১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, অখ্যাত এক ছোট্ট গ্রাম রামগড় বদলে দিয়েছিল বলিউডের ইতিহাস। ‘ঠাকুরের ডাকে জয় আর বীরু নামের দুই তরুণের ডাকাত ধরার সেই গল্প ক্রমেই হয়ে ওঠে হিন্দি সিনেমার সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী সিনেমার একটি। সেই ‘শোলে’র মুক্তির ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ।
অন্যায়ের ওপর ন্যায়ের বিজয় আর সবচেয়ে বড় কথা, তিন ঘণ্টায় ন্যায়বিচার! যা আপনি আর আমি আজীবনেও না-ও পেতে পারি।
‘শোলে’ শুধু একটি বড় বাজেটের তারকাখচিত সিনেমা নয় বরং এক সাংস্কৃতিক মাইলফলক। পরিচালক রমেশ সিপ্পির নির্মাণ, সলিম-জাভেদ জুটির ধারালো চিত্রনাট্য ও সংলাপ; আর ডি বর্মনের সুর মিলেমিশে তৈরি করেছিল এমন এক বড় পর্দার অভিজ্ঞতা, যা দর্শক আজও ভুলতে পারেনি।
চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক ইয়াসির উসমান এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিনেমাটি নিয়ে বলেন, ‘এই ছবি মুক্তির সময়ই চারটি বড় বলিউডি ছাঁচ ভেঙে দিয়েছিল। সেই কারণেই “শোলে” আজও প্রাসঙ্গিক।’
নিখুঁত নয়, মানবিক নায়ক
‘শোলে’র আগে বলিউডি নায়ক বলতে বোঝাত নির্মল, আদর্শ, ভুলত্রুটিমুক্ত মানুষ। তারা কখনো অন্যায় করত না, নৈতিকতার পাঠ শোনাতে ব্যতিব্যস্ত। ‘শোলে’ সেখান থেকে হাজির করে ধূসর নায়ককে। যারা বাস্তবের মতোই; ভালো-মন্দের মিশেলে তৈরি।
জয় (অমিতাভ বচ্চন) আর বীরু (ধর্মেন্দ্র) ছিলেন আগের বলিউড নায়কদের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। তাঁরা প্রাক্তন কয়েদি, পেশাদার চোর, মিথ্যাবাদী। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাঁরা হয়ে ওঠেন সাহসী যোদ্ধা, রামগড়ের মুক্তিদূত।
ইয়াসির উসমান বললেন, ‘নায়ক মানে ত্রুটিহীন হওয়া নয়, বরং বিপদের মুখে দাঁড়ানোর সাহস।’ এই ধূসর, বাস্তবধর্মী চরিত্রায়ণ বলিউডকে নতুন শিক্ষা দিয়েছিল—নায়কও মানুষ, তারও অতীত আছে, ত্রুটি আছে।
বন্ধুত্ব—প্রেমের মতো নয়, বাস্তবের মতো
জাভেদ আখতার বলেছেন—‘শোলে’র আগে হিন্দি সিনেমায় বন্ধুত্ব ছিল প্রায় প্রেমের মতো রোমান্টিক। কিন্তু বাস্তবে বন্ধুত্ব এমন নয়। বাস্তব বন্ধুত্বে ঠাট্টা-তামাশা থাকে, খুনসুটি থাকে, ঝগড়া হয়, আবার মুহূর্তের মধ্যে মনও মিলে যায়। জয়-বীরুর বন্ধুত্ব ছিল একেবারেই সেই বাস্তব ধাঁচের—তারা পরস্পরকে খোঁচাত, মাঝে মাঝে ঝগড়াও করত কিন্তু প্রয়োজনে একে অন্যের জন্য জীবন দিতেও পিছপা হতো না। ইয়াসিরের মতে, ‘এটি ছিল বন্ধুত্বের পর্দায় উপস্থাপনার এক নতুন মানদণ্ড, যা পরবর্তী দশকে বলিউড বহুবার অনুসরণ করেছে।’
বাসন্তী—রামগড়ের স্বাধীনচেতা কর্মজীবী নারী
তখনকার দিনে হিন্দি সিনেমার বেশির ভাগ নায়িকা ছিলেন লাজুক, ঘরোয়া, পুরুষনির্ভর। কিন্তু হেমা মালিনীর বাসন্তী ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি ছিলেন টঙাওয়ালি—নিজের সংসার চালাতেন, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতেন। বাসন্তী শুধু নারী স্বাধীনতার প্রতীকই নন, বরং বলিউডে কর্মজীবী নারীর চরিত্রায়ণের পথপ্রদর্শকও ছিলেন। তাঁর হাসি, দুষ্টুমি, বুদ্ধি—সব মিলিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন রামগড়ের প্রাণকেন্দ্র।
প্রেম ও বিধবা জীবনের প্রগতিশীল উপস্থাপন
