alt

বাণিজ্যিক রূপ নিচ্ছে গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি

প্রতিনিধি, জবি : বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১

দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার শুরু থেকে আর্থিক সুবিধা, যাতায়াত সুবিধা, থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ সার্বিক ভোগান্তি হ্রাসে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার কথা জানায় আয়োজক কমিটি। তবে বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট শুরুতেই বাদ দেয়া, পরীক্ষার ফি বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা, কর্মদিবসে পরীক্ষার তারিখ ফেলায় তীব্র যানজট, নিজের পছন্দের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে না পারা এবং সর্বশেষ মানবিক ও বাণিজ্য অনুষদের পরীক্ষার ফলাফলে তীব্র অসংগতিতে সাধের গুচ্ছই তীব্র ভোগান্তির কারণ হয় হাজারো ভর্তিচ্ছুর জন্য।

ফলাফল ঘিরে শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা দূর করতে সমাধান হিসেবে ফল চ্যালেঞ্জের সুযোগ দেয় কর্তৃপক্ষ। এর প্রেক্ষিতে গত ৬ নভেম্বর ফল চ্যালেঞ্জের আবেদনের সময়সীমা (৭-১১ নভেম্বর) ও ফি নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে এক্ষেত্রে আবেদন ফি দুই হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘোষণা করা হয়েছে কোন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হলে তার সমুদয় টাকা ফেরত দেয়া হবে। ফল চ্যালেঞ্জের জন্য দুই হাজার টাকা ফি দেয়ার সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি এটি কোন শিক্ষাবান্ধব সিদ্ধান্ত নয় বরং বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে ফল পরিবর্তন হলে সমুদয় টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়টিকে কর্তৃপক্ষের পরোক্ষ হুমকি বলেও দাবি করছেন তারা।

অপরদিকে পরীক্ষার পরে গুচ্ছভুক্ত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও পছন্দের বিষয়ের জন্য আলাদাভাবে আবেদন করার নিয়ম রয়েছে। গত ৩ নভেম্বর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তির জন্য পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায় সেখানে প্রতি অনুষদের আওতাধীন বিষয়গুলোতে আবেদনের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫০ টাকা। যার ফলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি অনুষদের বিষয়গুলোতে আবেদনের জন্য প্রতি শিক্ষার্থীর গুনতে হবে ২৬০০ টাকা। আগামী ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। এতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এই বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করেছেন বলেও জানা যায়। এরপর গত ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রতি বিভাগে আবেদন করতে শিক্ষার্থীদের দিতে হবে ৬০০ টাকা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যাবে আগামী ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত।

শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই যদি এত টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে হয় তাহলে গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে গুনতে হবে ১৫-১৬ হাজার টাকা। এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীবান্ধব নয় বরং তা কর্তৃপক্ষের বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত। শুরুতে ভোগান্তি পোহানোর পর এখন আর্থিকভাবেও চাপে রাখার সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের। আর এতে করে অনেকেরই আর আবেদন করা হয়ে উঠবে না পছন্দের জায়গায়। আশার আলো নিভে যাবে এখানেই।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ প্রথমে কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত আবেদনের ফি নির্ধারণ করেছিল ৬০০ টাকা। কিন্তু সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট উপাচার্যদের বৈঠকে সেটা ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের সার্বিক সুবিধার জন্যই গুচ্ছ পদ্ধতি আয়োজনের কথা বলা হয়েছিল। এখন প্রতিটি ধাপেই তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ‘এ’ ইউনিটে অংশ নেয় ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মো. ফুয়াদুল ইসলাম ভূঁইয়া। ফুয়াদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের ভুগিয়ে যাচ্ছে গুচ্ছ কমিটি। ফল চ্যালেঞ্জের আবেদন ফি কিভাবে ২০০০ টাকা হয়! আবার এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সেখানেও বেশি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত এসব সিদ্ধান্তে অনেকের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে। অথচ এই গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিই আমাদের মতো অনেক শিক্ষার্থীর আশার অবলম্বন ছিল।

গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাত আরা বলেন, ফল চ্যালেঞ্জের আবেদন ফি ২০০০ টাকা! আবার যবিপ্রবি আবেদনের যে সার্কুলার দিয়েছে সেখানে ৪টি অনুষদে মোট ২৬০০ টাকা গুনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে এত টাকা গুনতে হলে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ইউনিটে আবেদন করতেও প্রচুর টাকা গুনতে হবে। যা একজন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীর পরিবারের সামর্থ্যরে বাইরে।

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, এখন প্রসঙ্গ আসতে পারে যে, একজন শিক্ষার্থী হয়তো সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবে না। কিন্তু এটি ভুল। কারণ আমাদের কোন মেরিট পজিশন দেয়া হয়নি। তাই বোঝার উপায় নেই কে কোথায় চান্স পাবে। তাই সবাই চাইবে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে। তাই এতটাকা ফি নির্ধারণ না করলেই ভালো হতো।

ভৃগু রায় নামের এক অভিভাবক বলেন, ফল চ্যালেঞ্জ এবারের প্রেক্ষাপটে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেক্ষেত্রে উচিত ছিল ফি সাধ্যের মধ্যে রাখা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদনে এতো টাকা রাখার সিদ্ধান্তে অনিশ্চিয়তা বেড়েছে। সার্বিকভাবে এবার অনেক কিছুতেই অসংগতি ছিল শুরু থেকে। তবে উচ্চ ফি নেয়ার সিদ্ধান্তে এটির মাত্রা বেড়েছে। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ থাকবে ফি কমানোর বিষয়টি সাধ্যের মধ্যে রাখার জন্য।

এবিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল তিনটি ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার পর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা আলাদাভাবে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ও ফিসহ যাবতীয় বিষয় নির্ধারণ করবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব নিয়ম ও আইন অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ভর্তি ফি নির্ধারণ করছে। তাই ফি কমানো বা এ সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ গুচ্ছ কমিটির নেই।

তিনি আরও বলেন, ফল চ্যালেঞ্জ করে কোন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হলে তার সমুদয় টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আবেদন ফি দুই হাজার টাকাই দিতে হবে শিক্ষার্থীদের।

ছবি

সিরাজগঞ্জে ৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ফেল

ছবি

ইডেন ও বদরুন্নেসায় ‘সহশিক্ষা’ চালুর প্রস্তাব বাতিলের দাবি

আজ থেকে আমরণ অনশনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা

ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গলবারের সব পরীক্ষা স্থগিত

ছবি

ঢাকা কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ‘হাতাহাতি’: সরকারি কলেজগুলোতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন ও পরীক্ষার সূচি প্রকাশ

ছবি

এমআইএসটির ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা

ছবি

এইচএসসির ফল ১৬ অক্টোবর প্রকাশ হতে পারে

দুর্গাপূজার ছুটি শেষে খুলেছে স্কুল, রোববার থেকে কলেজ

ছবি

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ২-৩ হাজার টাকার প্রস্তাব পাঠাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ছবি

১২ ডিসেম্বর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা

ছবি

শিক্ষক দিবসে নারায়ণগঞ্জে ৫ শিক্ষককে সন্মাননা দেয়া হয়েছে

ছবি

এমপিও শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া বাড়লো ৫০০ টাকা, প্রত্যাখান

ছবি

ইউজিসি সদস্য হলেন চাবিপ্রবি উপাচার্য

ছবি

শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের হার্টে অস্ত্রোপচার

ছবি

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান-সহকারী প্রধান নিয়োগেও নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে সরকার

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষার ফল ৬০ দিনের মধ্যেই

ছবি

স্বাতন্ত্র্য ও শিক্ষার উন্নয়নে ‘অক্সফোর্ড মডেলে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগের বিরুদ্ধে মানববন্ধন সাত কলেজের শিক্ষকদের

ছবি

অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর

ছবি

জরিপ: পিআর সম্পর্কে ধারণা নেই ৫৬ শতাংশের, ভোট দিতে চান ৯৪ শতাংশ

ছবি

এসএসসি পরীক্ষায় ১৪০টি ভেন্যু কেন্দ্রের সবগুলোই বাতিল করছে যশোর বোর্ড

ছবি

র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ তিনে নেই অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়!

