জনবল সঙ্কটে ধুঁকছে সারাদেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ৩২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েই প্রায় ১২শ’ শিক্ষকের পদ শূন্য। জাতীয়করণ হওয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতেও এই সঙ্কট আরও প্রকট। এরপরও বেসরকারির চেয়ে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘আস্থা’ বেশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
গত ১২ নভেম্বর অনলাইনে স্কুলগুলোতে প্রথম থেকে নবম শ্রেণী ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছে। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচদিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট তিন লাখ ৬১ হাজার ৪১৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করেছে।
মাউশির দুই জন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, রাজধানী ও জেলা সদরের স্কুলগুলোতে শিক্ষক স্বল্পতা কিছুটা কম। কিন্তু উপজেলার স্কুলগুলোতে এই সংকট তীব্র। অধিকাংশ স্কুলেই বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই। অর্ধেকেরও কম শিক্ষক দিয়ে উপজেলা পর্যায়ের স্কুলগুলো চলছে।
আর প্রধান শিক্ষক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদ শূন্য থাকায় ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকরা ইচ্ছেমত স্কুলে আসছেন-যাচ্ছেন বলে ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সরকারি বিদ্যালয়ে আবেদন বেশি
সরকারি হাইস্কুলগুলোতে আসন সংখ্যা কম হলেও আবেদন তুলনামূলক বেশি পড়ে। বিগত বছরেও সরকারি হাইস্কুলে ভর্তির আবেদন বেশি পড়েছে। আর এবার শূন্য আসনের চেয়েও কম আবেদন জমা পড়েছে বেসরকারি স্কুলে।
এবার সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সরকারি স্কুলের মধ্যে এক লাখ আট হাজার ৬৬২টি আসনের বিপরীতে ১৭ নভেম্বর রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন লাখ ৫৪ হাজার ৭৮৭ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে।
আর বেসরকারি স্কুলে এক লাখ ছয় হাজার ৬৩২ জন শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করেছে। এই আবেদন প্রক্রিয়া আগামী ৩০ নভেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ৫টি স্কুল চয়েজ (পছন্দ) দিতে পারবে। আর এ পর্যন্ত সরকারি স্কুলে আবেদন করা শিক্ষার্থীরা তিন লাখ ৮৩ হাজার ৩১২টি চয়েজ ফরম পূরণ করেছে।
আর প্রথম পাঁচদিনে বেসরকারি স্কুলে মাত্র এক লাখ ছয় হাজার ৬৩২ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। তারা দুই লাখ ২৩৭টি স্কুল চয়েজ (পছন্দ) দিয়েছে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমিক শাখার উপ-পরিচালক আজিজ উদ্দিন জানিয়েছেন, টেলিটকের পক্ষ থেকে দুই দিন পর পর ভর্তি আবেদনের সংখ্যা মাউশিকে জানানো হয়।
এবার আবেদনের সংখ্যা কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম দিনের আবেদনের সংখ্যা কম থাকে। শেষের দিকে এ আবেদনের সংখ্যা বাড়বে। প্রয়োজনে আবেদনের সময় দুই-একদিন বাড়তে পারে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানিয়েছে, এবার সারাদেশের মোট পাঁচ হাজার ৬২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারি হাইস্কুল ৬৮২টি এবং বেসরকারি হাইস্কুল চার হাজার ৬৪৩টি।
এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণীতে মোট ১১ লাখ ১৬ হাজার ৬৩৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হবে। এর মধ্যে সরকারি স্কুলে আসন এক লাখ আট হাজার ৬৬২টি এবং বেসরকারি স্কুলে আসন রয়েছে দশ লাখ সাত হাজার ৬৭১টি।
রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিফোন সংস্থা টেলিটকের বরাত দিয়ে মাউশির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত বৃস্পতিবার পর্যন্ত দুইদিনে সারাদেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক লাখ আট হাজার ৬৬২টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছে এক লাখ ৩৩ হাজার ৬৫৫ জন।
আর সারাদেশের চার হাজার ৯৪৫টি বেসরকারি বিদ্যালয়ের মোট দশ লাখ সাত হাজার ৬৭১টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছে মাত্র ৫৩ হাজার ৫৯৬ জন শিক্ষার্থী।
জাতীয়করণ বিদ্যালয়ে ‘সংকট প্রকট’
