রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের পেঁয়াজচাষি জেনারেল ইসলাম দুই বিঘা ১৮ শতক জমিতে চাষ করেছিলেন পেঁয়াজ। চাষে খরচ হয়েছিল প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে পেঁয়াজ পেয়েছেন প্রায় ২২০ মণ। বিঘাপ্রতি এসেছে প্রায় ৮৫ মণ পেঁয়াজ। ৬ মণ বিক্রি করেছেন। হাটে বিক্রি করবেন আরও ১০ মণ। ৬ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করে তিনি পেয়েছেন প্রায় ৮ হাজার টাকা। মণপ্রতি বিক্রি করেছেন সাড়ে ১৩শ করে। হাটে আরও মণ বিশেক বিক্রি করবেন।
কৃষক সফিকুল ইসলাম এবার ১৭ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। সফিকুল ইসলাম জানান, পেঁয়াজ জমি থেকে তোলার পরে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনি প্রতি মণে ৮৪০ টাকা দাম বেশি পেয়েছেন। ফলে ৮ মণ বিক্রি করার পরে বাকি পেঁয়াজ আর বিক্রি না করে ঘরের চাতালে সংরক্ষণ করে রেখেছেন।
সাধন আলী বলেন, পেঁয়াজ যদি কাঁচা অবস্থায় বিক্রি করি দিতুক (দিতাম) তাহলে গড়ে খুব বেশি হলে ৮-৯শ টাকা মণ পাওয়া যেত। তখন ওজনে একটু বেশি হলেও বড় জোর সবমিলিয়ে ৩৫ হাজার টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হত। কিন্তু ঘরে রেখে পেঁয়াজ শুকানোর কারণে এখন দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এরপরও আমাদের লোকসান হচ্ছে।
একই উপজেলার আমগাছী গ্রামের এনামূল হক বলেন, আমি পরের জমিতে কাজ করে সংসার চালায়। ধার-দেনা করে ১৫ শতক জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছুনু। প্রতিবার পেঁয়াজ উঠার পরে বাড়ির চাতালে এবং ঘরের মধ্যে রাখি দিই। এই বছরও রাখি দিছি। এখুন বিক্রি করবো না। ১২ হাজার টাকার এত ধার হয়েছিল। ওই টাকা ছাগল বিক্রি করে শোধ করবো। পেঁয়াজ যা পাইছি বিক্রি করে হাজার পঁঞ্চাশেক টাকা হবে।
পবার মহেন্দ্র এলাকার চাষি নজরুল ইসলাম জানান, তিনি এবার প্রায় এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। গত প্রায় ১৫ দিন আগেই অধিকাংশ পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছেন। তার পেঁয়াজ খুব একটা ভালো হয়নি। আবার শুরতে ৭-৮শ মণ দরে বিক্রি হওয়ায় তার কিছুটা লোকসান হয়েছে।
নজরুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়িতে পেঁয়াজ রাখার জায়গা নাই। তাই কাঁচা পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়েছে। একটা সপ্তাহ রাখতে পারলে লাভ হতো। কিন্তু লাভ করতে পারিনি হাজার দশেক টাকা লোকসান হয়েছে।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের মোকাম বলে পরিচিত জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর হাট। সপ্তাহে গত সোমবার ও গত শুক্রবার বসে এ হাট। প্রতি হাটে ৩০-৪০ ট্রাক পেঁয়াজ কেনা-বেচা হয় এখানে। এ হাট থেকে পেঁয়াজ সরবরাহ করে দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠান ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, গত শুক্রবার এ হাটে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৭-১৯শ টাকা দরে। সোমবার দাম আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, এখনও প্রচুর পেঁয়াজ আছে কৃষকের ঘরে। অধিকাংশ কৃষকই পেঁয়াজ ঘরে মজুত করেছেন যাদের একেবারেই টাকার সমস্যা, তারাই কেবল পেঁয়াজ বিক্রি করছেন বা করেছেন যারা একটু স্বচ্ছল তারা এখন পেঁয়াজ বিক্রি করবেন না। কারণ ঘরে শুকনা পেঁয়াজ দীর্ঘদিন রাখা যায়। আগামী পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে আশায় কৃষকরা তেমন বিক্রি করছেন না। অনেক ব্যবসায়ীও পেঁয়াজ কিনে হিমাগারে বা চাতালে মজুত করছেন। আবার আমদানিও বন্ধ এ কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
এ হাটের আরেক ব্যবসায়ী বাবলু রহমান জানান, এবার শুরুতেই (২০-২৫ দিন আগে) কাঁচা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭-৮শ টাকা মণ দরে। এর এক সপ্তাহ পর থেকেই বাজার বাড়তে থাকে। কিন্তু এখন দাম প্রায় দ্বিগুন বেড়েছে। আগামী হাটে দুই হাজার টাকার নিচে পেঁয়াজ পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। তবে বৃষ্টি হলে দাম কমবে। কারণ এখনো কিছু পেঁয়াজ মাঠে আছে। বৃষ্টি হলে সেগুলো কৃষকদের হাতের হাত বিক্রি করতে হবে। না হলে পচন ধরব।