ছবি

ইইডি ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতি: কাউন্সিল নিয়ে কর্তৃত্বের ‘দ্বন্দ্ব’

ছবি

ডিমলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রক্সি দিয়ে চলছে পাঠদান

ছবি

৪৭তম বিসিএস: পৌনে চার লাখ পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণে প্রিলিমিনারি সম্পন্ন

ছবি

ঢাকার ৭ সরকারি কলেজ: উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষা সংকোচন, কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো বিলুপ্তির চেষ্টার অভিযোগ

ছবি

দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১১ দিনের লম্বা ছুটিতে স্কুল-কলেজ

ছবি

তৃতীয় আবেদনেও কলেজ পায়নি জিপিএ-৫ পাওয়া ২৯৫ জনসহ ৫ হাজার শিক্ষার্থী

ছবি

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই: প্রাথমিকের বই ছাপা শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহে

ছবি

ঢাকা কলেজ অর্থনীতি বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠিত

ছবি

এসএসসি ২০২৬: নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত, অনিয়মিতদের পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস

ছবি

একাদশে ভর্তির দ্বিতীয় ধাপের আবেদন শুরু

ছবি

এসএসসি খাতা মূল্যায়নে অবহেলা, কালো তালিকায় ৭১ শিক্ষক

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হয়ে গেল সাত কলেজ

ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নয়, পরীক্ষার্থী তৈরি করছে: উপাচার্য

tab

বাণিজ্যিক রূপ নিচ্ছে গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি

প্রতিনিধি, জবি

বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১

দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার শুরু থেকে আর্থিক সুবিধা, যাতায়াত সুবিধা, থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ সার্বিক ভোগান্তি হ্রাসে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার কথা জানায় আয়োজক কমিটি। তবে বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট শুরুতেই বাদ দেয়া, পরীক্ষার ফি বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা, কর্মদিবসে পরীক্ষার তারিখ ফেলায় তীব্র যানজট, নিজের পছন্দের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে না পারা এবং সর্বশেষ মানবিক ও বাণিজ্য অনুষদের পরীক্ষার ফলাফলে তীব্র অসংগতিতে সাধের গুচ্ছই তীব্র ভোগান্তির কারণ হয় হাজারো ভর্তিচ্ছুর জন্য।

ফলাফল ঘিরে শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা দূর করতে সমাধান হিসেবে ফল চ্যালেঞ্জের সুযোগ দেয় কর্তৃপক্ষ। এর প্রেক্ষিতে গত ৬ নভেম্বর ফল চ্যালেঞ্জের আবেদনের সময়সীমা (৭-১১ নভেম্বর) ও ফি নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে এক্ষেত্রে আবেদন ফি দুই হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘোষণা করা হয়েছে কোন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হলে তার সমুদয় টাকা ফেরত দেয়া হবে। ফল চ্যালেঞ্জের জন্য দুই হাজার টাকা ফি দেয়ার সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি এটি কোন শিক্ষাবান্ধব সিদ্ধান্ত নয় বরং বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে ফল পরিবর্তন হলে সমুদয় টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়টিকে কর্তৃপক্ষের পরোক্ষ হুমকি বলেও দাবি করছেন তারা।

অপরদিকে পরীক্ষার পরে গুচ্ছভুক্ত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও পছন্দের বিষয়ের জন্য আলাদাভাবে আবেদন করার নিয়ম রয়েছে। গত ৩ নভেম্বর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তির জন্য পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায় সেখানে প্রতি অনুষদের আওতাধীন বিষয়গুলোতে আবেদনের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫০ টাকা। যার ফলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি অনুষদের বিষয়গুলোতে আবেদনের জন্য প্রতি শিক্ষার্থীর গুনতে হবে ২৬০০ টাকা। আগামী ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। এতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এই বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করেছেন বলেও জানা যায়। এরপর গত ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রতি বিভাগে আবেদন করতে শিক্ষার্থীদের দিতে হবে ৬০০ টাকা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যাবে আগামী ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত।

শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই যদি এত টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে হয় তাহলে গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে গুনতে হবে ১৫-১৬ হাজার টাকা। এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীবান্ধব নয় বরং তা কর্তৃপক্ষের বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত। শুরুতে ভোগান্তি পোহানোর পর এখন আর্থিকভাবেও চাপে রাখার সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের। আর এতে করে অনেকেরই আর আবেদন করা হয়ে উঠবে না পছন্দের জায়গায়। আশার আলো নিভে যাবে এখানেই।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ প্রথমে কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত আবেদনের ফি নির্ধারণ করেছিল ৬০০ টাকা। কিন্তু সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট উপাচার্যদের বৈঠকে সেটা ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের সার্বিক সুবিধার জন্যই গুচ্ছ পদ্ধতি আয়োজনের কথা বলা হয়েছিল। এখন প্রতিটি ধাপেই তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ‘এ’ ইউনিটে অংশ নেয় ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মো. ফুয়াদুল ইসলাম ভূঁইয়া। ফুয়াদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের ভুগিয়ে যাচ্ছে গুচ্ছ কমিটি। ফল চ্যালেঞ্জের আবেদন ফি কিভাবে ২০০০ টাকা হয়! আবার এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সেখানেও বেশি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত এসব সিদ্ধান্তে অনেকের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে। অথচ এই গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিই আমাদের মতো অনেক শিক্ষার্থীর আশার অবলম্বন ছিল।

গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাত আরা বলেন, ফল চ্যালেঞ্জের আবেদন ফি ২০০০ টাকা! আবার যবিপ্রবি আবেদনের যে সার্কুলার দিয়েছে সেখানে ৪টি অনুষদে মোট ২৬০০ টাকা গুনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে এত টাকা গুনতে হলে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ইউনিটে আবেদন করতেও প্রচুর টাকা গুনতে হবে। যা একজন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীর পরিবারের সামর্থ্যরে বাইরে।

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, এখন প্রসঙ্গ আসতে পারে যে, একজন শিক্ষার্থী হয়তো সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবে না। কিন্তু এটি ভুল। কারণ আমাদের কোন মেরিট পজিশন দেয়া হয়নি। তাই বোঝার উপায় নেই কে কোথায় চান্স পাবে। তাই সবাই চাইবে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে। তাই এতটাকা ফি নির্ধারণ না করলেই ভালো হতো।

ভৃগু রায় নামের এক অভিভাবক বলেন, ফল চ্যালেঞ্জ এবারের প্রেক্ষাপটে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেক্ষেত্রে উচিত ছিল ফি সাধ্যের মধ্যে রাখা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদনে এতো টাকা রাখার সিদ্ধান্তে অনিশ্চিয়তা বেড়েছে। সার্বিকভাবে এবার অনেক কিছুতেই অসংগতি ছিল শুরু থেকে। তবে উচ্চ ফি নেয়ার সিদ্ধান্তে এটির মাত্রা বেড়েছে। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ থাকবে ফি কমানোর বিষয়টি সাধ্যের মধ্যে রাখার জন্য।

এবিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল তিনটি ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার পর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা আলাদাভাবে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ও ফিসহ যাবতীয় বিষয় নির্ধারণ করবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব নিয়ম ও আইন অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ভর্তি ফি নির্ধারণ করছে। তাই ফি কমানো বা এ সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ গুচ্ছ কমিটির নেই।

তিনি আরও বলেন, ফল চ্যালেঞ্জ করে কোন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হলে তার সমুদয় টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আবেদন ফি দুই হাজার টাকাই দিতে হবে শিক্ষার্থীদের।

back to top