২০১৩ সালে রাজধানীর শহীদ মনু মিঞা উচ্চ বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয় সরকার। এই প্রতিষ্ঠানের জনবল আতœীকরণ ও পদ সৃজনের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। প্রায় ১১ বছর শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানটিতে পাঠদান কার্যক্রম ‘দারুণভাবে’ ব্যাহত হচ্ছে বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন।
মাত্র সাতজন শিক্ষক দিয়ে স্কুলটির ৪৯০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে। স্কুলটিতে ইংরেজি, গণিত, ধর্ম, ভৌত বিজ্ঞান, ভূগোল, কৃষি শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা ও চারুকলাসহ কয়েকটি বিষয়ে কোনো শিক্ষকই নেই।
মাউশি’র সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১৩ সাল থেকে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সারাদেশের ৩৫৯টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে। জাতীয়করণ ঘোষণার পর থেকেই ওইসব প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।
জাতীয়করণ ঘোষিত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে ‘পর্যাপ্ত’ পদও সৃষ্টি হয়নি। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় শিক্ষকও পদায়ন হচ্ছে না। আবার জাতীয়করণের সময় যেসব শিক্ষক ছিলেন তাদের অনেকে ইতোমধ্যে অবসরে চলে গেছেন।
মাউশির একজন সহকারী পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, জাতীয়করণ হওয়া বিদ্যালয়গুলিতে কোনোটিতে সাতটি, কোনোটিতে ১০টি বা কোনো স্কুলে ১৭টি শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ‘ঢিলেমি’ ও ‘আমলাতান্ত্রিক গাফিলতির’ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলি ‘কার্যত অচল’ অবস্থায় রয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
সরকারি হাইস্কুলেও শিক্ষক ‘সংকট’
মাউশি থেকে জানা গেছে, জাতীয়করণ হওয়া বিদ্যালয় ছাড়া সারাদেশের মোট ৩২৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবার শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হচ্ছে। এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত ‘১২শ’ শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকের পদই শূন্য রয়েছে প্রায় একশ’। বর্তমানে রাজধানীর অন্তত ছয়টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেই। আবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন জেলার সাতটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ‘পদ ছাড়তে’ বাধ্য হয়েছেন।
তাদের মধ্যে পাঁচজনকে মাউশিতে ন্যস্ত এবং দুই জনকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) রাখা হয়েছে। কিন্তু বদলি কার্যক্রম ‘বন্ধ’ থাকায় সাত প্রধান শিক্ষককে পদায়ন আটকে রয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশির) পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল সংবাদকে বলেছেন, ‘আমরা সব স্কুল থেকে শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করছি। খুব শিগগিরই সব তথ্য পেয়ে যাবো। যেসব স্কুলে সংকট বেশি সেখানে শিক্ষক দেয়ার চেষ্টা করব। তবে বড় পদগুলি পূরণ করা আমাদের জন্য কঠিন; কারণ পদোন্নতি আপাতত বন্ধ রয়েছে।’
সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় তদারকি হয় মাউশির অধীনে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা (ডিইও) মাউশির মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম দেখভাল করেন। আর মাউশির ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক ও উপ-পরিচালকরা কর্মকর্তারা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কার্যক্রম সমন্বয় করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নরসিংদী, নওগাঁ, গাজীপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ অন্তত ২০টি জেলায় শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়েও স্থায়ী কর্মকর্তা নেই। এগুলো কর্মকর্তাদের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির নীতিমালা সংশোধন করা হয়। আগে বছরব্যাপী বদলি কার্যক্রম চলতো। নতুন নীতিমালায় বছরে শুধু একমাস বদলি কার্যক্রম চালানোর কথা হয়েছে।
সেই অনুযায়ী গত অক্টোবরে অনলাইনে বদলির আবেদনের সুযোগ দেয়া হয় শিক্ষকদের। কিন্তু শিক্ষাবর্ষের শেষ দিকে সারাদেশের স্কুলগুলোতে ভর্তি কার্যক্রম চলে; সেই কারণে আবেদন নেয়া হলেও শিক্ষক বদলি আপাতত ‘বন্ধ’ রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