এদিকে, রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মুড়িকাটা ও চারা পেঁয়াজ মিলে মোট ১৮ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ২১ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমিতে। পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ লাখ ৭ হাজার ৩০০ টন। এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ পেঁয়াজ সংগ্রহ করা হয়েছে জমি থেকে। এখনও ১৫ শতাংশ পেঁয়াজ মাঠে রয়েছে। সেই হিসেবে মাঠেই আছে এখনো ৭০-৮০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ।
রাজশাহীর পেঁয়াজ চাষিরা জানান, এবার বিঘাপ্রতি ৬০-১০০ মণ পেয়াজ উৎপাদন হয়েছে। এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে সর্বোচ্চ খরচ হবে ৫০ হাজার টাকা। আর গড়ে ৬০ মণ পেঁয়াজ হলেও চাষিদের লোকসান হওয়ার কথা না। তবে যারা একেবারে ছোট চাষি বা ঋত-দেনা করে পেঁয়াজ চাষ করেছেন, আবার যাদের বাড়িতে রাখার এত একেবারেই জায়গা নাই, তারা শুরুতেই কাঁচা পেঁয়াজ বিক্রি করে কিছুটা লোকসানের মুখ দেখেছেন। কিন্তু এখন কাঁচা পেঁয়াজ বিক্রি করলেও লোকসান হবে না।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, পেঁয়াজ এখনো মাঠে রয়েছে, কৃষকের কাছেও রয়েছে। কৃষক যাতে উৎপাদনের শুরুতে ভালো দাম পায়, সে জন্য তারা এয়ার ফ্লো পদ্ধতিতে কৃষকের বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার নির্মাণের জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজ অনেক উৎপাদিত হয়েছিল, সে জন্য চারা পেঁয়াজ ওঠার প্রথম দিকে পেঁয়াজের দামটা কম ছিল। এবার পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে না। তাই এখন চাষিরা একটু লাভের মুখ দেখবেন।
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের পেঁয়াজচাষি জেনারেল ইসলাম দুই বিঘা ১৮ শতক জমিতে চাষ করেছিলেন পেঁয়াজ। চাষে খরচ হয়েছিল প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে পেঁয়াজ পেয়েছেন প্রায় ২২০ মণ। বিঘাপ্রতি এসেছে প্রায় ৮৫ মণ পেঁয়াজ। ৬ মণ বিক্রি করেছেন। হাটে বিক্রি করবেন আরও ১০ মণ। ৬ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করে তিনি পেয়েছেন প্রায় ৮ হাজার টাকা। মণপ্রতি বিক্রি করেছেন সাড়ে ১৩শ করে। হাটে আরও মণ বিশেক বিক্রি করবেন।
কৃষক সফিকুল ইসলাম এবার ১৭ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। সফিকুল ইসলাম জানান, পেঁয়াজ জমি থেকে তোলার পরে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনি প্রতি মণে ৮৪০ টাকা দাম বেশি পেয়েছেন। ফলে ৮ মণ বিক্রি করার পরে বাকি পেঁয়াজ আর বিক্রি না করে ঘরের চাতালে সংরক্ষণ করে রেখেছেন।
সাধন আলী বলেন, পেঁয়াজ যদি কাঁচা অবস্থায় বিক্রি করি দিতুক (দিতাম) তাহলে গড়ে খুব বেশি হলে ৮-৯শ টাকা মণ পাওয়া যেত। তখন ওজনে একটু বেশি হলেও বড় জোর সবমিলিয়ে ৩৫ হাজার টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হত। কিন্তু ঘরে রেখে পেঁয়াজ শুকানোর কারণে এখন দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এরপরও আমাদের লোকসান হচ্ছে।
একই উপজেলার আমগাছী গ্রামের এনামূল হক বলেন, আমি পরের জমিতে কাজ করে সংসার চালায়। ধার-দেনা করে ১৫ শতক জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছুনু। প্রতিবার পেঁয়াজ উঠার পরে বাড়ির চাতালে এবং ঘরের মধ্যে রাখি দিই। এই বছরও রাখি দিছি। এখুন বিক্রি করবো না। ১২ হাজার টাকার এত ধার হয়েছিল। ওই টাকা ছাগল বিক্রি করে শোধ করবো। পেঁয়াজ যা পাইছি বিক্রি করে হাজার পঁঞ্চাশেক টাকা হবে।