‘শোলে’ ছিল অ্যাকশন, ড্রামা, প্রতিশোধে ভরা মসলা ছবি। তবু পরিচালক রমেশ সিপ্পি এখানে নিঃশব্দে বুনেছিলেন এক প্রগতিশীল প্রেমকাহিনি—বিধবা রাধার (জয়া ভাদুড়ি) জীবনে প্রেমের সম্ভাবনা। একটি দৃশ্যে ঠাকুর (সঞ্জীব কুমার) রাধার বাবাকে বলেন, মেয়ের দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দিতে। বাবা বিস্ময়ে প্রশ্ন করেন, ‘সমাজ কী বলবে?’ ঠাকুরের উত্তর, ‘সমাজ মানুষের একাকিত্ব দূর করার জন্য, তাকে একা ফেলে রাখার জন্য নয়। আমরা কি অন্যের ভয়ে রাধাকে জীবিত থাকতে মৃত করে রাখব?’ এই সংলাপ শুধু চলচ্চিত্রের নয়, সময়েরও সাহসী উচ্চারণ ছিল।
সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
৫০ বছর কেটে গেছে। তবু ‘শোলে’র সংলাপ এখনো আড্ডায় উঠে আসে ‘কিতনে আদমি থে?’, ‘বাসন্তী, ইন কুত্তোঁকে সামনে মাত নাচনা’, ‘গব্বর কা দেমাগ খারাব হো গয়া হ্যায়’—ইত্যাদি অনেক সংলাপ। সিনেমার চরিত্রগুলো গব্বর, জয়, বীরু, ঠাকুর বা বাসন্তী যেন বাস্তবে নেমে এসেছেন, হয়ে উঠেছেন খুব কাছের কেউ। ‘“শোলে” শুধু একটি ছবি নয়, এক প্রজন্মের স্মৃতি। এর বিদ্রোহী চেতনা, প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানবিক চরিত্র আজও সমান প্রাসঙ্গিক।’ বলেন ইয়াসিন।
কে কত পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন
‘শোলে’ ছবির মুক্তি নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল। ১ কোটি রুপি বাজেট নিয়ে এই ছবির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ছবিটি তৈরি করতে দুই বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। ফলে বাজেট বেড়ে যায় প্রায় তিন গুণ। তার ওপর জরুরি অবস্থা, ছবিটি আদৌ বক্স অফিসে সাড়া ফেলবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন পরিচালক-প্রযোজকেরা। মুক্তির সময় কোনো ঝামেলা হবে কি না, তা নিয়েও ভয়ে ছিলেন তাঁরা। তবু এমন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মুক্তি পায় ‘শোলে’। ছবির প্রতিটি সংলাপ জনপ্রিয়তার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে আলাদাভাবে সংলাপের জন্য অডিও ক্যাসেট ও রেকর্ড প্রকাশ করতে বাধ্য হন প্রযোজক-পরিচালকেরা। ক্যাসেট মুক্তির পর প্রায় পাঁচ লাখ অডিও ক্যাসেট বিক্রি হয়েছিল। ’৭০-এর দশকের সর্বাধিক বিক্রিত অডিও ক্যাসেট ছিল এটি।
‘শোলে’র চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায় আমজ়াদ খান অভিনীত খলনায়ক ‘গব্বর সিংহ’। এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি পান ৭৫ হাজার রুপি। ছবিতে সর্বাধিক পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ‘বীরু’ ধর্মেন্দ্র, প্রায় দেড় লাখ রুপি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন তিনি। অমিতাভ বচ্চন পেয়েছিলেন ১ লাখ রুপি পারিশ্রমিক। ‘ঠাকুর বলদেব সিংহ’-এর চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা অর্জন করেন বলি অভিনেতা সঞ্জীব কুমার। অমিতাভের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন তিনি। এই ছবিতে অভিনয় করে ১ লাখ ২৫ হাজার রুপি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন সঞ্জীব। ছবিতে অমিতাভের তুলনায় ২৫ হাজার কম পেয়ে হেমা মালিনী আয় করেন ৭৫ হাজার রুপি। এই ছবিতে একটিও সংলাপ ছিল না জয়া বচ্চনের। তিনি পেয়েছিলেন সবচেয়ে কম পারিশ্রমিক। সেই সময় ৩৫ হাজার রুপি পান তিনি।
মুক্তির পর
