মাধ্যমিকের বই নিয়ে চাপে এনসিটিবি
প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপা আগামী সপ্তাহেই শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু মাধ্যমিকের বই ছাপা নিয়ে চাপে পরেছে এনসিটিবি। কারণ শিক্ষাবর্ষের চারমাস আগে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র বাতিল করে পুনঃদরপত্র (রিটেন্ডার) আহ্বান করা হয়েছে।
‘অনিয়মের’ অভিযোগে মাদ্রাসার ইবতেদায়ী এবং নবম ও দশম শ্রেণীর পাঠ্যবই মুদ্রণের দরপত্রও বাতিলের দাবি করছেন মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতারা। এই তিন শ্রেণীর বই ছাপার কার্যক্রম এখনও ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদন পায়নি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
২০২৬ শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি আর চার মাসেরও কম। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের। এর আগে সারাদেশের ছাপাখানাগুলো রাজনৈতিক দল ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, লিফলেট ছাপার কাজে ব্যস্ত থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী ৪ সেপ্টেম্বর সংবাদকে বলেছেন, বাতিল হওয়া তিন শ্রেণীর বইয়ের রিটেন্ডার হয়ে গেছে। আর ইবতেদায়ী ও নবম-দশম শ্রেণীর বই ছাপার দরপত্র মূল্যায়ন চলছে। এরপর ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
রিটেন্ডারের কারণে ১ জানুয়ারির মধ্যে সব বই ছাপা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো সমস্যা হবে না। প্রেস মালিকসহ সবার সঙ্গে আলাপ করেই রিটেন্ডার করা হয়েছে। আশা করছি, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সব বই ছাপা শেষ হয়ে যাবে।’
চলতি শিক্ষাবর্ষেও সব পাঠ্যবই সারাদেশে পৌঁছাতে মার্চ মাস গড়িয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে যে কোনোভাবেই হোক ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ শেষ করতে চাচ্ছে এনসিটিবি।
আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩০ কোটির বেশি পাঠ্যবই ছাপাবে এনসিটিবি। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের জন্য প্রায় আট কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখসহ মোট ৩০ কোটি পাঠ্যবই ছাপার কার্যক্রম চলছে।
এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপানোর ক্রয় কার্যক্রম অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ (ক্রয় কমিটি)। তবে এই পরিষদের সর্বশেষ সভায় ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর বই ছাপাতে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন, বাতিল হওয়া দরপত্রে সাবেক একজন মন্ত্রীর ভাই মাধ্যমিক স্তরের প্রায় তিন কোটি বই ছাপার কাজ পেতে যাচ্ছিলেন। এ সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়েছিল একজন উপদেষ্টার কাছে। সেই কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়ে থাকতে পারে বলে ওই কর্মকর্তার ধারণা।
এ বিষয়ে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি ও ‘বৈষম্যবিরোধী মুদ্রণ ব্যবসায়ী’ নেতা তোফায়েল খান সংবাদকে বলেছেন, ‘এবার যে টেন্ডার বাতিল হয়েছে, সেখানে প্রচ- অনিয়ম হয়েছে। একই আইডি ব্যবহার করে একাধিক টেন্ডার ড্রপ (দরপত্র জমা) হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রে এটা হতেই পারে না। ৮-১০ জায়গা থেকে সব টেন্ডার ড্রপ হয়েছে।’
তিনি ইবতেদায়ী এবং নবম ও দশম শ্রেণীর বই ছাপার দরপত্রও বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘সেখানেও একই অনিয়ম হয়েছে।’
বাতিল হওয়া দরপত্রে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সক্ষমতার চেয়ে বেশি কাজ পেয়েছিল দাবি করে তোফায়েল খান বলেন, ‘বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু কাজ অতিরিক্ত নিয়েছিল অভিজ্ঞতার অজুহাত দেখিয়ে। বড় প্যাকেজ দেখিয়ে অনেক ছোট প্রতিষ্ঠানকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এবার রিটেন্ডারে অভিজ্ঞতা হ্রাস করা হয়েছে।’
