image
ছবি: সংগৃহীত

‘হাওয়া’ সিনেমায় বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘন হয়েছে

বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট ২০২২
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

দীর্ঘদিন পর দেশে চলচ্চিত্র অঙ্গনে সাড়া ফেলেছে সিনেমা ‘হাওয়া’। গত ২৯ জুলাই দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে ‘হাওয়া’ মুক্তি পায়। মুক্তি পাওয়ার বহু আগেই থেকেই রীতিমত চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। মুক্তির আগে যেমন আলোচনায় ছিল এই ছবিটি, মুক্তির পরেও একই ভাবে থেকে গেল। তবে বিতর্কের নতুন নাম হিসেবে। অভিযোগ করা হচ্ছে, এই সিনেমাটিতে বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘন হয়েছে।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘হাওয়া’ সিনেমা দেখল বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। দেখে তারা বলল, এই সিনেমায় বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘন হয়েছে। যদিও সিনেমাটির নির্মাতা দাবি করে আসছিলেন, তারা আইন লঙ্ঘনের মতো কিছু করেননি।

শালিক পাখিকে খাচায় বন্দি রাখা, মেরে খাওয়া কিংবা শাপলা পাতা মাছ ধরার দৃশ্যগুলো আইন লঙ্ঘনের নজির বলে প্রাণী অধিকারকর্মীরা অভিযোগ তুললে সিনেমাটি দেখার সিদ্ধান্ত নেয় বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।

বৃহস্পতিবার (১১ অঅগস্ট) বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্সে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের চার কর্মকর্তা সিনেমাটি দেখেন।

সিনেমা শেষে ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক বলেন, সিনেমাটি দেখলাম। ঘটনা সত্য। সিনেমায় মাছ ধরা নৌকায় দীর্ঘসময় একটি শালিক পাখিকে খাচায় বন্দি রাখা হয় এবং শেষে পাখির মাংস খাওয়া হয়, যা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর সুস্পষ্ট বিরোধী। কেননা বন্যপ্রাণীকে খাঁচায় আটক রাখা কিংবা বন্দি রাখা আইনের লঙ্ঘন।

পরিদর্শক অসীম মল্লিক শালিকের মাংসই খাওয়ার বিষয়ে বলেন, সেটা তদন্ত করার আগে বলা যাচ্ছে না। এখন বলতে চাই যে পাখিটাকে আটকে রাখা হয়েছে, সেটা সত্যিকারের শালিক পাখি। এরমধ্য দিয়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন হয়েছে। পাখির মাংসই খাওয়া হয়েছে কি না, তদন্ত শেষে সেটা বলা যাবে।

হাওয়ার নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন দাবি করেছিলেন, সিনেমায় সত্যিকারের কোনো বন্যপ্রাণীকে মারা হয়নি। তিনি বলেছিলেন, এটা একটা ফিকশনাল ওয়ার্ক। এখানে কোনো বন্যপ্রাণী হত্যা করা হয়নি। দৃশ্যায়নের প্রয়োজনে এখানে বিকল্প ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সিনেমার শুরুতেই সেই ‘ডিসক্লেইমার’ দেওয়া হয়েছে। যারা আলোচনা করছে, তারা সিনেমার শুরুটা হয়ত ‘মিস’ করেছেন।

তবে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ভিন্ন বক্তব্যই এল। গল্পের প্রয়োজনে এ ধরনের দৃশ্য দেখানোর দরকার হলে করণীয় কী?- জানতে চাইলে অসীম মল্লিক বলেন, সিগারেট খাওয়ার দৃশ্যে পর্দায় লেখা ওঠে- ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আমার মনে হয়, সিনেমা কর্তৃপক্ষ বন্যপ্রাণীর বিষয়েও এমন সতর্কবার্তা রাখতে পারতেন। সিনেমার শুরুতে এমন কোনো বার্তা চোখে পড়েনি বলে জানান এই কর্মকর্তা।

পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেবেন- জানতে চাইলে অসীম মল্লিক বলেন, আমরা রিপোর্ট পেশ করব। আশা করি, আইন অমান্যকারীকে শাস্তির আওতায় আসতে হবে।

অপরাধ প্রমাণিত হলে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাস্তির বিষয়টা আদালত দেখবে। আইন লঙ্ঘন হয়েছে, এটা আমরা বলতে পারব। তবে আইনে বলা আছে, বন্যপ্রাণীকে খাচায় লালন পালন বা নিজের দখলে রাখলে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের জেল হতে পারে।

বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, তারা এখন প্রতিবেদন দেবেন, তারপর বন অধিদপ্তর করণীয় ঠিক করবে।

সাধারণও এমন ক্ষেত্রে আদালতে যায় বন অধিদপ্তর, মীমাংসা সেখানেই হয়। গত বছর একটি মোবাইল ফোন কোম্পানি খাঁচাবন্দি টিয়া পাখির দৃশ্য ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন তৈরি করায় আদালতে গিয়েছিল তারা। এরপর বিজ্ঞাপন থেকে সেই দৃশ্যটি বাদ দেওয়া হয়।

দেশে যে কোনো সিনেমা মুক্তির আগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড দেখেই ছাড়পত্র দেয়। হাওয়াও তা পেয়েছে।

এ ক্ষেত্রে সেন্সর বোর্ডের কোনো দায় দেখছেন কি না- প্রশ্নে বন বিভাগের কর্মকর্তা অসীম সরাসরি উত্তর এড়িয়ে বলেন, চলচ্চিত্র সেন্সরবোর্ড আলাদা একটি বোর্ড। তারা চলচ্চিত্র প্রদর্শনের অনুমতি দিয়ে থাকে। তারা কী দেখে অনুমতি দেবেন কী দেখে দেবেন না, সেটা তাদের বিষয়। আমরা বন্যপ্রাণী সংশ্লিষ্ট আইন লঙ্ঘন হয়েছে কি না, সেটাই দেখতে এসেছি।

সিনেমার নির্মাতা ওই দৃশ্যে মুরগীর মাংস খাওয়ার কথা বলেছিলেন- এমটা জানানো হলে অসীম বলেন, ছবিতে যা দেখানো হয়েছে, তাতে মাংসটা যে মুরগির, তা দর্শক বুঝবেন না। দর্শককে বোঝানো হয়েছে এটি শালিক পাখিরই মাংস। এতে করে উপস্থিত এক দেড় হাজার দর্শকের মাঝে ভুল বার্তা গেছে। এভাবে সিনেমার লাখ লাখ দর্শক বুঝবেন যে, মাছ ধরার নৌকায় শালিক পাখি রাখতে হবে, যাতে মাঝির নৌকা হারিয়ে গেলে পাখির মাধ্যমে সাগরের তীর খোঁজা যাবে এবং দুঃসময়ে পাখির মাংসও খাওয়া যাবে।

সম্প্রতি