পবার মহেন্দ্র এলাকার চাষি নজরুল ইসলাম জানান, তিনি এবার প্রায় এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। গত প্রায় ১৫ দিন আগেই অধিকাংশ পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছেন। তার পেঁয়াজ খুব একটা ভালো হয়নি। আবার শুরতে ৭-৮শ মণ দরে বিক্রি হওয়ায় তার কিছুটা লোকসান হয়েছে।
নজরুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়িতে পেঁয়াজ রাখার জায়গা নাই। তাই কাঁচা পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়েছে। একটা সপ্তাহ রাখতে পারলে লাভ হতো। কিন্তু লাভ করতে পারিনি হাজার দশেক টাকা লোকসান হয়েছে।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের মোকাম বলে পরিচিত জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর হাট। সপ্তাহে গত সোমবার ও গত শুক্রবার বসে এ হাট। প্রতি হাটে ৩০-৪০ ট্রাক পেঁয়াজ কেনা-বেচা হয় এখানে। এ হাট থেকে পেঁয়াজ সরবরাহ করে দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠান ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, গত শুক্রবার এ হাটে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৭-১৯শ টাকা দরে। সোমবার দাম আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, এখনও প্রচুর পেঁয়াজ আছে কৃষকের ঘরে। অধিকাংশ কৃষকই পেঁয়াজ ঘরে মজুত করেছেন যাদের একেবারেই টাকার সমস্যা, তারাই কেবল পেঁয়াজ বিক্রি করছেন বা করেছেন যারা একটু স্বচ্ছল তারা এখন পেঁয়াজ বিক্রি করবেন না। কারণ ঘরে শুকনা পেঁয়াজ দীর্ঘদিন রাখা যায়। আগামী পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে আশায় কৃষকরা তেমন বিক্রি করছেন না। অনেক ব্যবসায়ীও পেঁয়াজ কিনে হিমাগারে বা চাতালে মজুত করছেন। আবার আমদানিও বন্ধ এ কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
এ হাটের আরেক ব্যবসায়ী বাবলু রহমান জানান, এবার শুরুতেই (২০-২৫ দিন আগে) কাঁচা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭-৮শ টাকা মণ দরে। এর এক সপ্তাহ পর থেকেই বাজার বাড়তে থাকে। কিন্তু এখন দাম প্রায় দ্বিগুন বেড়েছে। আগামী হাটে দুই হাজার টাকার নিচে পেঁয়াজ পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। তবে বৃষ্টি হলে দাম কমবে। কারণ এখনো কিছু পেঁয়াজ মাঠে আছে। বৃষ্টি হলে সেগুলো কৃষকদের হাতের হাত বিক্রি করতে হবে। না হলে পচন ধরব।
এদিকে, রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মুড়িকাটা ও চারা পেঁয়াজ মিলে মোট ১৮ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ২১ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমিতে। পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ লাখ ৭ হাজার ৩০০ টন। এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ পেঁয়াজ সংগ্রহ করা হয়েছে জমি থেকে। এখনও ১৫ শতাংশ পেঁয়াজ মাঠে রয়েছে। সেই হিসেবে মাঠেই আছে এখনো ৭০-৮০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ।
রাজশাহীর পেঁয়াজ চাষিরা জানান, এবার বিঘাপ্রতি ৬০-১০০ মণ পেয়াজ উৎপাদন হয়েছে। এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে সর্বোচ্চ খরচ হবে ৫০ হাজার টাকা। আর গড়ে ৬০ মণ পেঁয়াজ হলেও চাষিদের লোকসান হওয়ার কথা না। তবে যারা একেবারে ছোট চাষি বা ঋত-দেনা করে পেঁয়াজ চাষ করেছেন, আবার যাদের বাড়িতে রাখার এত একেবারেই জায়গা নাই, তারা শুরুতেই কাঁচা পেঁয়াজ বিক্রি করে কিছুটা লোকসানের মুখ দেখেছেন। কিন্তু এখন কাঁচা পেঁয়াজ বিক্রি করলেও লোকসান হবে না।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, পেঁয়াজ এখনো মাঠে রয়েছে, কৃষকের কাছেও রয়েছে। কৃষক যাতে উৎপাদনের শুরুতে ভালো দাম পায়, সে জন্য তারা এয়ার ফ্লো পদ্ধতিতে কৃষকের বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার নির্মাণের জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজ অনেক উৎপাদিত হয়েছিল, সে জন্য চারা পেঁয়াজ ওঠার প্রথম দিকে পেঁয়াজের দামটা কম ছিল। এবার পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে না। তাই এখন চাষিরা একটু লাভের মুখ দেখবেন।