানান, নবম-দশম শ্রেণীর বই ছাপার টেন্ডার আহ্বান এখনও বাকি। বই পরিমার্জনের কাজও শেষ হয়নি। এই কার্যক্রম শেষ না করে ছাপাখানা মালিকদের পা-ুলিপি দেয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে জানুয়ারির আগে সব বই মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ছাপাখানা মালিকরা।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়েল খান বলেন, এবার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের যথাসময়ে বই ছাপার কাজ শেষ করার একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এইটা মোকাবিলার জন্য তারা সহযোগিতা করতে চান। এটার জন্য সরকারকে ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।
রোববার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
আগামী শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি দুইমাস। এই সময়ের মধ্যে ছাপতে হবে অন্তত ৪০ কোটি পাঠ্যবই। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে পাঁচ কোটি বই বেশি ছাপতে হবে। কিন্তু ছাপার কার্যক্রমে এবার অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষাবর্ষের শেষ প্রান্তে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের বই ছাপার উদ্যোগ নেয়া, পান্ডুলিপির পরিমার্জন ও সংশোধন এবং সরকার পরিবর্তনের পর প্রশাসনে রদবদলের কারণে পাঠ্যবই ছাপার নানা প্রক্রিয়া অনুমোদনে বিলম্ব হয়েছে। নতুন করে টেন্ডার বা দরপত্র আহ্বান করতে হয়েছে। দরপত্রের শর্তেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বই ছাপাতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান। তিনি শনিবার (২৬ অক্টোবর) সংবাদকে বলেন, ‘রোববার (আজ) প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর বই ছাপার ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হবে। এরপর দু’তিন দিনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বই ছাপার ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হবে।’
প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে-এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ও খুব শিগগিরই দেয়ার চেষ্টা চলছে। এর ফলে যেসব ছাপাখানার মালিক দুই স্তরের বই ছাপার কাজ পাচ্ছে তারা প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ শেষ করেই মাধ্যমিকের কাজ শুরু করতে পারবে। পাশাপাশি এবার ‘শিট মেশিনে’ও কাজ দেয়া হচ্ছে। এতে অনেক প্রতিষ্ঠান বই ছাপার কাজ পাচ্ছে। এসব কারণে ড. রিয়াজুল হাসান আশা করছেন, সব বই ছাপা শেষ করতে খুব বেশি দেরি হবে না।
যদিও মুদ্রণ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ সংবাদকে বলেন, ‘এবার বই ছাপার কাজে সরকার অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। এরপরও আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আমরা যদি ওয়ার্কঅর্ডার (কার্যাদেশ) পাই তাহলে ১ জানুয়ারির মধ্যে ৬০ শতাংশ বই দেয়ার চেষ্টা করবো।’
জানা গেছে, আসন্ন শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৪০ কোটি বই ছাপার প্রস্তুতি নিচ্ছে এনসিটিবি। এর মধ্যে মাদ্রাসার এবতেদায়ি এবং মাধ্যমিক স্তরের মোট দুই কোটি ২৪ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপা হচ্ছে। আর প্রাথমিক স্তরের জন্য ৯ কোটি ২০ লাখের মতো বই ছাপার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফেরত যাওয়ায় মাধ্যমিকে বইয়ের সংখ্যা বাড়ছে। কারণ স্থগিত হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে দশম পর্যন্ত প্রতি শ্রেণীতে ১৪টি করে বই পড়তে হতো। আর ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম পর্যন্ত ২২টি করে এবং নবম-দশম শ্রেণীতে একজন শিক্ষার্থীর জন্য ৩৩টি করে বই ছাপা হতো। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের পড়তে হতো ১৪টি বই।
মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার কার্যক্রম সমন্বয় হয় এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রণ শাখায়। সংস্থার বিতরণ নিয়ন্ত্রক হাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেছেন, ‘এবার মাধ্যমিক স্তরের জন্যই প্রায় ৩১ কোটির মতো বই ছাপা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম দ্রƒত এগুচ্ছে। এরপর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের নতুন বই সরবরাহ করতে পারবো।’