এই ২০৪ মিনিটের ছবিতে ভালো-খারাপের চিরাচরিত লড়াই দেখানো হয়েছে। সিনেমাটি বিবিসি ইন্ডিয়ার জরিপে ‘শতাব্দীর সেরা সিনেমা’ হয় এবং ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট এটি ভারতের সেরা সিনেমা হিসেবে ঘোষণা করে। এর গান ও সংলাপের ক্যাসেট ও রেকর্ড অর্ধমিলিয়নের বেশি বিক্রি হয়েছিল। এটি শুধু যেন একটি সিনেমা নয়, বরং হয়ে উঠেছে সংস্কৃতির প্রতীক। এর সংলাপ বিয়েতে বলা হয়, রাজনীতিতে ব্যবহার করা হয়, এমনকি বিজ্ঞাপনচিত্রেও দেখা যায়।
তবে প্রথম মুক্তির সময় ‘শোলে’ তেমন প্রশংসা পায়নি। অনেক সমালোচক সিনেমাটি ব্যর্থ বলেছিলেন। ইন্ডিয়া টুডে সিনেমাটিকে বলেছিল ‘নিভে যাওয়া কয়লা।’ ফিল্মফেয়ারের এক লেখক বলেছিলেন, ‘এটি না ঠিক ভারতীয়, না ঠিক পশ্চিমা।’
প্রথম সপ্তাহে হলে দর্শক ছিল নীরব। অনুপমা চোপড়া তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘দর্শকেরা চুপচাপ বসে থাকত—না হাসি, না কান্না, না হাততালি।’ তৃতীয় সপ্তাহে দর্শক সংলাপ বলতে শুরু করে, মানে অনেকে দ্বিতীয়বার দেখতে আসে।
এক মাস পর একটি সংলাপ রেকর্ড বের হয়, যেটা খুব জনপ্রিয় হয়। এরপরই সিনেমাটি ঘুরে দাঁড়ায়। গব্বর সিং চরিত্র ভয়ংকর হলেও খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
‘শোলে’ টানা পাঁচ বছরের বেশি মিনার্ভা হলে চলে—তিন বছর নিয়মিত শো, দুই বছর ম্যাটিনি শো। এমনকি ২৪০তম সপ্তাহেও হলে ভিড় ছিল। পাকিস্তানে সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০১৫ সালে এবং তখনো অনেক নতুন ছবিকে হারিয়ে দেয়। সিনেমা পরিবেশক শ্যাম শ্রফ বলেন, ‘যেমন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নিয়ে বলা হয়, “শোলে” নিয়েও বলা যায়—সূর্য কখনো অস্ত যায় না।’
তিন ঘণ্টায় ন্যায়বিচার!
‘“শোলে” বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য,’ বলেছেন ধর্মেন্দ্র। অমিতাভ বচ্চন বলেছেন, ‘এই সিনেমা শুট করার সময় বুঝিনি এটা এত বিখ্যাত হবে, তবে এটা আমার জীবনের এক স্মরণীয় সময় ছিল।’
বাদ পড়া সেই শেষ দৃশ্য নিয়ে ৫০ বছর পর আবার মুক্তি পায় ‘শোলে’।
‘শোলে’ এখনো মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে কেন? অমিতাভ বচ্চনের উত্তর, ‘অন্যায়ের ওপর ন্যায়ের বিজয় আর সবচেয়ে বড় কথা, তিন ঘণ্টায় ন্যায়বিচার! যা আপনি আর আমি আজীবনেও না-ও পেতে পারি।’
নতুন করে ‘শোলে’
১৯৭৫ সালে নির্মিত রমেশ সিপ্পির এই কালজয়ী সিনেমা এবার পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এতে রয়েছে সিনেমার আসল শেষাংশ ও কিছু বাদ দেওয়া দৃশ্য। এই নতুন সংস্করণটি গত ২৭ জুন ইতালির বোলোনিয়ায় ইল সিনেমা রিট্রোভাতায় প্রথমবার দেখানো হয়।
প্রথমে সিনেমার শেষাংশে ঠাকুর গব্বরকে হত্যা করত। কিন্তু সেন্সর বোর্ড এতে আপত্তি করে। তারা মনে করেছিল, একজন সাবেক পুলিশ এভাবে আইন নিজের হাতে নিতে পারে না। সেই সময় দেশে জরুরি অবস্থা চলছিল, তাই সেন্সরের নিয়ম ছিল অনেক কড়া। শেষে রমেশ সিপ্পি সিনেমার শেষাংশ পরিবর্তন করে দেখান, গব্বর ধরা পড়ে, মারা যায় না। তারপরই সিনেমাটি সেন্সরের ছাড়পত্র পায়।
এই সিনেমার পুরোনো প্রিন্ট নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ক্যামেরা নেগেটিভও অনেক খারাপ ছিল। ২০২২ সালে রমেশ সিপ্পির ছেলে শাহজাদ সিপ্পি ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, মুম্বাইয়ের এক গুদামে কিছু কৌটা আছে। সেখানে পাওয়া যায় ছবির মূল ক্যামেরা ও সাউন্ড নেগেটিভ।
এরপর যুক্তরাজ্য থেকেও কিছু অতিরিক্ত রিল পাওয়া যায়। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও ইতালির লা ইমাজিনে রিট্রোভাতার সাহায্যে ছবির সব অংশ জোড়া লাগানো হয়। এমনকি এই সিনেমায় ব্যবহৃত আসল ক্যামেরাটিও উদ্ধার করা হয়।
৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারতেও নতুন করে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি।
অ্যাংরি ইয়াং ম্যান
এমন ঘটনা সিনেমার ইতিহাসে আগে ঘটেনি, ভবিষ্যতেও হয়তো ঘটবে না। একসঙ্গে ২৪টি সিনেমার চিত্রনাট্য, যার মধ্যে ২২টিই ব্লকবাস্টার হিট। হচ্ছিল হিন্দি সিনেমার আলোচিত চিত্রনাট্যকার জুটি সেলিম-জাভেদের কথা। হিন্দি সিনেমাকে আমূল বদলে দিয়েছিলেন এ দুজন। আজকাল লেখকদের পারিশ্রমিক নিয়ে কত কথা হয়, অথচ চার-পাঁচ দশক আগে তাঁরা নায়কের চেয়েও বেশি পারিশ্রমিক নিতেন—এ কথা এখন অবিশ্বাস্যই মনে হয়। হিন্দি সিনেমায় বহুল চর্চিত ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’ ধারণা তৈরি হয় সেলিম-জাভেদের হাত ধরেই। ‘শোলো’ ছিল এই জুটির অন্যতম সিনেমা।
১৯৭৩ সালের মে মাসে মুক্তি পেয়েছিল সত্তর দশকের অন্যতম হিট ছবি ‘জঞ্জির’। এই ছবির সুবাদেই রাতারাতি তারকা হয়ে গিয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন। হিন্দি ছবির দুনিয়ায় শুরু হয়েছিল ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’ নায়কের সূচনা। যে নায়ক অকারণে হাসে না, তথাকথিত রোমান্সে বিশ্বাসী নয়। ১৯৮২ সালে বিচ্ছেদের আগপর্যন্ত এই জুটি ‘দিওয়ার’, ‘ডন’, ‘শোলে’, ‘ত্রিশূল’, ‘দোস্তানা’র মতো সিনেমা উপহার দিয়েছেন।
জানা-অজানা ১০
১. ঠাকুরের চরিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছে ছিল ধর্মেন্দ্রর। কিন্তু তাঁকে বীরুর চরিত্রের জন্য নির্বাচিত করেন রমেশ সিপ্পি। আর সে সময় হেমা মালিনীর প্রেমে পাগল ধর্মেন্দ্র রমেশের এককথাতেই রাজি হয়ে যান।
২. ‘শোলে’র শুটিং শুরু হওয়ার আগে হেমা মালিনীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন সঞ্জীব কুমার। কিন্তু তাতে সায় ছিল না হেমার। তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন ছবিতে সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে তিনি কোনো দৃশ্য শুট করবেন না।
৩. সঞ্জীব কুমারের চরিত্রের নাম ঠাকুর বলদেব সিং রাখা হয়েছিল চিত্রনাট্যকার সেলিম খানের বাবা বলদেব সিং চরকের নামের প্রেরণায়।
৪. ‘শোলে’ থেকে প্রায় বাদ পড়তে বসেছিলেন আমজাদ খান। কারণ, গব্বর সিংয়ের চরিত্রের জন্য আমজাদ খানের গলার আওয়াজ জাভেদ আখতারের প্রথমে পছন্দ হয়নি। আমজাদের গলা গব্বরের চরিত্রের তুলনায় নাকি অনেক সরু ছিল।
৫. জয়ের চরিত্রের জন্য রমেশ সিপ্পির প্রথম পছন্দ ছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। কিন্তু অমিতাভ বচ্চন প্রযোজকদের বুঝিয়েছিলেন তিনিই এই চরিত্রের জন্য সেরা। আর বলার অপেক্ষা থাকে না বিগ বি সে কথা প্রমাণও করেছিলেন।
৬. জয়ের চরিত্রের জন্য অমিতাভকে নেওয়ার কথা প্রযোজকদের প্রথম বলেন সেলিম খান। প্রথমে তাঁরা রাজি না হলেও ‘জঞ্জির’–এর সাফল্যের কথা মাথায় রেখে জয়ের চরিত্রে অমিতাভকে নির্বাচিত করা হয়।
৭. জাভেদ আখতার আমজাদের ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগোঁ’ নামের একটি নাটক দেখেছিলেন। সেখানে আমজাদের অভিনয় দেখেই তাঁকে গব্বর চরিত্রের জন্য পছন্দ করেন তিনি।
৮. টাকার অঙ্কে পারিশ্রমিক পাননি শচীন পিলগাঁওকর। পারিশ্রমিক হিসেবে তাঁকে একটি ফ্রিজ দিয়েছিলেন প্রযোজক।
৯. প্রায় আড়াই বছর ধরে মোটামুটি ৩ কোটি রুপি বাজেটে তৈরি হয়েছিল ‘শোলে’।