রিটেন্ডারের কারণে ১ জানুয়ারির মধ্যে সারাদেশের শিক্ষার্র্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছে দেয়ার কাজ ব্যাহত হতে পারে কিনা জানতে চাইলে তোফায়েল খান বলেন, ‘নভেম্বরের মধ্যে কার্যাদেশ দেয়া হলে সব বই দেয়া সম্ভব; যদি সবাই আন্তরিক হয়। কারণ এখন প্রাথমিকের বই ছাপা শুরু হয়ে যাচ্ছে। যারা কাজ পেয়েছেন তাদের কেউ কেউ যদি মাধ্যমিকের কাজ পানও এর আগেই তারা প্রাথমিকের বই ছাপা শেষ করতে পারবেন। এখনও বাজারে কাগজের পর্যাপ্ত সরবরাহও রয়েছে।’
এনসিটিবির দু’জন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন, গত বছর ৪০টির মতো ছাপাখানা ‘নিম্নমানের’ পাঠ্যবই সরবরাহ করেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে বই সরবরাহও করতে পারেনি। কিন্তু নানা মহলের তদবিরের চাপে প্রতিষ্ঠানগুলোর
বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। ওইসব প্রতিষ্ঠান এবারও কাজ ভাগাতে চেষ্টা করছে।
তাছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপা শেষ করার কথা থাকলেও ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের সব বই ছাপা স্কুলে পৌঁছাতে গত মার্চ মাস পর্যন্ত গড়ায়। এবার নতুন শিক্ষাবর্ষের চার মাসেরও কম সময় আগে পুনঃদরপত্র আহ্বান করায় সেই ‘সংকট’ আরও প্রকট হতে পারে বলে এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আশঙ্কা।
তারা আরও বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ছাপাখানা মালিকরা এবারও পাঠ্যবই ছাপার কাজ পেলে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রমও সমালোচনার মুখে পড়তে পারে।
জানা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণীর বইয়ের সংখ্যা চার কোটি ৪৩ লাখ ২১ হাজার ৯০৬, সপ্তম শ্রেণীর চার কোটি ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯২ এবং অষ্টম শ্রেণীর চার কোটি দুই লাখ ৩৪ হাজার ৬৯৮। মাধ্যমিকের মোট ২৮০টি লটের মধ্যে ১১ কোটি ৮৯ লাখ বই ছাপানোর দরপত্র বাতিল হয়েছে। যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬০৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, পুনঃদরপত্রে মাধ্যমিকের এই তিন শ্রেণীর পাঠ্যবই ছাপাতে অন্তত পাঁচ মাস সময় লাগতে পারে। কারণ বিগত বছরে দেখা গেছে, এনসিটিবির পরিকল্পনা অনুযায়ী মুদ্রণ কাজ এগোয় না। বাজারে কাগজের ‘কৃত্রিম’ সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়া এবং বাঁধাইকর্মীর সংকট নানা সমস্যার কথা বলেন ছাপাখানা মালিকরা।
আবার বছরের শেষ দিকে বিশেষ করে নভেম্বরে-ডিসেম্বরে ছাপাখানাগুলো নোটগাইড বা সহায়ক বই ছাপানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এর আগে সারাদেশে পোস্টার ছাপাবে ছাপাখানা মালিকরা।
এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে পুনঃদরপত্র শেষে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করার সময় বই ছাপানোর সময় কমিয়ে দেয়ার কথা ভাবছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।
এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের মোট পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে ৮ কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার। এর মধ্যে ইতোমধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর বই ছাপা শুরু করতে ঠিকাদারদের (ছাপাখানা মালিক) ‘সিডি’ সরবরাহ করা হয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বইয়ের ‘পান্ডুলিপি’ প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি নাগাদ এই দুই শ্রেণীর বইয়ের ‘সিডি’ কার্যাদেশ পাওয়া ছাপাখানাগুলোকে সরবরাহ করা চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আর প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ের ‘সিডি’ সরবরাহ কার্যক্রমও দ্রুত শুরু হচ্ছে।