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৩ সাল থেকে নতুন যে শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল সেটি অন্তর্বর্তী সরকার স্থগিত করেছে। সেজন্য নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতিসহ নানা অসঙ্গতির সংশোধন করতে হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইয়ের ছবি ও বিষয়বস্তুসহ যেসব সমস্যা বা অসঙ্গতি আছে তা পরিমার্জন শেষে পা-ুলিপিও সংশোধন করতে হচ্ছে।
তবে এর আওতায় থাকবে না নবম ও দশম শ্রেণী। এই দুই শ্রেণীর জন্য পুরনো শিক্ষাক্রমেই পাঠ্যবই ছাপানো হবে। একই সঙ্গে থাকবে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগও।
চলতি শিক্ষাবর্ষে যারা নবম শ্রেণীতে বিভাগহীন নতুন শিক্ষাক্রমের বই পড়ছে, আগামী বছর দশম শ্রেণীতে তাদের পুরনো শিক্ষাক্রমের বই পড়তে হবে। ২০২৬ সালে তাদের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়া হবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। সেই হিসেবে এবার নবম ও দশম দুই শ্রেণীর জন্যই নতুন বই ছাপতে হচ্ছে। সেজন্য বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে।
বই মুদ্রণ প্রস্তুতি
আসন্ন শিক্ষাবর্ষের জন্য এবারও ৯৮টি লটে প্রাথমিকের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীর বই ছাপার দরপত্র (টেন্ডার) আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে দরপত্র মূল্যায়ন শেষে ৭০টি লটের বই ছাপার জন্য কার্যাদেশ পর্যায়ে রয়েছে।
বাকি লটগুলোর মধ্যে ১০টি লটের বই ছাপাতে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ‘ভারতীয়’ প্রতিষ্ঠান ‘সর্বনিম্ন’ দরদাতা হওয়ায় ১৮টি লটের দরপত্র সরকারের ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেনি বলে এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এসব লটের বই ছাপাতেও ‘রিটেন্ডার’ বা পুনঃদরপত্র আহ্বানের উদ্যোগে নেয়া হয়।
এ ছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর দরপত্রের মূল্যায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বই ছাপার দরপত্র ইতোমধ্যে আহ্বান করা হয়েছে, যা গত সপ্তাহে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখন মূল্যায়ন কার্যক্রম চলছে। অষ্টম শ্রেণীর বই ছাপার দরপত্র আহ্বান হয়েছে, যা ২৮ অক্টোবর উন্মুক্ত করার কথা রয়েছে। তবে নবম শ্রেণীর বই ছাপার দরপত্র এখনও আহ্বান হয়নি বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শনিবার সংবাদকে বলেছেন, গত চার-পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করলে এই সময়ে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বই ছাপা শেষ হতো। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত বই ছাপার কার্যাদেশও দিতে পারেনি এনসিটিবি।
এবার ৪০ কোটির বেশি বই ছাপাতে হবে উল্লেখ করে ওই ব্যবসায়ী বলেন, এসব বই ছাপতে প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন কাগজ প্রয়োজন হবে। এবারের কাগজের ব্রাইটনেস ৮২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই মানের কাগজ উৎপাদনের সক্ষমতা দেশের মাত্র ৬/৭টি প্রতিষ্ঠানের রয়েছে।
কার্যাদেশ দেয়ার পর ৪০ কোটি বই ছাপতে কতদিন লাগতে পারে-জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ছয় থেকে সাতমাস সময় লাগবে। সেই হিসেবে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত লাগতে পারে।
এ বিষয়ে জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ সংবাদকে বলেন, ‘কার্যাদেশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে প্রেস মালিকরা বই ছাপা শুরু করতে পারে। বই ছাপার প্লেইট, বইয়ের কনটেন্ট ও কাগজ সংগ্রহ করতে এই সময় লাগে।’
মুদ্র্রণ শিল্প মালিকরা জানান, নবম-দশম শ্রেণীর বই ছাপার টেন্ডার আহ্বান এখনও বাকি। বই পরিমার্জনের কাজও শেষ হয়নি। এই কার্যক্রম শেষ না করে ছাপাখানা মালিকদের পা-ুলিপি দেয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে জানুয়ারির আগে সব বই মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ছাপাখানা মালিকরা।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়েল খান বলেন, এবার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের যথাসময়ে বই ছাপার কাজ শেষ করার একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এইটা মোকাবিলার জন্য তারা সহযোগিতা করতে চান। এটার জন্য সরকারকে ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।