১০. সিনেমায় কয়েন টস করার দৃশ্যের জন্য ৬টি বিশেষ কয়েন তৈরি করা হয়েছিল।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, অখ্যাত এক ছোট্ট গ্রাম রামগড় বদলে দিয়েছিল বলিউডের ইতিহাস। ‘ঠাকুরের ডাকে জয় আর বীরু নামের দুই তরুণের ডাকাত ধরার সেই গল্প ক্রমেই হয়ে ওঠে হিন্দি সিনেমার সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী সিনেমার একটি। সেই ‘শোলে’র মুক্তির ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ।
অন্যায়ের ওপর ন্যায়ের বিজয় আর সবচেয়ে বড় কথা, তিন ঘণ্টায় ন্যায়বিচার! যা আপনি আর আমি আজীবনেও না-ও পেতে পারি।
‘শোলে’ শুধু একটি বড় বাজেটের তারকাখচিত সিনেমা নয় বরং এক সাংস্কৃতিক মাইলফলক। পরিচালক রমেশ সিপ্পির নির্মাণ, সলিম-জাভেদ জুটির ধারালো চিত্রনাট্য ও সংলাপ; আর ডি বর্মনের সুর মিলেমিশে তৈরি করেছিল এমন এক বড় পর্দার অভিজ্ঞতা, যা দর্শক আজও ভুলতে পারেনি।
চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক ইয়াসির উসমান এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিনেমাটি নিয়ে বলেন, ‘এই ছবি মুক্তির সময়ই চারটি বড় বলিউডি ছাঁচ ভেঙে দিয়েছিল। সেই কারণেই “শোলে” আজও প্রাসঙ্গিক।’
নিখুঁত নয়, মানবিক নায়ক
‘শোলে’র আগে বলিউডি নায়ক বলতে বোঝাত নির্মল, আদর্শ, ভুলত্রুটিমুক্ত মানুষ। তারা কখনো অন্যায় করত না, নৈতিকতার পাঠ শোনাতে ব্যতিব্যস্ত। ‘শোলে’ সেখান থেকে হাজির করে ধূসর নায়ককে। যারা বাস্তবের মতোই; ভালো-মন্দের মিশেলে তৈরি।
জয় (অমিতাভ বচ্চন) আর বীরু (ধর্মেন্দ্র) ছিলেন আগের বলিউড নায়কদের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। তাঁরা প্রাক্তন কয়েদি, পেশাদার চোর, মিথ্যাবাদী। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাঁরা হয়ে ওঠেন সাহসী যোদ্ধা, রামগড়ের মুক্তিদূত।
ইয়াসির উসমান বললেন, ‘নায়ক মানে ত্রুটিহীন হওয়া নয়, বরং বিপদের মুখে দাঁড়ানোর সাহস।’ এই ধূসর, বাস্তবধর্মী চরিত্রায়ণ বলিউডকে নতুন শিক্ষা দিয়েছিল—নায়কও মানুষ, তারও অতীত আছে, ত্রুটি আছে।
বন্ধুত্ব—প্রেমের মতো নয়, বাস্তবের মতো
জাভেদ আখতার বলেছেন—‘শোলে’র আগে হিন্দি সিনেমায় বন্ধুত্ব ছিল প্রায় প্রেমের মতো রোমান্টিক। কিন্তু বাস্তবে বন্ধুত্ব এমন নয়। বাস্তব বন্ধুত্বে ঠাট্টা-তামাশা থাকে, খুনসুটি থাকে, ঝগড়া হয়, আবার মুহূর্তের মধ্যে মনও মিলে যায়। জয়-বীরুর বন্ধুত্ব ছিল একেবারেই সেই বাস্তব ধাঁচের—তারা পরস্পরকে খোঁচাত, মাঝে মাঝে ঝগড়াও করত কিন্তু প্রয়োজনে একে অন্যের জন্য জীবন দিতেও পিছপা হতো না। ইয়াসিরের মতে, ‘এটি ছিল বন্ধুত্বের পর্দায় উপস্থাপনার এক নতুন মানদণ্ড, যা পরবর্তী দশকে বলিউড বহুবার অনুসরণ করেছে।’
বাসন্তী—রামগড়ের স্বাধীনচেতা কর্মজীবী নারী
তখনকার দিনে হিন্দি সিনেমার বেশির ভাগ নায়িকা ছিলেন লাজুক, ঘরোয়া, পুরুষনির্ভর। কিন্তু হেমা মালিনীর বাসন্তী ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি ছিলেন টঙাওয়ালি—নিজের সংসার চালাতেন, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতেন। বাসন্তী শুধু নারী স্বাধীনতার প্রতীকই নন, বরং বলিউডে কর্মজীবী নারীর চরিত্রায়ণের পথপ্রদর্শকও ছিলেন। তাঁর হাসি, দুষ্টুমি, বুদ্ধি—সব মিলিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন রামগড়ের প্রাণকেন্দ্র।
প্রেম ও বিধবা জীবনের প্রগতিশীল উপস্থাপন