জনবল সঙ্কটে ধুঁকছে সারাদেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ৩২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েই প্রায় ১২শ’ শিক্ষকের পদ শূন্য। জাতীয়করণ হওয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতেও এই সঙ্কট আরও প্রকট। এরপরও বেসরকারির চেয়ে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘আস্থা’ বেশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
গত ১২ নভেম্বর অনলাইনে স্কুলগুলোতে প্রথম থেকে নবম শ্রেণী ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছে। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচদিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট তিন লাখ ৬১ হাজার ৪১৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করেছে।
মাউশির দুই জন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, রাজধানী ও জেলা সদরের স্কুলগুলোতে শিক্ষক স্বল্পতা কিছুটা কম। কিন্তু উপজেলার স্কুলগুলোতে এই সংকট তীব্র। অধিকাংশ স্কুলেই বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই। অর্ধেকেরও কম শিক্ষক দিয়ে উপজেলা পর্যায়ের স্কুলগুলো চলছে।
আর প্রধান শিক্ষক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদ শূন্য থাকায় ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকরা ইচ্ছেমত স্কুলে আসছেন-যাচ্ছেন বলে ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সরকারি বিদ্যালয়ে আবেদন বেশি
সরকারি হাইস্কুলগুলোতে আসন সংখ্যা কম হলেও আবেদন তুলনামূলক বেশি পড়ে। বিগত বছরেও সরকারি হাইস্কুলে ভর্তির আবেদন বেশি পড়েছে। আর এবার শূন্য আসনের চেয়েও কম আবেদন জমা পড়েছে বেসরকারি স্কুলে।
এবার সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সরকারি স্কুলের মধ্যে এক লাখ আট হাজার ৬৬২টি আসনের বিপরীতে ১৭ নভেম্বর রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন লাখ ৫৪ হাজার ৭৮৭ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে।
আর বেসরকারি স্কুলে এক লাখ ছয় হাজার ৬৩২ জন শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করেছে। এই আবেদন প্রক্রিয়া আগামী ৩০ নভেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ৫টি স্কুল চয়েজ (পছন্দ) দিতে পারবে। আর এ পর্যন্ত সরকারি স্কুলে আবেদন করা শিক্ষার্থীরা তিন লাখ ৮৩ হাজার ৩১২টি চয়েজ ফরম পূরণ করেছে।
আর প্রথম পাঁচদিনে বেসরকারি স্কুলে মাত্র এক লাখ ছয় হাজার ৬৩২ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। তারা দুই লাখ ২৩৭টি স্কুল চয়েজ (পছন্দ) দিয়েছে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমিক শাখার উপ-পরিচালক আজিজ উদ্দিন জানিয়েছেন, টেলিটকের পক্ষ থেকে দুই দিন পর পর ভর্তি আবেদনের সংখ্যা মাউশিকে জানানো হয়।
এবার আবেদনের সংখ্যা কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম দিনের আবেদনের সংখ্যা কম থাকে। শেষের দিকে এ আবেদনের সংখ্যা বাড়বে। প্রয়োজনে আবেদনের সময় দুই-একদিন বাড়তে পারে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানিয়েছে, এবার সারাদেশের মোট পাঁচ হাজার ৬২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারি হাইস্কুল ৬৮২টি এবং বেসরকারি হাইস্কুল চার হাজার ৬৪৩টি।
এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণীতে মোট ১১ লাখ ১৬ হাজার ৬৩৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হবে। এর মধ্যে সরকারি স্কুলে আসন এক লাখ আট হাজার ৬৬২টি এবং বেসরকারি স্কুলে আসন রয়েছে দশ লাখ সাত হাজার ৬৭১টি।
রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিফোন সংস্থা টেলিটকের বরাত দিয়ে মাউশির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত বৃস্পতিবার পর্যন্ত দুইদিনে সারাদেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক লাখ আট হাজার ৬৬২টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছে এক লাখ ৩৩ হাজার ৬৫৫ জন।
আর সারাদেশের চার হাজার ৯৪৫টি বেসরকারি বিদ্যালয়ের মোট দশ লাখ সাত হাজার ৬৭১টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছে মাত্র ৫৩ হাজার ৫৯৬ জন শিক্ষার্থী।
জাতীয়করণ বিদ্যালয়ে ‘সংকট প্রকট’
