alt

জলবায়ু বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়া

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সম্প্রতি ঘন ঘন বৈরী আবহাওয়ার মুখোমুখি হচ্ছে চীন, দেশটির গুয়াংদং প্রদেশে ভয়াবহ বন্যার কারণে এক লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে- বিবিসি

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এশিয়া মহাদেশভুক্ত দেশগুলো। জাতিসংঘের বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ু নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এ তথ্য।

ডব্লিউএমওর মতে, অন্যান্য মহাদেশের চেয়ে এশিয়ায় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়েছে বেশি। এ কারণে এই মহাদেশের তাপমাত্রাও বাড়ছে। ১৯৯১ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এশিয়ার গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমনকি ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর এশিয়ার গড় তাপমাত্রা ছিল দশমিক ৯১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টানা ও দীর্ঘ তাপপ্রবাহে এক দিকে এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহগুলো গলে যাচ্ছে, অন্য দিকে জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাচ্ছেÑ যা অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের পানির নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ব্যাপক সংকট সৃষ্টি করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক বিবৃতিতে ডব্লিউএমওর শীর্ষ নির্বাহী কেলেস্টে সাউলো বলেন, ‘এশিয়ার অধিকাংশ দেশের ইতিহাসে ২০২৩ সাল ছিল উষ্ণতম বছর। বিশ্বে খরা, তাপপ্রবাহ, ঝড়, বন্যার মতো যত বিপর্যয় ঘটেছে, সেসবের অধিকাংশই ঘটেছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। জলবায়ু পরিবর্তনের গভীর প্রভাব ইতোমধ্যে জনজীবন ও পরিবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতিতেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি, হিমবাহ গলে যাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই প্রভাব আরও ব্যাপক হবে।’

ডব্লিউেএমওর তথ্য অনুয়ায়ী, তাপমাত্রা বাড়ছে সাইবেরিয়া থেকে মধ্য এশিয়া, পূর্ব চীন থেকে জাপান পর্যন্ত। জাপানের ইতিহাসে উষ্ণতম বছর ছিল ২০২৩ সাল। একই সঙ্গে এ সময় প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ এশীয় অংশের তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ। গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির জেরে এশিয়ার হিমালয় পবর্তমালা এবং এই পর্বতমালার হিন্দুকুশ ও তিব্বত রেঞ্জের ২২টি হিমবাহের মধ্যে অন্তত ২০টির বরফের মজুত ২০২৩ সালে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি জলসৃষ্ট দুর্যোগও মোকাবিলা করতে হচ্ছে এশিয়াকে। ২০২৩ সালে এশিয়ায় বড় আকারের ঝড়, বন্যা ও তুমুল বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৭৯টি। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৯০ লাখ। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এশিয়ার দেশগুলোর আবহাওয়া কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমণ হ্রাসে জোর দেওয়া হয়েছে ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে।

এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘আবহাওয়া কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমাতে খানিকটা হলেও সহায়তা করবে। তবে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমণ কমানোর কোনো বিকল্প নেই। এই মুহূর্তে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমণ হ্রাস কেবল একটি বিকল্প নয়, বরং জরুরি কর্তব্য।’

এর আগে ২০২২ সালে এশিয়া মহাদেশ ৮১টি আবহাওয়া, জলবায়ু এবং জল-সম্পর্কিত বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। ৫ কোটিরও বেশি মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। প্রায় ৫,০০০ জন মারা গিয়েছেন। আর ৩,৬০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তার আগের বছর আবার এশিয়ায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সংখ্যা ছিল আরও বেশি, প্রায় ১০০টি। কিন্তু, ২০২২ সালে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে।

তাইওয়ান এবং উত্তর ফিলিপিন্সে আঘাত হানার পর চিনেও একটি সুপার টাইফুন আঘাত হেনেছিল। যার ফলে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। চীনের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, এশিয়ায় ২০২২ সালে গড় তাপমাত্রা ১৯৯১-২০২০ সালের গড় তাপমাত্রার থেকে প্রায় ০.৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। ১৯৬১-১৯৯০ এই তিন দশকের গড় তাপমাত্রার থেকে ২০২২ সালের তাপমাত্রা প্রায় ১.৬৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। যার মধ্যেই চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো লক্ষ্য করা গেছে।

খরা ২০২২ সালে এশিয়ার বিরাট অংশকে ধ্বংস করেছে। তার মধ্যে বিশেষত চিন গত বছরের মতো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ইয়াংসি নদীর অববাহিকা গত ছয় দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ খরার মুখে পড়েছিল। এটি শুধু ফসল, গাছপালা, সেই সঙ্গে পানীয় জলের সরবরাহকেই প্রভাবিত করেনি বরং, প্রায় ৭৬ কোটি মার্কিন ডলারের আর্থিক ক্ষতি করেছে।