‘শোলে’ ছিল অ্যাকশন, ড্রামা, প্রতিশোধে ভরা মসলা ছবি। তবু পরিচালক রমেশ সিপ্পি এখানে নিঃশব্দে বুনেছিলেন এক প্রগতিশীল প্রেমকাহিনি—বিধবা রাধার (জয়া ভাদুড়ি) জীবনে প্রেমের সম্ভাবনা। একটি দৃশ্যে ঠাকুর (সঞ্জীব কুমার) রাধার বাবাকে বলেন, মেয়ের দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দিতে। বাবা বিস্ময়ে প্রশ্ন করেন, ‘সমাজ কী বলবে?’ ঠাকুরের উত্তর, ‘সমাজ মানুষের একাকিত্ব দূর করার জন্য, তাকে একা ফেলে রাখার জন্য নয়। আমরা কি অন্যের ভয়ে রাধাকে জীবিত থাকতে মৃত করে রাখব?’ এই সংলাপ শুধু চলচ্চিত্রের নয়, সময়েরও সাহসী উচ্চারণ ছিল।
সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
৫০ বছর কেটে গেছে। তবু ‘শোলে’র সংলাপ এখনো আড্ডায় উঠে আসে ‘কিতনে আদমি থে?’, ‘বাসন্তী, ইন কুত্তোঁকে সামনে মাত নাচনা’, ‘গব্বর কা দেমাগ খারাব হো গয়া হ্যায়’—ইত্যাদি অনেক সংলাপ। সিনেমার চরিত্রগুলো গব্বর, জয়, বীরু, ঠাকুর বা বাসন্তী যেন বাস্তবে নেমে এসেছেন, হয়ে উঠেছেন খুব কাছের কেউ। ‘“শোলে” শুধু একটি ছবি নয়, এক প্রজন্মের স্মৃতি। এর বিদ্রোহী চেতনা, প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানবিক চরিত্র আজও সমান প্রাসঙ্গিক।’ বলেন ইয়াসিন।
কে কত পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন
‘শোলে’ ছবির মুক্তি নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল। ১ কোটি রুপি বাজেট নিয়ে এই ছবির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ছবিটি তৈরি করতে দুই বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। ফলে বাজেট বেড়ে যায় প্রায় তিন গুণ। তার ওপর জরুরি অবস্থা, ছবিটি আদৌ বক্স অফিসে সাড়া ফেলবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন পরিচালক-প্রযোজকেরা। মুক্তির সময় কোনো ঝামেলা হবে কি না, তা নিয়েও ভয়ে ছিলেন তাঁরা। তবু এমন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মুক্তি পায় ‘শোলে’। ছবির প্রতিটি সংলাপ জনপ্রিয়তার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে আলাদাভাবে সংলাপের জন্য অডিও ক্যাসেট ও রেকর্ড প্রকাশ করতে বাধ্য হন প্রযোজক-পরিচালকেরা। ক্যাসেট মুক্তির পর প্রায় পাঁচ লাখ অডিও ক্যাসেট বিক্রি হয়েছিল। ’৭০-এর দশকের সর্বাধিক বিক্রিত অডিও ক্যাসেট ছিল এটি।
‘শোলে’র চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায় আমজ়াদ খান অভিনীত খলনায়ক ‘গব্বর সিংহ’। এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি পান ৭৫ হাজার রুপি। ছবিতে সর্বাধিক পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ‘বীরু’ ধর্মেন্দ্র, প্রায় দেড় লাখ রুপি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন তিনি। অমিতাভ বচ্চন পেয়েছিলেন ১ লাখ রুপি পারিশ্রমিক। ‘ঠাকুর বলদেব সিংহ’-এর চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা অর্জন করেন বলি অভিনেতা সঞ্জীব কুমার। অমিতাভের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন তিনি। এই ছবিতে অভিনয় করে ১ লাখ ২৫ হাজার রুপি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন সঞ্জীব। ছবিতে অমিতাভের তুলনায় ২৫ হাজার কম পেয়ে হেমা মালিনী আয় করেন ৭৫ হাজার রুপি। এই ছবিতে একটিও সংলাপ ছিল না জয়া বচ্চনের। তিনি পেয়েছিলেন সবচেয়ে কম পারিশ্রমিক। সেই সময় ৩৫ হাজার রুপি পান তিনি।
মুক্তির পর