২০১৩ সালে রাজধানীর শহীদ মনু মিঞা উচ্চ বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয় সরকার। এই প্রতিষ্ঠানের জনবল আতœীকরণ ও পদ সৃজনের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। প্রায় ১১ বছর শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানটিতে পাঠদান কার্যক্রম ‘দারুণভাবে’ ব্যাহত হচ্ছে বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন।
মাত্র সাতজন শিক্ষক দিয়ে স্কুলটির ৪৯০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে। স্কুলটিতে ইংরেজি, গণিত, ধর্ম, ভৌত বিজ্ঞান, ভূগোল, কৃষি শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা ও চারুকলাসহ কয়েকটি বিষয়ে কোনো শিক্ষকই নেই।
মাউশি’র সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১৩ সাল থেকে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সারাদেশের ৩৫৯টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে। জাতীয়করণ ঘোষণার পর থেকেই ওইসব প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।
জাতীয়করণ ঘোষিত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে ‘পর্যাপ্ত’ পদও সৃষ্টি হয়নি। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় শিক্ষকও পদায়ন হচ্ছে না। আবার জাতীয়করণের সময় যেসব শিক্ষক ছিলেন তাদের অনেকে ইতোমধ্যে অবসরে চলে গেছেন।
মাউশির একজন সহকারী পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, জাতীয়করণ হওয়া বিদ্যালয়গুলিতে কোনোটিতে সাতটি, কোনোটিতে ১০টি বা কোনো স্কুলে ১৭টি শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ‘ঢিলেমি’ ও ‘আমলাতান্ত্রিক গাফিলতির’ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলি ‘কার্যত অচল’ অবস্থায় রয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
সরকারি হাইস্কুলেও শিক্ষক ‘সংকট’
মাউশি থেকে জানা গেছে, জাতীয়করণ হওয়া বিদ্যালয় ছাড়া সারাদেশের মোট ৩২৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবার শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হচ্ছে। এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত ‘১২শ’ শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকের পদই শূন্য রয়েছে প্রায় একশ’। বর্তমানে রাজধানীর অন্তত ছয়টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেই। আবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন জেলার সাতটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ‘পদ ছাড়তে’ বাধ্য হয়েছেন।
তাদের মধ্যে পাঁচজনকে মাউশিতে ন্যস্ত এবং দুই জনকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) রাখা হয়েছে। কিন্তু বদলি কার্যক্রম ‘বন্ধ’ থাকায় সাত প্রধান শিক্ষককে পদায়ন আটকে রয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশির) পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল সংবাদকে বলেছেন, ‘আমরা সব স্কুল থেকে শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করছি। খুব শিগগিরই সব তথ্য পেয়ে যাবো। যেসব স্কুলে সংকট বেশি সেখানে শিক্ষক দেয়ার চেষ্টা করব। তবে বড় পদগুলি পূরণ করা আমাদের জন্য কঠিন; কারণ পদোন্নতি আপাতত বন্ধ রয়েছে।’
সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় তদারকি হয় মাউশির অধীনে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা (ডিইও) মাউশির মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম দেখভাল করেন। আর মাউশির ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক ও উপ-পরিচালকরা কর্মকর্তারা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কার্যক্রম সমন্বয় করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নরসিংদী, নওগাঁ, গাজীপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ অন্তত ২০টি জেলায় শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়েও স্থায়ী কর্মকর্তা নেই। এগুলো কর্মকর্তাদের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির নীতিমালা সংশোধন করা হয়। আগে বছরব্যাপী বদলি কার্যক্রম চলতো। নতুন নীতিমালায় বছরে শুধু একমাস বদলি কার্যক্রম চালানোর কথা হয়েছে।
সেই অনুযায়ী গত অক্টোবরে অনলাইনে বদলির আবেদনের সুযোগ দেয়া হয় শিক্ষকদের। কিন্তু শিক্ষাবর্ষের শেষ দিকে সারাদেশের স্কুলগুলোতে ভর্তি কার্যক্রম চলে; সেই কারণে আবেদন নেয়া হলেও শিক্ষক বদলি আপাতত ‘বন্ধ’ রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।