আবার অন্যান্য অনেক অঞ্চল মারাত্মক বন্যা এবং চরম বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পাকিস্তান হল তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০২২ সালে বর্ষার মরশুম শুরুর মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক মোট বর্ষার ৬০ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে পাকিস্তানে। ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে শহরে জল জমেছে। পাশাপাশি আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস এবং হিমবাহের হ্রদ বিস্ফোরণে বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, সাড়ে ৩ কোটিরও বেশি মানুষ এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ১,৭৩০ জনেরও বেশি লোক। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ লাখ পাকিস্তানি।

ছবি

গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ট্রাম্পসহ চার নেতার স্বাক্ষর

ছবি

ইসরায়েলের পার্লামেন্টে ট্রাম্পের ভাষণে বাধা, প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতির আহ্বান

ছবি

জাতিসংঘের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি স্থগিত করল ইরান

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতিক্রমেই ফের সশস্ত্র হয়েছে হামাস: ট্রাম্প

ছবি

গাজার নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব হামাসের: ট্রাম্প

ছবি

জীবিত ২০ জিম্মিকে মুক্তি দিলো হামাস

ছবি

পশ্চিমা শক্তিকে দুর্বল করতে একাট্টা চীন-রাশিয়া

ছবি

গাজায় ধ্বংসস্তূপে মিলছে একের পর এক লাশ

ছবি

পাকিস্তান-আফগানিস্তান লড়াই, কোন দিকে মোড় নেবে পরিস্থিতি

ছবি

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে ক্ষুব্ধ বেইজিং, ‘দ্বিমুখী নীতি’র অভিযোগ চীনের

ছবি

প্রথম ৭ ইসরায়েলি জিম্মিকে রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করেছে হামাস

ছবি

ট্রাম্পের দাবি, গাজা যুদ্ধ ‘শেষ’

ছবি

গাজা: ঢুকছে ত্রাণবাহী ট্রাক, সোমবার মুক্তি পাচ্ছে জিম্মিরা

ছবি

সীমান্তে সংঘর্ষ: পাকিস্তানের ৫৮ সেনা হত্যার দাবি আফগানিস্তানের

ছবি

গাজায় ত্রাণ প্রবেশ শুরু, বন্দি মুক্তি প্রক্রিয়া সোমবার থেকে

ছবি

শান্তি প্রস্তাব মানলেও অস্ত্র জমা দেবে না হামাস

ছবি

ভারতে বিদেশিদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যায় শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ

ছবি

পাকিস্তানে তালেবানের হামলা নিয়ে মুখ খুলল ‘বন্ধু’ সৌদি!

ছবি

আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ: দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি দাবি

ছবি

আল্টিমেটামের জবাবে ট্রাম্পকে সতর্কবার্তা দিলো বেইজিং

ছবি

গাজা থেকে জিম্মিমুক্তি শুরু কখন, কীভাবে

ছবি

পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের কারণ কী?

ছবি

সীমান্তে রাতভর গোলাগুলিতে ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহতের দাবি কাবুলের

ছবি

আফগানিস্তান আগুন ও রক্তের খেলা খেলছে,” বলছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ছবি

শান্তিতে নোবেল পাওয়া ভেনেজুয়েলার মাচাদোকে নিয়ে সমালোচনা

ছবি

বোমা-ড্রোনের শব্দ ছাড়া গাজাবাসীর প্রথম রাত

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি শাটডাউনে ব্যাপক ছাঁটাই শুরু, ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করলেন

ছবি

‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করলো উত্তর কোরিয়া

ছবি

মাচাদোকে বললে আমাকে নোবেলটা দিয়ে দিত: ট্রাম্প

ছবি

চীনা পণ্যে বাড়তি ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের

ছবি

সাগরতলে বাড়ছে পৃথিবীর বিপদ

ছবি

পাকিস্তানের সঙ্গ ছেড়ে ভারতের দিকে ঝুঁকছে আফগানিস্তান!

ছবি

কীভাবে ফিরছে গাজাবাসী, যা বলছে তারা

ছবি

নোবেল শান্তি পুরস্কার না পেয়ে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প শিবির, সমালোচনায় হোয়াইট হাউস

ছবি

গাজা থেকে আংশিক ইসরায়ে‌লি সেনা প্রত্যাহার, কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি

ছবি

ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার শুরু, ঘরে ফিরছে গাজাবাসী

tab

জলবায়ু বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়া

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সম্প্রতি ঘন ঘন বৈরী আবহাওয়ার মুখোমুখি হচ্ছে চীন, দেশটির গুয়াংদং প্রদেশে ভয়াবহ বন্যার কারণে এক লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে- বিবিসি

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এশিয়া মহাদেশভুক্ত দেশগুলো। জাতিসংঘের বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ু নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এ তথ্য।