মাধ্যমিকের বই নিয়ে চাপে এনসিটিবি
রোববার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপা আগামী সপ্তাহেই শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু মাধ্যমিকের বই ছাপা নিয়ে চাপে পরেছে এনসিটিবি। কারণ শিক্ষাবর্ষের চারমাস আগে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র বাতিল করে পুনঃদরপত্র (রিটেন্ডার) আহ্বান করা হয়েছে।
‘অনিয়মের’ অভিযোগে মাদ্রাসার ইবতেদায়ী এবং নবম ও দশম শ্রেণীর পাঠ্যবই মুদ্রণের দরপত্রও বাতিলের দাবি করছেন মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতারা। এই তিন শ্রেণীর বই ছাপার কার্যক্রম এখনও ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদন পায়নি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
২০২৬ শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি আর চার মাসেরও কম। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের। এর আগে সারাদেশের ছাপাখানাগুলো রাজনৈতিক দল ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, লিফলেট ছাপার কাজে ব্যস্ত থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী ৪ সেপ্টেম্বর সংবাদকে বলেছেন, বাতিল হওয়া তিন শ্রেণীর বইয়ের রিটেন্ডার হয়ে গেছে। আর ইবতেদায়ী ও নবম-দশম শ্রেণীর বই ছাপার দরপত্র মূল্যায়ন চলছে। এরপর ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
রিটেন্ডারের কারণে ১ জানুয়ারির মধ্যে সব বই ছাপা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো সমস্যা হবে না। প্রেস মালিকসহ সবার সঙ্গে আলাপ করেই রিটেন্ডার করা হয়েছে। আশা করছি, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সব বই ছাপা শেষ হয়ে যাবে।’
চলতি শিক্ষাবর্ষেও সব পাঠ্যবই সারাদেশে পৌঁছাতে মার্চ মাস গড়িয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে যে কোনোভাবেই হোক ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ শেষ করতে চাচ্ছে এনসিটিবি।
আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩০ কোটির বেশি পাঠ্যবই ছাপাবে এনসিটিবি। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের জন্য প্রায় আট কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখসহ মোট ৩০ কোটি পাঠ্যবই ছাপার কার্যক্রম চলছে।
এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপানোর ক্রয় কার্যক্রম অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ (ক্রয় কমিটি)। তবে এই পরিষদের সর্বশেষ সভায় ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর বই ছাপাতে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন, বাতিল হওয়া দরপত্রে সাবেক একজন মন্ত্রীর ভাই মাধ্যমিক স্তরের প্রায় তিন কোটি বই ছাপার কাজ পেতে যাচ্ছিলেন। এ সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়েছিল একজন উপদেষ্টার কাছে। সেই কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়ে থাকতে পারে বলে ওই কর্মকর্তার ধারণা।
এ বিষয়ে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি ও ‘বৈষম্যবিরোধী মুদ্রণ ব্যবসায়ী’ নেতা তোফায়েল খান সংবাদকে বলেছেন, ‘এবার যে টেন্ডার বাতিল হয়েছে, সেখানে প্রচ- অনিয়ম হয়েছে। একই আইডি ব্যবহার করে একাধিক টেন্ডার ড্রপ (দরপত্র জমা) হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রে এটা হতেই পারে না। ৮-১০ জায়গা থেকে সব টেন্ডার ড্রপ হয়েছে।’
তিনি ইবতেদায়ী এবং নবম ও দশম শ্রেণীর বই ছাপার দরপত্রও বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘সেখানেও একই অনিয়ম হয়েছে।’
বাতিল হওয়া দরপত্রে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সক্ষমতার চেয়ে বেশি কাজ পেয়েছিল দাবি করে তোফায়েল খান বলেন, ‘বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু কাজ অতিরিক্ত নিয়েছিল অভিজ্ঞতার অজুহাত দেখিয়ে। বড় প্যাকেজ দেখিয়ে অনেক ছোট প্রতিষ্ঠানকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এবার রিটেন্ডারে অভিজ্ঞতা হ্রাস করা হয়েছে।’