এই ২০৪ মিনিটের ছবিতে ভালো-খারাপের চিরাচরিত লড়াই দেখানো হয়েছে। সিনেমাটি বিবিসি ইন্ডিয়ার জরিপে ‘শতাব্দীর সেরা সিনেমা’ হয় এবং ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট এটি ভারতের সেরা সিনেমা হিসেবে ঘোষণা করে। এর গান ও সংলাপের ক্যাসেট ও রেকর্ড অর্ধমিলিয়নের বেশি বিক্রি হয়েছিল। এটি শুধু যেন একটি সিনেমা নয়, বরং হয়ে উঠেছে সংস্কৃতির প্রতীক। এর সংলাপ বিয়েতে বলা হয়, রাজনীতিতে ব্যবহার করা হয়, এমনকি বিজ্ঞাপনচিত্রেও দেখা যায়।
তবে প্রথম মুক্তির সময় ‘শোলে’ তেমন প্রশংসা পায়নি। অনেক সমালোচক সিনেমাটি ব্যর্থ বলেছিলেন। ইন্ডিয়া টুডে সিনেমাটিকে বলেছিল ‘নিভে যাওয়া কয়লা।’ ফিল্মফেয়ারের এক লেখক বলেছিলেন, ‘এটি না ঠিক ভারতীয়, না ঠিক পশ্চিমা।’
প্রথম সপ্তাহে হলে দর্শক ছিল নীরব। অনুপমা চোপড়া তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘দর্শকেরা চুপচাপ বসে থাকত—না হাসি, না কান্না, না হাততালি।’ তৃতীয় সপ্তাহে দর্শক সংলাপ বলতে শুরু করে, মানে অনেকে দ্বিতীয়বার দেখতে আসে।
এক মাস পর একটি সংলাপ রেকর্ড বের হয়, যেটা খুব জনপ্রিয় হয়। এরপরই সিনেমাটি ঘুরে দাঁড়ায়। গব্বর সিং চরিত্র ভয়ংকর হলেও খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
‘শোলে’ টানা পাঁচ বছরের বেশি মিনার্ভা হলে চলে—তিন বছর নিয়মিত শো, দুই বছর ম্যাটিনি শো। এমনকি ২৪০তম সপ্তাহেও হলে ভিড় ছিল। পাকিস্তানে সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০১৫ সালে এবং তখনো অনেক নতুন ছবিকে হারিয়ে দেয়। সিনেমা পরিবেশক শ্যাম শ্রফ বলেন, ‘যেমন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নিয়ে বলা হয়, “শোলে” নিয়েও বলা যায়—সূর্য কখনো অস্ত যায় না।’
তিন ঘণ্টায় ন্যায়বিচার!
‘“শোলে” বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য,’ বলেছেন ধর্মেন্দ্র। অমিতাভ বচ্চন বলেছেন, ‘এই সিনেমা শুট করার সময় বুঝিনি এটা এত বিখ্যাত হবে, তবে এটা আমার জীবনের এক স্মরণীয় সময় ছিল।’
বাদ পড়া সেই শেষ দৃশ্য নিয়ে ৫০ বছর পর আবার মুক্তি পায় ‘শোলে’।
‘শোলে’ এখনো মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে কেন? অমিতাভ বচ্চনের উত্তর, ‘অন্যায়ের ওপর ন্যায়ের বিজয় আর সবচেয়ে বড় কথা, তিন ঘণ্টায় ন্যায়বিচার! যা আপনি আর আমি আজীবনেও না-ও পেতে পারি।’
নতুন করে ‘শোলে’
১৯৭৫ সালে নির্মিত রমেশ সিপ্পির এই কালজয়ী সিনেমা এবার পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এতে রয়েছে সিনেমার আসল শেষাংশ ও কিছু বাদ দেওয়া দৃশ্য। এই নতুন সংস্করণটি গত ২৭ জুন ইতালির বোলোনিয়ায় ইল সিনেমা রিট্রোভাতায় প্রথমবার দেখানো হয়।
প্রথমে সিনেমার শেষাংশে ঠাকুর গব্বরকে হত্যা করত। কিন্তু সেন্সর বোর্ড এতে আপত্তি করে। তারা মনে করেছিল, একজন সাবেক পুলিশ এভাবে আইন নিজের হাতে নিতে পারে না। সেই সময় দেশে জরুরি অবস্থা চলছিল, তাই সেন্সরের নিয়ম ছিল অনেক কড়া। শেষে রমেশ সিপ্পি সিনেমার শেষাংশ পরিবর্তন করে দেখান, গব্বর ধরা পড়ে, মারা যায় না। তারপরই সিনেমাটি সেন্সরের ছাড়পত্র পায়।
এই সিনেমার পুরোনো প্রিন্ট নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ক্যামেরা নেগেটিভও অনেক খারাপ ছিল। ২০২২ সালে রমেশ সিপ্পির ছেলে শাহজাদ সিপ্পি ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, মুম্বাইয়ের এক গুদামে কিছু কৌটা আছে। সেখানে পাওয়া যায় ছবির মূল ক্যামেরা ও সাউন্ড নেগেটিভ।
এরপর যুক্তরাজ্য থেকেও কিছু অতিরিক্ত রিল পাওয়া যায়। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও ইতালির লা ইমাজিনে রিট্রোভাতার সাহায্যে ছবির সব অংশ জোড়া লাগানো হয়। এমনকি এই সিনেমায় ব্যবহৃত আসল ক্যামেরাটিও উদ্ধার করা হয়।
৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারতেও নতুন করে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি।
অ্যাংরি ইয়াং ম্যান
এমন ঘটনা সিনেমার ইতিহাসে আগে ঘটেনি, ভবিষ্যতেও হয়তো ঘটবে না। একসঙ্গে ২৪টি সিনেমার চিত্রনাট্য, যার মধ্যে ২২টিই ব্লকবাস্টার হিট। হচ্ছিল হিন্দি সিনেমার আলোচিত চিত্রনাট্যকার জুটি সেলিম-জাভেদের কথা। হিন্দি সিনেমাকে আমূল বদলে দিয়েছিলেন এ দুজন। আজকাল লেখকদের পারিশ্রমিক নিয়ে কত কথা হয়, অথচ চার-পাঁচ দশক আগে তাঁরা নায়কের চেয়েও বেশি পারিশ্রমিক নিতেন—এ কথা এখন অবিশ্বাস্যই মনে হয়। হিন্দি সিনেমায় বহুল চর্চিত ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’ ধারণা তৈরি হয় সেলিম-জাভেদের হাত ধরেই। ‘শোলো’ ছিল এই জুটির অন্যতম সিনেমা।
১৯৭৩ সালের মে মাসে মুক্তি পেয়েছিল সত্তর দশকের অন্যতম হিট ছবি ‘জঞ্জির’। এই ছবির সুবাদেই রাতারাতি তারকা হয়ে গিয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন। হিন্দি ছবির দুনিয়ায় শুরু হয়েছিল ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’ নায়কের সূচনা। যে নায়ক অকারণে হাসে না, তথাকথিত রোমান্সে বিশ্বাসী নয়। ১৯৮২ সালে বিচ্ছেদের আগপর্যন্ত এই জুটি ‘দিওয়ার’, ‘ডন’, ‘শোলে’, ‘ত্রিশূল’, ‘দোস্তানা’র মতো সিনেমা উপহার দিয়েছেন।
জানা-অজানা ১০
১. ঠাকুরের চরিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছে ছিল ধর্মেন্দ্রর। কিন্তু তাঁকে বীরুর চরিত্রের জন্য নির্বাচিত করেন রমেশ সিপ্পি। আর সে সময় হেমা মালিনীর প্রেমে পাগল ধর্মেন্দ্র রমেশের এককথাতেই রাজি হয়ে যান।
২. ‘শোলে’র শুটিং শুরু হওয়ার আগে হেমা মালিনীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন সঞ্জীব কুমার। কিন্তু তাতে সায় ছিল না হেমার। তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন ছবিতে সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে তিনি কোনো দৃশ্য শুট করবেন না।
৩. সঞ্জীব কুমারের চরিত্রের নাম ঠাকুর বলদেব সিং রাখা হয়েছিল চিত্রনাট্যকার সেলিম খানের বাবা বলদেব সিং চরকের নামের প্রেরণায়।
৪. ‘শোলে’ থেকে প্রায় বাদ পড়তে বসেছিলেন আমজাদ খান। কারণ, গব্বর সিংয়ের চরিত্রের জন্য আমজাদ খানের গলার আওয়াজ জাভেদ আখতারের প্রথমে পছন্দ হয়নি। আমজাদের গলা গব্বরের চরিত্রের তুলনায় নাকি অনেক সরু ছিল।
৫. জয়ের চরিত্রের জন্য রমেশ সিপ্পির প্রথম পছন্দ ছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। কিন্তু অমিতাভ বচ্চন প্রযোজকদের বুঝিয়েছিলেন তিনিই এই চরিত্রের জন্য সেরা। আর বলার অপেক্ষা থাকে না বিগ বি সে কথা প্রমাণও করেছিলেন।
৬. জয়ের চরিত্রের জন্য অমিতাভকে নেওয়ার কথা প্রযোজকদের প্রথম বলেন সেলিম খান। প্রথমে তাঁরা রাজি না হলেও ‘জঞ্জির’–এর সাফল্যের কথা মাথায় রেখে জয়ের চরিত্রে অমিতাভকে নির্বাচিত করা হয়।
৭. জাভেদ আখতার আমজাদের ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগোঁ’ নামের একটি নাটক দেখেছিলেন। সেখানে আমজাদের অভিনয় দেখেই তাঁকে গব্বর চরিত্রের জন্য পছন্দ করেন তিনি।
৮. টাকার অঙ্কে পারিশ্রমিক পাননি শচীন পিলগাঁওকর। পারিশ্রমিক হিসেবে তাঁকে একটি ফ্রিজ দিয়েছিলেন প্রযোজক।
৯. প্রায় আড়াই বছর ধরে মোটামুটি ৩ কোটি রুপি বাজেটে তৈরি হয়েছিল ‘শোলে’।
১০. সিনেমায় কয়েন টস করার দৃশ্যের জন্য ৬টি বিশেষ কয়েন তৈরি করা হয়েছিল।