ডব্লিউএমওর মতে, অন্যান্য মহাদেশের চেয়ে এশিয়ায় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়েছে বেশি। এ কারণে এই মহাদেশের তাপমাত্রাও বাড়ছে। ১৯৯১ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এশিয়ার গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমনকি ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর এশিয়ার গড় তাপমাত্রা ছিল দশমিক ৯১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টানা ও দীর্ঘ তাপপ্রবাহে এক দিকে এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহগুলো গলে যাচ্ছে, অন্য দিকে জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাচ্ছেÑ যা অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের পানির নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ব্যাপক সংকট সৃষ্টি করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক বিবৃতিতে ডব্লিউএমওর শীর্ষ নির্বাহী কেলেস্টে সাউলো বলেন, ‘এশিয়ার অধিকাংশ দেশের ইতিহাসে ২০২৩ সাল ছিল উষ্ণতম বছর। বিশ্বে খরা, তাপপ্রবাহ, ঝড়, বন্যার মতো যত বিপর্যয় ঘটেছে, সেসবের অধিকাংশই ঘটেছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। জলবায়ু পরিবর্তনের গভীর প্রভাব ইতোমধ্যে জনজীবন ও পরিবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতিতেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি, হিমবাহ গলে যাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই প্রভাব আরও ব্যাপক হবে।’

ডব্লিউেএমওর তথ্য অনুয়ায়ী, তাপমাত্রা বাড়ছে সাইবেরিয়া থেকে মধ্য এশিয়া, পূর্ব চীন থেকে জাপান পর্যন্ত। জাপানের ইতিহাসে উষ্ণতম বছর ছিল ২০২৩ সাল। একই সঙ্গে এ সময় প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ এশীয় অংশের তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ। গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির জেরে এশিয়ার হিমালয় পবর্তমালা এবং এই পর্বতমালার হিন্দুকুশ ও তিব্বত রেঞ্জের ২২টি হিমবাহের মধ্যে অন্তত ২০টির বরফের মজুত ২০২৩ সালে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি জলসৃষ্ট দুর্যোগও মোকাবিলা করতে হচ্ছে এশিয়াকে। ২০২৩ সালে এশিয়ায় বড় আকারের ঝড়, বন্যা ও তুমুল বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৭৯টি। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৯০ লাখ। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এশিয়ার দেশগুলোর আবহাওয়া কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমণ হ্রাসে জোর দেওয়া হয়েছে ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে।

এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘আবহাওয়া কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমাতে খানিকটা হলেও সহায়তা করবে। তবে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমণ কমানোর কোনো বিকল্প নেই। এই মুহূর্তে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমণ হ্রাস কেবল একটি বিকল্প নয়, বরং জরুরি কর্তব্য।’

এর আগে ২০২২ সালে এশিয়া মহাদেশ ৮১টি আবহাওয়া, জলবায়ু এবং জল-সম্পর্কিত বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। ৫ কোটিরও বেশি মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। প্রায় ৫,০০০ জন মারা গিয়েছেন। আর ৩,৬০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তার আগের বছর আবার এশিয়ায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সংখ্যা ছিল আরও বেশি, প্রায় ১০০টি। কিন্তু, ২০২২ সালে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে।

তাইওয়ান এবং উত্তর ফিলিপিন্সে আঘাত হানার পর চিনেও একটি সুপার টাইফুন আঘাত হেনেছিল। যার ফলে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। চীনের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, এশিয়ায় ২০২২ সালে গড় তাপমাত্রা ১৯৯১-২০২০ সালের গড় তাপমাত্রার থেকে প্রায় ০.৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। ১৯৬১-১৯৯০ এই তিন দশকের গড় তাপমাত্রার থেকে ২০২২ সালের তাপমাত্রা প্রায় ১.৬৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। যার মধ্যেই চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো লক্ষ্য করা গেছে।

খরা ২০২২ সালে এশিয়ার বিরাট অংশকে ধ্বংস করেছে। তার মধ্যে বিশেষত চিন গত বছরের মতো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ইয়াংসি নদীর অববাহিকা গত ছয় দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ খরার মুখে পড়েছিল। এটি শুধু ফসল, গাছপালা, সেই সঙ্গে পানীয় জলের সরবরাহকেই প্রভাবিত করেনি বরং, প্রায় ৭৬ কোটি মার্কিন ডলারের আর্থিক ক্ষতি করেছে।

আবার অন্যান্য অনেক অঞ্চল মারাত্মক বন্যা এবং চরম বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পাকিস্তান হল তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০২২ সালে বর্ষার মরশুম শুরুর মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক মোট বর্ষার ৬০ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে পাকিস্তানে। ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে শহরে জল জমেছে। পাশাপাশি আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস এবং হিমবাহের হ্রদ বিস্ফোরণে বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, সাড়ে ৩ কোটিরও বেশি মানুষ এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ১,৭৩০ জনেরও বেশি লোক। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ লাখ পাকিস্তানি।

back to top