রিটেন্ডারের কারণে ১ জানুয়ারির মধ্যে সারাদেশের শিক্ষার্র্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছে দেয়ার কাজ ব্যাহত হতে পারে কিনা জানতে চাইলে তোফায়েল খান বলেন, ‘নভেম্বরের মধ্যে কার্যাদেশ দেয়া হলে সব বই দেয়া সম্ভব; যদি সবাই আন্তরিক হয়। কারণ এখন প্রাথমিকের বই ছাপা শুরু হয়ে যাচ্ছে। যারা কাজ পেয়েছেন তাদের কেউ কেউ যদি মাধ্যমিকের কাজ পানও এর আগেই তারা প্রাথমিকের বই ছাপা শেষ করতে পারবেন। এখনও বাজারে কাগজের পর্যাপ্ত সরবরাহও রয়েছে।’
এনসিটিবির দু’জন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন, গত বছর ৪০টির মতো ছাপাখানা ‘নিম্নমানের’ পাঠ্যবই সরবরাহ করেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে বই সরবরাহও করতে পারেনি। কিন্তু নানা মহলের তদবিরের চাপে প্রতিষ্ঠানগুলোর
বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। ওইসব প্রতিষ্ঠান এবারও কাজ ভাগাতে চেষ্টা করছে।
তাছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপা শেষ করার কথা থাকলেও ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের সব বই ছাপা স্কুলে পৌঁছাতে গত মার্চ মাস পর্যন্ত গড়ায়। এবার নতুন শিক্ষাবর্ষের চার মাসেরও কম সময় আগে পুনঃদরপত্র আহ্বান করায় সেই ‘সংকট’ আরও প্রকট হতে পারে বলে এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আশঙ্কা।
তারা আরও বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ছাপাখানা মালিকরা এবারও পাঠ্যবই ছাপার কাজ পেলে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রমও সমালোচনার মুখে পড়তে পারে।
জানা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণীর বইয়ের সংখ্যা চার কোটি ৪৩ লাখ ২১ হাজার ৯০৬, সপ্তম শ্রেণীর চার কোটি ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯২ এবং অষ্টম শ্রেণীর চার কোটি দুই লাখ ৩৪ হাজার ৬৯৮। মাধ্যমিকের মোট ২৮০টি লটের মধ্যে ১১ কোটি ৮৯ লাখ বই ছাপানোর দরপত্র বাতিল হয়েছে। যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬০৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, পুনঃদরপত্রে মাধ্যমিকের এই তিন শ্রেণীর পাঠ্যবই ছাপাতে অন্তত পাঁচ মাস সময় লাগতে পারে। কারণ বিগত বছরে দেখা গেছে, এনসিটিবির পরিকল্পনা অনুযায়ী মুদ্রণ কাজ এগোয় না। বাজারে কাগজের ‘কৃত্রিম’ সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়া এবং বাঁধাইকর্মীর সংকট নানা সমস্যার কথা বলেন ছাপাখানা মালিকরা।
আবার বছরের শেষ দিকে বিশেষ করে নভেম্বরে-ডিসেম্বরে ছাপাখানাগুলো নোটগাইড বা সহায়ক বই ছাপানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এর আগে সারাদেশে পোস্টার ছাপাবে ছাপাখানা মালিকরা।
এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে পুনঃদরপত্র শেষে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করার সময় বই ছাপানোর সময় কমিয়ে দেয়ার কথা ভাবছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।
এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের মোট পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে ৮ কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার। এর মধ্যে ইতোমধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর বই ছাপা শুরু করতে ঠিকাদারদের (ছাপাখানা মালিক) ‘সিডি’ সরবরাহ করা হয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বইয়ের ‘পান্ডুলিপি’ প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি নাগাদ এই দুই শ্রেণীর বইয়ের ‘সিডি’ কার্যাদেশ পাওয়া ছাপাখানাগুলোকে সরবরাহ করা চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আর প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ের ‘সিডি’ সরবরাহ কার্যক্রমও দ্রুত শুরু হচ্ছে।